নিজেকে স্মার্ট দেখানোর কৌশল | বাহ্যিকভাবে স্মার্ট হওয়ার সহজ কিছু উপায় | পর্ব ০১
'স্মার্ট' অথবা 'স্মার্টনেস' এই শব্দগুলোর সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। এই শব্দগুলো শোনার সাথে সাথে আমরা কৌতুহলের দৃষ্টিতে সে ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে থাকে যাকে আমরা স্মার্ট মনে করি। অনেক সময় আবার কিছুটা হিংসাও করি যে আমরা কেন তার মত স্মার্ট হতে পারি না। তবে নিজেকে স্মার্ট দেখানোর কৌশল বিষয়ে আমরা একদমই অবগত নই অর্থাৎ আমাদের কথাবার্তা, চিন্তাভাবনা, আচার-আচরণের মধ্যেই যে স্মার্টনেস লুকিয়ে থাকে সেটা আমাদের অনেকের কাছেই অজানা।
“জীবনযাপন” এর আজকের এই পর্বে আমরা জানার চেষ্টা করব নিউ ইয়র্ক সিটির মোটিভেশনাল স্পিকার জন কিগান এর লেখা নিবন্ধ থেকে কিছু বিষয় যেখানে তিনি স্পষ্টভাবে আলোচনা করেছেন একজন ব্যক্তিকে বাহ্যিকভাবে কি কি আচরণ দেখলে স্মার্ট বলা যেতে পারে। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নিন বিষয়গুলো, আশা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
পরিপাটি পোশাক করুন
আমাদের দেশে একটি কথা খুব প্রচলিত আছে সেটি হল “আগে দর্শনধারী তো পরে গুণবিচারী।” অর্থাৎ যে কোন কিছুর ক্ষেত্রে প্রথমে মানুষের কাছে একটি ইম্প্রেশন সৃষ্টি করতে হবে। আর এর জন্য প্রয়োজন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিপাটি পোশাক পরিধান করা। ভালো জামা কাপড় বলতে যে সবসময় দামি জামা কাপড় কে বোঝায় ব্যাপারটি সেরকম নয়।
কম দামি জামা কাপড় ও যদি পরিষ্কার হয় এবং প্রয়োজন হলে ইস্ত্রি করা হয় তবে সেটিও দেখতে অনেক পরিপাটি লাগে। যদিও অভ্যন্তরীণ বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিপাটি পোশাকের তেমন কোন সম্পর্ক নেই কিন্তু আপনি অনেক বুদ্ধিমান কিন্তু পোশাক পরিচ্ছদ টিপটপ নয় তাহলে ব্যাপারটা বেমানান হয়ে যাবে।
আবার অনেক দামি জামা কাপড় কিন্তু আপনার শরীরের সাথে ফিটিং নয় সেটিও দেখতে কিন্তু ভালো লাগবে না। আপনার ব্যক্তিত্বের সাথে মানানসই রুচিসম্মত রংয়ের পোশাক পরুণ। দূর থেকে অনেক উজ্জ্বল লাগবে বিধায় ক্যাটকেটে রংয়ের পোশাক পরা থেকে বিরত থাকুন।
টি শার্ট ট্রাউজার এড়িয়ে চলুন
নিঃসন্দেহে টি-শার্ট এবং ট্রাউজার একটি আরামদায়ক পোশাক। তবে এগুলো বাসায় পরার জন্য ঠিক আছে কিন্তু আপনি যদি বাইরে বের হন অথবা বাসায় যদি কোন মেহমান আসে তবে টি-শার্ট, ট্রাউজার, পুরনো ছেড়া সালোয়ার কামিজ পরা থেকে বিরত থাকুন।
বাইরে কোন কাজে বা বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গেলে অথবা প্রফেশনাল কোন কাজে গেলে অবশ্যই ফরমাল জামা কাপড় অথবা জিন্স এর সাথে শার্ট অথবা পোলো শার্ট ইন করে পরতে পারেন, ভালো রুচিসম্মত মার্জিত রঙের সালোয়ার কামিজ অথবা শাড়ি পড়তে পারেন। এতে আপনাকে যে খুব বেশি পরিমাণ প্রফেশনাল দেখাবে তেমনটি নয় আপনি নিজের কাজে, মনের দিক থেকে আত্মবিশ্বাস পাবেন।
