প্রফেশনাল সিভি কিভাবে তৈরি করব | আধুনিক সিভি লেখার সঠিক নিয়ম

চাকরির জন্য আবেদন করবেন? সুন্দর এবং নিখুত সিভি লিখতে চান? কিন্তু সঠিক নিয়মে কিভাবে সিভি লিখবেন বুজতে পারছেন না? তাহলে আপনার এই সমস্যার সমাধান রয়েছে এই লেখায়। এই আর্টিকেল থেকে আমরা জানতে পারব প্রফেশনাল সিভি কিভাবে তৈরি করব অর্থাৎ আধুনিক সিভি লেখার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে।
প্রফেশনাল সিভি কিভাবে তৈরি করব? | আধুনিক সিভি লেখার সঠিক নিয়ম

"ক্যারিয়ার" এর আজকের এই পর্বে আমরা জানবো প্রফেশনাল সিভি কিভাবে তৈরি করব। একটি আধুনিক সিভি লেখার সঠিক নিয়ম অর্থাৎ যে পয়েন্টগুলো অবশ্যই উল্লেখ করতে হয় তার বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব আজকের এই লেখায়। তবে মূল বিষয়ে যাওয়ার আগে আমাদের জানা উচিত সিভি, রেজিউমে, বায়োডাটা কি এবং তাদের মধ্যে পার্থক্য

সিভি কি?

সাধারণত যেকোনো চাকরিতে আবেদন করার জন্য অথবা উচ্চশিক্ষায় আবেদনের জন্য সিভি বা Curriculum Vitae (কারিকুলাম ভিটাই) ব্যবহার করা হয়। সিভিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্ম ক্ষেত্রে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, প্রফেশনাল সার্টিফিকেট এবং অর্জন, গবেষণাপত্র, রেফারেন্স ইত্যাদি বিষয় গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করা থাকে।

সিভিতে ব্যক্তিগত তথ্য খুবই কম থাকে এবং সেগুলোকে ততটা গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করা বা দেখা হয় না। আমাদের দেশে অল্প পরিসরে হলেও বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন একাডেমিক কাজেও সিভির প্রচলন ব্যাপক। সিভির ক্ষেত্রে কাভার লেটার সংযুক্ত করার প্রয়োজন পড়ে না যদি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক চাওয়া না হয়।
সিভি, রেজিউমে, বায়োডাটার মধ্যে পার্থক্য

রেজিউমে
সিভির মত রেজিউমেও (Resume) চাকরি অর্থাৎ প্রফেশনাল কাজের জন্যই প্রধানত ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিশেষ করে সদ্য পাস করা এবং যাদের অভিজ্ঞতা থাকে না বললেই চলে তাদের জন্য রেজিউমে ব্যবহার করা হয়। সিভি থেকে রেজিউমে অনেক সংক্ষিপ্ত এবং আকারে ছোট হয়। সাধারণত দুই এক পৃষ্ঠার ভেতরে রেজিউমে হয়ে যায়।
এতে উল্লেখ থাকে ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ, বিভিন্ন দক্ষতা, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের বর্ণনা, শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ এবং অর্জিত জ্ঞান। এতে মূলত একাডেমিক বিষয়গুলোই বেশি প্রাধান্য পায়। রেজিউমের সাথে অবশ্য একটি কাভার লেটার সংযুক্ত করতে হয়।

বায়োডাটা
বায়োডাটা (Biodata) হল একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্যের বিবরণী। বায়োডাটা তে মূলত ব্যক্তির বিস্তারিত ব্যক্তিগত তথ্যকেই তুলে ধরা হয়। এতে একাডেমিক এবং অফিসিয়াল তথ্য খুবই সীমিত পরিসরে থাকে। ব্যক্তিগত তথ্যের মধ্যে মা বাবার নাম, তারা কি করেন, কয়জন ভাই বোন, ভাই বোন কি করে, পরিবারের সকল সদস্যের বিবরণী, ব্যক্তির উচ্চতা, ওজন, গায়ের রং, জাতীয়তা, ধর্ম, শখ, লেখাপড়া, বেতন ইত্যাদি থাকে। বায়োডাটা মূলত বিয়ের পাত্র পাত্রীর তথ্য সংগ্রহ এবং প্রদানের জন্য ব্যবহার করা হয়।

