৩০ হাজার টাকা বাজেটে সেরা স্মার্টফোন
সুন্দর আকর্ষণীয় ডিজাইনের মোবাইল কিনতে চাচ্ছেন? স্লিম ডিজাইন এর মোবাইল কিনে সবাইকে অবাক করে দিতে চান? মোবাইলের জন্য আপনার বাজেট কি ৩০ হাজার টাকার আশেপাশে? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্য। আজকের আর্টিকেল থেকে ৩০ হাজার টাকা বাজেটে সেরা স্মার্টফোন সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পারবেন।
“তথ্যপ্রযুক্তি” এর আজকের পর্বে আমরা আলোচনা করব ৩০ হাজার টাকা বাজেটে সেরা স্মার্টফোন সম্পর্কে। আজকের পর্বে মূলত তিনটি স্মার্টফোন এর ডিজাইন, হার্ডওয়ার, পারফরম্যান্স, গেম ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। সকল তথ্য জানতে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে।
৩০ হাজার টাকা বাজেটে সেরা স্মার্টফোন
বর্তমানে দেশী এবং বিদেশি মোবাইল কোম্পানিগুলো তুমুল প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তার একে অন্যকে টেক্কা দিয়ে কত সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন মোবাইল বাজার নিয়ে আসতে পারে সেই প্রতিযোগিতা ব্যস্ত। এর ফলাফল অবশ্য আমাদের মত গ্রাহকরাই ভোগ করছেন। কোন কোম্পানি ডিজাইনের উপর ফোকাস করে তো কোন কোম্পানি পারফরম্যান্স অথবা গেম এর উপর ফোকাস করে মোবাইল নির্মাণ করে থাকে।
ঠিক সেরকমই গ্রাহকও চাহিদার উপর ডিপেন্ড করে স্মার্টফোন কিনে থাকেন। কারো সুন্দর ডিজাইনের মোবাইল পছন্দ তো কারো গেমিং এর জন্য মোবাইল ফোন চাই আবার কেউ কেউ চাই ফটোগ্রাফি বা ভিডিওগ্রাফির জন্য। সব মোবাইলে সব ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকে না তাই কোন মোবাইলে কি ধরনের সুবিধা আছে তা জানার জন্য মোবাইলের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য বা ফিচার সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।
আজকে সেরকমই তিনটি বিশেষ মোবাইলের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। এ লেখা থেকে আপনারা জানতে পারবেন ৩০ হাজার টাকা বাজেটে সেরা স্মার্টফোন সম্পর্কে। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে বিষয়গুলো জেনে নেই।
Infinix Hot 50 Pro Plus
সুবিধা:
- স্ক্রিনে gorilla glass 5 এর প্রটেকশন থাকায় অল্প উচ্চতা থেকে পড়ে গেলেও স্ক্রিন থাকবেন নিরাপদ। তারপরেও বক্সে একটি আলাদা গ্লাস প্রোটেক্টর দেয়া থাকবে।
- Curved Amoled Display থাকায় মোবাইল আরো বেশি স্লিম মনে হয়।
- ব্যাক পার্ট Poly carbonate এর তৈরি এবং ম্যাট ফিনিশ হওয়ায় আঙ্গুলের ছাপ পড়ে না।
- Indisplay fingerprint scanner আছে এবং সেটা যথেষ্ট সঠিক কাজ করে।
- JBL এর Dual Stereo Speaker এর সাউন্ড সন্তোষজনক।
- SOT (screen on time) প্রায় সাত ঘণ্টার বেশি। Basic user রা দেড় দিনের মত backup পাবে সহজেই।
- Sim tray রয়েছে যাতে দুইটি ন্যানো সিম এবং একটি মেমোরি কার্ড ব্যবহার করা যাবে।
