সংসারে শান্তি বজায় রাখার উপায়
২০ হাজার টাকা বাজেটের মধ্যে ২০২৪ সালের সেরা পাঁচটি ফোন সম্পর্কে জেনে নিন
সংসারে অশান্তি? স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হচ্ছে? শান্তি ফিরিয়ে আনবেন কিভাবে বুঝতে পারছেন না? তাহলে আপনি সঠিক প্রবন্ধ পড়ছেন এবং মূলত আপনার জন্যই আজকের এই আর্টিকেলটি। এখান থেকে জানতে পারবেন সংসারে শান্তি বজায় রাখার উপায় কি কি।
“পরিবার” এর আজকের এ পর্বে আমরা সংসারে শান্তি বজায় রাখার উপায় নিয়ে আলোচনা করব। একটি সংসারের কেন্দ্রীয় চরিত্রে যেহেতু স্বামী স্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাই আজকের এই আলোচনার মূল বিষয় হলো স্বামী স্ত্রীর সংসারে অশান্তি দূর করতে করণীয়।
সংসারে শান্তি বজায় রাখার উপায়
আমরা সামাজিক জীব এবং সংসার পরিবার আমাদের প্রধান আশ্রয় স্থল। জন্মের পর থেকেই আমরা বাবা-মার সংসারে থেকে বড় হই এবং পরবর্তীতে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর নিজেরা বিয়ে-শাদীর মাধ্যমে সংসার স্থাপন করি। তবে শুধু বিয়ে করলে যে সংসার হয়ে যায় ব্যাপারটি সেরকম নয়। একটি সংসার চালাতে যেমন অর্থের প্রয়োজন তেমনি নিরাপত্তার সাথে সাথে সুখ শান্তিরও বিশেষ প্রয়োজন।
কিন্তু সংসারে শান্তি বজায় রাখার উপায় গুলো কি কি এবং অশান্তি দূর করতে করণীয় কি সে বিষয়ে আমরা অনেকেই উদাসীন। আজকের আর্টিকেলে মূলত আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করব। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে বিস্তারিত জেনে নেই।
স্যাক্রিফাইস করার মনোভাব থাকতে হবে
যেকোনো বিষয়ে স্যাক্রিফাইস করা স্বামী স্ত্রীর জন্য অনন্য একটি গুণ হতে পারে। স্যাক্রিফাইসের মতো গুণটি ধারণ করতে পারলে যেমন সংসারের শান্তি থাকে ঠিক তেমনি এটির অভাবে সংসার হয়ে উঠতে পারে অসহ্য। ধরুন স্বামী স্ত্রী দুজনেই চাকরি করেন। বিকাল বা সন্ধ্যাবেলায় দুজনেই চাকরি থেকে ফিরে বাসায় আসলেন। আসার পরে স্বামী যদি মনে করেন স্ত্রী এখন তাকে এক কাপ চা বানিয়ে খাওয়াবে তাহলে একই কথা কিন্তু স্ত্রী মনে করতে পারেন কারণ তিনিও অফিস শেষে বাসায় ফিরেছেন।
হ্যাঁ অনেক স্ত্রী আছেন যারা এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না, স্বামীকে বিকেলবেলা চা করে খাওয়ানো নিজের কর্তব্য মনে করেন তাদের কথা আলাদা। তাই সব সময় স্ত্রীরাই নাস্তা করে খাওয়াবে এমনটি না ভেবে স্বামীদের উচিত স্ত্রীদেরকেও অফিস শেষে নাস্তা বানিয়ে খাওয়ানো। যেকোনো ধরনের রান্না করা একটি শিল্প আর এতে নারী অথবা পুরুষ যে কেও দক্ষ হতে পারে।
একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া
একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হলে সংসারে কখনো সুখ থাকে না। আপনার স্ত্রীর কোন একটি গুণ নাও থাকতেই পারে এজন্য তাকে অবহেলা করা উচিত নয়। আবার আপনার স্বামী বেশি ইনকাম করে না ছোটখাটো একটা চাকরি করে এটা নিয়ে তাকে খোটা দেওয়াও সমীচীন নয়। আপনার সঙ্গীর যা কিছু আছে তার মধ্যে ভালো গুণগুলোকে মেনে নিয়েই সংসার করে যাওয়ায় বুদ্ধিমান স্বামী স্ত্রীর কাজ।
সবকিছুর ওপরে সংসারকে প্রাধান্য দেয়া
সংসারকে সুখী করতে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। স্বামী স্ত্রী উভয়কেই সব কিছুর উপর সংসার কে প্রাধান্য দিতে হবে। ধরুন স্ত্রী সমাজ সেবার কাজে জড়িত অথবা রাজনীতি ব্যক্তিত্ব অথবা কোন ব্যবসা করেন সেক্ষেত্রে তার নিজের কাজ নিয়ে উনি এতটাই ব্যস্ত সংসারে সময় দেওয়ার মতো সময় উনার কাছে নেই।