বিঃ দ্রঃ সিভি এবং রেজিউমে দুটোই মূলত চাকরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই "সিভি" শব্দটি ব্যবহার হয়ে থাকে। অনেক চাকরির বিজ্ঞাপনেও দেখা যায় চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে “সিভি” শব্দটি উল্লেখ করে আবেদন করতে বলা হয়। সিভি বা রেজিউমে যেটাই বলা হোক না কেন বাংলায় যার অর্থ জীবন বৃত্তান্ত।
আজকের এই লেখায় বলা এবং শোনার সুবিধার্থে আমরা 'সিভি' শব্দটি ব্যবহার করব।

প্রফেশনাল সিভি কিভাবে তৈরি করব

বাংলাদেশের অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে একটি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার পর প্রার্থীর শর্টলিস্টেড হওয়ার জন্য একটি সিভি বা জীবন বৃত্তান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ একটি উন্নত মানের সিভি চাকরি দাতাদের কাছে আপনার সম্পর্কে প্রথম ইম্প্রেশন তৈরি করে।

চাকরিপ্রার্থীগণ প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার পুর্বে প্রফেশনাল সিভি কিভাবে তৈরি করব - এটা ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়েন। আধুনিক সিভি লেখার সঠিক নিয়ম না জানার কারণেও অনেকেই প্রত্যাশিত চাকরি থেকে বঞ্চিত হন। তাছাড়া সিভিতে কিছু ভুল ভ্রান্তি তো থাকেই। তো চলুন আর কথা না বড়িয়ে আধুনিক সিভি লেখার সঠিক নিয়ম কানুন গুলো জেনে নেই।
প্রফেশনাল সিভি কিভাবে তৈরি করব? | আধুনিক সিভি লেখার সঠিক নিয়ম

প্রথমে কন্টাক্ট ডিটেইলস উল্লেখ করুন

বাংলাদেশে একটি কথা খুবই প্রচলিত সেটি হল “আগে দর্শনধারী তো পরে গুণবিচারি”। আপনার সিভির প্রথম দর্শন হলো আপনার কন্টাক্ট ইনফরমেশন (Contact Information)। এই কন্টাক্ট ইনফরমেশন যত আকর্ষণীয় ভাবে নিয়োগকর্তাদের সামনে তুলে ধরতে পারবেন ইন্টারভিউ এর জন্য ডাক আসা আপনার জন্য ততটাই সহজ হতে পারে।

সিভির প্রথম পৃষ্ঠার একদম উপরের দিকে মাঝ বরাবর আপনার নাম বড় সাইজে এবং Bolt করে লিখতে হবে। এরপরে অফ অপেক্ষাকৃত কম সাইজের ফন্টে আপনার যাবতীয় কন্টাক্ট ইনফরমেশন উল্লেখ করতে হবে। এর মধ্যে আপনার মোবাইল নাম্বার, ইমেইল, ঠিকানা, সোশ্যাল মিডিয়া লিঙ্ক এবং প্রফেশনাল ছবি থাকবে।

এখানে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যে মোবাইল নাম্বারটি আপনার সব সময় চালু থাকে সিভিতে অবশ্যই সে নাম্বারটি দিবেন। ইমেইলের ক্ষেত্রে অবশ্যই একটি প্রফেশনাল ইমেইল দিবেন, ব্যক্তিগত ভাবে ব্যবহার করেন অথবা আপনার নামের সাথে মিল নেই এমন কোন নাম দিয়ে তৈরি করার ইমেইল সিভিতে উল্লেখ করবেন না। আপডেটেড অফিসিয়াল ছবি অর্থাৎ সর্বোচ্চ তিন মাস আগের তোলা এরকম ছবি দিবেন। ছয় মাস বা এক বছর পার হয়ে গেছে এরকম ছবি দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

