স্মার্টফোন গরম হয় যেসব কারণে

বর্তমানে স্মার্টফোন ছাড়া আমাদের একটি দিনও চলে না। সব কাজেই স্মার্টফোন ব্যবহার করলেও আমরা অনেকেই জানিনা স্মার্টফোন অতিরিক্ত গরম হলে কি কি সমস্যা হতে পারে, স্মার্টফোন গরম হয় যেসব কারণে এবং ঠান্ডা রাখার উপায় ইত্যাদি বিষয় গুলো।  
স্মার্টফোন গরম হয় যেসব কারণে

"স্মার্টফোন" এর এই পর্বে আমরা জানার চেষ্টা করব স্মার্টফোন গরম হয় যেসব কারণে এবং গরম হলে কি কি সমস্যা হয় সেই সম্পর্কে । সবগুলো তথ্য জানতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে।

স্মার্টফোন গরম হয় যেসব কারণে

এই ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোন আমাদের নিত্য সঙ্গী হয়ে গিয়েছে। বিনোদনের জন্য যেমন আমরা মিডিয়া কনজিউম করার পাশাপাশি গেম খেলে থাকি তেমনি প্রয়োজনে কাজে সারাদিন মোবাইল আমাদের ব্যবহার করতে হয়। মূলত কোন কারণে মোবাইল বা স্মার্টফোন গরম হয়ে যায় সেটা অনেক সময় বোঝার উপায় থাকে না। 
অতিরিক্ত এবং ত্রুটিপূর্ণ ব্যবহারের কারণে যেমন স্মার্টফোন গরম হয়ে যেতে পারে আবার স্মার্টফোনের হার্ডওয়্যার ম্যানেজমেন্ট দুর্বল হলেও গরম হয়ে যায়। হার্ডওয়ার ম্যানেজমেন্ট দুর্বল থাকলে আমাদের কিছু করার থাকে না তবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে যদি আমরা সচেতন হই তবে স্মার্টফোনকে সহজে ঠান্ডা করা যায় অর্থাৎ গরমের মাত্রা কমানো যায়। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই স্মার্টফোন গরম হয় যেসব কারণে।

ব্যাকগ্রাউন্ডে প্রচুর অ্যাপ্লিকেশন চালু রাখা

“ফোন অতিরিক্ত গরম হওয়ার মধ্যে যতগুলো কারন রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম প্রাথমিক কারণ হলো ফোনে অনেকগুলো ব্যাকগ্রাউন্ড এপ্লিকেশন একসাথে চালু থাকা”, বলেছেন জেনেন টেকের ডিজিটাল এক্সপেরিয়েন্স ম্যানেজার চেলসি এসব্রুক। 

আবার প্রোপ্রাইভেসির একজন টেকনিক্যাল লেখক ডেমিয়ান ম্যাসন বলেছেন, “ব্যাকগ্রাউন্ডে অনেক গুলো এপ্লিকেশন চালু থাকলে ram এর উপর অতিরিক্ত প্রেসার পড়ে অতিরিক্ত সময় কাজ করার জন্য।” তাই কাজ শেষে মোবাইল স্ক্রিন অফ করার আগে অবশ্যই খেয়াল করুন ব্যাকগ্রাউন্ড এ কোন অ্যাপ্লিকেশন চালু আছে কিনা।

ব্রাউজারের ক্যাশে ক্লিয়ার না করলে

ফোনে ব্যাবহার করা বিভিন্ন ব্রাউজারে জমে থাকা ক্যাশে পরিষ্কার করা না হলেও ফোনের তাপমাত্রা বাড়তে পারে। চেলসি এসব্রুক এর মতে অতিরিক্ত ফাইল, ডকিউমেন্ট, কুকিজ এবং ক্যাশে স্মার্টফোনকে বাধ্য করে অতিরিক্ত সময় কাজ করতে কুকিজ এবং ক্যাশেগুলোকে অনবরত হালনাগাদ করতে। ফলে মোবাইলে অতিরিক্ত তাপমাত্রা উৎপন্ন হয়। 
যত বেশি ইন্টারনেট ব্রাউজিং করবেন আপনার মোবাইলের ফোন মেমোরিতে ততই ক্যাশে জমা হতে থাকে। তাই মোবাইলের ফোন মেমোরি বৃদ্ধি করতে এবং মোবাইলকে তাপমাত্রা হতে রক্ষা করতে মাসে কমপক্ষে একবার ক্যাশে ডিলিট করুন। ক্যাশে পরিষ্কার করার পদ্ধতি জেনে নিন এখান থেকে। 

অতিরিক্ত গেম খেললে

কিছু কিছু গেম রয়েছে এবং কিছু স্মার্টফোন রয়েছে যেগুলোতে গেম খেলার সময় অতিরিক্ত হিট জেনারেট হয়। তাই কখনো একটানা দুই তিন ঘন্টা গেম খেলা উচিত নয়। সর্বোচ্চ ১ ঘন্টা খেলার পরেই মোবাইলটি কিছুক্ষণের জন্য একদম অফ করে রাখা উচিত। 