- 120Hz রিফ্রেশ রেট থাকায় মোবাইল চলবে মাখনের মত মসৃণ ভাবে।
- সেকেন্ডারি নয়েজ ক্যান্সলেশন মাইক থাকায় অপর প্রান্তের ব্যক্তি কথা শুনবেন ক্রিস্টাল ক্লিয়ার।
বিশেষ সুবিধা:
- এই মোবাইলের থিকনেস মাত্র 6.8 mm হাওয়ায় এটি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে slim মোবাইলের তকমা পেয়েছে।
- ওজন 162gm হাওয়ায় হালকা মনে হবে এবং ব্যবহারে আরো বেশি মজা পাওয়া যাবে।
- IP54 water & dust resistance থাকায় হালকা ধুলাবালি এবং পানি থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবে এই মোবাইল।
- Peak brightness 1300 nit এর কারণে বাইরে সরাসরি সূর্যের আলোতে স্ক্রিন দেখতে খুব একটা সমস্যা হয় না।
- 10 watt এর reverse charging system সুবিধার কারণে অন্য মোবাইলে চার্জ দেওয়া সম্ভব।
- Gyroscope sensor আছে এবং হাই রেজোলিউশনে অনেক বড় বড় গেম খেলার সক্ষমতা রয়েছে এই ফোনের। তবে ডিফল্ট সেটিংস দিয়ে খেললে আরো স্মুথ পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে। ফলে গেমারদের কাছে এই ফোন অপছন্দ হওয়ার কোন কারণ নেই।
- 1080p 30fps রেজোলিউশনে stable ভিডিও মুগ্ধ করবে ব্যবহারকারীকে বাজেট বিবেচনায়।
- Infinix Hot 50 Pro Plus দাবি করছে ৪ বছর পর্যন্ত একই ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যাবে।
অসুবিধা:
3.5mm হেড ফোন জ্যাক Port নাই। যারা নিয়মিত হেডফোন দিয়ে অডিও শুনেন তারা কিছুটা আশাহত হবেন। HDR সাপোর্ট থাকলে ডিসপ্লে আরো কালারফুল লাগত। তাছাড়াও ম্যানুয়াল ক্যামেরা অর্থাৎ জি ক্যাম ইউজ করার সুবিধা থাকছে না এতে।
ব্যক্তিগত মতামত: Infinix Hot 50 Pro Plus তিনটি কালারে Sleek Black / Titanium Grey / Dreamy Purple পাওয়া যাবে। বাজেট বিবেচনায় স্লিম ডিজাইন, ক্যামেরা পারফর্মেন্স, গেমিং পারফরমেন্স, হার্ডওয়ার পারফরম্যান্স সহ সব দিক দিয়েই গ্রাহকদের অবশ্যই সন্তুষ্ট করবে Infinix Hot 50 Pro Plus। বাংলাদেশের বাজারে বর্তমানে এ সেটের অফিশিয়াল দাম ২৩৯৯৯/- টাকা। এই স্মার্টফোনের জন্য আমার ব্যক্তিগত রেটিং হচ্ছে ৮.৫/১০।
Moto Edge 50 Neo
সুবিধা:
- ফ্ল্যাট ডিসপ্লের এই মোবাইলে থাকছে CORNING gorilla glass 3 এর স্ক্রিন প্রটেকশন।
- 120Hz রিফ্রেশ রেট এর জন্য স্মুথ পারফরমেন্সের অভিজ্ঞতা হবে।
- HDR10+ এর সাপোর্ট থাকায় ভিডিও কনজাম্পশন হবে আরও রোমাঞ্চকর পাবেন, কালারফুল ভিডিও দেখার অভিজ্ঞতা।
- ঘরের বাইরে সরাসরি সূর্যের আলোতে স্ক্রিন দেখতে এবং কাজ করতে সমস্যা হবে না কারণ এর Peak Brightness 3000 Nits।
- যারা মোবাইলে মুভি নাটক দেখে থাকেন তাদের জন্য রয়েছে Dual Stereo Speaker এর সাউন্ড সিস্টেম।
- Indisplay Fingerprint Sensor ঠিকঠাক এবং সময়মত কাজ করে।
- চার্জিং ওয়াট বেশি থাকায় এবং ব্যাটারি সাইজ ছোট হওয়ায় Full charge করতে প্রায় 40 minutes সময় লাগে।
