কোলেস্টেরল কী এবং কেন হয় | কোলেস্টেরল থেকে মুক্তির উপায়
স্বাস্থ্যই সুখের মূল হলেও বর্তমান সময়ে সুস্বাস্থ্য রক্ষা করায় যেন একটি যুদ্ধের সমান। আমাদের অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে প্রতিনিয়ত। এর মধ্যে অন্যতম হলো উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল। এটি এমন একটি নীরব ঘাতক যেটি সব সময় লক্ষণ বা উপসর্গ প্রকাশ করে না কিন্তু শরীরের অভ্যন্তরে ক্ষতি করা শুরু করে।
তাই কোলেস্টেরল কী এবং কেন হয় এ বিষয়ে জানার পাশাপাশি আমাদের সচেতন থাকা উচিত যাতে করে শরীরের কিছু লক্ষণ দেখলেই বুঝতে পারব কোলেস্টেরল বেড়েছে এবং সেই সাথে কোলেস্টেরল থেকে মুক্তির উপায় গুলোও জানা জরুরী।
“স্বাস্থ্য” এর আজকের এই পর্বে আমরা কোলেস্টেরল সম্পর্কে যেমন কত ধরনের কোলেস্টেরল, ভালো না খারাপ, কোলেস্টেরল বেশি হলে কি সমস্যা হয় ইত্যাদি বিষয়ে জানব। আশা করি শুরু থেকে মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
কোলেস্টেরল কী এবং কেন হয়
কোলেস্টেরল সম্পর্কে জানতে সবার প্রথমে আমাদের জানা প্রয়োজন কোলেস্টেরল কী এবং কেন হয়। কোলেস্টেরল এক ধরনের চর্বি বা লিপিড। আমাদের শরীর কোটি কোটি কোষ দিয়ে গঠিত। শরীরের প্রয়োজনীয় কোষ গঠনে, হরমোন তৈরিতে এবং ভিটামিন তৈরি করতে কোলেস্টেরলের বিশেষ প্রয়োজন। আমাদের রক্তে থাকা প্রোটিনের সঙ্গে কোলেস্টেরল মিশে লিপিপ্রটিন হিসেবে রক্তে প্রবাহিত হয়। কোলেস্টেরল এক ধরনের তেলতেলে এবং চেটচেটে স্টেরয়েড যা প্রতিটি প্রাণীর কোষ ঝিল্লিতে পাওয়া যায়।
তবে সব প্রাণীর রক্তে এই উপাদান থাকলেও মানুষের জন্য এটি অত্যাবশ্যকীয়। সাধারণভাবে একটি ধারণা প্রচলিত, কোলেস্টেরল মানেই একটা খারাপ বা শরীরের জন্য ক্ষতিকর এরকম কিছু। তবে ধারণাটা পুরোপুরি সঠিক নয় কারণ আমাদের শরীরের জন্য কোলেস্টেরল প্রয়োজন তবে সেটি ক্ষতিকর হয়ে যায় যখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত শরীরের জমা হতে শুরু করে।
কোলেস্টেরল কত প্রকার?
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত প্রধানত দুই প্রকার কোলেস্টেরল আবিষ্কার করেছেন।
HDL কোলেস্টেরল
এইচডিএল বা High Density Lipoprotein বেশি ঘনত্ব যুক্ত লাইপোপ্রোটিন এর কোলেস্টেরল। এই ধরনের কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী এবং এটিকে “ভালো কোলেস্টেরল” বলা হয়। এইচ ডি এল কোলেস্টেরল এলডিএল কোলেস্টেরলকে ভেঙে পরিমানে কমাতে সাহায্য করে এবং আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতেও অবদান রাখে। তাছাড়া আমাদের শরীরের বিভিন্ন হরমোন, ভিটামিন, পিত্তরস এবং কোষ ঝিল্লি তৈরিতে এদের বিশেষ অবদান রয়েছে।
LDL কোলেস্টেরল
এলডিএল বা Low Density Lipoprotein হলো কম ঘনত্ব যুক্ত লাইপোপ্রোটিন এর কোলেস্টেরল। এই ধরনের কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং এজন্যই এটিকে “খারাপ কোলেস্টেরল” বলা হয়। এলডিএল কোলেস্টেরলের পরিমাণ যখন এইচডিএল কোলেস্টেরলের চেয়ে বেশি হয় তখন এটি রক্তনালীতে জমতে শুরু করে এবং রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। একসময় রক্তনালী সংকুচিত করে রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয় যার কারণে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের মতো গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি হয়।
ট্রাইগ্লিসারাইড
এছাড়াও আরেক ধরনের কোলেস্টেরল হল ট্রাইগ্লিসারাইড। ট্রাইগ্লিসারাইড মানবদেহের এক ধরনের সাধারণ চর্বি। এটি বিভিন্ন খাদ্যের মধ্যে স্নেহ জাতীয় অংশ থেকে আসে। ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে হার্ট অ্যাটাক স্ট্রোক এর মত ঝুঁকি বাড়াতে পারে কারণ রক্তনালিতে ট্রাইগ্লিসারাইডও জমা হতে শুরু করে। নিয়মিত ব্যায়াম এবং সুষম খাবার ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে
নরমাল কোলেস্টেরল লেভেল কত?
