ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি কাদের
বর্তমান সময়ে মধ্যবয়স্ক থেকে শুরু করে বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য এক আতঙ্কের নাম ডায়াবেটিস। শরীরে একবার ডায়াবেটিস বাসা বাঁধলে তিলে তিলে সমস্ত শরীরকে রোগাক্রান্ত করে ফেলে আর এ জন্যই এর নাম হয়েছে নীরব ঘাতক। এই নীরব ঘাতক থেকে বাঁচতে হলে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই কারণ এখনো পর্যন্ত বিশ্বে ডায়াবেটিস নির্মূল করার কোন চিকিৎসা বা ঔষধ আবিষ্কার হয়নি। তাই আমাদের বিশেষভাবে জানা প্রয়োজন ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি কাদের।
“স্বাস্থ্য” এর আজকের এই পর্বে আমরা ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি কাদের এটি জানার পাশাপাশি আমরা জানবো ডায়াবেটিস কি কেন হয়, ডায়াবেটিস কত ধরনের, কোন কোন খাবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখে ইত্যাদি। আশা করি শুরু থেকে মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি কাদের
বিশেষজ্ঞদের মতে টাইপ ১ ডায়াবেটিস পারিবারিক ইতিহাস না থাকলেও যেকোনো সময় যে কারো হতে পারে। তবে টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস থাকলে তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। পরিবারে বাবা মা, দাদা-দাদী, নানা-নানী এদের মধ্যে কারো ডায়াবেটিস থাকলে সেই পরিবারের ছেলেমেয়েদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
পারিবারিক ইতিহাস ছাড়াও আরো একশ্রেণীর মানুষ রয়েছে যাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি খুবই বেশি। যারা হাঁটাচলা খুবই কম করেন, অলস, মোটরসাইকেল, রিক্সা, বাসে চলাচল করেন বেশি, এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম করেন না, অফিসে বসে থাকা কাজ করেন এক কথায় যারা একদমই শারীরিক পরিশ্রম করেন না তাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
এছাড়া তারাও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবেন যারা সুশৃংখল জীবন যাপন করেন না, সময়মতো খাওয়া-দাওয়া করেন না, স্বাস্থ্যকর এবং বিশুদ্ধ খাবারের পরিবর্তে বাইরের খাবার, ভাজাপোড়া, তেল চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খান। যাদের রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে এবং হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে তারাও যে কোন সময় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন।
যাইহোক এতক্ষণ জানলেন ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি কাদের। এখন চলুন জেনে নেই ডায়াবেটিস কি কেন হয়, ডায়াবেটিসের লক্ষণ কি কি, কখন ইনসুলিন দিতে হবে, ডায়াবেটিস রেঞ্জ, ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয় এবং কিভাবে ডায়াবেটিস প্রতিকার করা যায়। .
ডায়াবেটিস কি ও কেন হয়?
আমরা জানি মানব শরীর অসংখ্য কোষ দিয়ে গঠিত। আমরা দৈনন্দিন যে কাজ করি তাতে আমাদের শরীরে যে শক্তি প্রয়োজন হয় তা মূলত কোষের শক্তি। আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ অঙ্গ হচ্ছে অগ্নাশয় যেখান থেকে আই লেটস হরমোনের মাধ্যমে তৈরি হয় ইনসুলিন। বিভিন্ন খাবার থেকে প্রাপ্ত শর্করা বা গ্লুকোজ রক্তের মাধ্যমে শোষিত হয়ে বিভিন্ন কোষে সেগুলোকে শক্তি হিসেবে পৌঁছে দেয়াই হলো ইনসুলিনের কাজ।
এই পর্যন্ত এই কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় একজন সুস্থ ব্যক্তির শরীরে। তবে কোন কারনে এই ইনসুলিন যদি অগ্নাশয় থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপন্ন না হয় অথবা পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপন্ন হলেও ইনসুলিন তার কার্যাবলী সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে না পারে তখনই শরীরে বিপত্তি দেখা দেয়। ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করতে না পারায় রক্তে সঞ্চিত হওয়া গ্লুকোজ বা শর্করার পরিমাণ বাড়তে থাকে।
আর দীর্ঘদিন যাবত রক্তে এইভাবে গ্লুকোজ বা শর্করার পরিমাণ বাড়তে থাকলে একটি গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থাটিকেই বলা হয় ডায়াবেটিস। এই অবস্থায় ইনসুলিনের কার্যাবলীর তারতম্যের কারণে শরীরে অনেক জটিল এবং মারাত্মক সমস্যার উদ্ভব হয়। মূলত ডায়াবেটিস হওয়ার এটি প্রধান কারণ।
জটিল সমস্যা গুলোর মধ্যে হৃদযন্ত্রের সমস্যা, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলা উল্লেখযোগ্য। সঠিক সময়ে রোগীর চিকিৎসা করানো না হলে এবং সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। এই রোগ ডায়াবেটিস মেলিটাস বা বহুমূত্র রোগ হিসেবেও পরিচিত।
ডায়াবেটিস কত প্রকার?
