বিআরটিএ ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর | লিখিত
ব্যক্তিগত কিংবা প্রেশাগত কারণে কোন যানবাহন কিনেছেন? এখন ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন? কিন্তু ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে চিন্তায় আছেন? তাহলে আপনি একদম সঠিক আর্টিকেল পড়ছেন। এই আর্টিকেলে জানতে পারবেন বিআরটিএ ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর সম্পর্কে।
“সরকারি সেবা” এর আজকের পর্বে আমরা আলোচনা করব বিআরটিএ ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে। অনেক প্রশ্ন রয়েছে, তবে তার মধ্য থেকে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে উল্লেখযোগ্য কিছু কমন এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিয়ে আজকে আমাদের এই আয়োজন। আশা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রশ্নগুলো দেখবেন পরীক্ষায় ভালো করতে হলে।
বিআরটিএ ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর
যেকোনো প্রয়োজনেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে যানবাহনের প্রয়োজন। অনেক সময় আমরা নিজেরাই গাড়ি চালাই। আমাদের নিজস্ব পরিবহন বা যানবাহন এরমধ্যে রয়েছে কার, মাইক্রো, মোটরসাইকেল। আবার পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এর ক্ষেত্রে বাস, ট্রাক, লরি, পিকআপ ভ্যান ইত্যাদি রয়েছে। তবে ব্যক্তিগত হোক কিংবা পাবলিক যানবাহন হোক ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কোন যানবাহন চালানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
ড্রাইভিং লাইসেন্স মূলত চালক এবং যাত্রী বা মালামালের নিরাপত্তার জন্যই প্রয়োজন। তবে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া খুব একটা সহজ কাজ নয়, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে। লিখিত পরীক্ষার, মৌখিক পরীক্ষা এবং প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে একজন চালক ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে পারেন।
আজকের এই আর্টিকেল আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি বিআরটিএ ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর সম্পর্কে। লিখিত পরীক্ষাটি ২০ মিনিট সময়ের মধ্যে ২০ নম্বরের হয়ে থাকে যেটিতে পাস করতে একজন প্রার্থীর প্রয়োজন ১২ নম্বর। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন উত্তর গুলো দেখে নেই।
গাড়ি চালানোর সাধারণ বিষয় সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন : মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স কী ?
উত্তর : সর্বসাধারণের ব্যবহার্য স্থানে মোটরযান চালানোর জন্য লাইসেন্স কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যুকৃত বৈধ দলিলই মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স।
প্রশ্ন : অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স কাকে বলে ?
উত্তর : যে-লাইসেন্স দিয়ে একজন চালক কারো বেতনভোগী কর্মচারী না হয়ে মোটর সাইকেল, হালকা মোটরযান এবং অন্যান্য মোটরযান (পরিবহনযান ব্যতীত) চালাতে পারে, তাকে অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স বলে।
প্রশ্ন : কোন কোন ব্যক্তি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে ?
উত্তর : মৃগীরোগী, উন্মাদ বা পাগল, রাতকানারোগী, কুষ্ঠরোগী, হৃদরোগী, অতিরিক্ত মদ্যপব্যক্তি, বধিরব্যক্তি এবং বাহু বা পা চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধা হয় এমন ব্যক্তি।
প্রশ্ন : একজন ড্রাইভার এর কি ধরনের শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতা থাকতে হবে?
উত্তর: একজন ব্যক্তি যদি ড্রাইভিং কে পেশা হিসেবে নিয়ে থাকেন তবে অবশ্যই তাকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে। শারীরিক সুস্থতার মধ্যে পড়ে- শারীরিকভাবে ফিট থাকতে হবে, তার উচ্চতা, দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক হতে হবে, শারীরিক অঙ্গহানি থাকলে চলবে না, প্রতিবন্ধী হওয়া যাবে না।
আবার মানসিকভাবেও তাকে যোগ্য হয়ে ওঠার জন্য বিশেষ কিছু গুণ প্রয়োজন। যেমন সে ব্যক্তিকে ধৈর্যশীল, আত্মবিশ্বাসী, দায়িত্বশীল হতে হবে, ট্রাফিক রুলস মেনে চলার মানসিকতা থাকতে হবে, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হলে চলবে না, বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তি হতে হবে এবং সর্বোপরি সজাগ সচেতন হতে হবে।
প্রশ্ন : ট্রাফিক সাইন বা রোড সাইন (চিহ্ন) প্রধানত কত প্রকার ও কী কী ?
