সাদ্দাম হোসেন | যিনি হয়ে ওঠেন ইরাকের প্রতাপশালী শাসক | পর্ব ০১

ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ছিলেন একজন বিপ্লবী এবং ইরাকি রাজনীতিবিদ যিনি ১৯৭৯ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির পদে ছিলেন। তিনি ছিলেন ইরাকের পঞ্চম রাষ্ট্রপতি। এর আগে তিনি উপ রাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেছেন কয়েক বছর। তার রাজনৈতিক উত্থান থেকে শুরু করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত গোটা বিশ্বজুড়ে তিনি আলোচিত এবং সমালোচিত ছিলেন।
সাদ্দাম হোসেন | যিনি হয়ে ওঠেন ইরাকের প্রতাপশালী শাসক | পর্ব ০১

“বিশ্ব ব্যক্তিত্ব” এর আজকের এই পর্বে আমরা ইরাকের সাবেক প্রতাপশালী শাসক সাদ্দাম হোসেন এর জন্ম, রাজনৈতিক পরিচিতি এবং উত্থান, ষড়যন্ত্রের শিকার ইত্যাদি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব।   

সাদ্দাম হোসেনের পরিচয় এবং শৈশবকাল

সাদ্দাম হোসেনের পূর্ণ নাম সাদ্দাম হোসেন আব্দুল মাজিদ আল তিকরিতি। ইরাকের উত্তরাঞ্চলের তিকরিত থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আল আউজা গ্রামে ১৯৩৭ সালের ২৮ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন সাদ্দাম হোসেন। তার বাবার নাম ছিল হোসাইন আব্দুল মাজীদ এবং মা’র নাম ছিল সুভা তুলফা আল মুসাল্লাত। সাদ্দাম হোসেনের নাম রাখেন তার মা এবং ‘সাদ্দাম’ নামের অর্থ হল “অটল যোদ্ধা”।   

সাদ্দামের জন্মের আগেই তার কৃষক বাবা মারা যান। এরপর তার মা সুভাহ দ্বিতীয় বিয়ে করেন এবং সাদ্দাম তিন সৎভাই লাভ করেন। তার সৎ বাবা ইব্রাহিম আল হাসান তাকে ভালো নজরে দেখতেন না এবং প্রায়ই তাকে মারধর করে বিভিন্ন রকম অত্যাচার করত। মাত্র ১০ বছর বয়সে সাদ্দাম হোসেন বাগদাদে চলে আসেন তার চাচা খাইরাল্লাহ তালফাহর কাছে।

সাদ্দামের রাজনৈতিক উত্থান

চাচার বাসায় থেকে সাদ্দাম পড়াশোনা করতেন। স্কুল জীবনের গণ্ডি পার হতেই বিশ বছর বয়সে ১৯৫৭ সালে ইরাকের বাথ পার্টিতে যোগদান করেন সাদ্দাম। যোগদানের পর বাথিজম মতাদর্শে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বাথিজম হচ্ছে আরব সমাজতন্ত্রবাদী এবং জাতীয়তাবাদীর একটি মিশ্র চেতনা। পরবর্তীতে এ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সাদ্দাম ক্ষমতায় আসার পরে একদলীয় সরকার গঠন করে যেটি পশ্চিমা বিশ্বে স্বৈরাচার হিসেবে পরিচিত। 

সাদ্দামের চাচা বাথ পার্টির অনুসারী ছিলেন এবং একজন অ্যাক্টিভ কর্মী ছিলেন। তবে যোগদানের পর থেকেই নানা কর্মকাণ্ডে সাদ্দাম প্রশংসিত হতে থাকেন। বাথ পার্টিতে যোগদানের বছর দুয়েক পরে ইরাকের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কে উৎখাত করতে ব্যর্থ হন এবং জীবন বাঁচাতে প্রথমে পালিয়ে যান সিরিয়ায়, এরপর যান মিশরে। মিশরে থাকাকালে তিনি কায়রুর ল স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। 
১৯৬৩ সালে ইরাকে পুনরায় বাত পার্টি ক্ষমতায় আসে এর ফলে নতুন উদ্যমে সাদ্দাম পুনরায় ইরাকে ফিরে আসেন। তবে সেই বছরেই বাথ পার্টির পতন হওয়ায় সাদ্দামকে জেলে যেতে হয় এবং বেশ কয়েক বছর তিনি জেলেই ছিলেন। এরপর জেল থেকে পালিয়ে যান সাদ্দাম এবং আত্মগোপনে চলে যান। আত্মগোপনে থেকেই তিনি দল গঠনে সচেষ্ট থাকেন। 