লিপিড প্রোফাইল টেস্টের মাধ্যমে কোলেস্টেরলের মাত্রা সহজেই জানা যেতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির শরীরে 120-200mg/dl এর মধ্যে টোটাল কোলেস্টেরল থাকা উচিত। এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা থাকা উচিত 100mg/dl এর নিচে। তবে এইচডিএল বা ভালো কোলেস্টেরল 50mg/dl এর বেশি থাকা উচিত। টোটাল কোলেস্টেরল এর স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি কোলেস্টেরল থাকলেই সেটি হাই কোলেস্টেরল হিসেবে বিবেচিত হয়।
দৈনিক কতটুকু কোলেস্টেরল প্রয়োজন?
খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ নুসরাত জাহানের মতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২৫০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল প্রয়োজন। এই পরিমাণ পর্যন্ত কোলেস্টেরল একজন ব্যক্তির দেহে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে তবে এর চেয়ে বেশি কোলেস্টেরল শরীরে প্রবেশ করলে কোন কোন ক্ষেত্রে ক্ষতিও হতে পারে। আর যাদের হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে তাদের দৈনিক অবশ্যই ২০০ মিলিগ্রামের কম কোলেস্টেরল প্রয়োজন।
টোটাল কোলেস্টেরল কি?
টোটাল কোলেস্টেরল বলতে একজন ব্যক্তির শরীরে ভালো কোলেস্টেরল এবং খারাপ কোলেস্টেরল মিলিয়ে মোট কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কত সেটি বোঝায়।
লিপিড প্যানেল কি?
লিপিড প্যানেল হল এমন একটি সাধারন রক্ত পরীক্ষা যেখানে যাচাই করা হয় হৃদযন্ত্রে কোন সমস্যা এবং ঝুঁকি আছে কিনা। এই পরীক্ষায় সাধারণত রক্তে কোলেস্টেরল লেভেল এবং ট্রাই গ্লিসারাইড এর মাত্রা নির্ণয় করা হয়।
কোলেস্টেরল হলে কি কি অসুবিধা হয়?
বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় কোলেস্টেরলের উপস্থিতি ধরা পড়ে না। আগেই বলা হয়েছে কোলেস্টেরলের সেরকম কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যায় না। আমরা জানি কোলেস্টেরল মূলত রক্তনালিতে জমা হতে থাকে। জমা হতে হতে রক্তনালীকে সরু করে দেয় এবং রক্ত প্রবাহকে বাধা প্রদান করে।
রক্ত প্রবাহে বাধা প্রদানের ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত সরবরাহ কমে যায়, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিডনি, হার্ট, মস্তিষ্ক। কোলেস্টেরল অতিমাত্রায় জমা হয়ে গেলে রক্তনালী পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এটা কে বলা হয় “প্লাক”। মস্তিষ্ক এবং হৃদপিণ্ডর কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের মাধ্যমে স্ট্রোক হয়।
এছাড়াও কোন কোন রোগীর ক্ষেত্রে শরীরে বিভিন্ন অংশে গোটা গোটা আকৃতির মত লিপিড জমা হতে থাকে। রক্তে লাইপোপ্রোটিন বা ফ্যাটের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে সেটিকে বলা হয় হাই কোলেস্টেরল এবং এই হাই কোলেস্টেরল মৃত্যু ঝুঁকি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
শরীরে যেসব লক্ষণে বুঝবেন কোলেস্টেরল বেড়েছে
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এবং বেশিরভাগ ব্যক্তির শরীরেই কোলেস্টেরলের সেরকম লক্ষণ বা উপসর্গ প্রকাশ পায় না। সাধারণত টেস্ট করার মাধ্যমে শরীরে এর উপস্থিতি জানা যায়। তবে ইন্ডিয়ান বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা খুব বেশি হয়ে গেলে শারীরিক কিছু লক্ষণ থাকে যেগুলো লক্ষ্য করলে বোঝা যায় কোন ব্যক্তি কোলেস্টেরলের ঝুঁকিতে রয়েছে।
- অনেকক্ষণ যাবৎ হাঁটাহাঁটি করলে বা দৌড়ালে বা কোন উদ্বিগ্নের কারণ থাকলে হৃদ স্পন্দন বেড়ে যায় এটা স্বাভাবিক। তবে কোনো কারণ ছাড়াই কোলেস্টেরল বৃদ্ধির কারণেও হৃদ স্পন্দন বেড়ে যেতে পারে।
- শারীরিক যে কোন কাজ করার সময় উচ্চ কোলেস্টেরল যুক্ত ব্যক্তিদের প্রায় শ্বাসকষ্টে ভুগতে দেখা যায়। শ্বাস নিতে তাদের অনেক কষ্ট হয় এবং তারা বুক ভরে শ্বাস নিতে পারে না।
