ড্রাইভিং লাইসেন্স এর বিস্তারিত
রাস্তায় চালক সহ যাত্রী, মালামাল এবং পথচারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ড্রাইভিং লাইসেন্স অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশে মোটর যান চলাচলের ক্ষেত্রে পূর্ব শর্ত হিসেবে ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। আজকের এই লেখায় আপনারা জানতে পারবেন ড্রাইভিং লাইসেন্স এর বিস্তারিত।
“সরকারি সেবা” এর আজকের পর্বে আমরা ড্রাইভিং লাইসেন্স এর বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব। এ আর্ট খেলে আমরা জানবো ড্রাইভিং লাইসেন্স কি এবং কেন দরকার থেকে শুরু করে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জরিমানা পর্যন্ত যাবতীয় কিছু। বিস্তারিত সবকিছু জানতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেল পড়তে হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স এর বিস্তারিত
আমাদের নিজস্ব পরিবহন কিংবা গণপরিবহনই হোক মোটরযান চালানোর ক্ষেত্রে আমাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন। তবে শুধু আবেদন করে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিলেই হবে না এর পাশাপাশি ড্রাইভিং লাইসেন্স সম্পর্কে আরো অনেক তথ্য রয়েছে যেগুলো আমরা অনেকে হয়ত জানিনা। কিন্তু সাধারণ জ্ঞানের জন্যই হোক কিংবা প্রয়োজনের ক্ষেত্রেই হোক বিষয়গুলো আমাদের জানা উচিত।
অবশ্যই পড়ুনঃ ৩০ হাজার টাকার মধ্যে মোবাইল ২০২৪ | সেরা ৩টি স্মার্টফোন
ড্রাইভিং লাইসেন্স কি, কেন দরকার, ড্রাইভিং লাইসেন্স কত প্রকার, বিভিন্ন ধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য কত টাকা খরচ হয়, কত দিনের মধ্যে লাইসেন্স পাওয়া যায়, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য কি কি পরীক্ষা দিতে হয়, আবেদন প্রক্রিয়া, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স এর নবায়ন প্রক্রিয়া, বিনা লাইসেন্স এ গাড়ি চালালে জরিমানা ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে জানার আছে অনেক কিছু।
যাদের লাইসেন্স আছে তারা এ বিষয়গুলো মোটামুটি জানেন। তবে যাদের লাইসেন্স নাই অথবা ভবিষ্যতে নিজস্ব মোটরযান চালাবেন বা ড্রাইভিংকে পেশা হিসেবে নিতে যাচ্ছেন তাদের জন্যও বিষয়গুলো জেনে থাকা ভাল। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স এর বিস্তারিত।
ড্রাইভিং লাইসেন্স কি এবং কেন দরকার?
রাস্তায় কেবলমাত্র যেকোনো ধরনের মোটর যান চালানোর স্বীকৃতি স্বরূপ অনুমতিপত্রই নয় বরং যেকোনো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কাজের ক্ষেত্রেও ব্যক্তির পরিচয় যাচাই করনের গুরুত্বপূর্ণ নথিও হল ড্রাইভিং লাইসেন্স। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৪ নং ধারায় বলা আছে, বাংলাদেশের যে কোন নাগরিক যেকোনো পাবলিক রাস্তায় ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কোন ধরনের মোটরযান চালাতে পারবেন না।
অবশ্যই পড়ুনঃ বুদ্ধিমত্তার সাথে নিজেকে কিভাবে স্মার্ট করবেন?
সুতরাং যে কোনো মোটরযানের চালককে বৈধতা প্রদানের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিকল্প আর কিছু নেই। তাছাড়াও চালকের নিজের এবং পথচারীর নিরাপত্তার জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স অত্যন্ত জরুরী কেননা ড্রাইভিং লাইসেন্স একজন চালকের দক্ষতা প্রদর্শন করে।
বাংলাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স কত প্রকার?
