কীভাবে বুঝবেন আপনার অ্যালার্জি আছে

আপনার কয়েকদিন যাবত খুব হাঁচি পড়ছে, নাক দিয়ে পানি পড়ছে, শরীর মেজ মেজ করছে। ভাবছেন ঠান্ডা লেগেছে। অ্যালার্জি আছে কিনা বুঝতে পারছেন না? তাহলে আজকের আর্টিকেলটা আপনার জন্য। এই আর্টিকেল পড়ে জানতে পারবেন কীভাবে বুঝবেন আপনার অ্যালার্জি আছে কি নেই।
কীভাবে বুঝবেন আপনার অ্যালার্জি আছে

"স্বাস্থ্য" এর আজকের এই পর্বে আমরা জানার চেষ্টা করব কীভাবে বুঝবেন আপনার অ্যালার্জি আছে এর পাশাপাশি অ্যালার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়, অ্যালার্জির লক্ষণ এবং অ্যালার্জি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য যেমন অ্যালার্জি কি এবং কেন হয়, অ্যালার্জি কত ধরনের, অ্যালার্জি ছোঁয়াচে কিনা ইত্যাদি। তথ্যগুলো জানতে হলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে। 

অ্যালার্জি কি এবং কেন হয়?

সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিটি মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে। এটিকে ইংরেজিতে বলা হয় ইমিউন সিস্টেম (Immune System)। এই ইমিউন সিস্টেমের কাজ হল বাইরের যে কোন জীবাণু থেকে শরীরকে প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করা। আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম তখনই কার্যকরী হয়ে ওঠে যখন বাইরে থেকে কোন জীবাণু যেমন ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাস বিভিন্ন ধরনের পরজীবী আমাদের শরীরে আক্রমণ করে। 

আর এসব জীবাণু সাধারণত ধুলোবালি, যেকোনো কিছু সংস্পর্শে আসলে বা বাতাসের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। আমাদের শরীরের এই ইউনিয়ন সিস্টেমের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সময় কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয় যেটিকে অ্যালার্জি বলা হয়। মনে প্রশ্ন আসতে পারে রোগ প্রতিরোধ করার জন্য জীবাণুর বিরুদ্ধে মোকাবেলা করলে আবার সমস্যা কোথায়? 

সমস্যা তখনই হয় যখন আমাদের ইমিউন সিস্টেম অক্ষতিকর কোন বস্তুকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে জোরপূর্বক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কার্যক্রম শুরু করে। তখন এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমাদের শরীরে বিশেষ কিছু লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দেয় যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে ত্বকে চুলকানি, ফুসকুড়ি, ত্বকে র‍্যাস ওঠা, হাঁচি, কাশি শ্বাসকষ্ট ইত্যাদির মাধ্যমে। 

তাই অ্যালার্জি মূলত বিশেষ কোন রোগ নয়, এটি আমাদের শরীরকে জীবাণু থেকে রক্ষা করার বিরূপ প্রতিক্রিয়া মাত্র। তবে অ্যালার্জির উপসর্গগুলো কোন কোন ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন স্থায়ী হয় বলে এটিকে কোন কোন বিশেষজ্ঞ রোগ হিসেবেও আখ্যা দিয়ে থাকেন। উল্লেখ্য যেসব বস্তুর কারণে অ্যালার্জি হয় সেগুলোকে অ্যালার্জেন বলা।

অ্যালার্জির লক্ষণ

ব্যক্তি বিশেষে অ্যালার্জির লক্ষণের ভিন্নতা দেখা দেয় অর্থাৎ একজন মানুষের শরীরের সংবেদনশীলতা বা সেনসিটিভিটির উপর নির্ভর করে অ্যালার্জির লক্ষণ বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। লক্ষণ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় হাঁচি। এছাড়াও দেখা দিতে পারে চুলকানি, চামড়া ফুলে যাওয়া, গোটা গোটা হয়ে লাল চাকা হওয়া, ত্বকে জ্বালাপোড়া করা, ঘামাচির মত ছোট ছোট দানা, শুকনো কাশি। অবস্থা আরো গুরুতর হলে পেট ব্যথা, রক্তচাপ কমে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট। সময় মত ব্যবস্থা না নিলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।

অ্যালার্জি কত ধরনের হয়?