একইভাবে তার স্বামী হয়তো অফিস শেষ করে বন্ধুদের সাথে প্রত্যেকদিন আড্ডায় মেতে উঠেন। সংসার মানে শুধু রাতে একসাথে থাকা নয়, সারাদিনে বিনা কারণে একে অপরের খোঁজ নেয়া, বাসায় কখন আসবে সেটা জানতে চাওয়া, বিকেলবেলা একসাথে দুজনে চায়ের কাপে চুমুক দেওয়া - এসব অন্য ধরনের একটা অনুভূতি।
শশুর বাড়ির লোকজনকে গুরুত্ব দেয়া
সংসারে অশান্তির মূলে যেসব কারন রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে প্রাপ্য সম্মান না দেয়া। ৯০ দশকের বাংলা সিনেমা গুলোতে দেখা যেত স্ত্রীরা তাদের বাবা মাকে যতটা সম্মান দেখায় শশুর শাশুড়ি এবং শশুর বাড়ির লোকজনকে ততটাই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। এটি শুধু সিনেমাতে দেখা যায় তা নয় বাস্তবে সমাজেও এমনটা ছিল এবং এখনো এটি বিদ্যমান অনেক ফ্যামিলিতে।
খুব কম হলেও স্বামীরাও এই বদভ্যাস থেকে পিছিয়ে নেই। নিজের সঙ্গীর কাছ থেকে নিজের বাবা-মা ভাই-বোনদের অবজ্ঞা- এটা কেউ মেনে নিতে পারবে না। নিজের বাবা-মা যেমন আপনজন শশুর-শাশুড়িও তেমনি আপনজন। তাই বাবা-মার মত শ্বশুর শাশুড়ি এবং শশুর বাড়ির লোকজনদেরকে সম্মান কদর করুন পরিবারের শান্তি বজায় রাখুন।
যে কোন সিদ্ধান্ত আলাপ-আলোচনা করে নেয়া
একটি সংসার মানে স্বামী স্ত্রীর দুজনেরই সমান দায়িত্ব কর্তব্য থাকবে ঠিক তেমনি সমান অধিকার থাকবে। স্বামী সংসারের অর্থ যোগান দেয় বলে সকল সিদ্ধান্ত সেই একাই নেবে এটি যেমন ঠিক নয় তেমনি স্ত্রীও যদি ইনকাম করে তবে তার মতো সে সিদ্ধান্ত নেবে এই চিন্তাধারা থেকেও স্ত্রীকে বেরিয়ে আসতে হবে। সামান্য বাজার করার মত একটা সিদ্ধান্ত আলোচনা করতে হবে তবে কারো সিদ্ধান্তে কোনরকম যদি ভুল থেকে থাকে তবে সেটা যুক্তি সহকারে বুঝিয়ে বলতে হবে। ভুল বোঝাবুঝির করার সুযোগ যেন সৃষ্টি না হয়।
স্বামী স্ত্রীর মতামতকে গুরুত্ব দেয়া
স্বামী স্ত্রীর পবিত্র সম্পর্কের মধ্যে একটি গরুর দায়িত্ব হল একে অপরের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া। আপনার সঙ্গীর মতামত আপনার পছন্দ নাও হতে পারে তবে সেটি অবজ্ঞা বা তাচ্ছিল্য করে নয় তাকে বুঝিয়ে বলুন। আমি একাই সব জানি, সব বুঝি- এ ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে নগদে অশান্তি ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যাবে না। ধরুন আপনার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করবেন।
আপনার স্বামী বা স্ত্রী এক স্কুলের কথা বলছেন এবং আপনি আরেক স্কুলে ভর্তি করাতে চাইছেন। আপনার সঙ্গীর মতামতের গুরুত্ব না দিয়ে আপনার পছন্দমত স্কুলে ভর্তি করালে পরবর্তীতে আপনার স্বামী বা স্ত্রীও আপনার মতামতের কোন গুরুত্ব দেবে না।
একে অপরের সাথে সব সময় সত্য বলা
যেকোনো নীতিকথা শুধু জানলে আর বললেই হবে না মানতেও হবে। সামাজিক এবং ধর্মীয়ভাবে অত্যন্ত ভালো একটি গুণ হল সত্য কথা বলা। এটি শুধু চাকরি বা ব্যবসা ক্ষেত্রে নয় নিজের পরিবারের সাথেও সবসময় সত্যবাদীতার চর্চা করা উচিত। আর সংসারে সুখ শান্তি বজায় রাখতে স্বামী বা স্ত্রীর সাথে সত্য কথা বলা অপরিহার্য বিষয়।
ছাত্র জীবনের কোন বান্ধবীর সাথে আপনার হঠাৎ দেখা এবং কপি হিসাবে একা কফি খেয়েছেন তার সাথে। এই কথাটি অবশ্যই আপনার স্ত্রীর সাথে শেয়ার করবেন। এ ধরনের বিষয় গোপন করা মানে পরবর্তীতে বিপদে পড়া ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হওয়া।
পরনারী বা পর পুরুষের প্রতি আসক্ত না হওয়া