ড্রাইভিং লাইসেন্স সাধারণত ৫ ধরনের হয়ে থাকে। যেমন:
১) শিক্ষানবিশ লাইসেন্স:
ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হলে সর্বপ্রথম লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হবে। শিক্ষানবিশ লাইসেন্স থাকলেই কেবল পরবর্তীতে পেশাদার এবং অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা যাবে।
২) পেশাদার লাইসেন্স:
কোন প্রতিষ্ঠানের কোন পরিবহন চালাতে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর প্রয়োজন পড়ে।
৩) অপেশাদার লাইসেন্স:
সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যক্তিগত মোটরযান চালাতে অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন হয়।
৪) পিএসভি লাইসেন্স:
ব্যক্তিগত কিংবা প্রতিষ্ঠানের নয় বরং পাবলিক সার্ভিস ভেহিকেল বা গণপরিবহন চালানোর জন্য পিএসভি ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন হয়।
৫) ইন্সট্রাক্টর লাইসেন্স:
যারা বিভিন্ন মোটরযান বা পরিবহন এর ক্ষেত্রে উপদেষ্টা বা ইনস্ট্রাক্টর এর কাজ করে থাকেন মূলত তাদের জন্যই এই ইনস্ট্রাক্টর ড্রাইভিং লাইসেন্স।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য কি কি পরীক্ষা দিতে হয়?
অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার সাথে সাথেই শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। এরপর দুই থেকে তিন মাস সময় পাবেন যে সময় আবেদনকারীরা প্রশিক্ষণ নিবেন। তারপর নির্ধারিত কেন্দ্রে এবং সময়ে লিখিত পরীক্ষার জন্য আবেদনকারীরা উপস্থিত হবেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মৌখিক পরীক্ষার জন্য পরবর্তীতে উপস্থিত হতে হবে।
এরপর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ফিল্ড টেস্ট পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। ফিল্ড টেস্ট এর মধ্যে সাধারণত তিন রকমের টেস্ট নেয়া হয়। প্রথমে জিগজ্যাক টেস্ট নেয়া হয় এরপরে র্যাম্প টেস্ট এবং সবশেষে রোড টেস্ট নেয়া হয়। এই টেস্টগুলো উত্তীর্ণ হলেই একজন আবেদনকারী ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে থাকেন।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য যেভাবে আবেদন করবেন
বাংলাদেশের একজন নাগরিক ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে চাইলে সর্বপ্রথম তাকে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি বা BRTA এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এ গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান কপি সহ অনলাইনে আবেদন করতে হবে। পরীক্ষার কেন্দ্র ইচ্ছামত নির্বাচন করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরীক্ষার তারিখ এবং সময় নির্ধারিত হয়ে যাবে।
অবশ্যই পড়ুনঃ ন্যাটোর (NATO) উদ্দেশ্য কি- ন্যাটোর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
অনলাইনে আবেদনের সাথে সাথে শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু হয়ে যাবে এবং তা প্রিন্ট করে নিতে হবে। এরপর আবেদনকারী দুই থেকে তিন মাস সময় পাবেন প্রশিক্ষণের জন্য। পরবর্তীতে নির্ধারিত সময়ে এবং নির্ধারিত কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হবে লিখিত, মৌখিক এবং ফিল্ড টেস্টে অংশগ্রহণ করার জন্য। এ সময় আবেদনকারীকে সাথে করে অবশ্যই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মূল কপি এবং কলম আনতে হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির পূর্ব শর্ত সমূহ
- মূল ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার আগে অবশ্যই লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হবে।
- আবেদনকারীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে ৮ম শ্রেণী পাশ।
- অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর এবং পেশাদার এর জন্য বয়স ন্যূনতম বয়স ২১ বছর হতে হবে।
- শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে।
- অনলাইনে আবেদন করার সময় ভুয়া তথ্য প্রদান করলে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স ও স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিলসহ আবেদনকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনলাইনে আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- আবেদনকারীর ছবি (সর্বোচ্চ ১৫০ কে.বি);
- মেডিকেল সার্টিফিকেট (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি)। মেডিক্যাল সার্টিফিকেটের ফর্মের জন্য এখানে ক্লিক করুন;
- জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি);
- ইউটিলিটি বিলের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি), (আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা যদি ভিন্ন হয় তবে বর্তমান ঠিকানার ইউটিলিটি বিল সংযুক্ত করতে হবে);
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি);
শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ফি
লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে (BSP) আবেদন শেষে নির্ধারিত ফী অর্থাৎ ১ ক্যাটাগরি (যেমন: শুধু কার) এর জন্য ৫১৮/-টাকা ও ২ ক্যাটাগরি (যেমন: কার ও মোটর সাইকেল) এর জন্য ৭৪৮/-টাকা অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে।
দক্ষতা যাচাই পরীক্ষায় (ডিসিটিসি) উত্তীর্ণ প্রার্থীকে স্মার্ট কার্ড পেতে অপেশাদার লাইসেন্সের (১০ বছর মেয়াদী) জন্য ৪,৪৯৭/- টাকা এবং পেশাদার লাইসেন্সের (০৫ বছর মেয়াদী) জন্য ২,৭৭২/- টাকা পরিশোধ করতে হবে।
ডাক বিভাগের মাধ্যমে নিজ বাড়িতে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে চাইলে অতিরিক্ত ৬০/- টাকা প্রদান করতে হবে। উল্লেখ্য, শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ থাকে মাত্র তিন মাস। তবে এটিকে নবায়ন করতে চাইলে বাড়তি ফি ৮৭ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
যেভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেন
- লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে (bsp.brta.gov.bd) আবেদন করে NID ব্যবহার করে একটি ইউজার অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।
- ইউজার অ্যাকাউন্ট এ বিভাগ, জেলা ও থানা সহ সকল তথ্য পূরণ করতে হবে। ইউজার প্রোফাইল থানার উপর ভিত্তি করে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনটি সংশ্লিষ্ট BRTA সার্কেল অফিস এর আওতাধীন হবে।
- গ্রাহকের শিক্ষানবিশ লাইসেন্স ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্রসমূহ সহকারে স্ব-শরীরে নির্ধারিত দিনে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করতে হবে। একই সাথে প্রার্থীর ফিঙ্গার প্রিন্ট NID সারভার থেকে সনাক্তকরণ সম্পন্ন হলে পরীক্ষার সুযোগ দেয়া হবে।
- সর্বোচ্চ ০১(এক) কর্মদিবসের মধ্যে BRTA কর্তৃক পাশ/ফেল এর ফলাফল অনলাইনে আপলোড করা হবে এবং আবেদনকারীর মোবাইলে SMS এর মাধ্যমে ফলাফল জানানো হবে।
- প্রার্থীকে BSP তে নিবন্ধিত একাউন্ট ব্যবহার করে ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিভিন্ন দক্ষতা যাচাই পরীক্ষার ফলাফল জেনে নির্ধারিত ফি অনলাইনে প্রদান করতে হবে। উল্লেখ্য মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং ও অন্য যে কোন প্রচলিত গেটওয়ে ব্যবহার করে ফি প্রদান করা যাবে তবে BRTA কর্তৃক নির্ধারিত ব্যাংকে সরেজমিনে/ব্যাংক কাউন্টার এ গিয়ে ফি প্রদান করা যাবে না।
- যে সকল আবেদনকারীগণ পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করবেন তাদের অবশ্যই ডোপ টেস্ট রিপোর্ট স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে। তবে অতীতে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হলেও বর্তমানে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য এটি প্রযোজ্য নয়।
- সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ'র লাইসেসিং অথরিটি কর্তৃক প্রত্যেক ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য নির্ধারিত ফি জমা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্তিসহ সঠিক পাওয়া স্বাপেক্ষে অনুমোদন প্রদান করা হব
- সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ দরকারি সকল কাগজপত্র এবং সকল ফি প্রদান করা হলে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য অনুমোদন প্রদান করে থাকে।
- অনুমোদন পাওয়ার পর আবেদনকারীর (BSP) অ্যাকাউন্টে অটো জেনারেটেড স্লিপ (Temporary authorization) প্রিন্ট করার অপশন প্রদর্শিত হবে যেটি প্রিন্ট করে লেমিনেশন করে গ্রাহক তার নিজের কাছে সংরক্ষণ করার পাশাপাশি গাড়ি চালানোর কাজে ব্যবহার করবেন স্মার্ট কার্ড (Smart card) পাওয়ার আগ পর্যন্ত।
- সমস্ত কার্যাবলী সু-সম্পন্ন হলে আবেদনকারী কর্তৃক দাখিলকৃত ঠিকানায় ডাকযোগে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর স্মার্ট কার্ড গ্রাহকের হাতে পৌছে দেয়া হবে।
শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য দরকারি কাগজপত্র
- নির্ধারিত ফরমে আবেদনকৃত আবেদন পত্র।
- আবেদনকারীর ছবি [ছবির সাইজ হতে হবে সর্বোচ্চ ১৫০ কেবি (৩০০ x ৩০০ পিক্সেল)]
- মেডিকেল সার্টিফিকেট (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি)। মেডিক্যাল সার্টিফিকেটের ফর্মের জন্য এখানে ক্লিক করুন
- জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি)
- ইউটিলিটি বিলের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি)
লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আবেদনকারীকে শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স নাম্বার দেওয়া হবে এবং পুনরায় সেই নম্বর সহ একটি নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফী প্রদান করে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। গ্রাহকের বায়োমেট্রিক (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণপূর্বক স্মার্ট কার্ড ইস্যু করা হয়।
স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- নির্ধারিত ফরমে আবেদন।
- রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
- ন্যাশনাল আইডি কার্ড এর সত্যায়িত ফটোকপি।
- নির্ধারিত ফী (পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য ১৬৭৯/-টাকা ও অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য ২৫৪২/-টাকা) বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে জমাদানের রশিদ।
- পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন।
- সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রকারভেদ
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার শর্তাবলী নিম্নরূপ।
(১) পেশাদার হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে। এর জন্য মোটরযানের ওজন ২৫০০কেজি-এর নিচে হতে হবে।
(২) পেশাদার মধ্যম ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২৩ বছর হতে হবে এবং পেশাদার হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যবহার কমপক্ষে ০৩ বছর হতে হবে। এক্ষেত্রে মোটরযানের ওজন ২৫০০ থেকে ৬৫০০ কেজি হতে হবে।
(৩) পেশাদার ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২৬ বছর হতে হবে এবং পেশাদার মধ্যম ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যবহার কমপক্ষে ০৩ বছর হতে হবে। এক্ষেত্রে মোটরযানের ওজন ৬৫০০ কেজির বেশী হতে হবে।
[বি:দ্র: পেশাদার ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স সরাসরি পাওয়া যাবে না। প্রথমে হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্স এরপরে মধ্যম ড্রাইভিং লাইসেন্স তারপরে মেয়াদ সাপেক্ষে ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যাবে।]
যেভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করবেন
(ক) অপেশাদারঃ
গ্রাহককে প্রথমে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিআরটিএর নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে হলে ২৪২৭/- টাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন পরে প্রতি বছর ২৩০/- টাকা জরিমানাসহ ফি প্রদান করতে হবে।
আবেদনপত্র ও সংযুক্ত কাগজপত্র সঠিক থাকলে একইদিনে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক তথ্য গ্রহণ করা হয়। স্মার্ট কার্ড প্রিন্টিং সম্পন্ন হলে গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণের বিষয়ে জানিয়ে দেয়া হয়।
আরও পড়তে পারেনঃ কাঁচা গাজর খাওয়ার উপকারিতা এবং ক্ষতিকর দিক
(খ) পেশাদারঃ
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সধারীদেরকে তাদের লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য পুনরায় একটি ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিআরটিএর নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে।
মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে হলে ১৫৬৫/- টাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন পরে প্রতি বছর ২৩০/- টাকা জরিমানাসহ ফি প্রদান করতে হবে। গ্রাহকের বায়োমেট্রিক তথ্য গ্রহণের জন্য গ্রাহককে নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে উপস্থিত হতে হয়। স্মার্ট কার্ড প্রিন্টিং সম্পন্ন হলে গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণের বিষয়ে জানিয়ে দেয়া হয়।
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- নির্ধারিত ফরমে আবেদন।
- রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
- ন্যাশনাল আইডি কার্ড -এর সত্যায়িত ফটোকপি।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ;
- নির্ধারিত ফী জমাদানের রশিদ।
- পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন।
- সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট ও ১কপি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি।
ডুপ্লিকেট লাইসেন্স পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- নির্ধারিত ফরমে আবেদন।
- জিডি কপি ও ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্স।
- নির্ধারিত ফী (হাই সিকিউরিউটি ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ক্ষেত্রে ৮৭৫/-টাকা) বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে জমাদানের রশিদ।
- সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
যেভাবে আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করবেন
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি বা BRTA আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করে না। এর জন্য একজন আবেদনকারীকে “অটোমোবাইল এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ” বরাবর আবেদন করতে হবে। স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে বিআরটিএ এর সাইট থেকে আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফরম সংগ্রহ করে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রেখে সকল তথ্য পূরণ করে নিচের দরকারি কাগজপত্র সহ জমা দিতে হবে।
- স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি সত্যায়িত সহ
- চার কপি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি এবং এক কপি পাসপোর্ট ছবি।
- পাসপোর্টের পৃষ্ঠা ১ থেকে পৃষ্ঠা ৪ নং পর্যন্ত ফটোকপি।
ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে জরিমানা কত?
সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ধারা ৪ অনুযায়ী কোন ব্যক্তি ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত অথবা মেয়াদ উত্তীর্ণ লাইসেন্স ব্যবহার করে পাবলিক রাস্তায় কোন ধরনের মোটরযান চালাতে পারবেন না। আবার ধারা ৫ অনুযায়ী গণপরিবহন এর ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমতি ছাড়া কোন প্রকারের মোটরযান চালাতে পারবেন না।
সুতরাং সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ধারা ৬৬ অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ৪ এবং ৫ এর বিধান লঙ্ঘন করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি উক্ত ধারা লঙ্ঘন এর অপরাধে অনধিক ৬ (ছয়) মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ (পঁচিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
পরিশেষে
চালকের নিজের, গণপরিবহনের যাত্রীদের এবং পথচারীদের জীবনের নিরাপত্তায় মোটরযানের চালকের গাড়ি চালানোয় কারিগরি দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরী। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশে রাস্তার অব্যবস্থাপনার কারণে শুধু নিরাপত্তার জন্যই নয় মোটরযানের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও পর্যাপ্ত জ্ঞান এবং প্রশিক্ষণ থাকা প্রয়োজন চালকের।
আর এই প্রশিক্ষণ এবং জ্ঞান অর্জন সম্ভব কেবলমাত্র সঠিক উপায়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স নেয়ার মাধ্যমে। একটি দুর্ঘটনায় চালকসহ যে কাউকেই কাদতে হতে পারে সারা জীবন। তাই নিরাপদে গাড়ি চালনা করা এবং ভ্রমণের জন্য বৈধ উপায়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণ এবং নিয়মকানুন সঠিকভাবে পালন করার বিকল্প আর কিছু নেই।
যাই হোক, উপরের আলোচনায় জানানোর চেষ্টা করলাম ড্রাইভিং লাইসেন্স এর বিস্তারিত। আশা করি নতুন কিছু জানতে পেরেছেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স সম্পর্কে আরো কোন তথ্য বাকি থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। পড়ে ভালো লাগলে পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর নিয়মিত Mubin Pedia ভিজিট করার অনুরোধ রাখছি। সবই ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ।
তথ্যসুত্রঃ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (BRTA), বাংলাদেশ আইন, ইন্টারনেট
মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url