প্রাসঙ্গিক ক্যারিয়ার সামারি উল্লেখ করুন

আপনার সিভির গুরুত্বপূর্ণ অংশ গুলোর মধ্যে “ক্যারিয়ার সামারি” (Career Summery) একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। যে সকল প্রার্থীর পাঁচ বছর বা তার বেশি চাকরির অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের জন্য এই অংশটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি প্রাসঙ্গিক ক্যারিয়ার সামারি চাকরি প্রার্থীর চাকরির উদ্দেশ্য, দক্ষতা, যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দিতে পারে নিয়োগ কর্তাকে।
তাই এই অংশে অপ্রয়োজনীয় এবং অবান্তর কথা লিখে ক্যারিয়ার সামারি অনেক বড় করলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। প্রয়োজনীয় এবং প্রাসঙ্গিক কথাবার্তা খুব সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করুন। ক্যারিয়ার সামারি সাধারণত চার থেকে পাঁচ লাইনের মধ্যে লিখার চেষ্টা করুন। অভিজ্ঞতার পাশাপাশি যদি কোন সফলতা বা অর্জন থেকে থাকে তবে সেগুলোও সংক্ষেপে উল্লেখ করতে পারেন।

ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ তুলে ধরুন

যে সকল চাকরি প্রার্থী সদ্য পাশ করেছেন অথবা খুবই সামান্য চাকরির অভিজ্ঞতা (১ বছরের কম বেশি, আসলে এই স্বল্প সময়ের অভিজ্ঞতাকে তেমন একটা মূল্যায়ন করা হয় না) রয়েছে তাদের জন্য ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ (Career Objectives) অংশটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু বর্তমানে সকল প্রতিষ্ঠানই অভিজ্ঞ প্রার্থীদের খুঁজে থাকেন তাই অনভিজ্ঞ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ উল্লেখ করতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে।

অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ কর্তা কেন আপনাকে ইন্টারভিউ এর জন্য কল করবেন সেটা তাদেরকে বোঝাতে পারলেই আপনার প্রথম অর্জন নিশ্চিত। আর এই জন্য ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ অংশটিতে আপনার চাকরির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং আপনার যোগ্যতা কিভাবে প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মেটাতে পারে সেটি সুস্পষ্ট এবং সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করতে হবে।

মনে রাখতে হবে প্রতিষ্ঠান ভেদে ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ আলাদা হবে এবং প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন এর সাথে মিল রেখে ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ সেট করতে হবে। মেধা এবং যোগ্যতা দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে আপনি কতটুকু দিতে পারবেন সেটির উপর ফোকাস করুন, প্রতিষ্ঠান থেকে আপনার প্রত্যাশার উপর নয়।

চাকরির অভিজ্ঞতা উল্লেখ করুন

অভিজ্ঞতা (Experience) সম্পন্ন চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে এই অংশটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই অংশটি একজন চাকরিপ্রার্থীকে অন্যদের চেয়ে আলাদা এবং যোগ্য হিসেবে প্রমাণ করার সুযোগ এনে দেয়। একজন চাকরিপ্রার্থী কতটা মেধাবী, যোগ্য এবং দক্ষ তার প্রমাণের প্রতিচ্ছবি হল “চাকরির অভিজ্ঞতা” অংশটি।

এই অংশটি সেরকম একটা হাতিয়ার যার মাধ্যমে আপনি আপনার নিয়োগকর্তাকে বোঝাতে পারবেন আপনি পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠানে কতটা যোগ্যতা এবং দক্ষতার সাথে কাজ করে প্রতিষ্ঠানকে তার চাহিদা মত সার্ভিস দিয়েছেন এবং সফলতা অর্জন করেছেন। অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে সিভিতে শিক্ষাগত যোগ্যতার আগেই এই অংশটি লিখা উচিত।

নিচের পয়েন্টগুলো অবশ্যই উল্লেখ করবেন- প্রতিষ্ঠানের নাম, পদবী, স্থায়িত্বকাল, পালনকৃত দায়িত্ব এবং সাফল্য (যদি থাকে)। একই প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে সেটিও আলাদা আলাদা ভাবে উল্লেখ করতে হবে। এক্ষেত্রেও উল্টো ক্রম অনুসারে অভিজ্ঞতা উল্লেখ করতে হবে অর্থাৎ সবার প্রথমে থাকবে রিসেন্ট অভিজ্ঞতা এবং সবশেষে থাকবে আপনার প্রথম কর্ম অভিজ্ঞতা। আর অনভিজ্ঞ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ইন্টার্নশিপ, যে কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছেন সেটির নাম, স্থায়িত্বকাল, কোন প্রশিক্ষণ ইত্যাদি উল্লেখ করতে পারেন।