উত্তর : ট্রাফিক সাইন বা চিহ্ন প্রধানত তিন প্রকার।
ক. বাধ্যতামূলক, যা প্রধানত বৃত্তাকৃতির হয়,
খ. সতর্কতামূলক, যা প্রধানত ত্রিভুজাকৃতির হয় এবং গ. তথ্যমূলক, যা প্রধানত আয়তক্ষেত্রাকার হয়।
প্রশ্ন : মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীর হেলমেট ব্যবহার করা উচিত কেন ?
উত্তর : মানুষের মাথা শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। এখানে সামান্য আঘাত লাগলেই মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে। তাই দুর্ঘটনায় মানুষের মাথাকে রক্ষা করার জন্য হেলমেট ব্যবহার করা উচিত।
প্রশ্ন : কোন কোন স্থানে গাড়ি পার্ক করা নিষেধ ?
উত্তর : ক. যেখানে পার্কিং নিষেধ বোর্ড আছে এমন স্থানে, খ. জাংশনে, গ. ব্রিজ/কালভার্টের ওপর, ঘ. সরু রাস্তায়, ঙ. হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এলাকায়, চ. পাহাড়ের ঢালে ও ঢালু রাস্তায়, ফুটপাত, পথচারী পারাপার এবং তার আশেপাশে, ছ. বাস স্টপেজ ও তার আশেপাশে এবং জ. রেলμসিং ও তার আশেপাশে।
প্রশ্ন : রাস্তায় গাড়ির কাগজপত্র কে কে চেক করতে পারেন/কোন কোন ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণকে গাড়ির কাগজ দেখাতে বাধ্য ?
উত্তর : সার্জেন্ট বা সাব-ইনসপেক্টরের নিচে নয় এমন পুলিশ কর্মকর্তা, মোটরযান পরিদর্শকসহ বিআরটিএর কর্মকর্তা এবং মোবাইলকোর্টের কর্মকর্তা।
প্রশ্ন : সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ কী কী?
উত্তর : ক. অত্যধিক আত্মবিশ্বাস, খ. মাত্রাতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, গ. অননুমোদিত ওভারটেকিং এবং ঘ. অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন।
চালকের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন : গাড়ি চালনাকালে কী কী কাগজপত্র গাড়ির সঙ্গে রাখতে হয় ?
উত্তর : ক. ড্রাইভিং লাইসেন্স খ. রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট গ. ট্যাক্সটোকেন ঘ. ইনসিওরেন্স সার্টিফিকেট ঙ.ফিটনেস সার্টিফিকেট (মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়) এবং চ. রুটপারমিট (মোটরসাইকেল এবং চালক ব্যতীত সর্বোচ্চ ৭ আসন বিশিষ্ট ব্যক্তিগত যাত্রীবাহী গাড়ির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়)।
প্রশ্ন : গাড়ি চালনার আগে করণীয় কাজ কী কী ?