চশমা পরতে পারেন
শুধুমাত্র চোখের সমস্যা হলেই চশমা পড়তে হবে এমনটি নয় আপনাকে আরো বেশি স্মার্ট দেখাতে, ধুলোবালি থেকে, রোদ বাতাস থেকে রক্ষা করতেও চশমা পরতে পারেন। সাদা গ্লাসের চশমা অথবা সানগ্লাস পরতে পারেন। অনেকের কাছেই হতো চশমা পরাটা স্মার্টনেস নয় তবে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অর্থাৎ মুভি নাটক এসবে চশমা পরাটা স্মার্টনেস এবং বুদ্ধিদীপ্ত আচরণের পরিচায়ক।
তবে আপনার চোখে যদি সমস্যা থেকে থাকে এবং আপনি চশমা পরাটা পছন্দ যদি না করে থাকেন তবে চশমার পরিবর্তে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে পারেন। সেটা আপনার ইচ্ছা এবং রুচির উপর নির্ভর করে।
পরিপাটি জুতা পড়ুন
আমরা অনেকেই আছি জামা কাপড়ের সৌন্দর্যের দিকে মনোযোগী হলেও পায়ের সৌন্দর্যের দিকে আমরা একদমই ওয়াকিবহাল হই না। তবে স্মার্ট ব্যক্তিরা কিন্তু পায়ের দিকেও সমান নজর দেন। অফিসে বা ফরমাল কোন পরিবেশে গেলে অবশ্যই ফরমাল সু পরুন।
তবে কোন আউটিং বা বন্ধু-বান্ধবদের সাথে দেখা করতে গেলে অর্থাৎ কোন ইনফরমাল পরিবেশে গেলে আপনি যে কোন সু অথবা স্নিকার্স করতে পারেন। তবে সব ক্ষেত্রেই যত দামি হোক না কেন স্যান্ডেল পরিহার করাই উত্তম। জামা কাপড়ের সাথে অর্থাৎ পোশাকের সাথে মানানসই একজোড়া জুতো আপনার স্মার্ট লুক কে এক ধাপ বাড়িয়ে দিতে সক্ষম।
ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, সতেজ এবং স্মার্ট দেখাতে অবশ্যই শারীরিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন। নিয়মিত প্রতিদিন গোসল করুন, চুল পরিষ্কার করুন, হাতে পায়ের নখ ছোট রাখুন, প্রত্যেকদিন দাঁত ব্রাশ করুন। আপনার যদি ব্যাড ব্রেথ অর্থাৎ নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধের সমস্যা থেকে থাকে তবে নিয়মিত মাউথ ফ্রেশ্নার ব্যবহার করুন অথবা প্রাকৃতিকভাবে লবঙ্গ এলাচ এগুলো মুখে দিয়ে চিতাতে পারেন। পুরুষরা নিয়মিত চুলকাটন সেলুনে গিয়ে এবং নারীদের চুল বড় থাকলেও কয়েক মাস পর পর সুন্দর সাইজ করে পার্লার থেকে কেটে আসতে পারেন।
সঠিক অঙ্গভঙ্গি অনুসরণ করুন
একজন লম্বা পুরুষ চেহারা যেমনই হোক না কেন সুদর্শন এবং স্মার্ট হিসেবে দেখতে বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু তিনি লম্বা হওয়ার কারণে যদি পিঠ সামান্য বেঁকে অর্থাৎ পুজো হয়ে হাঁটাচলা করেন তবে তার স্মার্টনেসটা আর থাকে না। ঠিক তেমনি চেয়ারে বা সোফায় বসার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই মেরুদন্ড সোজা রেখে বসলে স্মার্টনেস স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসে।