- সুস্থ মানুষের চোখের মনির চারপাশে সাদা অংশটা স্বচ্ছ সাদা থাকবে। তবে কোলেস্টেরলের মাত্রা যদি বেড়ে যায় তবে সেই সাদা অংশটি ধূসর বর্ণ দেখাবে।
- খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল এর প্রধান কাজই হল রক্ত প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করা। পুরো শরীরে যেহেতু পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে না তাই অল্প কাজ করলেই উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত ব্যক্তিরা ক্লান্তি বোধ করেন।
- চোখের বর্ণ দেখেও বোঝা যায় কোলেস্টেরলের উপস্থিতি। সাধারণত বেশ কিছুদিন যাবত চোখ যদি হলুদাভ হয়ে থাকে তবে ধারণা করা যেতে পারে এটি কোলেস্টেরলের লক্ষণ। তবে চোখের হলুদাভ বিষয়টি কোলেস্টেরলের জন্য নাকি জন্ডিসের জন্য তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে অনেক সময় পায়ে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হয় না ফলে বাইরে গরম থাকা সত্ত্বেও পা ঠান্ডার অনুভূতি দেয়।
- মানব শরীরে হৃদপিণ্ড থেকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত সমস্ত শরীরের সঞ্চালিত হয় ধমনীর মাধ্যমে। কিন্তু কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে ধমনীর গায়ে ফ্যাট জমতে শুরু করায় ধমনী সরু হয়ে রক্ত সঞ্চালনের বাধা প্রাপ্ত হয়। এর ফলে হৃদপিণ্ড থেকে অনেক দূরবর্তী অঙ্গগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত সরবরাহ করতে পারেনা। তখন সেই অঙ্গ গুলির কোষ গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বিভিন্ন সমস্যার সূত্রপাত হয়। একে বলা হয় পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ বা পিএডি। অন্ত্রে এই সমস্যা হলে বারবার মলত্যাগের বেগ আসে ডায়রিয়া বা আমাশয় না হওয়া সত্ত্বেও। এই লক্ষণ সাধারণত হাই কোলেস্টেরলের কারণেই দেখা দেয়।
- উচ্চ কোলেস্টেরল শরীরের অন্যান্য অংশের মত মস্তিষ্কেও রক্ত প্রবাহে বাধা প্রদান করে। ফলে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রম কিছুটা হলেও ব্যাহত হয়। এতে করে মাথা, ঘাড়, মস্তিষ্কের পেছনে ব্যাথা সহ স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে ওজন বেড়ে যাওয়া, শরীরের কোন কোন অঙ্গ ফুলে যাওয়া অথবা পুরো শরীর ফুলে যাওয়ার মত উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
- তাছাড়া শরীরের যে কোন অংশের ত্বকে হলদেটে রঙের চাকা চাকা গোটা দেখা যায়। এটি মূলত কোলেস্টেরলের আধিক্যের কারণেই হয়ে থাকে।
- এছাড়াও অল্পতেই ঘেমে যাওয়া এবং ক্ষুধা হ্রাসের মতো কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
কি কি খাবার খেলে কোলেস্টেরল বাড়ে?
বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় বর্তমান তরুণ প্রজন্মের মাঝেও হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনার দিনে দিন বেড়ে চলেছে। এর অন্যতম কারণ হলো অসুস্থ খাদ্যাভ্যাস এবং পরিশ্রমে অনীহা। কত আন্দোলন প্রজন্ম স্বাস্থ্যকর খাবারের চেয়ে অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে বেশি উৎসাহী। তারা বিভিন্ন জাঙ্ক ফুড যেমন মম, পাস্তা, পিজ্জা সহ বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত এবং প্যাকেটজাত খাবার খেয়ে থাকে।
এসব খাবার সুস্বাদু করার জন্য অতিমাত্রায় ট্রান্স ফ্যাট সংযোজন করা হয় যেটি শরীরে কোলেস্টেরল বাড়িয়ে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া বিভিন্ন স্ট্রিট ফুড এবং তেলেভাজা চপচপে খাবার যেমন পিয়াজু, বেগুনি, সিঙ্গারা, পুরি, চপ, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিপস ইত্যাদি কোলেস্টেরল বাড়াতে পারদর্শী। আবার অনেকে আছেন গরু খাসির মাংসের সাথে এগুলোতে থাকা চর্বিও খেতে খুব পছন্দ করেন। কিন্তু কোলেস্টেরল কমাতে চাইলে এসব চর্বি একদমই খাওয়া চলবে না।
দুধে কি কোলেস্টেরল আছে?