উত্তর : ক. গাড়িতে জ্বালানি আছে কি না পরীক্ষা করা, না থাকলে পরিমাণ মতো নেওয়া।
খ. রেডিয়েটর ও ব্যাটারিতে পানি আছে কি না পরীক্ষা করা, না থাকলে পরিমাণ মতো নেওয়া।
গ. ব্যাটারি কানেকশন পরীক্ষা করা।
ঘ. লুব/ইঞ্জিন অয়েলের লেবেল ও ঘনত্ব পরীক্ষা করা, কম থাকলে পরিমাণ মতো নেওয়া।
ঙ. মাস্টার সিলিন্ডারের ব্রেকফ্লুইড, ব্রেকঅয়েল পরীক্ষা করা, কম থাকলে নেওয়া।
চ. গাড়ির ইঞ্জিন, লাইটিং সিস্টেম, ব্যাটারি, স্টিয়ারিং ইত্যাদি সঠিকভাবে কাজ করছে কি না, নাট-বোল্ট টাইট আছে কি না অর্থাৎ সার্বিকভাবে মোটরযানটি ত্রæটিমুক্ত আছে কি না পরীক্ষা করা।
ছ. ব্রেক ও ক্লাচের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা।
জ. অগ্নিনির্বাপকযন্ত্র এবং ফাস্টএইড বক্স গাড়িতে রাখা।
ঝ. গাড়ির বাইরের এবং ভিতরের বাতির অবস্থা, চাকা (টায়ার কন্ডিশন/হাওয়া/নাট/এলাইমেন্ট/রোটেশন/স্পেয়ার চাকা) পরীক্ষা করা।
প্রশ্ন : কি কি কারনে সড়ক দুর্ঘটনা হতে পারে?
উত্তর:
- ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ও রাস্তার মাঝে প্রয়োজনীয় ডিভাইডার না থাকলে
- মাত্রা অতিরিক্ত মালামাল ও যাত্রী বহন করলে
- নেশাগ্রস্থ অবস্থায় গাড়ি চালালে
- অসুস্থ রোগী বা দুর্বল চালক দ্বারা গাড়ি চালানো হলে
- গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে কথা বললে
- ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালালে
- গাড়ি চালানোর সময় প্রতিযোগিতা করলে
- অসাবধান ভাবে গাড়ি চালালে
- ট্রাফিক আইন না মানলে
- ভেজাল তেলে যানবাহন চালালে
প্রশ্ন : কোন কোন গাড়িকে ওভারটেক করার সুযোগ দিতে হবে ?
উত্তর : যে-গাড়ির গতি বেশি, এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ইত্যাদি জরুরি সার্ভিস, ভিভিআইপি গাড়ি ইত্যাদিকে।
প্রশ্ন : পার্শ্বরাস্তা থেকে প্রধান রাস্তায় প্রবেশ করার সময় কী কী সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় ?
উত্তর : পার্শ্বরাস্তা বা ছোট রাস্তা থেকে প্রধান রাস্তায় প্রবেশ করার আগে গাড়ির গতি কমায়ে, প্রয়োজনে থামায়ে, প্রধান রাস্তার গাড়িকে নির্বিঘেœ আগে যেতে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রধান সড়কে গাড়ির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে সুযোগমত সতর্কতার সাথে প্রধান রাস্তায় প্রবেশ করতে হবে।
প্রশ্ন : ব্রিজে ওঠার পূর্বে একজন চালকের করণীয় কী ?
উত্তর : ব্রিজ বিশেষকরে উঁচু ব্রিজের অপরপ্রান্ত থেকে আগত গাড়ি সহজে দৃষ্টিগোচর হয় না বিধায় ব্রিজে ওঠার পূর্বে সতর্কতার সাথে গাড়ির গতি কমিয়ে উঠতে হবে। তাছাড়া, রাস্তার তুলনায় ব্রিজের প্রস্থ অনেক কম হয় বিধায় ব্রিজে কখনো ওভারটেকিং করা যাবে না।
প্রশ্ন : বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি চালনার বিষয়ে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় ?
উত্তরঃ বৃষ্টির সময় রাস্তা পিচ্ছিল থাকায় ব্রেক কম কাজ করে। এই কারণে বাড়তি সতর্কতা হিসাবে ধীর গতিতে (সাধারণ গতির চেয়ে অর্ধেক গতিতে) গাড়ি চালাতে হবে, যাতে ব্রেক প্রয়োগ করে অতি সহজেই গাড়ি থামানো যায়। অর্থাৎ ব্রেক প্রয়োগ করে গাড়ি যাতে অতি সহজেই থামানো বা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেইরূপ ধীর গতিতে বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি চালাতে হবে।
প্রশ্নঃ রাস্তায় বিভিন্ন ক্রিটিকাল পরিস্থিতি একজন ড্রাইভার কিভাবে সামলাবেন?