শিক্ষাগত যোগ্যতা লিপিবদ্ধ করুন

একটি সিভির জন্য এটি আবশ্যিক অংশ অর্থাৎ চাকরিপ্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা (Educational Qualification) অবশ্যই সিভিতে উল্লেখ করতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা বলতে আপনার যতগুলো ডিগ্রী অর্জন করেছেন তার সবগুলো উল্লেখ করতে হবে। এ অংশে অর্জিত সকল ডিগ্রির নামের পাশাপাশি মেয়াদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বোর্ডের নাম, অধ্যায়নের বিষয়, পাশের বছর এবং ফলাফল উল্লেখ করবেন।
বিশেষ কোনো ফলাফল যেমন মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকে মেধা তালিকায় অবস্থান করলে সেটিও আলাদাভাবে উল্লেখ করবেন। কর্ম অভিজ্ঞতার মত এখানেও ক্রোনোলজিক্যাল অর্ডার (Chronological and Reverse Order) মেনে উল্লেখ করবেন অর্থাৎ সবার উপরে থাকবে সর্বশেষ যে ডিগ্রি অর্জন করেছেন অনার্স বা মাস্টার্স এবং সব নিচে থাকবে এসএসসি বা মাধ্যমিক। কোন ডিগ্রীর চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ না হলে সেই ডিগ্রীর ফলাফলের জায়গায় লিখবেন Appeared এবং কোন কোর্স চলাকালীন অবস্থায় থাকলে সেই ডিগ্রির ফলাফলের জায়গায় লিখবেন Ongoing।

দক্ষতা সম্পর্কে জানান

একটি সিভিতে এই অংশটি বাধ্যতামূলক না হলেও যথাযথভাবে এই অংশটি উপস্থাপনের মাধ্যমে আপনার প্রতি নিয়োগ কর্তাদের আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারেন। পুঁথিগত বিদ্যা, অভিজ্ঞতা সহ আর কি কি দক্ষতা রয়েছে তা জানাতে পারেন।

লিডারশিপ, টিম ওয়ার্ক, প্রবলেম হ্যান্ডলিং, সিচুয়েশন কন্ট্রোলিং, কমিউনিকেশন স্কিল সহ আরো যদি কিছু থাকে তা সুন্দরভাবে সংক্ষেপে স্পষ্ট আকারে উল্লেখ করতে পারেন। এছাড়াও যদি থাকে তবে জন্মগত কিছু দক্ষতা যেমন বিশ্বস্ততা, সততা, দ্রুত শিখতে পারা, উদ্যমী, পরিশ্রমী ইত্যাদি বিষয়গুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করতে পারেন।

ট্রেনিং এর তথ্য উল্লেখ করুন

সিভিতে ট্রেনিং এবং সার্টিফিকেসন এর তথ্যের উল্লেখ আপনার প্রতি নিয়োগকর্তাদের উৎসাহী করার আরেকটি ধাপ হতে পারে। বিভিন্ন ট্রেনিং এর তথ্য দেখলে নিয়োগ কর্তারা বুঝতে পারবেন আপনি আপনার দক্ষতা অর্জনে এবং বৃদ্ধি করতে যথেষ্ট আগ্রহী। ট্রেনিং এর তথ্য উল্লেখ করতে ট্রেনিং এর প্রতিষ্ঠানের নাম, প্রশিক্ষণের বিষয়, মেয়াদ, অর্জন এবং সার্টিফিকেট এর বিষয়গুলো উল্লেখ করতে পারেন।