দুধে যে ফ্যাট থাকে সেটা একদমই প্রাকৃতিক আর প্রাকৃতিক কোন কিছুই শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। তাই দুধ খেলে কখনো কোলেস্টেরল বাড়বে না। তবে পাস্তুরিত দুধ বা প্রক্রিয়াজাতকরণ দুধ খেলে সেখানে যে ফ্যাট থাকে সেটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং এরকম দুধ খেলে এলডিএল কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কোলেস্টেরল থেকে মুক্তির উপায়
চিকিৎসকদের মতে “স্বাস্থ্যকর জীবন” এবং “সঠিক খাদ্যাভ্যাস” কোলেস্টেরল থেকে মুক্তি দিতে পারে। কোলেস্টেরল থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে এই স্বাস্থ্যকর জীবন এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি অন্যান্য অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হলো -
- বসে থাকা কাজ পরিহার করে অথবা অলসতা না করে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা। শারীরিক পরিশ্রম ভালো কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।
- বাসায় বা জিমে নিয়মিত ব্যায়াম করা।
- অথবা সকাল সন্ধ্যায় কমপক্ষে ৪০ মিনিট করে হাঁটা।
- ধুমপান মধ্যপান সহ যেকোনো ধরনের নেশা পরিহার করা।
- রাত দশটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়া এবং খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠা।
- ২৪ ঘন্টায় ছয় থেকে সাত ঘন্টা স্বাস্থ্যকর ঘুম দেয়া।
- জিভে জল ফেলা যেকোনো ধরনের জাঙ্ক ফুডকে চির বিদায় জানানো।
- স্ট্রিট ফুড একদম পরিহার করা।
- অতিরিক্ত তেলে ভাজা, মসলাদার যুক্ত খাবার বাদ দেয়া।
- ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা অর্থাৎ অতিরিক্ত ফ্যাট রয়েছে এরকম খাবার যেমন গরু-খাসির মাংস, যেকোনো ধরনের চিংড়ি খাওয়া পরিহার করা।
- মাংসের অতিরিক্ত চর্বি না খাওয়া।
- বেশি বেশি মাছ বিশেষ করে ছোট মাছ, ইলিশ মাছ, সামুদ্রিক মাছ খাওয়া।
- সব ধরনের শাকসবজি বেশি পরিমাণে খাওয়া।
- আঁশ জাতীয় এবং শস্য জাতীয় খাবার যেমন লাল চাল, লাল আটার রুটি, বার্লি, ওটস, যে কোন বীজ যেমন মটরশুটি, কাঁঠালের বিচি, সিমের বিচি ইত্যাদি খাওয়া।
- কাঁচা পাকা সহ যেকোনো ফল নিয়মিত খাওয়া।
শেষ কথা
ডায়াবেটিসের মতো কোলেস্টেরলও একটি নীরব ঘাতক। কোলেস্টেরলের কারণে শরীরে বড় কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা এটা জানার জন্য রক্ত পরীক্ষা করা পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত নয়। উপরে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে যে লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেতে পারে সেগুলো জেনে আমাদের খেয়াল করা উচিত আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের কোন প্রভাব শুরু হয়েছে কিনা। যথাসময়ে সচেতন হলে এবং জীবনযাপন এবং খাদ্যাভাসের পরিবর্তন এর মাধ্যমে কোলেস্টেরল থেকে মুক্ত হয়ে আমরা সুস্থ জীবন পেতে পারি।
যাইহোক, কোলেস্টেরল কী এবং কেন হয়, কোলেস্টেরল কত প্রকার, নরমাল কোলেস্টেরল এর লেভেল, কোলেস্টেরল থেকে মুক্তির উপায় সহ বিভিন্ন তথ্য আপনাদের জানানোর চেষ্টা করলাম। আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি। এ লেখাপড়া যদি ভালো লাগে এবং নতুন কিছু জেনে থাকেন তবে কমেন্টে লিখে জানাতে পারেন। এরকম তথ্য ভুল আরো অনেক লেখা রয়েছে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করার আমন্ত্রণ থাকলো। পরবর্তীতে নতুন কোনো লেখায় আবারো আপনাদের সাথে যোগাযোগ হবে। সেই পর্যন্ত ভালো থাকুন, ধন্যবাদ।
মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url