উত্তর: ঝড়: হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়লে নিজের এবং যাত্রীদের অথবা মালামালের নিরাপত্তার স্বার্থে কোন নিরাপদ জায়গায় দ্রুত গাড়ি পার্কিং করতে হবে। নিরাপদ জায়গা পাওয়া না গেলে সেখানেই গাড়ি পার্কিং করতে হবে তবে খেয়াল রাখতে হবে ২০ গজের ভেতরে যেন কোন বড় গাছপালা না থাকে।
জীবজন্তু: গাড়ি চলন্ত অবস্থায় সামনে হঠাৎ জীবজন্তু এসে পড়লে দ্রুত ব্রেক করতে হবে এবং পরবর্তীতে বিচক্ষণতার সাথে এবং উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
পানি: কোন রাস্তা যদি পানিতে তলিয়ে যায় তবে অনুমান করতে হবে। রাস্তা যদি দুই ফিট বা তার নিচে হয় তাহলে গাড়ির স্পিড কমিয়ে ধীরে ধীরে চলে যেতে হবে। যদি অনুমান করা না যায় তাহলে গাড়ি থেকে নেমে কোন কাঠি বা কিছু দিয়ে অনুমান করে যদি দেখা যায় দুই ফিটের বেশি নিচে রাস্তা রয়েছে তবে গাড়ি চালানো যাবে না।
প্রশ্ন : নিরাপদ দূরত্ব বলতে কী বুঝায়?
উত্তরঃ সামনের গাড়ির সাথে সংঘর্ষ এড়াতে পেছনের গাড়িকে নিরাপদে থামানোর জন্য যে পরিমাণ দূরত্ব বজায় রেখে গাড়ি চালাতে হয় সেই পরিমাণ নিরাপদ দূরত্ব বলে
প্রশ্ন : হ্যাজার্ড বা বিপদ সংকেত বাতি কী ?
উত্তর : প্রতিটি গাড়ির সামনে ও পিছনে উভয়পাশের কর্ণারে একজোড়া করে মোট দু-জোড়া ইন্ডিকেটর বাতি থাকে। এই চারটি ইন্ডিকেটর বাতি সবগুলো একসাথে জ্বললে এবং নিভলে তাকে হ্যাজার্ড বা বিপদ সংকেত বাতি বলে। বিপজ্জনক মুহূর্তে, গাড়ি বিকল হলে এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় এই বাতিগুলো ব্যবহার করা হয়।
প্রশ্ন : গাড়ির ব্রেক ফেল করলে করণীয় কী ?
উত্তর : গাড়ির ব্রেক ফেল করলে প্রথমে অ্যাক্সিলারেটর থেকে পা সরিয়ে নিতে হবে। ম্যানুয়াল গিয়ার গাড়ির ক্ষেত্রে গিয়ার পরিবর্তন করে প্রথমে দ্বিতীয় গিয়ার ও পরে প্রথম গিয়ার ব্যবহার করতে হবে। এর ফলে গাড়ির গতি অনেক কমে যাবে। এই পদ্ধতিতে গাড়ি থামানো সম্ভব না হলে রাস্তার আইল্যান্ড, ডিভাইডার, ফুটপাত বা সুবিধামত অন্যকিছুর সাথে ঠেকিয়ে গাড়ি থামাতে হবে। ঠেকানোর সময় যানমালের ক্ষয়ক্ষতি যেনো না হয় বা কম হয় সেইদিকে সজাগ থাকতে হবে।
প্রশ্ন : শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে গাড়ি চালানো বৈধ কী ?
উত্তর : ইনসট্রাক্টরের উপস্থিতিতে ডুয়েল সিস্টেম (ডাবল স্টিয়ারিং ও ব্রেক) সম্বলিত গাড়ি নিয়ে সামনে ও পিছনে “L” লেখা প্রদর্শন করে নির্ধারিত এলাকায় চালানো বৈধ।
গাড়ি চালানোর বিষয়ে অপরাধ ও দন্ড সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন : মদ্যপ বা মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালনার শাস্তি কী ?