- এই মোবাইলের ক্যামেরা OIS supported হাওয়ায় ভিডিওগ্রাফিতে স্টাবিলাইজেশন এর সুবিধা থাকছে।
- প্রসেসর এবং র্যাম ম্যানেজমেন্ট ভালো থাকায় যে কোন বড় এবং ভারী গেম ডিফল্ট সেটিংসে খেলে ব্যাপক মজা পাবেন অর্থাৎ গেমারদের জন্য এটি একটি ভালো পছন্দ হতে পারে।
বিশেষ সুবিধা:
- Moto Edge 50 Neo দাবি করছে তারা গ্রাহকদের ৫ বছরের Android Update এবং Security Update প্রদান করবে।
- বিভিন্ন দূরত্বের পট্রেট ছবি তোলা যাবে 3x optical Zoom সুবিধা থাকার কারণে।
- 13MP Ultra wide Lense এর সুবিধা থাকছে।
- এই ফোন পানিতে পড়ে গেলেও নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন কারণ এতে রয়েছে IP68 এর সার্টিফিকেশন।
- 15watt wireless charging system এর বিশেষ সুবিধাটি থাকছে এই ফোনে।
- এই সেটে cooling system হিসেবে থাকছে 4516mm Vapor Chamber যার ফলে অতিরিক্ত ব্যবহারে অথবা গেম খেলার সময় প্রসেসর সহ পুরো মোবাইলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- এতে রয়েছে ব্লুটুথ এর আপডেট ভার্সন Bluetooth 5.4
অসুবিধা:
Moto Edge 50 Neo তে মূলত দুইটি সমস্যা রয়েছে। প্রথমত, যারা হেডফোন ব্যবহার করে অডিও ভিডিও উপভোগ করে থাকেন তাদের জন্য হতাশার খবর হচ্ছে এই সেটে 3.5mm জ্যাক নেই। দ্বিতীয়তঃ মিড রেঞ্জের হাই রেটের একটি ফোন হওয়া সত্ত্বেও ক্যামেরা সেকশনে অনেকটাই পিছিয়ে আছে এই সেট। যারা মূলত ফটোগ্রাফি অথবা ভিডিও গ্রাফির জন্য স্মার্ট ফোন কিনতে চাচ্ছেন তারা যদি এই সেট কিনে থাকেন কিছুটা হতাশ হতে হবে। কারণ বাজেট হিসাবে আশানুরূপ ছবি পাবেন না।
ব্যক্তিগত মতামত: Moto Edge 50 Neo চারটি কালারে PANTONE Poinciana, PANTONE Lattè, PANTONE Grisaille, PANTONE Nautical Blue পাওয়া যাবে। শুধুমাত্র ক্যামেরা সেকশন বাদ দিলে পারফরম্যান্স, গেম এবং অন্যান্য সুবিধার কথা বিবেচনা করে এটি হতে পারে একটি চমৎকার কম্ব প্যাকেজ। বাংলাদেশের বর্তমানে এই সেটের দাম ৩২০০০/- টাকার আশেপাশে। সবদিক বিবেচনায় Moto Edge 50 Neo এর জন্য আমার ব্যক্তিগত রেটিং হচ্ছে ৮.৫/১০।
IQOO z9s 5G
সুবিধা:
- স্মুথ পারফরমেন্স এর জন্য রয়েছে 120Hz রিফ্রেস রেট।
- ভিডিওগ্রাফিতে রয়েছে মোটামুটি মানের স্টাবিলাইজেশন।
- অনেকক্ষণ মোবাইলে কাজ করলে বা গেম খেললেও Over Heating অথবা হ্যাং এর মত কোন ইস্যু নেই। তবে সাধারণ যে গরম হয় সেটা খুবই স্বাভাবিক।
- ফুল চার্জ করতে সময় লাগবে প্রায় এক ঘন্টার মত।
- প্রায় সাত ঘণ্টার বেশি পেয়ে যাবেন SOT। সাধারণ ব্যবহারকারীরা পাবেন এক থেকে দেড় দিনের মতো ব্যাকআপ।
- ব্যাকগ্রাউন্ডে একসাথে ৮ থেকে ১০ টি অ্যাপ চালু রেখে কাজ করতে পারবেন।
- প্রসেসর এবং র্যাম ম্যানেজমেন্ট যথেষ্ট ভালো।
- প্রয়োজনীয় সকল সেন্সর এর সুবিধা থাকছে এই সেটে।
- ডিফল্ট সেটিংস চালু রেখে যেকোনো ধরনের গেম খুব স্মুথলি খেলা যাবে অর্থাৎ গেম লাভারদের জন্য এই মোবাইলও থাকতে পারে পছন্দের তালিকায়।