১৯৬৮ সালে বাথ পার্টির অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পুনরায় ক্ষমতায় আসলে এই দলের নেতৃত্ব দেন সাদ্দাম হোসেন। কিন্তু ওই সরকারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন আহমাদ হাসান আল বকর এবং সাদ্দাম হোসেন ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। তবে ভাইস প্রেসিডেন্ট হলেও উনি সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করতেন। ১৯৭২ সালে সাদ্দাম হোসেন তেল শিল্পকে জাতীয়করণ করেন। 

এতে ইরাকের অবগত কাঠামো এবং অর্থনৈতিক ভাবে বেশ উন্নতি সাধন হয়। পরবর্তীতে বাথ পার্টির সরকারে সাদ্দামের হস্তক্ষেপের মাত্রা বাড়তে থাকে। এর জের মোতাবেক বিভিন্ন কারণে প্রেসিডেন্ট কে জোরপূর্বক পদত্যাগ করান এবং রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত হন সাদ্দাম হোসেন ১৯৭৯ সালে। মধ্যপ্রাচ্য তথা উপসাগরীয় অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের একটি প্রবল আকাঙ্ক্ষা ছিল সাদ্দামের। 

কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যই তিনি ইরান, ইরাক, যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত এর সাথে বিরোধে জড়ান এবং মধ্যপ্রাচ্যে তিনি একজন যুদ্ধবাজ শাসক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তবে ফিলিস্তিন ইস্যুতে বরাবরই রক্ষণশীল ছিলেন সাদ্দাম। ফিলিস্তিনের ইসুকে শুধু সে দেশের সমস্যা মনে করতেন না বরং পুরো আরব বিশ্বের সমস্যা হিসেবে দেখতেন। তাই তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন ফিলিস্তিনিদের হয়ে লড়াই করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে ইরাকের।

সাদ্দাম হোসেন যে কারণে আমেরিকার শত্রু হয়ে উঠল

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ তাদের মিত্র বাহিনীরা জয়লাভ করাই তারা সব সময় একটা আতঙ্কের ভিতর থাকতো সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিজম পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে কিনা। এদিকে ঠিক সেই সময়ে অর্থাৎ ১৯৫৮ সালে ইরাকের প্রেসিডেন্ট কিং ফয়সালকে সরিয়ে প্রেসিডেন্ট হন আবদ আল কারীম কাসিম যিনি একজন কমিউনিস্ট ছিলেন। 

ফলে স্বভাবতই আমেরিকার মাথায় চিন্তার ভাজ পড়ল। আমেরিকা যে কোন মূল্যে আবদ আল কারিম কাসিমকে সরানোর চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু এটা বাইরের দেশ থেকে করাটা অসম্ভব না হলেও মানবতা লঙ্ঘন হওয়ায় তারা চেষ্টা করল ইরাকের মধ্য থেকে কারো মাধ্যমে আল কারীম কাসিমকে হত্যা করার। শেষ পর্যন্ত তারা নির্ধারণ করল সাদ্দাম হোসেনকে যিনি ১৯৫৭ সালে বাথ পার্টিতে যোগদান করেছিলেন। 