বর্তমান সমাজের একটি অন্যতম ব্যাধি এবং সমাজ ধ্বংসের কারিগর হচ্ছে পরকীয়া। আধুনিকতার নামে বর্তমান সমাজের নারী পুরুষ যেন উঠে পড়ে লেগেছে এর পরকীয়াকে বৈধতা দেওয়ার জন্য। ফলাফল প্রত্যেকেরই জানা। যত দিন যাচ্ছে ততই যেন বিবাহ বিচ্ছেদ অর্থাৎ ডিভোর্সের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তাই নিজের মনকে স্থির রাখুন, আল্লাহ তায়ালা সঙ্গী হিসেবে আপনাকে যার সাথে বিয়ে দিয়েছেন তার মধ্যেই বরকত রয়েছে। তাকে নিয়ে সুখে থাকার চেষ্টা করুন। পরকীয়ার মধ্যে কোন সুখ বা শান্তি নাই।
মাঝেমধ্যে একে অপরকে সারপ্রাইজ দেয়ার চেষ্টা করুন
বিয়ের কয়েক বছর পরে স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ের কাছেই বিয়েটা অনেকটা একঘেয়েমি, পানসে তরকারির মত মনে হয়। উদাসীনতা কিংবা কাজের চাপের কারণেই হোক এই সম্পর্কটাকে রঙিন করে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা আমরা করি না। আসলে বিয়ে হওয়ার ৪০ বছর পরেও কিন্তু সম্পর্ক সেটাই অর্থাৎ স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কই থাকে। তবে সম্পর্কটা কেমন সেটা বিচার করে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির উপরে।
নব্যবিবাহিত দম্পতি একে অপরের প্রতি যে পরিমাণ যত্ন নেয় বিয়ের কয়েক বছর পরে সন্তান-সন্ততি বা কাজের চাপের কারণে সেরকম যত্ন নেয়া হয় না। তাই মনে হয় সম্পর্কটা একঘেয়েমি হয়ে গেছে। এই একঘেয়েমি জিনিসটা দূর করতে সঙ্গীকে মাঝে মাঝে সারপ্রাইজ গিফট দিতে পারেন সব সময় যে দামী গিফট দিতে হবে এমন কথা নয়। এক ডজন কাচের চুড়ি বা একটি মানিব্যাগ উপহার হিসেবে দিতে পারেন।
সঙ্গীর ভুলগুলোকে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করুন
পৃথিবীর কোন মানুষ শতভাগ নিখুঁত নয়। তাই সংগীর কাজ থেকে নির্ভুল কোন কিছু আশা করা উচিত নয়। কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নয় ভুল নিয়েই আমরা সকলে। আপনি নিজেও কিন্তু শতভাগ নির্ভুল নন। তাই ছোটখাটো বিষয়ে ভুল ত্রুটি ধরে নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি না করে সেগুলোকে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করুন। আপনার যদি কোন ভুল হয় সে ক্ষেত্রে আপনার সঙ্গীও আপনার ভুলগুলোকে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করবে।
নিজস্ব মতামত
একটা কথা বহুল প্রচলিত আমরা সবাই সেটা জানি সেটি হল- “সংসার সুখের হয় রমনীর গুনে।” তবে আমরা অনেকেই জানি না বা মানতে চাই না যে শুধুমাত্র রমণী অর্থাৎ স্ত্রীর কারণে সংসারে সুখ আসে না সংসারের সুখে আনার পেছনে স্বামীরও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তাই আমি আমার মত করে পরের লাইনটি যোগ করে বলছি- “সংসার সুখের হয় রমনীর গুনে, যদি গুণবান স্বামী স্ত্রীর কথা শুনে।”
যদিও কথাটি আবিষ্কার হয়েছিল সেই সময়ে যখন অধিকাংশ নারীরাই ছিল গৃহিনী আর যেহেতু গৃহের সমস্ত দায়িত্ব থাকতো নারীদের উপরে তাই স্বামীরা নারীদের কথা শুনলেই তবে সংসারে শান্তি বজায় থাকতো। তাই বলে কি এখনকার প্রেক্ষাপটে কথাটি কার্যকর নয়? অবশ্যই কার্যকর। বর্তমান সময়ে স্বামী স্ত্রী দুজনেই যেহেতু চাকরি করে তাই সংসারের স্বার্থে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে হলেও একে অপরকে গুরুত্ব দিতে হবে।
যাইহোক, সংসারে শান্তি বজায় রাখার উপায় কি এবং অশান্তি দূর করতে করণীয় বিষয়ে জানলেন। এতক্ষণ ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভুল ত্রুটি হলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন। আর তথ্যপূর্ণ আরো অনেক লেখা পড়তে চাইলে নিয়মিত Mubin Pedia ঘুরে দেখতে পারেন।
মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url