আপনি যখন হাঠবেন আপনার পা যেন সোজা থাকে এবং পায়ের পাতা যেন সোজাভাবে আপনি ফেলেন সেদিকে খেয়াল রাখুন, এটি স্মার্টনেস এর একটি বৈশিষ্ট্য। হাঁটার সময় খেয়াল রাখবেন রাস্তার সাথে আপনার স্যান্ডেল বা জুতোর ঘর্ষণের জন্য কোন শব্দ না হয়। নিঃশব্দে হাঁটা নিঃসন্দেহে একটি স্মার্টনেসের পরিচায়ক।
চোখের যোগাযোগ রাখুন
আপনি যখন কারো সাথে কথা বলছেন হোক সেটা সাধারণ সাক্ষাৎ তার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। তবে যতক্ষণ কথা বলবেন একটানা তাকিয়ে থাকতে হবে বিষয়টি সেরকম নয়। মাঝেমধ্যে এদিক সেদিক তাকাবেন তবে যার সাথে কথা বলছেন তার চোখের দিকেও তাকিয়ে কথা বলবেন।
এতে করে আপনার আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়বে ঠিক তেমনি অপর প্রান্তের ব্যক্তিও বুঝতে পারবেন আপনি তার সাথে কথা বলায় মনোযোগী। কারো সাথে কথা বলার সময় পুরো কথা বলার প্রায় ৫০% তার দিকে তাকান এবং যখন কারো কথা শুনবেন তখন পুরো কথা শোনার প্রায় ৭০-৮০% সময় তার দিকে তাকান। চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা একটি স্মার্টনেস।
বলুন কম শুনুন বেশি
নতুন যেকোনো ধরনের তথ্য জানার জন্য বলার চেয়ে বরং শুনুন বেশি। স্মার্ট লোকেরা সাধারণত বুদ্ধিমান হয়। তাই আপনি এমন কোন কথোপকথনে যদি যুক্ত হন যে বিষয়ে আপনার তেমন কোন ধারণা নেই তবে সেখানে আপনি অযথা কথা বলে নিজেকে হাসির পাত্র না করে বরং চুপ থেকে অন্যদের কথা শুনুন।
আপনি সেখানে কিছু বলতে না পারলেও অনেক তথ্য আপনি জানতে পারবেন যেটা আপনার জানা ছিল না। পরবর্তীতে আপনি বুদ্ধিমানের মত বিনয়ের সাথে বিষয়টিকে আপনার জানা কোন বিষয়ের সাথে সংযুক্ত করতে পারেন যে বিষয়ে কথা বলার মত আপনার যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে এবং যে তথ্য দিয়ে আপনি অন্যদেরকে আকৃষ্ট করতে পারেন।
আপনাকেও কথা বলতে হবে অথবা সেই বিষয়ে আপনি অন্যদের চাইতে বেশি জানেন এরকম নিজের জাহিরোতি প্রকাশ করার জন্য বিষয়টিকে পরিবর্তন করবেন না বরং আপনি সেই বিষয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন বিধায় বিষয়বস্তুটি চেঞ্জ করবেন।
বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন করুন
একজন ব্যক্তির সাধারণ কথা অথবা সাধারণ কিছু প্রশ্ন তাকে পরিচয় করিয়ে দিবে অন্যদের কাছে স্মার্ট হিসেবে। সাধারণ হলেও সে কথা বা প্রশ্নগুলোকে হতে হবে বুদ্ধিদীপ্ত। কোন কথোপকথনে যদি এমন হয় যে সে বিষয়বস্তু সম্পর্কে আপনি তেমন কিছুই জানেন না কিন্তু আপনার বুদ্ধিদীপ্ত কথা বা প্রশ্ন অন্যদেরকে একটুও বুঝতে দিবে না যে আপনার সেই বিষয়ে কোন জ্ঞান নেই।
ধরুন কথোপকথনে একটি বই নিয়ে আলোচনা চলছে যে বইটি সম্পর্কে আপনার বিন্দুমাত্র কোন ধারণা নেই। তাহলে আপনি প্রশ্ন করতে পারেন এইভাবে- “এই বইটির ভেতরে আপনার কোন জিনিসটি সবচেয়ে ভালো লেগেছে?”
