পায়ের দুর্গন্ধ দূর করতে যা করবেন | জানুন সহজ কিছু উপায়
এখন প্রচন্ড গরম কাল, গরমে শরীর হাত-পা ঘেমে যাবে একদম স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে কাজের সময় যদি হাত এবং পা অতিরিক্ত ঘামে তখনই বিপত্তি পৌঁছে যায় চরমে। হাত ঘামলেও দুর্গন্ধের সমস্যা থাকে না। তবে পা ঘামলে অস্বস্তির সাথে বোনাস হিসেবে আমরা পেয়ে যাই চরম দুর্গন্ধ। কারো সামনে বা কোথাও গিয়ে আমরা সহজেই জুতা খুলতে পারি না দুর্গন্ধের কারণে। আমরা ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠি পায়ের দুর্গন্ধ দূর করতে কি করব!
জীবনযাপন এর আজকের এই পর্বে আমরা জানবো পায়ের দুর্গন্ধ দূর করার সবকিছু উপায়। যেগুলোর অনেকগুলোই হয়তো আমাদের জানা আবার বেশ কিছু আছে অজানা। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই কিভাবে পায়ের দুর্গন্ধ দূর করতে পারি। আশা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
ভিনেগার ব্যবহার করুন
পায়ের দুর্গন্ধ দূর করার কোন একটি কাজ করে উপায় হচ্ছে ভিনাগার ব্যবহার করা। ভিনেগার ঘামে সৃষ্টি হওয়া বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাককে মেরে ফেলে যা দুর্গন্ধ সৃষ্টির অন্যতম কারণ। একটি পাত্রে দুই অংশ পানি এবং এক অংশ পরিমাণ ভিনেগার বা আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখুন। এরপর পা তুলে কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে অন্তত একবার করুন। পায়ের দুর্গন্ধ থেকে অনেকটাই মুক্তি মিলবে। তবে খেয়াল রাখবেন পায়ে কোন ধরনের ক্ষত থাকলে ভিনেগার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
স্যান্ডেল ব্যবহার করুন
জুতার তুলনায় স্যান্ডেল অনেকটাই খোলামেলা থাকে বিধায় জুতার তুলনায় স্যান্ডেল পরলে ঘাম অনেক কম হয়। ঘাম কম হয় ফলে দুর্গন্ধর মাত্রা অনেক কম হয়। স্যান্ডেল পড়লে সাধারণত বাইরে থেকে বাতাস লাগতে পারে পায়ে ফলে পা বন্ধ অবস্থায় পড়ে না। তবে খেয়াল রাখবেন রাবার এবং প্লাস্টিকের জুতা একদম পরবেন না এগুলো আরো বেশি ঘাম উৎপন্ন করে।
বেকিং সোডা ব্যবহার করুন
পায়ের দুর্গন্ধ দূর করতে বেকিং সোডা হতে পারে আরেকটি কার্যকরী উপাদান। বেকিং সোডার রাসায়নিক নাম হল সোডিয়াম বাই কার্বনেট যেটি আপনার পায়ের ঘামের পিএইচকে নিরপেক্ষ করে ব্যাকটেরিয়া নিধন করে ঘাম নিয়ন্ত্রণ করতে এবং দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে। বাইরে থেকে বাসায় এসে সামান্য একটু বেকিং সোডা জুতার ভেতরে পুরোটাই ভালোমতো ছিটিয়ে দিন এবং সারারাত সেভাবে রেখে দেন। সম্ভব হলে পরের দিন জুতো থেকে বেকিং সোডা গুলো ফেলে দিয়ে রোদে ভালো করে শুকিয়ে তারপরের দিন ব্যবহার করতে পারবেন। এতে করে জুতার ভেতরে থাকা সমস্ত রকমের ছত্রাক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হবে এবং নতুন করে কোন দুর্গন্ধ সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ থাকবে না।
জুতা জীবাণুমুক্ত করুন
পায়ের দুর্গন্ধ দূর করার প্রধান উপায় হলো পা পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি জুতা এবং মোজা পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। তো জুতা জীবনমুক্ত করার জন্য ইথানল যুক্ত জীবনুনাশক স্প্রে করতে পারেন। জুতার ভেতরে ইনসোল বের করে তাতে ভালোমতো জীবাণুনাশক স্প্রে করে সারাদিন খোলা বাতাসে ফেলে রাখুন। পরের দিন শুকিয়ে গেলে সেটি আবার জুতার মধ্যে প্রবেশ করিয়ে জুতা পরুন।
সুগন্ধি পাউডার ব্যবহার করুন