বাথ পার্টিতে যোগদানের পর থেকে উদীয়মান নেতা হিসেবে সাদ্দাম হোসেনের মোটামুটি জনপ্রিয়তা ছিল। আমেরিকার অঙ্গ সংগঠন সিআইএ সাদ্দামকে অস্ত্র সহ সকল রকমের সহযোগিতা করেছিল আব্দুল করিম কাসিমকে সরানোর জন্য। তবে সাদ্দাম হোসেন সেই প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হন। এরপরে নিজের জান বাঁচাতে উনি সিআইএ এর সহায়তায় বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। 
পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে পুনরায় তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং এবার তিনি ছিলেন হেড অফ ইন্টেলিজেন্স। সে অবস্থায় তিনি নানা কৌশলে কমিউনিস্ট নেতা আব্দুল কারিম কাসিমকে সরাতে সফল হন। এরপর ১৯৬৮ সালে নির্বাচনে বাথ পার্টি জয়লাভ করলে সাদ্দাম হোসেন প্রেসিডেন্ট হন। প্রেসিডেন্ট হওয়াতে আমেরিকার কিছুটা অবদান থাকা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে আমেরিকার প্রতি তেমন কোন ভ্রুক্ষেপ ছিল না সাদ্দাম হোসেনের। 

এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। যাইহোক তারপরেও আমেরিকা ইরাক ইরান যুদ্ধের সময় ইরাকের যুদ্ধের সহায়তার জন্য অস্ত্রসহ কোটি কোটি ডলার খরচ করেছে। যদিও ইরাক ইরান যুদ্ধের ইন্ধনদাতা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গ সংগঠন সিআইএ। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ইরাকের মাধ্যমে ইরানকে ধ্বংস করা। 

তখন পর্যন্ত সাদ্দাম হোসেন আমেরিকার কাছে বন্ধু থাকলেও শত্রু হয়ে ওঠে ১৯৯০ সাল থেকে। মূলত তখন দুটি কর্মকান্ডের জন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাদ্দাম হোসেনের বিপক্ষে চলে যায়। প্রথমত তেল উত্তোলন নিয়ে মনোমালিন্যের জেরে ইরাক কুয়েতে হামলা শুরু করে। এ হামলা হয় সাদ্দাম হোসেনের নির্দেশে। 

দ্বিতীয়ত অনেক ইহুদি জোরপূর্বক ফিলিস্তিনে এসে বসতি স্থাপন শুরু করে এবং ক্রমান্বয়ে ফিলিস্তিন অধিকগ্রহণ করার চেষ্টা করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সাদ্দাম হোসেন ইজরাইলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দেন। উপরোক্ত দুটি কারণেই মাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল স্বার্থ ছিল। প্রথম কারণের স্বার্থ হল সাদ্দাম হোসেনের পূর্বে আরব বিশ্বের আর কোন নেতা এইভাবে গোলা উঁচিয়ে কাউকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার সাহস করেনি। 

সাদ্দাম হোসেনের এই হুসিয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের মোড়লগিরিতে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এই ভেবে শঙ্কিত ছিল। আমেরিকা শঙ্কা পোষণ করেছিল যে ভবিষ্যতে গোটা বিশ্বের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্বে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে এই জাদরেল নেতা সাদ্দাম হোসেন। আর দ্বিতীয় কারণে সার্থ হলো একটা রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাইল প্রতিষ্ঠা পেলে আমেরিকা সেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক, সামরিক সাহায্য পাবে। 

আর তৃতীয় কারণটি সবারই মোটামুটি জানা, অন্যান্য মুসলিম বিশ্বের তুলনায় ইরাকে তেল উত্তোলনের খরচ ছিল অত্যন্ত কম। তাই তেল সম্পদের উপরেও নজর পড়েছিল কুখ্যাত মার্কিন বাহিনীর। এছাড়া সে সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম বিশ্বের তেল বাণিজ্য দিনে দিনে উন্নতির শিখরে উঠতে যাচ্ছিল। 

যাইহোক তখন থেকেই আমেরিকার সাথে ইরাকের দ্বন্দ্ব শুরু হলেও বেশ কয়েক বছর চুপচাপ থাকার পরে ১৯৯১ সালে ওয়ান ইলেভেন ট্রাজেডি অর্থাৎ টুইন টাওয়ার ধ্বংস হওয়ায় তৎকালীন আমাদের ভেতর একটি গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল যে টুইন টাওয়ার হামলার পেছনে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের হাত রয়েছে। 