তাছাড়া গেম খেলার উপযোগী স্মার্টফোন না হলে দীর্ঘ সময় অথবা অতিরিক্ত গেম খেলার কারণে এ ধরনের স্মার্টফোনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ যেমন ram, প্রসেসর এর উপর যেমন চাপ পড়ে তেমনি ব্যাটারি ড্রেনেজ হয় খুব বেশি। তাই আপনার ফোনের সক্ষমতা অনুযায়ী গেম খেলুন এবং মোবাইলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
স্মার্টফোন গরম হয় যেসব কারণে

বিভিন্ন কারণে অনেকক্ষণ স্ক্রিন অন রাখলে

স্মার্টফোনের স্ক্রিন অনেকক্ষণ যাবত চালু থাকলে অর্থাৎ অন থাকলেও তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। ধরুন আপনি ব্রাউজ করছিলেন এমন সময় বাসায় মেহমান আসলো। মেহমানের সাথে আপনি গল্প করতে থাকলেন দুই তিন ঘণ্টা পর এসে দেখেন আপনার মোবাইল অন আছে এবং মোবাইল গরম হয়ে গেছে। আবার অনেকে আছেন রাতে ঘুমানোর আগে মোবাইল না দেখলে ঠিকমতো ঘুম আসে না। 
হয়তো গেম খেলছিলেন অথবা ইউটিউব ব্রাউজিং করছিলেন। হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়েছেন এদিকে আপনার মোবাইলের “স্ক্রিন টাইম আউট” সেট করা আছে ৩০ মিনিট। এতক্ষণ অযথা স্ক্রিন অন থাকলেও আবার ব্যাকগ্রাউন্ডে অ্যাপ চলতে থাকলো। ফলে আপনার মোবাইলের তাপমাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক। তাই ব্যবহারের প্রয়োজন না হলে মোবাইলের স্ক্রিন অফ করে রাখুন এতে ব্যাটারি যেমন কম খরচ হবে মোবাইলের তাপমাত্রাও কম থাকবে।

মোবাইল ফোন চার্জে দিয়ে বিভিন্ন কাজ করা

কারো সাথে জরুরীর কথা বলছেন অথবা অফিসের কোন জরুরী মিটিং বাসায় করছেন। এমতাবস্থায় দেখা গেল মোবাইল ফোনে চার্জ নেই। অনেকেই আছেন মোবাইল ফোন চার্জে দিয়ে অনবরত কথা বলতে থাকেন। এক্ষেত্রেও মোবাইলের অভ্যন্তরে তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। আবার যাদের গেম খেলা নেশা রয়েছে তারা মোবাইল ফোন চার্জে দিয়ে গেম খেলেন। 

সেটাও একদম অনুচিত কাজ। চার্জে দিয়ে অনবরত ইন্টারনেট ব্রাউজিং এবং ডাউনলোড করলেও ফোনের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। একদিকে চার্জ হওয়ার কারণে তাপমাত্রা যেমন বাড়ে ঠিক তেমনি ফোনের ram এর উপর আলাদা প্রেসার পড়ে। আবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত চার্জ দিলেও মোবাইলের ভেতরে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। মোবাইলের চার্জ ১৫% না হলে নতুন করে চার্জ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

গরম তাপমাত্রায় মোবাইল ব্যবহার করলে

গ্রীষ্মকালে সাধারণত আমাদের দেশে তাপমাত্রা এমনিতেই অনেক গরম থাকে। তারপর আমরা যদি বাইরে সূর্যের আলোতে কোন কাজ করি সে ক্ষেত্রে সূর্যের তাপে স্ক্রিন গরম হয়ে গিয়ে মোবাইল ফোনের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। 
এছাড়াও পুরুষরা সাধারণত প্যান্টের পকেটে মোবাইল ফোন রাখে। বাইরে অনেকক্ষণ সূর্যের তাপে কাজ করার ফলে পকেটের ভেতরে তাপমাত্রা গরম হয়ে গিয়েও মোবাইলে তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই আমাদের খেলাটা উচিত কাজের সময় আমরা যেন অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রা অথবা শীতল পরিবেশে মোবাইলে কাজ করি।

ফোন অতিরিক্ত গরম হলে যেসব সমস্যা হয়

কার্যকারিতা কমে যায়
উচ্চ তাপমাত্রা ফোনের CPU (সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট) এবং GPU (গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট) এর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন হওয়া রোধ করতে। এর ফলে স্মার্টফোনের কার্যকারিতা হ্রাস পায় বিশেষ করে মাল্টি টাস্কিং এর সময়, অ্যাপ ডাউনলোডের সময়, গেম খেলার সময়। যদিও ফোনে তাপমাত্রা কমানোর জন্য সিপিইউ এবং জিপিইউ এর কার্যকারিতা কমিয়ে দেওয়ার বিষয়টি একটি সুন্দর কৌশল যার ফলে ফোন দীর্ঘায়ু হয়।

