১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে স্মার্টফোন
বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন আমাদের নিত্য সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিনোদন থেকে শুরু করে যে কোন প্রয়োজনে আমাদের স্মার্টফোন ছাড়া একদিনও চলে না। তবে স্মার্ট ফোন কিনতে গিয়ে আমরা বিভিন্ন দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে যাই কারণ বাজারে একই দামের ভেতরে অনেক কোম্পানির মোবাইল পাওয়া যায়। আমরা সব সময় বুঝতে পারি না প্রয়োজন অনুযায়ী কোনটা কেনা আমাদের জন্য উচিত হবে। তবে আপনাদের সুবিধার জন্য আজকের এই লেখায় ২০ হাজার টাকার মধ্যে ২০২৪ সালের বেশ কিছু মোবাইল ফোনের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরার চেষ্টা করব যাতে করে আপনারা সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
“স্মার্টফোন” এর আজকের এই পর্বে আমরা জানার চেষ্টা করব ২০ হাজার টাকার বাজেটের মধ্যে বেশ কিছু জনপ্রিয় এবং ভালো মানের মোবাইল ফোন সম্পর্কে। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই। আশা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তথ্যগুলো পড়বেন।
One Plus Nord N30 SE 5G
অপারেটিং সিস্টেম: Android 14 with OxygenOS 14.0
স্ক্রিন সাইজ : 6.72”
ডিসপ্লে টাইপ: IPS LCD Display
চিপসেট : MediaTek Dimensity 6020 7nm
প্রসেসর : Octa Core 2.2 GHz
র্যাম : 4GB
স্টোরেজ : 128GB
মেইন ক্যামেরা : 50MP with 2MP depth sensor
সেলফি ক্যামেরা : 8MP
ভিডিও রেকর্ডিং : 1080p with 30fps (both main & selfie camera)
ব্যাটারি : 5000mah
চার্জার : 33 Watt
অন্যান্য সুবিধা:
মোবাইলের ব্যাক পার্টে গ্লাস ফিনিশ দেয়ার কারণে একটা প্রিমিয়াম ফিল পাবেন। সিম্পল কিন্তু গর্জিয়াস ডিজাইনের এ ফোনে পেয়ে যাবেন সেকেন্ডারি নয়েজ ক্যান্সলেশন মাইক এবং 3.5 মিলিমিটার হেডফোন জ্যাক এর সাথে Full HD+ ডিসপ্লে যা দিয়ে পাবেন তৃপ্তিদায়ক মিডিয়া কনজাম্পশন। গেমিং ফোন না হলেও সেটিংস থেকে কমপ্রোমাইজ করে নিলে আপনি একটা সন্তোষজনক রেজাল্ট পাবেন গেম খেলে। এছাড়া Gyroscope সেন্সর তো রয়েছেই। সিকিউরিটি হিসেবে রয়েছে সাইড মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর যার একুরেসি মোটামুটি যথেষ্ট ঠিকঠাক।
বিশেষ সুবিধা:
One Plus Nord N30 SE 5G দিচ্ছে ২ টি Android Update এর সাথে তিন বছরের সিকিউরিটি প্যাচ আপডেট। 90Hz রিফ্রেশ রেট এই সেট দিচ্ছে ৩ বছরের Fluency Protection। এতে আরো রয়েছে IP54 water & dust protection যার ফলে হালকা পানির ছিটে ফোঁটা এবং ধুলাবালি থেকে মোবাইল সুরক্ষিত থাকবে। Dual Sterio Speaker সুবিধা দিবে আপনাকে সাউন্ড এর সর্বোচ্চ মনমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা। এই বাজেটে One Plus Nord N30 SE 5G ভিডিওগ্রাফিতে দিচ্ছে মোটামুটি মানের স্টেবিলাইজেশন যা সত্যিই প্রশংসনীয়।
দাম: একটি মাত্র ভ্যারিয়েন্ট (4/128) এর মূল্য ১৫৯৯৯ টাকা।
Redmi 13
অপারেটিং সিস্টেম : Android 14 with HyperOS
স্ক্রিন সাইজ : 6.79”
ডিসপ্লে টাইপ: IPS LCD Display
চিপসেট : MediaTek Helio G91 Ultra 12nm
প্রসেসর : Octa Core 2.0 GHz
র্যাম : 6GB, 8GB
স্টোরেজ : 128GB
মেইন ক্যামেরা : 108MP main camera, 2MP macro lense
সেলফি ক্যামেরা : 13 MP
ভিডিও রেকর্ডিং : 1080p with 30 fps (both main & selfie camera)
ব্যাটারি : 5030mah
চার্জার : 33 Watt
অন্যান্য সুবিধা :