ব্যক্তিগত তথ্য উল্লেখ করুন

নিয়োগ কর্তাকে আপনার সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিতে চাইলে ব্যক্তিগত কিছু তথ্য উল্লেখ করতে পারেন। এই অংশটি সিভির জন্য বাধ্যতামূলক নয়। এ অংশে উল্লেখ করতে পারেন পিতা মাতার নাম, স্থায়ী এবং বর্তমান ঠিকানা, ধর্ম, জাতীয়তা, এনআইডি নম্বর, ভাষাগত দক্ষতা, শিক্ষাজীবনের পুরস্কার, কম্পিউটার জ্ঞান ইত্যাদি।

রেফারেন্স উল্লেখ করুন

একজন চাকরি প্রার্থীর জন্য রেফারেন্স আরেকটি উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অনেক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকর্তাই প্রার্থীদের চূড়ান্ত নিয়োগের পূর্বে সিভিতে রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখিত ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে থাকেন। তাই রেফারেন্স হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হবে অবশ্যই তাদের বৈধতা থাকতে হবে।
কোন রকম পরিচয় আছে এমন কাউকে রেফারেন্স হিসাবে দেওয়া উচিত হবে না। আবার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন কেও রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা একদম অনুচিত। সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত হলো আপনার ছাত্র জীবন অথবা কর্মজীবনের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তি, শিক্ষক, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গকে রেফারেন্স হিসেবে সিভিতে উল্লেখ করা যারা আপনার সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা রাখে।

সিভিতে সর্বোচ্চ তিনজনের নাম রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। তবে এখানে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যাদের নাম সিভিতে রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করবেন অবশ্যই তাদের কাছ থেকে পূর্বেই অনুমতি নিয়ে রাখতে হবে। রেফারেন্স অংশে নামের সাথে কর্মরত প্রতিষ্ঠান, পদবী, ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার এবং ইমেইল সংযুক্ত করতে হবে।

ECA যোগ করতে পারেন

নিয়োগ কর্তাকে আপনার দক্ষতা সম্পর্কে জানানোর আরেকটি উপায় হল ECA বা Extra Curricular Activities এর উল্লেখ করা। এটি উল্লেখ করার মাধ্যমে নিয়োগকর্তা বুঝতে পারবেন আপনার পুঁথিগত বিদ্যা এবং একাডেমিক অর্জন ছাড়াও বাহ্যিক দক্ষতাও রয়েছে।

বিভিন্ন ক্লাবের সদস্য পদ অর্জন, খেলাধুলায় অংশগ্রহণ এবং স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, নেতৃত্ব প্রদান এবং দল ব্যবস্থাপনায় যে দক্ষতা অর্জন করেছেন তা সিভির মাধ্যমে নিয়োগকর্তাদের জানাতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ “বিশ্ববিদ্যালয়ের “রক্তদান সংঘ” এর তিন বছরের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ, রক্তদান এবং দলীয় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা অর্জন।”

আকর্ষণীয় ফরম্যাট, নির্দিষ্ট ফন্ট এবং সাইজ ব্যবহার করুন

চাকরির প্রত্যাশায় যেনতেন ভাবে একটি প্রতিষ্ঠানে সিভি পাঠালেই হয় না। প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকর্তা আপনার সিভি দেখে যদি বুঝতে পারেন যে আপনার ভেতরে সৃজনশীলতা রয়েছে তাহলে এটা আপনার জন্য একটি বোনাস পয়েন্ট হতে পারে। আপনার সিভির চেহারা দেখে নিয়োগকর্তারা যদি পড়ার আগ্রহ পায় তাহলে আপনাকে ইন্টারভিউ এর জন্য কলের সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে।
আর তাই সিভিকে আকর্ষনীয় করে তুলতে আপনার সৃজনশীলতাকে ব্যবহার করে সুন্দর একটি ফরম্যাটে আপনার সিভি তৈরি করুন। ফরম্যাট যে বিশ্বসেরা মানের হতে হবে এমন কথা নেই, যার যার অভিরুচি মতো যেন আকর্ষণীয় হয় সেটা খেয়াল রাখলেই চলবে। এরপরে আসা যাক ফন্ট এর ব্যাপারে। ফন্ট বলতে যে ডিজাইনে সিভিতে আপনি লিখবেন সেটা কে বোঝায়।