ব্যাটারি ড্রেইন
মোবাইল অতিরিক্ত গরম হয়ে গেলে অতিরিক্ত তাপমাত্রা ব্যাটারির ভেতরে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে এবং ব্যাটারির শক্তিকে নিষ্কাশন করা শুরু করে। এভাবে তাপমাত্রা যত বাড়বে ব্যাটারির শক্তি অর্থাৎ কার্যকারিতা ততটাই কমবে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যাটারির আয়ু যেমন কমবে পুরো স্মার্টফোনের সামগ্রিক কার্যকারিতাও কমে আসবে। 

এখনকার প্রায় সব স্মার্ট ফোনেই 5000 mah এর ব্যাটারি দেওয়া থাকে বিধায় অনেকে মনে করতে পারেন অনেক বড় ব্যাটারি অনেকক্ষণ ধরে কাজ করলে সমস্যা হবে না। কিন্তু আপনাকেই নির্ধারণ করতে হবে কোন অ্যাপ গুলো বা কোন কাজগুলো করলে ব্যাটারির উপর চাপ পড়ে। আর ব্যাটারির ওপরে কাজের যত প্রেসার পড়বে ফোনের তাপমাত্রা ততই বাড়বে।

মোবাইল স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয় এবং চালু হয়
অনেকক্ষণ যাবত ব্যবহার করার ফলে মোবাইলের তাপমাত্রা যদি মাত্রাতিরিক্ত বেশি হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে অনেক স্মার্টফোনের ইন্টারনাল সিস্টেম এরকম থাকে যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মোবাইল বন্ধ হয়ে যায় এবং রিস্টার্ট নেয়। আরো কোন ক্ষতি থেকে বাঁচানোর জন্য এই পদ্ধতি করা হয়ে থাকে। ফোনকে বড় কোনো ক্ষতির হাত থেকে সুরক্ষার এটি একটি ভালো পদ্ধতি হলেও কাজের জরুরি মুহূর্তে ফোন রিস্টার্ট নেয়া একটা বিরক্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। 
মনে করুন আপনার অফিসের কোন জরুরী মেসেজ এসেছে আপনাকে কোন মিটিং এটেন্ড করতে হবে, আপনি দেখতে গেলেন ফোনটি বন্ধ হয়ে গেল। অথবা আপনার অফিসের বসের সাথে কথা বলছেন হঠাৎ করে ফোনটি বন্ধ হয়ে গেল। তাই এ ধরনের বিব্রতকর অবস্থা এড়িয়ে চলতে চাইলে মোবাইলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের দিকে নজর দিন।

মোবাইল স্ক্রিন এবং ভেতরের যন্ত্রাংশের ক্ষতি হয়
মোবাইল ফোনের তাপমাত্রা অনবরত বাড়তে থাকা একটি অশনি সংকেত হতে পারে। এতে ফোনের ডিসপ্লে, অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সহ ব্যাটারির বিভিন্ন ক্ষতি যেমন ব্যাটারি ফুলে যাওয়া অথবা ব্যাটারির খুব দ্রুত চার্জ ফুরিয়ে যাওয়া অথবা খুব অল্প সময়ে চার্জ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি অসংলগ্ন আচরণ দেখা দিতে পারে। এছাড়াও ব্যাটারির আরো কিছু ক্ষতির ব্যাপারে আগেই আলোচনা করা হয়েছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে ডিসপ্লের কালার সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং স্পর্শ (টাচ) জনিত বিভিন্ন সমস্যার উদ্ভব হয়।
স্মার্টফোন গরম হয় যেসব কারণে


অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়
স্মার্টফোনের তাপমাত্রা অনবরত বাড়তে থাকলে স্মার্টফোনের কি কি সমস্যা হয় তা আমরা উপরে জানলাম। তবে তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে যদি আমরা সচেতন না হই তবে মোবাইলের নির্ধারিত আয়ুর আগেই মোবাইল ফোনের মেরামতের প্রয়োজন হতে পারে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে কল্পনাতীত অর্থ ব্যয় হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় মেরামতের চেয়ে একটি নতুন ফোন কিনা উত্তম। তাই আমাদের ফোনের দীর্ঘায়ু বজায় রাখতে এবং ফোনকে বেশিদিন কর্মক্ষম রাখতে স্মার্টফোনের তাপমাত্রার দিকে বিশেষভাবে নজর দিন।

পরিশেষে
উপরে স্মার্টফোনের যত্নের বিষয়ে বেশ কিছু আলোচনা করা হয়েছে বিশেষ করে স্মার্টফোনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে বলা হয়েছে। আমাদের স্মার্টফোনটিকে সচল রাখতে এবং দীর্ঘায়ু করতে আমরা এই স্মার্টফোনের ভেতরে উৎপন্ন তাপমাত্রার ব্যাপারে সচেতন থাকবো।

যাইহোক, স্মার্টফোন গরম হয় যেসব কারণে এবং গরম হওয়ার ফলে কি কি সমস্যা হতে পারে সে বিষয়গুলো নিজের মতো করে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করলাম। এতক্ষন ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, ভুল ত্রুটি হলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন। ভালো লেগে থাকলে পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url