বাজারে পাওয়া যায় এমন বিভিন্ন সাধারন পাউডার অথবা টেলকম পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। প্রত্যেকবার জুতা পরার আগে পা পরিষ্কার করে শুকিয়ে পরিষ্কার মোজা পরে মোজার উপরে পাউডার ছিটিয়ে দেবেন। জুতার ভেতরেও কিছুটা ছিটিয়ে দিতে পারেন এতে দীর্ঘক্ষণ জুতা পড়ে থাকার ফলে পা সামান্য ঘামলেও দুর্গন্ধ হবে না। তবে এই কাজটি আপনাকে প্রত্যেকদিন নতুনভাবে করতে হবে। অর্থাৎ আজকে সুন্দর করে পাউডার দিয়ে জুতা পরলেন এরপরে মোজা পরিষ্কার না করে এবং জুতা না শুকিয়ে সেটাই যদি আগামীকাল আবার পরেন তাহলে সুফল পাবেন না।
চা ব্যবহার করুন
পায়ের দুর্বল না দূর করতে কালো চা ব্যবহার করতে পারেন। একটি বড় পাত্রে কিছু ফুটন্ত গরম পানি নিয়ে তার মধ্যে চার চা চামচ অথবা দুটি টি ব্যাগ ডুবিয়ে বেশ কিছুক্ষণ প্রায় দশ মিনিট রেখে দিন। এরপর পানির সাথে চা ভাল মত মিশে গেলে মেশানো পানিতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখুন যতক্ষণ পর্যন্ত পানি গরম থাকে। এরপর পানি ঠান্ডা হয়ে আসলে পা তুলে কাপড় দিয়ে মুছে সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে নিন। সপ্তাহে অন্তত এক থেকে দুইবার এটি করলে সুফল পাবেন।
ইপসম সল্ট ব্যবহার করুন
ইপসাম সল্ট মাইক্রোবিয়াল হওয়ার কারণে যেকোনো ধরনের সংক্রমের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং যেকোনো ধরনের দুর্গন্ধকে প্রশমিত করে। তাই পায়ের গন্ধ দূর করতে ইপসম সল্ট ব্যবহার করতে পারেন। একটি বড় পাত্রে ফুটন্ত গরম পানিতে দুই কাপ পরিমাণ ইপসম সল্ট মিশিয়ে নিন ভালো করে। এরপর ১৫ মিনিটের জন্য পানিতে পা ভিজিয়ে রাখুন, এটি দিনে দুবার করতে পারেন। রাতে ঘুমানোর আগে এ কাজটি করতে পারলে সবচেয়ে ভালো উপকার পাবেন কারণ পা শুকানোর পরপরই আপনাকে জুতা বা মোজা পরতে হবে না। এছাড়াও পায়ে যে কোনো ধরনের ব্যথা থাকলেও ইপসাম সল্ট মিশ্রিত পানিতে পা ডুবিয়ে রাখলে উপকার পাবেন কারন এই লবণ ব্যথা নাশক।
ল্যাভেন্ডার তেল ব্যবহার করুন
ল্যাভেন্ডার তেল পায়ের দুর্গন্ধের তীব্রতা কমিয়ে দেয়। এটি ব্যবহার করার আগে নিশ্চিত হন যে লেভেন্ডার তেল এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আপনার ক্ষতি হবে কিনা! এর জন্য পায়ের উপরে এক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার তেল দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন, কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা চুলকানি না হলে বোঝা যাবে এটি আপনার ত্বকের জন্য সমস্যা করবে না। এই তেল দুভাবে ব্যবহার করা যায়। প্রথমত, কয়েক ফোটা তেল আপনার পায়ের তালুতে ঘষে সঠিকভাবে মালিশ করে ঘুমোতে যেতে পারেন। দ্বিতীয়ত, একটি বড় পাত্রে কয়েক ফোটা তেল মিশিয়ে তার ভেতর ১৫ থেকে ২০ মিনিট পা ডুবিয়ে রেখে শুকনো কাপড় দিয়ে শুকিয়ে নিতে পারেন।
এন্টিপার্সপিরেন্ট ব্যবহার করুন
পুরো শরীর এবং বগলের মত পায়ের পাতাতেও ডিওডোরেন্ট স্প্রে ব্যবহার করা যায়। তাই এন্টি পারস্পিরেন্ট যুক্ত ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করুন। এন্টিপার্সপিরেন্ট এর মধ্যে কিছু রাসায়নিক উপাদান থেকে যা ঘাম কমাতে সাহায্য করে এবং ডিওডোরেন্ট দুর্গন্ধ কে দমিয়ে রাখে। তাই এটি আপনার পা কে অতিরিক্ত ঘামা থেকে দূরে রাখার পাশাপাশি দুর্গন্ধের মাত্রা অনেকটা কমিয়ে আনবে।
পায়ের আর্দ্রতা দূর করুন