  • অ্যালার্জিক রাইনাইটিস
  • অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস
  • অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস
  • অ্যালার্জিক কন্ট্রাক্ট ডার্মাটাইটিস
  • অ্যানাফাইলেকটিক রিঅ্যাকশন
  • ত্বকের অ্যালার্জি
  • অ্যাকজিমা
  • পোষা প্রাণী থেকে অ্যালার্জি
  • খাবার থেকে অ্যালার্জি
  • ওষুধ থেকে অ্যালার্জি
  • অ্যাজমা বা হাপানি
  • আর্টিকেরিয়া

অ্যালার্জি কি ছোঁয়াচে

অনেকের ধারণা অ্যালার্জি ছোঁয়াচে তবে চিকিৎসকদের মতে এ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। বাসার একজনের অ্যালার্জি হলে যে সবার অ্যালার্জি হবে সেরকম নয়। আবার এরকম কথা অনেকে বলে থাকেন যে বাবা-মার থাকলে অর্থাৎ পারিবারিক সূত্রে অ্যালার্জি হয়। তবে এটিও সঠিক নয় কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে এমন হয়ে থাকতে পারে সেটিও কেবল চিকিৎসক গনই বুঝতে পারবেন।

অ্যালার্জি কি বায়ুবাহিত রোগ?

কিছু কিছু অ্যালার্জেন যেমন ধুলোবালি, পরাগরেণু ইত্যাদি বাতাসে ভেসে বেড়ায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে এগুলো আমাদের শরীরের ভেতরে প্রবেশ করার পাশাপাশি আমাদের শরীরেও এসে লাগে। ফলে অনেক সময় এগুলো থেকেও অ্যালার্জির উৎপত্তি হয়। সেই অর্থে অ্যালার্জিকে বায়ুবাহিত রোগ বলা যেতে পারে।

কীভাবে বুঝবেন আপনার অ্যালার্জি আছে

অ্যালার্জি সম্পর্কে যাদের মোটামুটি ধারণা রয়েছে তাদের কাছে অ্যালার্জি একটি আতঙ্কের নাম। আর অ্যালার্জি বিষয়ে যারা সচেতন তারা ইচ্ছামত যেকোনো জায়গায় যেতে অথবা যে কোন খাবার খেতে পারেন না। তারা প্রতিনিয়ত অ্যালার্জি দূর করার উপায় খুজতে থাকেন। আর যারা জানেন না তারা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন। 

আবার অনেকে আছেন যারা জানেন না তাদের অ্যালার্জি আছে কিনা।তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে আজকের আর্টিকেল থেকে জেনে নেই কীভাবে বুঝবেন আপনার অ্যালার্জি আছে। বিভিন্ন রকম অ্যালার্জি হলে নিচে উল্লেখিত কোন না কোন সমস্যা দেখা দিবে। আর এসব সমস্যা হলেই বুঝবেন আপনার অ্যালার্জি আছে।

অ্যালার্জিক রাইনাইটিস
ঘরবাড়ি পরিষ্কার করতে গিয়ে ধুলাবালিতে হাঁচি কাশি শুরু হওয়া অথবা বাইরে রাস্তায় প্রচন্ড ধুলাগালিতে হাঁচি পড়তে শুরু করা, সামান্য ঠান্ডা আবহাওয়ায় ফ্যানের বাতাসে গলা ব্যথা থেকে শুরু করে সর্দি কাশি হওয়া, এসিতে কিছুক্ষণ বসে থাকলে হাঁচি পড়া, ঠান্ডা পানি, নদীতে বা পুকুরে গোসল করলে ঠান্ডা লেগে যাওয়া, ঠান্ডা পানীয় পান করলে সর্দি কাশি শুরু হওয়া বা টনসিল ব্যথা হয়ে যাওয়া- এই লক্ষণগুলো সাধারণত অ্যালার্জির। 