আসলে টুইন টাওয়ার ধ্বংসে নিজ দেশের জনগণের কাছেই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট কিভাবে নিরাপত্তা ভেদ করে এরকম একটি হামলা চালানো সম্ভব। তাই দেশের জনগণ তথা গোটা বিশ্বের কাছে নিজের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র একটি বদ বুদ্ধির আশ্রয় নিয়েছিল সেটি হল কোন মুসলিম দেশ বিশেষ করে ইরাক এবং আফগানিস্তানকে ষড়যন্ত্র করে টুইন টাওয়ার হামলার দায়ভার তাদের ঘাড়ে চাপানোর। 

কিন্তু আফগানিস্তান এমনিতেই অনেক দুর্বল একটি দেশ হওয়ায় এবং তাকে হামলা করে তার কাছ থেকে পাওয়ার মত তেমন কিছুই ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে বলির পাঠা নির্বাচন করে ইরাক কে। একদিকে যেমন দেশের জনগণকে বোঝানো যাবে যে ইরাকের মত ক্ষমতাধর রাষ্ট্রকে আমরা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে শাস্তি দিয়েছে এবং বিশাল তেলের যে রিজার্ভ রয়েছে ইরাকে সেটিও হয়তোবা দখল করা যাবে। 
তৎকালীন সময়ে ইরাকে প্রায় ১২০ বিলিয়ন ব্যারেল তেল মজুদ ছিল যা সৌদি আরবের পরে দ্বিতীয় স্থানে ছিল। এদিকে ২০০১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে জর্জ ডব্লিউ বুশ। ক্ষমতা নেওয়ার পরপরই ইরাকের বিরুদ্ধে জনবিধ্বংসী অস্ত্র মজুদ, সংরক্ষণ, উৎপাদন এবং লক্ষ লক্ষ নিরস্ত্র জনগোষ্ঠীকে হত্যার অভিযোগ এনে পশ্চিমাদের সম্মতি নিয়ে জাতিসংঘে প্রয়োজনীয় আইন পাশের মাধ্যমে ইরাকে হামলার প্রস্তুতি গ্রহণ করে বিশ্বের অন্যতম যুদ্ধবাজ এবং কুখ্যাত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ।