IP53 ওয়াটার অ্যান্ড ডাস্ট প্রোটেকশন সার্টিফিকেট থাকায় এই সেটটি অল্প বিস্তর পানির ছিটা এবং বৃষ্টির পানি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম। 90Hz রিফ্রেশ রেট এর কারণে এই সেট ব্যবহার করে পাবেন স্মুথ পারফরমেন্সের অভিজ্ঞতা। সাইড মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট রয়েছে সিকিউরিটির জন্য।
বিশেষ সুবিধা:
IR Bluster সেন্সর থাকায় বাড়িতে থাকা এসি, টেলিভিশন এর রিমোট হিসেবে কাজ করতে পারে। Redmi 13 তে রয়েছে DC Deaming সাপোর্ট এবং TUV Rheinland এর certificate যার কারণে দীর্ঘক্ষণ মোবাইলে কাজ করলেও সেটি চোখের জন্য হবে আরামদায়ক।
নেগেটিভ সাইড :
মিড রেঞ্জার মোটামুটি ভালো দামের একটি ভাল মানের সেট হওয়া সত্ত্বেও এই মোবাইলে কোন Secondary Noise Cancelation Mic এর সুবিধা নাই।
দাম: বাংলাদেশের বাজারে দুটি ভ্যারিয়েন্ট এ পাওয়া যায়। (6/128) এর মূল্য ১৭৯৯৯ টাকা এবং (8/128) এর মূল্য ১৯৯৯৯ টাকা।
Motorola Moto G54
অপারেটিং সিস্টেম : Android 13
স্ক্রিন সাইজ : 6.5”
ডিসপ্লে টাইপ: IPS LCD Display
চিপসেট : MediaTek Dimensity 7020 6nm
প্রসেসর: Octa Core 2.0 GHz
র্যাম : 4GB, 8GB, 12GB (LPDDR4X)
স্টোরেজ : 128GB, 256GB (UFS 2.2)
মেইন ক্যামেরা : 50MP camera with OIS
সেলফি ক্যামেরা : 16MP
ভিডিও রেকর্ডিং : 1080p with 60fps
ব্যাটারি : 5000mah
চার্জার : 15 Watt
অন্যান্য সুবিধা:
120Hz রিফ্রেশ রেট এর Moto G54 এ Full HD+ রেজুলেশনের ভিডিও দারুনভাবে উপভোগ করতে পারবেন। এই সেট Android 13 এ রান করলেও Android 14 এর আপডেট পাওয়া যাবে। Doulby Stereo Speaker থাকায় সাউন্ড সিস্টেম পাবেন শ্রুতি মধুর। 3.5 mm জ্যাক এর সাথে থাকছে সেকেন্ডারী নয়েজ ক্যান্সলেশন মাইক। এই সেটের ব্যাক পার্টে লেদার ফিনিশ থাকায় এটার লুকটা আরো অনেক চমৎকার দেখায়। সাইড মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট যথেষ্ট একিউরেট কাজ করে।
বিশেষ সুবিধা:
এই বাজেটের ভেতর সাধারণত অন্য কোন মোবাইল কোম্পানি ক্যামেরার সাথে OIS (Optical Image Stabilization) দেয় না। তবে Moto G54 এ এই সুবিধা থাকার ফলে ভিডিওগ্রাফিতে বেশ ভালো মানের স্টাবিলাইজেশন পাবেন যার ফলে উন্নতমানের ভিডিও ধারণ করা সম্ভব হবে। এছাড়াও নাইট মোডে ছবি তুলতেও OIS পিকচার কোয়ালিটি বেশ ভালো সরবরাহ করে।
নেগেটিভ সাইড :
Moto G54 এ তোলা ছবিগুলোতে warm tone বেশি থাকায় অনেকেরই ছবি পছন্দ নাও হতে পারে।
দাম: এই সেটের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট থাকলেও বাংলাদেশের মার্কেটে একটিমাত্র ভ্যারিয়েন্ট অ্যাভেইলেবল। (8/128) এর মূল্য ২০০০০ টাকা।
Helio 90
অপারেটিং সিস্টেম : Android 14
স্ক্রিন সাইজ : 6.7”
ডিসপ্লে টাইপ: AMOLED
চিপসেট : Mediatek Helio G99 6nm
প্রসেসর : Octa Core 2.2 GHz
র্যাম : 8GB
স্টোরেজ : 128GB (uMCP5)
মেইন ক্যামেরা : 64MP Ai, 2MP macro
সেলফি ক্যামেরা: 32MP
ভিডিও রেকর্ডিং : 2K (both main & selfie camera)
ব্যাটারি : 5000 mah
চার্জার : 33 watt
অন্যান্য সুবিধা :
Punch Hole ডিসপ্লের Helio 90 তে ব্যাক প্যানেলে গ্লাস দেয়ায় একটা প্রিমিয়াম লুক পাওয়া যায়। স্ক্রিন প্রটেক্টর হিসেবে Gorilla Glass 5 দেয়া থাকছে। Pixel Density 394 সহ মিডিয়া কনজিউম করা যাবে FHD+ রেজোলিউশনে। মেইন ক্যামেরাতে 10x জুমের সুবিধা থাকছে। Face Unlock সুবিধার সাথে In Display Fingerprint সেন্সর থাকছে যেটা যথেষ্ট একিউরেট রেসপন্স করে। 120Hz রিফ্রেশ রেটের সাথে অন্যান্য সেন্সর সহ গেমারদের জন্য থাকছে Gyroscope সেন্সর। বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় এবং অত্যন্ত কার্যকরী ফিচার Double click to wake up and screen off সুবিধাটি তো থাকছেই। Space Black, Cosmic Gold, Thunder White - এই এই তিনটি আকর্ষণীয় কালারে পাওয়া যাচ্ছে Helio 90।