এই কাজগুলো করলে বা এ লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেলে বুঝতে হবে সেই ব্যক্তি অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে। এগুলোকে বলা হয় অ্যালার্জিক রাইনাইটিস। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাইনো ভাইরাস অ্যালার্জিক রাইনাইটিস ঘটাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। যেসব ব্যক্তির অ্যালার্জির সমস্যা নেই তাদের সাধারণত উপরোক্ত পরিবেশে উপরোক্ত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় না। 

অ্যালার্জিক রাইনাইটিস সাধারণত মিউকাস মেমব্রেনকে আক্রান্ত করে এবং হিস্টামিনের প্রভাবে প্রচুর পরিমাণে মিউকাস উৎপন্ন হয় যা আমাদের সর্দির মাধ্যমে বের হয়ে আসে। লিউকোট্রিন নামের এক প্রকারের পদার্থ শ্বাসযন্ত্রকে উজ্জীবিত করায় কাশি শুরু হয়। এছাড়া এসব উদ্দীপকের কারণে গলা খুসখুস করে, বারবার হাঁচি কাশি পড়ে, নাক দিয়ে পানি ঝরতে শুরু করে এবং শরীরে খুব সামান্য পরিমাণ হলেও জ্বর থাকে। 

অ্যালার্জিক রাইনাইটিস সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে- সিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস এবং পেরিনিয়াল অ্যালার্জিক রানাইটিস। বছরের একবার একটি নির্দিষ্ট সময় স্বল্প সময়ের জন্য রাইনাইটিস হলে সেটি সিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস এবং বছরে বারবার বিভিন্ন সময়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য অ্যালার্জি হলে সেটা পেরিনিয়াল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস।
কীভাবে বুঝবেন আপনার অ্যালার্জি আছে

অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস
অ্যালার্জির কারণে চোখের বিভিন্ন উপসর্গ এবং সমস্যা দেখা দিলে সেটাকে বলা হয় অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস। এই অ্যালার্জির কারণে চোখ লাল হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মাঝেমাঝে ফুলে যেতে পারে, চোখ চুলকায়, চোখ দিয়ে পানি পড়ে, ব্যথা করতে পারে। সাধারণত শিশুদের মধ্যে এটি বেশি দেখা গেলেও বড়দের মাঝেও এটি দেখা যায়। সাধারণত ধুলা বালির সংস্পর্শে আসলে অথবা ঠান্ডা লাগার সমস্যা থাকলে এই অ্যালার্জির উপদ্রব বেশি দেখা যায়।

খাবারের অ্যালার্জি
যত ধরনের অ্যালার্জি রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম বিরক্তিকর হলো খাবারের অ্যালার্জি। এই অ্যালার্জিতে যারা আক্রান্ত হয়ে থাকেন তারা সাধারণত শান্তি করে খেতে পারেন না পছন্দের খাবার। খাবারেরে অ্যালার্জির মূল হোতা হল বিভিন্ন মুখরোচক খাবার যেমন ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, বেগুন, বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ, গরুর মাংস, পুঁইশাক, পালং শাক ইত্যাদি। 

এসব খাবার খাওয়ার পরে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে চুলকানি শুরু হয়, শরীরে গোটা গোটা হয়ে যায়, মাঝেমধ্যে বমি বমি ভাবও হতে পারে। তাই এসব খাবার সাধারণত অ্যালার্জি আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য উপযোগী নয় যদিও এগুলো অন্যান্য সাধারণ ব্যক্তিদের জন্য কোন ক্ষতির কারণ হয় না। এ খাবারগুলো সাধারণত অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে থাকে।

ওষুধের অ্যালার্জি
কিছু কিছু বিশেষ ঔষধ রয়েছে যেগুলো কোন কোন ব্যক্তির শরীরে শুট করে না। যেমন অ্যান্টিবায়োটিক খেলে কিছু কিছু মানুষের শরীরে চুলকানি শুরু হয় এবং পুরো শরীর চুলকাতে চুলকাতে লাল হয়ে যায়, আরো মারাত্মক অবস্থা হলে শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। এমন হওয়া মাত্রই বুঝতে হবে সেই ব্যক্তির অ্যালার্জি শুরু হয়েছে এবং সেই বিশেষ ওষুধের প্রতি তার উচ্চমাত্রার সংবেদনশীলতা রয়েছে। যদি মারাত্মক অবস্থা হয় তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এই ওষুধের ব্যাপারে।

অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস
ধোপা বা যারা লন্ড্রি তে কাজ করে অথবা যারা কাপড় চোপড় বেশি কাচে, বাসা বাড়ি পরিষ্কার করার কাজ করে অর্থাৎ সাবান, ডিটারজেন্ট এর মত বিভিন্ন পদার্থের সংস্পর্শে যাদের বেশি থাকতে হয় তাদের সাধারণত অ্যাটোপিক অ্যাকজিমা অ্যালার্জি বেশি হয়। এই অ্যালার্জির উপসর্গ হিসেবে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে, খসখসে হয়ে যায়, চুলকানি হয়, অবস্থা মারাত্মক আকার ধারণ করলে ত্বক ফেটে যেতে পারে এবং সেই সাথে রক্তপাত হতে পারে। এ ধরনের সমস্যায় পড়লে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

অ্যানাফাইলেকটিক প্রতিক্রিয়া
কোন কোন মানুষের এমন হয় যে কোন কীটপতঙ্গ কে প্রচন্ড অপছন্দ করে কিন্তু কোন কারণে তার গায়ে এসে পড়লে বা সংস্পর্শে আসলে (যেমন তেলাপোকা) বা তার কামড়ে অথবা কোন ওষুধ বা খাবার খেলে, ফুলের রেনুর সংস্পর্শে আসলে, অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা আবহাওয়ায় হঠাৎ শরীরে ফুসকুড়ির মত চুলকানি শুরু হয়, লাল লাল চাকা উঠে এবং শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত হতে পারে। 

হাত পা ঠান্ডা হয়ে অসাড় হয়ে যেতে পারে, রক্তচাপ কমে অজ্ঞান পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। এরূপ অবস্থাকে সাধারণত অ্যানাফাইলেকটিক প্রতিক্রিয়া বলা হয়। এই ধরনের এলার্জি বুঝতে পারলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতাল নিতে হবে রোগীকে।

অ্যাকজিমা
অ্যাকজিমা একটি চর্মরোগ হলেও কোন কোন সময় বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে অ্যাকজিমার বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, চুলকায়, লালচে হয়, বেশি চুলকানোর ফলে চামড়া ফেটে গিয়ে পানি বা তরল জাতীয় পদার্থ সেখানে বের হয়। এটি শিশুদের মধ্যে মুখে ও ঘাড়ে দেখা যায় এবং বড়দের মধ্যে বিশেষ করে হাতে এবং পায়ের আঙ্গুলের ভাজে বেশি দেখা যায়।

আর্টিকেরিয়া
কারো ত্বকে যদি লালচে ফোলা ফোলা ভাব হয় এবং সেগুলোতে প্রচন্ড চুলকায় তবে বুঝতে হবে সে ব্যক্তি আর্টিকেরিয়া অ্যালার্জিতে আক্রান্ত। আর্টিকেরিয়ার ফলে ফোলা অংশগুলো কিছুক্ষণ স্থায়ী থাকে তবে মাঝেমাঝে দীর্ঘক্ষনও স্থায়ী হতে পারে। আবার বারবার এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। সাধারণত ছোট বাচ্চাদের আরটিকেরিয়া হলে সেটা স্বল্পস্থায়ী হয় এবং বড়দের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী আরটিকেরিয়া দেখা দেয়। 
কীভাবে বুঝবেন আপনার অ্যালার্জি আছে
ছোট ছোট ঘামাচির মত অ্যালার্জি

কিছু শিশু বাচ্চার ক্ষেত্রে সহজেই চুলকানি শুরু হয় এবং চুলকানোর জায়গা গুলো লালচে হয়ে যায় এটিকে বলা হয় অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোন জিনিসের সংস্পর্শে আসলে শরীরের ত্বকে এক ধরনের ব্যথা অনুভব হয় এটিকে বলা হয় অ্যালার্জিক কন্ট্রাক্ট ডার্মাটাইটিস।