কিছু বিশেষ তথ্য

  • শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তাবেদারি করেনি বিধায় সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসি দেওয়া হয় এবং ইরাকের মতো একটি রাষ্ট্র আজ ধ্বংস স্তুপে পরিণত হয়েছে। এই হত্যা এবং ধ্বংসযজ্ঞের মূল কালপ্রিট তৎকালীন কুখ্যাত জর্জ ডব্লিউ বুশ।
  • লুটেরা যুক্তরাষ্ট্র ইরাক ধ্বংস করার পরে ইরাকের বিপুল পরিমাণ তেল সম্পদ প্রকাশ্যে লুট করে নিয়ে যায়।
  • বিশ্বজুড়ে ডলারের আধিপত্য বিস্তার রোধে সাদ্দাম হোসেন চেয়েছিলেন ইউরোতে তেল বিক্রি করতে। সাদ্দামের এই উদ্যম রুখে দিতে তার প্রতি মিথ্যে বিধ্বংসী অস্ত্রের অজুহাত এনে তাকে এবং তার দেশকে ধ্বংস করে দেয় বুশ প্রশাসন।
  • আমেরিকার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইরানকে ধ্বংস করার জন্য ইরাক প্রশাসনকে উস্কানি দেয় এবং ইরানের বিরুদ্ধে সাদ্দাম হোসেনের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের সমর্থন জানালেও কুয়েত দখল করার সময় সাদ্দামের বিপরীতে চলে যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সাদ্দাম যদি কুয়েতের তেল সম্পদ দখল করে নেয় তাহলে এত অল্প দামে তেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা মধ্যপ্রাচ্য আর কোথাও পাবে না।
  • ১৯৯০ সালের ২ আগস্ট বিপুল সেনাবাহিনী নিয়ে মাত্র ১৩ ঘণ্টার মধ্যেই কুয়েত দখল করে নেয় সাদ্দাম হোসেনের বাহিনী।
  • মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা ছাড়া যেন আর কোন মোড়লের জন্ম না হয়- সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসি দেওয়ার এটা একটি অন্যতম কারণ।
  • ২০০৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মার্কিন সেনাবাহিনী মোট ১২ বার ব্যর্থ হয়েছে সাদ্দাম হোসেনকে খুঁজে পেতে এবং প্রায় ৫০০ টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
  • ২০০৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর তিকরিতে সাদ্দাম হোসেনকে ধরার জন্য পরিচালিত অভিযান এর নাম “অপারেশন রেড ডন।”
  • সাদ্দাম হোসেন প্রথম ব্যক্তি যিনি জ্বালানি তেলকে জাতীয়করণ করেন। এরপরে অন্যান্য আরব বিশ্বের নেতারা তাদের জ্বালানী দলকে জাতীয়করণ করতে উদ্বুদ্ধ হন। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা তাদের নিজের দেশেই অর্জিত মুনাফা ব্যবহার করে দেশকে উন্নতির পথে নিয়ে যেতেন এবং দেশের বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করতেন।
  • সাদ্দাম হোসেনকে পাহারা দেয়া ১২ জন মার্কিন সেনার মধ্যে একজন স্টিভ হাচিনসনকে সাদ্দাম তার পছন্দের হাত ঘড়িটি দিয়েছিলেন ফাঁসির কিছু আগে।
  • সাদ্দাম হোসেনকে পাহারা দেওয়ার সময় তাদের সাথে সাদ্দাম হোসেনের একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যখনই সময় পেতেন সাদ্দাম তাদের পরিবারের কথা জিজ্ঞেস করতেন।
  • পাহারাদার ১২ মার্কিন সেনার প্রত্যেকেই কেঁদেছিলেন সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসি দেয়ার সময়।
  • এই ১২ জন মার্কিন সেনার একজন স্টিভ হাচিনসন চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসির পরে।
  • ফাসির পরে সাদ্দামের লাশের উপরে বেশ কয়েকজন ইরাকি জনগণ থুতু নিক্ষেপ করেন। এই দৃশ্য দেখে প্রত্যেক রক্ষী হতভম্ব হয়ে যান।
  • পাহারা দেয়া ১২ জন সৈন্যের ভিতর একজন ছিলেন বার্ডেন ওয়ারপার যিনি পরবর্তীতে ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর সাদ্দামকে নিয়ে একটি বই লিখেন। বইটির নাম “দ্য প্রিজনার ইন হিস প্যালেস হিজ আমেরিকান গার্ডস এন্ড হোয়াট হিস্ট্রি লেফট আনসেইড”।
  • প্রাথমিক অবস্থায় ইরাকের কাছ থেকে কুয়েতকে মুক্ত করার জন্য মার্কিন বাহিনীর পরিচালিত অভিযানের নাম “ডেজার্ট স্টর্ম” বা “মরুভূমির ঝড়”।
  • কুয়েত থেকে ইরাকের সেনাবাহিনীকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের অভিধানকে বলা হয় “মরুভূমির তরবারি” বা “ডেজার্ট সোর্ড”।
  • মূলত শিয়া সুন্নির দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে সাদ্দাম হোসেনের পতনের সূত্রপাত হয়।
  • সাদ্দাম হোসেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মনে প্রানে বিশ্বাস করতেন তার ফাঁসি হবে না।

মন্তব্য

আজকের এই পর্বে এ পর্যন্তই। সাদ্দাম হোসেন সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানার রয়েছে। তার জীবনের ইতিহাস সম্পর্কে জানার জন্য আরও দুটি পর্ব রয়েছে। দ্বিতীয় পর্ব পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এবং তৃতীয় পর্ব পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

পরবর্তী পর্বগুলো পড়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url