উত্তর : সর্বোচ্চ ৩ মাস কারাদন্ড বা ১০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয়্দন্ড। পরবর্তী সময়ে প্রতিবারের জন্য সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড বা ১০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয়্দন্ড এবং নির্দিষ্ট মেয়াদে ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল (মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ এর ১৪৪ ধারা)।
প্রশ্ন : বেপরোয়া ও বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালনার শাস্তি কী ?
উত্তর : সর্বোচ্চ ৬ মাস কারাদন্ড বা ৫০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং যে-কোনো মেয়াদের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্সের কার্যকারিতা স্থগিত (মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ এর ১৪৩ ধারা)।
প্রশ্ন : নির্ধারিত ওজন সীমার অধিক ওজন বহন করে গাড়ি চালালে বা চালানোর অনুমতি দিলে শাস্তি কী ?
উত্তর : প্রথমবার ১,০০০ পর্যন্ত জরিমানা এবং পরবর্তী সময়ে ৬ মাস পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা ২,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডে (ধারা-১৫৪)। এই ক্ষেত্রে মালিক ও চালক উভয়েই দন্ডিত হতে পারেন ।
প্রশ্ন : রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ফিটনেস সার্টিফিকেট ও রুটপারমিট ব্যতীত গাড়ি চালালে বা চালানোর অনুমতি দিলে শাস্তি কী?
উত্তর : প্রথমবার অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৩ মাস কারাদন্ড অথবা ২০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয়্দন্ড। দ্বিতীয়বার বা পরবর্ত সময়ের জন্য সর্বোচ্চ ৬ মাস কারাদন্ড অথবা ৫০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয়্দন্ড (মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ এর ১৫ ধারা)। এই ক্ষেত্রে মালিক ও চালক উভয়েই দন্ডিত হতে পারেন ।
প্রশ্ন : নির্ধারিত গতির চেয়ে অধিক বা দ্রুত গতিতে গাড়ি চালনার শাস্তি কী ?
উত্তর : প্রথমবার অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ দিন কারাদন্ড বা ৩০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয়্দন্ড। পরবর্তীতে একই অপরাধ করলে সর্বোচ্চ ৩ মাস কারাদন্ড বা ৫০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয়দন্ড এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সের কার্যকারিতা ১ মাসের জন্য স্থগিত (মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ এর ১৪২ ধারা)।
প্রশ্ন : ক্ষতিকর ধোঁয়া নির্গত গাড়ি চালনার শাস্তি কী ?
উত্তর : ২০০ টাকা জরিমানা (মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ এর ধারা-১৫০)।
প্রশ্ন : প্রকাশ্য সড়কে অথবা প্রকাশ্য স্থানে মোটরযান রেখে মেরামত করলে বা কোনো যন্ত্রাংশ বা দ্রব্য বিক্রয়ের জন্য সড়কে রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে শাস্তি কী ?
উত্তর : সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা জরিমানা। অনুরূপ মোটরযান অথবা খুচরা যন্ত্র বা জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা যাবে (ধারা-১৫৭)।
মেকানিজম সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন : ইঞ্জিনের প্রধান কয়েকটি যন্ত্রাংশের নাম কি?
উত্তর:
- সিলিন্ডার হেড
- কানেক্টিং রড
- বিয়ারিং
- ফ্লাই উইল
- অয়েল প্যান
- পিস্টন
- সিলিন্ডার ব্লক
- ক্যাম ও ক্যাম শ্যাফট
প্রশ্ন : ব্যাটারির কাজ কী ?
উত্তর : ক. ইঞ্জিনকে চালু করতে সহায়তা করা।
খ. পেট্রোল ইঞ্জিনের ইগনিশন সিস্টেমে কারেন্ট সরবরাহ করা।
গ. সকল প্রকার লাইট জ্বালাতে এবং মিটারসমূহ চালাতে সহায়তা করা।
ঘ. হর্ন বাজাতে সাহায্য করা।
প্রশ্ন : ইঞ্জিন খুব গরম অবস্থায় চলছে তা বোঝার উপায় কি?