অ্যাজমা
আপনার যদি শ্বাস প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার সময় বুকের ভেতরে সো সো আওয়াজ করে, ফুসফুস পূর্ণ করে দম নিতে না পারেন, শুয়ে থাকলে যদি বুকে চাপ অনুভব করেন তবে বুঝতে হবে অ্যালার্জিজনিত কারণে আপনার অ্যাজমা হয়েছে।

পোষা প্রাণী থেকে এলার্জি
অনেকেই বাসায় বিভিন্ন প্রাণী যেমন কুকুর বিড়াল খরগোশ পুষে থাকেন। অনেকে ধারণা করেন এদের লোম থেকে সাধারণত হাঁচি কাশি অর্থাৎ অ্যালার্জির সূত্রপাত হয়। তবে এ ধারণাটি ভুল। পোষা প্রাণীর লোমে বিভিন্ন অ্যালার্জেন যেমন লালা বা বর্জ্য থাকতে পারে সেগুলোর কারণেই মূলত অ্যালার্জি হয়। এই ধরনের অ্যালার্জিতে সাধারণত হাঁচি এবং শ্বাসকষ্ট হয়।

অ্যালার্জি থেকে মুক্তির উপায়

আসুন জেনে নেই অ্যালার্জি দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায়।
  • বাচ্চাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা দূর করার জন্য ছোটবেলা থেকে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। বাচ্চাদের শরীর ঘষে ঘষে কখনো গোসল করানো যাবে না। গোসলের আগে এবং পরে ময়শ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে অবশ্যই শিশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। বাচ্চাদের গরমে সুতি এবং শীতকালে ফ্লানেল কাপড়ের জামা পরাতে হবে।
  • অ্যালার্জির বিভিন্ন লক্ষণ এবং উপসর্গ দেখা দিলে আপনাকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে কোন বিশেষ কারণে বা উৎসর জন্য আপনার অ্যালার্জি সমস্যা হচ্ছে।
  • ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, বিছানা সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • বাড়ি পোকামাকড় মুক্ত রাখতে হবে। তেলাপোকা, পিঁপড়া, মাকড়সা বাসা থেকে দূরে রাখতে হবে।
  • অল্প ধুলাবালিতে যাদের অ্যালার্জি সমস্যা তাদের বাসা পরিষ্কার করার সময় এবং বাসার বাইরে যাওয়ার সময় অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে।
  • বাসায় পোষা প্রাণী থাকলে তাদের পরিচর্যা করার সময় মাস্ক পরিধান করে নিয়মিত গোসল করিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • বিভিন্ন প্রসাধনী যেমন সাবান, লোশন, ক্রিম, মেকআপ, পারফিউম ইত্যাদি ব্যবহারের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।
  • ত্বক ফর্সাকারি বিভিন্ন নিম্নমানের ক্রিমে উচ্চ মাত্রার স্টেরয়েড থাকে যেটা ত্বকের ক্ষতি করে থাকে এবং নিয়মিত ব্যবহারের এক পর্যায়ে অ্যালার্জির সূত্রপাত ঘটায়।
  • ঠান্ডা লাগার সমস্যা থেকে থাকলে এসির নিচে থাকবেন না এবং ফ্রিজের কোন জিনিস বা ঠান্ডা কোমল পানীয় খাবেন না।
  • সাবধানতা অবলম্বন করার পরেও যদি সমাধান পাওয়া না যায় তবে অবশ্যই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
আমাদের দেশে না হলেও বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে অ্যালার্জি প্রতিরোধে বিভিন্ন ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। এসব ভ্যাকসিন ব্যবহারে কর্টিকোস্টেরয়েডের ব্যবহার অনেক কমে যায় এবং এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনেক কমে যাওয়ার ফলে অ্যালার্জি অনেকাংশে কমে আসে।

কি খেলে অ্যালার্জি কমবে?