বয়োজ্যেষ্ঠদের সাথে সময় কাটান
পরিবারে আমাদের বাবা-মা ছাড়াও দাদু-দাদি, নানু-নানি থাকেন। তাদের সাথে আমাদের সময় কাটানো উচিত। তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন তাদের সারা জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা এবং শুনুন তাদের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বিভিন্ন গল্প। এতে আপনার এই বয়সেই আপনি অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন যা আপনার সমবয়সী অন্য কারো হবে না। ভালো অভিজ্ঞতা যত বেশি হবে অন্যদের কাছে আপনি ততই স্মার্ট হয়ে উঠবেন।
নিজেকে আপডেট রাখুন পুরো বিশ্ব সম্পর্কে
স্মার্ট ব্যক্তিরা সবসময় সচেতন থাকেন তার চারপাশে কি ঘটছে সে ধরনের বিভিন্ন তথ্য নিয়ে। সমসাময়িক তথ্য দিয়ে নিজেকে আপডেট রাখতে পারলে বন্ধুদের সাথে আড্ডায়, চাকরির ইন্টারভিউসহ যে কোন ক্ষেত্রেই আপনি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকবেন এবং লোকে আপনাকে স্মার্ট ভাবতে কৃপণতা করবে না।
নিজেকে আপডেট রাখতে টেলিভিশনে নিয়মিত খবর দেখুন, ইউটিউবে বিভিন্ন তথ্যপূর্ণ ভিডিও দেখতে পারেন, খবরের কাগজ, বিভিন্ন পত্রিকা পড়তে পারেন। ধরুন অ্যান্ড্রয়েড ফোন নিয়ে আলোচনা চলছে। আপনি যদি সেখানে ফ্ল্যাটশিপ ফোন এবং সাধারণ এন্ড্রয়েড ফোনের পার্থক্য জেনে থাকেন তবে সে তথ্য দিয়ে কাউকে আপনি সাহায্য করতে পারবেন।
সেন্স অফ হিউমার
কিছু মানুষ রয়েছেন যারা কোন কথোপকথনের মাঝে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে এমন কিছু বলেন যার পরিপ্রেক্ষিতে আশেপাশের সবাই বিরক্তবোধ না করে বরং আনন্দিত হন এবং হেসে উঠেন। এই ধরনের সেন্স অফ হিউমার সম্পন্ন ব্যক্তিরা সাধারণত স্মার্ট হিসেবে বিবেচিত হন।
সৌজন্যতা মেনে চলুন
নিজেকে স্মার্ট হিসেবে পরিচয় দিতে চাইলে সৌজন্যতা একটি বড় গুণ হতে পারে। সব দেশেই সব জাতিরই সৌজন্যতাবোধ রয়েছে। কেউ আপনার উপকার করল আপনাকে কোন তথ্য জানালো তাহলে তাকে হাসিমুখে ধন্যবাদ জানান। রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছেন ওয়েটার খাবার পরিবেশনের পরে তাকে ধন্যবাদ জানান। কারো সাথে কথার শুরুতে সালাম অথবা কুশল বিনিময় করুন এবং কথা শেষ হলে ভদ্রভাবে বিদায় নিন।
শেষ কথা
অনেকে মনে করেন স্মার্ট হতে অনেক বুদ্ধিমান হতে হয় অথবা অনেক টাকা পয়সা খরচ করে দামি পোশাক পরতে হয়। কিন্তু এই কথাগুলো যে ভিত্তিহীন তা উপরের আলোচনা থেকেই আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। স্মার্ট হতে আসলে বেশি পরিশ্রম বা অনেক অধ্যাবসায় করার প্রয়োজন নেই। আমাদের নিত্যদিনের আচার-আচরণ চালচলন এর প্রতি আমরা যদি একটু সচেতন হই তাহলে আমরা স্মার্ট হতে পারবো।
আজ এ পর্যন্তই। এই আর্টিকেলের দ্বিতীয় পর্ব পড়তে চাইলে এখান থেকে পড়ে নিতে পারেন। পরবর্তী কোন লেখায় আবার আপনাদের সাথে যোগাযোগ হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ।
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট
মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url