আর্দ্র পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক বেশি জন্মায় ফলে পা বেশি ঘামে এবং দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। তাই পায়ের আদ্রতা দূর করার জন্য নিয়মিত পা কিছুক্ষণ পরপর ধুতে হবে এবং বাতাসে শুকিয়ে নিতে হবে। পা ধোবার ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে গরম পানি এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল সাবান দিয়ে পা ধুতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন পা ধোয়ার সময় তাড়াহুড়া করে আঙ্গুলের খাজ গুলো যেন শুকনো থেকে না যায়। প্রয়োজন পড়লে অজু করার মত করে আঙ্গুল গুলোর খাজে হাতের আঙ্গুল দিয়ে ঘষে ভালো মতো ধুতে হবে।
নিয়মিত মোজা পরুন
অনেকে আছেন যারা মজা ছাড়া শুধু জুতা পরে চলাফেরা করেন। তাদের ক্ষেত্রে পা যখন ঘেমে যায় তখন সরাসরি ঘাম জুতোর ভিতরে লেগে থাকে এবং সেখানে একটি সাঁতাসেতে পরিবেশের কারণে ব্যাকটেরিয়া ছত্রাকের বংশবিস্তার সহজ হয়ে যায় এবং দুর্গন্ধ চরম আকার ধারণ করে। তাই মোজা আদ্রতা শোষণ করায় প্রত্যেকবার জুতা পরার আগে পরিষ্কার মোজা পরুন।
স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন
হাতকে জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি এলকোহল যুক্ত যে কোন হ্যান্ড স্যানিটাইজার পায়ের দুর্গন্ধ দূর করতেও ব্যবহার করতে পারেন। প্রত্যেকবার পরিষ্কার জুতা এবং মোজা পরার আগে পা ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে হ্যান্ড সেনিটাইজার পায়ের উপরে এবং পায়ের পাতায় ভালো করে স্প্রে করে শুকিয়ে এরপরে মজা পরে জুতা পরুন। এভাবে দীর্ঘক্ষণ জুতা পরে থাকলেও পায়ের দুর্গন্ধ অনেকটাই কম হবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল হওয়ায় পা ঘেমে গেলেও সেখানে ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হতে বাধা সৃষ্টি করে।
জুতা মোজা নিয়মিত পরিবর্তন করুন
জুতা এবং মোজা নিয়মিত পরিবর্তন বলতে পরপর দুই-তিনদিন একজোড়া মোজা এবং জুতা পরা থেকে বিরত থাকুন। সবচেয়ে ভালো হয় সপ্তাহে সাত দিনের জন্য সাত জোড়া মোজা এবং জুতা প্রস্তুত রাখা। প্রত্যেকদিন বাসায় এসে মোজা ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে রাখুন। আর সপ্তাহে অন্তত একদিন জুতা পরিষ্কার করে রোদে ভালো করে শুকিয়ে নিন। জুতা পরার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখুন, এমন জুতা পরুন যাতে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকে। মোজা পরার ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে সুতি বা সিনথেটিক কাপড়ের মোজা পরুন এগুলো পায়ের আর্দ্রতা শোষণ করে ঘাম কমাতে সাহায্য করে ফলে দুর্গন্ধ কমাতেও ভূমিকা পালন করে।
মন্তব্য
পায়ের দুর্গন্ধ দূর করার উপায় হিসেবে উপরে যে পদ্ধতি গুলো আলোচনা করা হলো সেগুলোর বাইরে আরো কিছু পদ্ধতি থাকতে পারে। আর উপরের সবগুলো পদ্ধতি যে আপনাদের প্রয়োগ করতে হবে এমনটি নয়। পর্যায়ক্রমে দেখতে পারেন যে পদ্ধতিটি আপনার জন্য কার্যকরী হবে সেটি নিয়মিত ব্যবহার করবেন। আর সবগুলো পদ্ধতি প্রয়োগের পরেও যদি কোন উপকার না পান তবে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আমাদের ওয়েবসাইটে এসে লেখাটি পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এ ধরনের আরও তথ্যবহুল এবং উপকারী লেখা পড়তে চাইলে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের এই ওয়েবসাইট। লেখাটি ভালো লেগে থাকলে নিজের শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ভালো থাকবেন ধন্যবাদ।
মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url