বিভিন্ন প্রোবায়োটেক খাবার অ্যালার্জির উদ্দীপনা কে প্রশমিত করে অ্যালার্জি কমাতে সাহায্য করে। প্রোবায়োটিক খাবারের মধ্যে রয়েছে দই বা টক দই ইত্যাদি। এছাড়াও ব্রমালিন, কারকিউমিন, ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবার যেমন মাছ, বাদাম, ফলমূল, হলুদ ইত্যাদি খাবার খেতে পারেন যেগুলো অ্যালার্জির প্রবনতা কমায়।

অ্যালার্জির জন্য সবচেয়ে ভালো ঔষধ কোনটি?

আসলে এক এক মানুষের ক্ষেত্রে একেক রকম অ্যালার্জি হয়। তাই এলার্জির জন্য নির্দিষ্ট কোন ওষুধ নেই তবে অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে বাজারে বেশ কিছু ওষুধ পাওয়া যায়। চিকিৎসকগণ প্রয়োজনীয়তা অনুসারে রোগীদেরকে ওষুধগুলোর মধ্য থেকে যেটা ভালো মনে করবেন সেটাই প্রেসক্রাইব করবেন। বিভিন্ন অ্যান্টিহিস্টামিন গ্রুপের ওষুধের মধ্যে রয়েছে ওরাটাডিন, সেটিরিযিন, ফেক্সোফেনাডিন, রূপাটাডিন ইত্যাদি। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকগণ ফেক্সোফেনাডিন এবং সেটিরিযিন গ্রুপের ওষুধ দিয়ে থাকেন।
বিঃদ্রঃ এই ওষুধগুলোর মধ্য থেকে কোনোটিই অবশ্যই নিজে নিজে খাবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন। 

অ্যালার্জি শনাক্তকরণ টেস্ট

অ্যালার্জি শনাক্তের জন্য ব্লাড টেস্ট করা হয়। রক্তে ইয়োসিনোফিলের মাত্রা কি পরিমান আছে সেটি সনাক্ত করা হয়। এছাড়াও অ্যালার্জি রোগীদের রক্তে আইজিই বেশি পরিমাণে থাকে। এছাড়াও ত্বক পরীক্ষার জন্য প্যাঁচ টেস্ট করা হয় যেখানে অ্যান্টিজেন লাগানো স্ট্রিপ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয় এবং নির্দিষ্ট সময় পর সেগুলো তুলে ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষা করলে বোঝা যায় কোন অ্যালার্জেনের কারণে অ্যালার্জি হয়। 

আবার আরেকটি পরীক্ষা আছে যেটিতে রোগীর ত্বকের উপর কিছু অ্যালার্জেন দিয়ে পরীক্ষা করা হয় সেই এলার্জেনের কারণে তার অ্যালার্জি হচ্ছে কিনা। এটিকে বলা হয় স্কিন প্রিক টেস্ট।

শেষ কথা
অ্যালার্জি মূলত কোন রোগ না হলেও অ্যালার্জির বহিঃপ্রকাশ আমাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে। বিশেষ করে হাচি, শ্বাসকষ্ট এবং চুলকানি হলে আমাদের স্বাভাবিক কাজকর্মের যেমন ব্যাঘাত ঘটে তেমনি বাইরে কাজে যেতেও আমাদের অস্বস্তি বোধ হয়। সচেতন ভাবে জীবন যাপন করলে অর্থাৎ আমাদের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনমান পরিবর্তন করলেই আমরা অ্যালার্জি থেকে অনেকটাই মুক্তি পেতে পারি।

আজ এ পর্যন্তই। অ্যালার্জি কি, কেন হয়, অ্যালার্জি থেকে মুক্তির উপায়, কীভাবে বুঝবেন আপনার অ্যালার্জি আছে, অ্যালার্জির বিভিন্ন ওষুধ, কি খেলে অ্যালার্জি কমে ইত্যাদি অর্থাৎ অ্যালার্জি সম্পর্কে বিস্তারিত সহজ ভাবে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করলাম। 

আশা করি অনেকে উপকৃত হবেন। লেখাটি ভালো লেগে থাকলে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করার অনুরোধ থাকলো। ভুল ত্রুটি হলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন। সুস্থ থাকবেন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url