সাধারণত সর্বজনগ্রাহ্য অফিসিয়াল ফন্টগুলো হচ্ছে Times New Roman, Arial, Vardana এবং এর স্ট্যান্ডার্ড সাইজ হচ্ছে 11 অথবা 12। মাঝেমধ্যে কোন টপিক Bold করতে পারেন তবে সবকিছুই কালো কালির লেখা থাকবে অর্থাৎ হাইলাইট করার জন্য বিভিন্ন ফন্ট কালার ব্যবহার করবেন না। কোন প্রতিষ্ঠানে সিভি পাঠাতে হলে অবশ্যই PDF format এ পাঠাবেন তবে .doc file হিসেবে কখনোই পাঠাবেন না।

আপনার সিভি সেভ করার সময় খেয়াল রাখুন আপনার নাম সহকারে যেন সেভ হয়। উদাহরণস্বরূপ, Abdul Kalam_CV.pdf। পুরো সিভিতে অপ্রয়োজনীয় কথা লিখে অনেক বড় না করে মূল কথা সংক্ষেপে স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করবেন। প্যারাগ্রাফ এর চাইতে বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করে লিখলে বেশি ভালো হয়।
প্রফেশনাল সিভি কিভাবে তৈরি করব? | আধুনিক সিভি লেখার সঠিক নিয়ম

ইংলিশে অথবা বাংলাতে সিভি লেখেন না কেন বানান ভুলের ব্যাপারে হতে হবে সর্বোচ্চ সতর্ক। মনে রাখবেন, সিভিতে কয়েক সেকেন্ড চোখ বুলানোর মধ্যে নিয়োগকর্তাদের চোখে একটি বানানও যদি ভুল ধরা পড়ে আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা জন্মাতে এক সেকেন্ডও সময় লাগবে না।

সিভি পরিবর্তন করুন

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার পূর্বে সিভি পরিবর্তন করা জরুরী। কারণ প্রতিষ্ঠান ভেদে চাহিদা ভিন্ন হয় তাই আপনার সিভির তথ্যাবলীও কিছুটা পরিবর্তন করতে হয়। প্রত্যেকবার আবেদন করার পূর্বে অথবা প্রতিষ্ঠানের সিভি পাঠানোর পূর্বে বিজ্ঞপ্তি ভালো করে পড়ে দেখুন এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী আপনার সিভির তথ্যগুলোকে সাজিয়ে আপনার দক্ষতা এবং যোগ্যতাকে আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরুন।

কিছু কথা
প্রথমে একটি উদাহরণ দেই। বাজারে যখন কোন পোশাক কিনতে যান সবার প্রথমে কিন্তু দেখতে ভালো লাগে কোনটি সেই বিষয়টি বিবেচনায় আনেন। এরপরে কাপড়ের মান কেমন, তারপরে দামের ব্যাপারটা আসে। চাকরির ক্ষেত্রেও তাই একজন নিয়োগকর্তা প্রথমে চাকরি প্রার্থীর সিভি দেখে আকৃষ্ট হন।
সঠিকভাবে লেখা এবং গুণগত মানের একটি সিভি হলে তবেই সে চাকরিপ্রার্থীকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয়। বর্তমানে প্রতিযোগিতা পূর্ণ চাকরির বাজারে প্রচুরসংখ্যক যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রার্থী রয়েছে, কিন্তু ইন্টারভিউ এর জন্য সবাইকে ডাকা হয় না। সুতরাং অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আপনার সিভি এতটাই উন্নতমানের হতে হবে যে এটি অন্য চাকরিপ্রার্থীদের থেকে আপনাকে আলাদা ভাবে তাদের সামনে উপস্থাপন করবে।

আপনাদের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনায় আজ এখানেই শেষ করছি। প্রফেশনাল সিভি কিভাবে তৈরি করব সেটি অর্থাৎ আধুনিক সিভি লেখার সঠিক নিয়ম জানানোর চেষ্টা করলাম। আশা করি আপনারা নির্ভুলভাবে সিভি তৈরি করবেন এবং প্রত্যাশিত চাকরি পাবেন। লেখাটি যদি একটুও উপকারে আসে আপনাদের তাহলে পরিচিত জনদের সাথে শেয়ার করতে পারেন আর যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন। সবাই ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url