বিশেষ সুবিধা:
- 2x optical zoom এর সুবিধা থাকায় পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফিতে মনের মত ছবি তুলতে পারবেন বিভিন্ন দূরত্ব থেকে।
- IQOO z9s 5G দাবি করছে তারা গ্রাহকদের দুই বছরের Android Update দিবে।
- Peak Brightness 1800 Nits থাকায় সরাসরি সূর্যের আলোতে মোবাইলে কাজ করতে সমস্যা হবে না।
- HDR10+ এর সাপোর্ট থাকায় ভিডিও হবে আরো কালারফুল।
অসুবিধা:
- স্ক্রিন প্রটেকশন এর কোন তথ্য পাওয়া যায়নি অর্থাৎ আলাদাভাবে একটি স্ক্রিন প্রটেক্টর ব্যবহার করতে হবে। এই বাজেটে Ultra wide shooter না থাকাটা মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়।
- 3.5mm হেড ফোন জ্যাক এর অনুপস্থিতি হেডফোন লাভারদের আরেকবার হতাশ করবে।
- বাজেট অনুযায়ী এই সেটের ক্যামেরা পারফমেন্স আশানুরূপ নয়। কোম্পানির উচিত ক্যামেরা সেকশনে আরো ডেভেলপ করা।
ব্যক্তিগত মতামত: IQOO z9s 5G দুটি কালারে Titanium Matte, Onyx Green পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের বাজারে বর্তমানে IQOO z9s 5G এর অফিসিয়াল দাম প্রায় ২৮০০০/- টাকার মত। এই বাজেটে অন্যান্য মোবাইল সেটে সুযোগ সুবিধা আরেকটু বেশি পাওয়া যায় সেই তুলনায় বলতে গেলে এ সেটের দাম কিছুটা বেশি। তবে হার্ডওয়ার পারফরমেন্স ডিজাইন এসব ক্ষেত্রে বিবেচনায় আমার ব্যক্তিগত রেটিং ৮/১০।
পরিশেষে
উপরে আলোচনা করা তিনটি ফোনের প্রতিটা ফোনই ওয়ান বিলিয়ন কালার সাপোর্ট করে। প্রত্যেকটাতেই Punchhole Display রয়েছে। প্রতিটারই চিন বেজেল অত্যন্ত ন্যারো। ফলে তিনটি মোবাইলই ডিজাইনের দিক দিয়ে কেউ পিছিয়ে থাকবে না। প্রতিটার চমৎকার ডিজাইন যেকোন দর্শককে আকৃষ্ট করবে। তবে ভেতরের স্পেসিফিকেশনস গুলো আলাদা যেগুলোর উপর নির্ভর করে এক এক জন গ্রাহক একেক একেক মোবাইল কিনবেন।
যাইহোক ৩০ হাজার টাকা বাজেটে সেরা স্মার্টফোন সম্পর্কে জানালাম। আজকে মূলত তিনটি সেরা স্মার্টফোন নিয়ে আলোচনা করা হলো। এখানে প্রতিটা স্মার্টফোনের জন্য যে রেটিং দেওয়া হয়েছে তা একান্তই আমার ব্যক্তিগত পছন্দের উপর নির্ভর করে দেওয়া হয়েছে। তবে আপনাদের পছন্দ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী আপনারা মোবাইল কিনে থাকবেন, আমার রেটিং দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নয়।
আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। পরবর্তীতে আরো নতুন কোন মোবাইলের রিভিউ নিয়ে আপনাদের কাছে হাজির হব। ভালো লেগে থাকলে পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করতে পারেন আর ভুল ত্রুটি থাকলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন। এতক্ষণ ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, ধন্যবাদ।
মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url