বিশেষ সুবিধা:
Helio 90 তে বিশেষ সুবিধা হিসেবে থাকছে Dual view video অর্থাৎ একই সাথে ব্যাক ক্যামেরা এবং ফ্রন্ট ক্যামেরাতে ভিডিও রেকর্ডিং করার সুবিধা রয়েছে।
দাম: একটি মাত্র ভ্যারিয়েন্ট (8/128) এর মূল্য ১৯৯৯৯ টাকা।
Samsung A15 4G
অপারেটিং সিস্টেম : Android 14 with One UI 6.1
স্ক্রিন সাইজ : 6.5”
ডিসপ্লে টাইপ: Super Amoled Display
চিপসেট : MediaTek Helio G99 6nm
প্রসেসর : Octa Core 2.0 GHz
র্যাম : 4GB, 6GB, 8GB (LPDDR4X)
স্টোরেজ : 128GB, 256GB (UFS 2.2)
মেইন ক্যামেরা : 50MP with 2MP macro shooter
সেলফি ক্যামেরা : 13MP
ভিডিও রেকর্ডিং : 1080p (both main & selfie camera)
ব্যাটারি : 5000mah
চার্জার : 18 Watt
অন্যান্য সুবিধা :
Samsung A15 ভিডিও রেকর্ডিং এর সময় মোটামুটি মানের stabilization দিচ্ছে যা দিয়ে মোটামুটি কাজ চালানো যাবে। এর সিকিউরিটি হিসেবে In Display ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর রয়েছে।
বিশেষ সুবিধা:
90Hz রিফ্রেশ রেট এর সাথে থাকছে L1 supported সুবিধা যা দিয়ে অতিরিক্ত ভাবে জি ক্যাম ইউজ করে দৃষ্টিনন্দন ছবি তোলা সম্ভব।
নেগেটিভ সাইড :
মিড রেঞ্জের মোটামুটি দামি ফোন হওয়া সত্বেও IP54 রেটিং এর সুবিধা নাই ফলে হালকা পানি এবং ধুলাবালি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম নয়। বর্তমানে দশ থেকে বারো হাজার টাকা বাজেটে দেশী এবং বিদেশী ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোনে পাঞ্চ হোল ডিসপ্লে থাকলেও ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকার এই ফোনে Water drop ডিসপ্লে, বিষয়টি অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। তার ওপর এই সেটে Gorilla glass এর কোন প্রটেকশন নাই। ব্যাক কভার এবং স্ক্রিন প্রটেক্টর লাগাতে হবে। 4GB র্যাম ভ্যারিয়েন্ট না কেনাই ভালো কারণ এতে যথেষ্ট পরিমাণ ল্যাগ, হ্যাং এর দেখা পাওয়া যায়।
দাম: বাজারে চারটি ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেলেও দুটি ভ্যারিয়েন্ট বেশি বিক্রি হয়। (6/128) এর মূল্য ১৮০০০ টাকা (aprox), এবং (8/128) এর মূল্য ২০০০০ টাকা (aprox)।
মন্তব্য
গ্রাহকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করেই মোবাইল কোম্পানিগুলো মোবাইল নির্মাণ করে থাকেন। তবে গ্রাহকদের চাহিদার শেষ নেই তাই তারা নতুন নতুন ফিচার নিয়ে বাজারে বিভিন্ন মোবাইল নিয়ে আসে। পৃথিবীর কোন মোবাইলই ১০০% স্বয়ংসম্পূর্ণ বা পারফেক্ট হবে না। তবে গ্রাহকদের চাহিদার সাথে সর্বোচ্চ পরিমাণ মিল হলেই সে মোবাইলটি কেনা উচিত।
২০ হাজার টাকা বাজেটের মধ্যে বেশ কিছু ভালো ফোন এর বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করলাম উপরে। আশা করি আপনাদের কেনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহযোগিতা করবে তথ্যগুলো। এই ফোনগুলোর বাইরে আরো বেশ কিছু ফোন রয়েছে বিশ হাজার টাকার ভিতরে সেগুলো নিয়েও আপনারা চাইলে পরবর্তীতে আবার কোন আপডেট দেব। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন। ধন্যবাদ।
মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url