ডায়াবেটিস প্রধানত তিন ধরনের।
টাইপ ১ ডায়াবেটিস
অনেক সময় আমাদের দেহ অগ্নাশয় এর বিটা কোষ গুলোকে ধ্বংস করে দেয় অর্থাৎ অগ্নাশয় যখন অটো ইমিউন বিক্রিয়ার ফলে বিটা কোষ গুলো থেকে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না তখনই টাইপ ১ ডায়াবেটিসের সৃষ্টি হয়। এই ধরনের ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় খুব দ্রুত। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে অর্থাৎ শিশু এবং তরুণ বয়সে এই ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সবচেয়ে বেশি।সাধারণত ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে এই ধরনের ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা থাকে সবচেয়ে বেশি। টাইপ ১ ডায়াবেটিস এর সাধারণ চিকিৎসা হলো ইনসুলিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি অর্থাৎ যেহেতু এই ডায়াবেটিসের কারণে ইনসুলিন একদমই তৈরি হয় না তাই এই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রতিদিন ইনসুলিন দেয়ার মাধ্যমে সুস্থ রাখা হয়।টাইপ ১ ডায়াবেটিস সাধারণত জেনেটিক্স কিংবা পরিবেশগত কারণে হয়ে থাকে। টাইপ ১ ডায়াবেটিস জুভিনাইল ডায়াবেটিস নামেও পরিচিত। সময়ের সাথে সাথে রক্তে শর্করার উপস্থিতি বাড়তে থাকলে টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা বিভিন্ন জটিল রোগ যেমন স্ট্রোক, কিডনি রোগ, দাঁতের সমস্যা, পায়ের ক্ষত ইত্যাদিতে ভুগে থাকেন। তাই এই ধরনের ডায়াবেটিসের রোগীকে সুস্থ্য রাখতে হলে রোগীর রক্তের গ্লুকোজ, কোলেস্টেরল, রক্তচাপ সহনীয় অবস্থায় রাখতে হবে।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস
টাইপ ২ ডায়াবেটিসে অগ্নাশয় অল্প পরিমাণে হলেও ইনসুলিন তৈরি করতে পারে তবে সেই ইনসুলিন সঠিকভাবে তার কার্যাবলী পরিচালনা করতে পারে না। তাই রক্তে গ্লুকোজ বা শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে না। বাংলাদেশে প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ রোগী টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো সাধারণত খুব দেরিতে প্রকাশ পায় অথবা এমনও হয় রোগীর অবস্থা অনেকটাই খারাপ হয়ে যাওয়ার পরে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়।এই ধরনের ডায়াবেটিস সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের হয়ে থাকে। টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর প্রধান কারণ গুলোর মধ্যে রয়েছে স্থূলতা অর্থাৎ শরীরের ওজন অনেক বেড়ে যাওয়া এবং শারীরিক পরিশ্রমের যথেষ্ট অভাব। এই ডায়াবেটিসে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইনসুলিন নেয়ার প্রয়োজন নাও হতে পারে। তবে জীবনধারা পরিবর্তন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবনের মাধ্যমে টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ওষুধ গুলোর মধ্যে রয়েছে মেটফর্মিন, সেমাগ্লুটাইড ইত্যাদি।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস
একজন মহিলার পূর্বে ডায়াবেটিসের কোন ইতিহাস না থাকলেও গর্ভাবস্থায় এই ধরনের ডায়াবেটিস হতে পারে। তবে সে গর্ভবতী নারীর পূর্বে যদি ডায়াবেটিসের ইতিহাস না থাকে তবে সন্তান প্রসবের পরে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সেরে যায়। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হলে রোগীকে অবশ্যই সঠিক চিকিৎসা করতে হবে তা না হলে মা এবং শিশুর স্বাস্থ্যঝুকি থাকে।
ডায়াবেটিস এর লক্ষণ
আমরা আগে জানলাম ডায়াবেটিস প্রধানত তিন রকমের। তবে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস সাময়িক হিসেবে বিবেচনা করে আমরা প্রধানত দুটি অর্থাৎ টাইপ ১ ডায়াবেটিস এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ গুলো জানার চেষ্টা করব। দুই ধরনের ডায়াবেটিসের লক্ষণ মোটামুটি একরকম হলেও সামান্য কিছু পার্থক্য রয়েছে। তো চলুন জেনে নেই লক্ষণগুলো। এই লক্ষণ গুলো দেখলেই বুঝবেন যে আপনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
টাইপ ১ ডায়াবেটিস এর লক্ষণ
- ঘন ঘন প্রস্রাব হয়
- পিপাসা বেড়ে যায়
- প্রচন্ড ক্ষুধা লাগে
- দৃষ্টিশক্তি কমে আসে অনেক সময় ঝাপসা দেখা যায়
- ওজন দ্রুত কমতে থাকে
- কোন কারণ ছাড়াই শরীর ক্লান্ত অনুভব হয়
- চামড়া শুষ্ক এবং রুক্ষ হয়ে যায়
- বমি বমি ভাব লাগে
- শ্বাসকষ্ট হতে পারে
- ফলের মত গন্ধের নিঃশ্বাস হয়
টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর লক্ষণ
- ক্ষুধা এবং তৃষ্ণা বেড়ে যায়
- ঘনঘন প্রস্রাবের বেগ আসে
- ডায়াবেটিসের মাত্রা অনেক বেশি হয়ে গেলে চোখে ঝাপসা দেখে
- হাত পায়ে অসাড়তা অনুভব করে
- শরীর ক্লান্ত অনুভব করে
- দ্রুত এবং অস্বাভাবিক ভাবে ওজন কমে যায়
- শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকানি হতে পারে
- শরীরের কোথাও ক্ষত হলে সহজে ঘা শুকাবে না
- বিনা কারণেই মাঝেমধ্যে শরীর ভাঙতে পারে
- অস্থিরতা বা বুক ধরফর করতে পারে
- মিষ্টি এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার আগ্রহ বেড়ে যাওয়া
- সামান্য কারণে অথবা মাঝে মাঝে বিনা কারণেই মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকা
ডায়াবেটিস রেঞ্জ
ডায়াবেটিসের স্বাভাবিক মাত্রা বা স্বাভাবিক ডায়াবেটিস কত এটা জানা অত্যন্ত জরুরী। কমনওয়েলথ এর সদস্য দেশগুলো যেমন কানাডা অস্ট্রেলিয়া ভারত প্রভৃতি দেশগুলোতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরিমাপ করা হয় মোলার ঘনত্ব mmol/L বা মিলি মোলস পার লিটার এককে। আবার যুক্তরাষ্ট্র জার্মানি জাপান জার্মানি সহ অন্যান্য অনেক দেশে এই পরিমাপ করা হয় mg/dl বা মিলিগ্রাম পার ডেসিলিটার এককে।
খালি পেটে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নন এরকম একজন সুস্থ স্বাভাবিক ব্যক্তির স্বাভাবিক ব্লাড গ্লুকোজ মাত্রা হল 3.9-5.5mmol/L (70-100mg/dL)। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন এর মতে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত একজন ব্যক্তির খালি পেটে স্বাভাবিক ব্লাড গ্লুকোজ মাত্রা হলো 3.9-7.2mmol/L (70-130mg/dL) এবং খাবার গ্রহণের পরে রক্তে স্বাভাবিক গ্লুকোজের মাত্রা হলো 10mmol/L (180mg/dL)
ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়?
আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি ডায়াবেটিসের সাধারণ মাত্রা হলো 7.2-10mmol/L। ব্লাড সুগার লেভেল যদি 15.5mmol/L অতিক্রম করে তবে সেটি সে রোগের জন্য বিপদজনক অবস্থা। কোন ব্যক্তি যদি কোন লক্ষণ বা উপসর্গ প্রকাশ না পাওয়ার ফলে বুঝতে না পারেন যে তার ডায়াবেটিস হয়েছে কিংবা জানার পরেও যদি অবহেলা করেন সেই ক্ষেত্রে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা যদি 30.5mmol/L এর বেশি হয়ে যায় তবে তার জন্য অবশ্যই মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে।
কখন ইনসুলিন দিতে হবে?
আমাদের দেশের চিকিৎসকগণ সাধারণত একজন রোগীর রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ যদি 7.5 -8.0mmol/L থাকে তাহলে ডায়াবেটিসের প্রাথমিক স্টেজ হিসেবে বিবেচনা করেন। তবে এই পরিমাণ এর উপরে গ্লুকোজ যত বাড়তে থাকবে ততই রোগীর ঝুঁকি বাড়তে থাকবে।
এভাবে বাড়তে বাড়তে ডায়াবেটিসের মাত্রা যদি 16.5mmol/L এর বেশি হয় তবে সেই রোগীকে কৃত্রিম ইনসুলিন দেওয়ার প্রয়োজন হবে। এই অবস্থা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে নিয়মিত ইনসুলিন দেওয়ার পরে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা যদি স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসে তখন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইনসুলিন বন্ধ করা যেতে পারে।
ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়?
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে শরীরের কোন অংশই আসলে ডায়াবেটিসের প্রভাব থেকে নিস্তার পায় না। মাথা থেকে পা পর্যন্ত প্রতিটি অংশেই ডায়াবেটিস আক্রমণ করে বসে। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়।
- ডায়াবেটিসের কারণে রক্তনালীতে গ্লুকোজ বা শর্করার পরিমাণ বাড়তে বাড়তে সেগুলো জমে গিয়ে রক্ত চলাচলে বাধা প্রদান করে ফলে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহিত সঠিকভাবে না হলে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে দৃষ্টিশক্তি হারানোর সম্ভাবনা থাকে।
- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কিডনি ফেইলিওর, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের মত মারাত্মক রোগ গুলির জন্য ডায়াবেটিস হলো প্রধান আসামি।
- ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অনেক রোগীকেই নিম্নাংশ বিশেষ করে পা কেটে ফেলতে হয়। ডায়াবেটিসের মাত্রা অতিরিক্ত হয়ে গেলে পায়ে বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে অনেক সময় ঘা হয় যেগুলো আর ভালো হয় না তখন পা কেটে ফেলতে হয়।
- শরীরের যে কোন অংশে বড় আকারের কষ্টদায়ক মারাত্মক ফোড়া হতে পারে। এ অবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা না হলে ফোঁড়া গুলো ভালো হওয়ার পরিবর্তে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে এবং সর্বশেষ রোগী মৃত্যুবরণ করতে পারে।
- ডায়াবেটিসের কারণে শরীরে চর্মরোগ বিশেষ করে একজিমার সূত্রপাত হয়। ফলে সারা শরীরে চুলকানি শুরু হয়।
ডায়াবেটিস রোগের প্রতিকার
এ কথা এখন আমরা মোটামুটি সবাই জানি ডায়াবেটিস নির্মূল করা সম্ভব নয় অর্থাৎ এখন পর্যন্ত সেই চিকিৎসা বা ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। তবে একটি সুস্থ ধারার জীবন যাপন করলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত একজন রোগী সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারবেন। চলুন জেনে নেই প্রতিকার হিসেবে কি কি কাজ করলে ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রনে রেখে একজন রোগী ভালো থাকবেন।
- বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ চাকরিজীবী অফিসে বসে কাজ করেন ফলে তাদের শারীরিক পরিশ্রম হয় না বললেই চলে। এতে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা আরও বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হন এবং যাদের ডায়াবেটিস হয়নি তাদেরও ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই প্রত্যেকদিন নিয়ম করে সকালে এবং বিকেলে এক ঘন্টা করে হাঁটুন।
- পরিবারের ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকুক বা না থাকুক সুস্থ থাকতে এবং ডায়াবেটিস থেকে দূরে থাকতে এখনই সুশৃংখল জীবন যাপন করুন।
- খুব সকালে ঘুম থেকে উঠুন এবং দশটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ুন, বিশুদ্ধ এবং সুষম খাবার গ্রহণ করুন, বাইরের ভাজাপোড়া তেল চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন।
- ধূমপান বা অন্যান্য নেশার বদভ্যাস থাকলে অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
- যেকোনো ধরনের ফাস্টফুড পরিহার করতে হবে। এসব খাবারে উচ্চমাত্রায় ফ্যাট এবং শর্করা থাকে যা আমাদের রক্তনালীতে জমা হয়ে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে এবং সেখান থেকে ডায়াবেটিস হওয়ার সূত্রপাত হতে পারে।
- কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খুব কম পরিমাণে খেতে হবে। বিশেষ করে ভাত না খাওয়াই উত্তম। তবে রুটি পরিমাণে অল্প খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া লাল চাল এবং লাল আটার রুটি খাওয়া উত্তম।
- কখনোই সম্পূর্ণ পেট ভরে খাওয়া যাবে না। অল্প অল্প করে বারে বারে খেতে পারেন।
- বয়স ত্রিশ বছর পার হলেই মিষ্টি জাতীয় খাবার এবং মিষ্টি খাওয়া কমাতে হবে।
- প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, ফলমূল, যেকোনো বীজ (যেমন সিমের বিচি, মটরশুঁটি ইত্যাদি) খেতে হবে।
- খেয়াল রাখতে হবে শুধুমাত্র রাতে ঘুমানো ছাড়া সারাদিন যেন আর কোন ধরনের আরাম করা না হয়।
- নিয়মিত এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম করতে হবে।
- নিয়মিত ডায়াবেটিস হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী এবং ডায়াবেটিস রোগীদের খাবারের চার্ট অনুসরণ করে খাবার খেতে হবে।
- এছাড়াও ডায়াবেটিস কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায় এখান থেকে জেনে নিতে পারেন।
উপসংহার
বলা হয়ে থাকে ডায়াবেটিস সকল রোগের জননী। এর অর্থ হলো ডায়াবেটিস হওয়ার পরে নিয়ন্ত্রণ করা না হলে ডায়াবেটিস থেকে পরবর্তীতে বিভিন্ন অসুখের সৃষ্টি হয়। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল বিষয় হলো সুশৃংখল জীবনযাপন এবং পরিমিত খাদ্যাভ্যাস। ডায়াবেটিস হলে কিছু খাওয়া যাবেনা এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। যাইহোক, ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি কাদের তা জানানোর চেষ্টা করলাম।
একজন সুস্থ সাধারন মানুষের মতো একজন ডায়াবেটিস রোগীও আমিষ, খনিজ, ভিটামিন, শর্করা সহ সকল খাদ্য উপাদান গ্রহণ করতে পারবেন। তবে অবশ্যই তাকে এই সবগুলো খাবার গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। উপরে যে সব বিষয়ে আলোচনা করা হলো তা প্রাথমিক ধারণা মাত্র। ডায়াবেটিস জনিত যে কোনো সমস্যায় অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
আপনাদের সকলের মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা চেষ্টা করুন নিয়ন্ত্রণ রাখতে এবং যাদের ডায়াবেটিস এখনো হয়নি তারা এখন থেকেই সচেতন হয়ে যান যেন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত না হন। চেষ্টা করেছি সকল ধরনের তথ্য আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আর যদি লেখাটি ভালো লাগে তবে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ।
মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url