উত্তর:
- পানি বেশি বাষ্পায়িত হয়ে ওভারফ্লো পাইপ দিয়ে বের হতে থাকবে
- ইঞ্জিনে খটখট শব্দ হবে
- ক্রমান্বয়ে ইঞ্জিনের শক্তি কমতে থাকবে
- ড্যাশবোর্ডে টেম্পারেচার মিটারের কাটা লাল দাগে চলে যাবে।
প্রশ্ন : পেট্রোল ইঞ্জিন স্টার্ট করতে ব্যর্থ হলে কোন দুটি প্রধান বিষয় চেক করতে হয় ?
উত্তর : (ক) প্লাগ পয়েন্টে ঠিকভাবে স্পার্ক হচ্ছে কি না চেক করতে হয়।
(খ) কার্বুরেটরে পেট্রোল যাচ্ছে কি না চেক করতে হয়।
প্রশ্ন : কি কি ত্রুটির জন্য ইঞ্জিন সাধারণত স্টার্ট হয় না?
উত্তর:
- সেল্ফ স্টার্টার ঠিক মতো কাজ না করলে
- কার্বুরেটর কাজ না করলে
- ডিজেল ইঞ্জিনের জ্বালানি লাইনে বাতাস ঢুকে গেলে
- জ্বালানি পর্যাপ্ত না থাকলে
- ব্যাটারিতে চার্জ না থাকলে।
প্রশ্ন : পেট্রোল ইঞ্জিন এবং ডিজেল ইঞ্জিন এর মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তর:
- পেট্রোল ইঞ্জিনে জ্বালানি হিসেবে পেট্রোল ব্যবহার করা হয় কিন্তু ডিজেল ইঞ্জিনে জ্বালানি হিসেবে ডিজেল ব্যবহার করা হয়।
- পেট্রোল ইঞ্জিনের স্পার্ক করে ইগনিশন করা হয় কিন্তু ডিজেল ইঞ্জিনে কম্প্রেশন করে ইগ্নিশন করা হয়।
- পেট্রল ইঞ্জিনিয়ার কার্বোরেটর থাকে কিন্তু ডিজেল ইঞ্জিনে কার্বোরেটরের স্থলে ইঞ্জেক্টার থাকে।
- ডিজেল ইঞ্জিন ডিজেল সাইকেলে কাজ করে কিন্তু পেট্রোল ইঞ্জিন অটোসাইকেলে কাজ করে।
প্রশ্ন : ফুয়েল ও অয়েল বলতে কী বুঝায় ?
উত্তর : ফুয়েল বলতে জ্বালানি অর্থাৎ পেট্রোল, অকটেন, সিএনজি, ডিজেল ইত্যাদি বুঝায় এবং অয়েল বলতে লুব্রিকেটিং অয়েল বা লুব অয়েল বা মবিল বুঝায়।
প্রশ্ন : লুব অয়েল (মবিল) কেন এবং কখন বদলানো উচিত ?
উত্তর : দীর্ঘদিন ব্যবহারে মবিলে ইঞ্জিনের কার্বন, ক্ষয়িত ধাতু, ফুয়েল, পানি ইত্যাদি জমার কারণে এর গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায় বিধায় মবিল বদলাতে হয়। গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রদত্ত ম্যানুয়াল/হ্যান্ডবুকের নির্দেশ মোতাবেক নির্দিষ্ট মাইল/কিলোমিটার চলার পর মবিল বদলাতে হয়।
পরিশেষে
এতক্ষণ বিআরটিএ ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর গুলো দেখলেন। আজকের প্রশ্নোত্তরগুলো ছিল মূলত লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য। আশা করি আপনারা প্রশ্ন উত্তরগুলি চর্চা করবেন এবং ভালোভাবে পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করবেন।
আপনাদের সফলতা ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি। নতুন কোন টপিক নিয়ে পরবর্তীতে আবার আপনাদের সাথে যোগাযোগ হবে। ভুল-ত্রুটি হলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম আরও অনেক তথ্যপূর্ণ লেখা পেতে চাইলে নিয়মিত Mubin Pedia ভিজিট করতে পারেন। সবাই ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ।
মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url