অফিসে সেরা কর্মী হবেন যেভাবে | ভাল কর্মচারী হওয়ার গুণাবলী
আপনি সরকারি বা বেসরকারি যেকোনো ধরনের চাকরি করুন না কেন আপনাকে কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে এবং কাজের প্রতি সম্পূর্ণ মননিবেশ করতে হবে। অর্থাৎ একজন ভালো কর্মচারী হলে বস বা সুপারভাইজার এর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবেন এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রেও এটি ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে। তবে আমরা অনেকেই বুঝে উঠতে পারি না ভালো কর্মচারী কিভাবে হওয়া যায়!
“কর্মক্ষেত্র” এর আজকের এই পর্বে আমরা কিছু বিষয় জানার চেষ্টা করব ক্যালিফোর্নিয়ার একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান রাইজ টু রিয়ালাইজ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী কোচ আরডা অজডেমির এর লেখা প্রবন্ধ থেকে যেখানে তিনি একজন ভালো কর্মচারী হওয়ার কিছু উপায় আলোচনা করেছেন। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক উপায় গুলো। আশা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
কাজের জন্য রুটিন তৈরি করুন
আপনার উপর অর্পিত কাজের দায়িত্ব গুলো সঠিকভাবে পালনের জন্য একটি রুটিন তৈরি করুন এবং সেই রুটিনে কোন কাজগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং যেগুলো আগে সম্পূর্ণ করতে হবে সেগুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন। অনেক সিনিয়র কর্মচারী রয়েছেন যারা অনেক পুরনো হয়ে গেলে অর্থাৎ দক্ষ হলে সেই পুরনো রুটিনেই কাজ করতে থাকেন।
কিন্তু এমনটি না করে প্রতিনিয়ত কাজের ধরন পরিবর্তনের সাথে সাথে আপনার রুটিনের ধরনও পরিবর্তন করা উচিত। সব সময় চেষ্টা করুন সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করে আপনার বসের কাছে জমা দিতে। সঠিক সময় কাজ জমা দিতে না পারলে অথবা কাজে কোন ভুল হলে কোনোরকম অজুহাত প্রদর্শন না করে ভুল স্বীকার করুন। ভালো কর্মচারীর জন্য এটি একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করুন
আপনাকে যে প্রজেক্ট বা কাজগুলো এসাইন করা হয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে করার চেষ্টা করার পাশাপাশি আরো নতুন কোন উদ্যোগ বা আইডিয়া যদি আপনি পান তবে সেটা আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অর্থাৎ বস বা সুপারভাইজার কে জানান। এটা আপনার সম্পর্কে তাদের ধারণা হবে এরকম যে, আপনি বেশ কর্মঠ এবং আপনি আপনার দায়িত্বের বাইরেও প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো কিছু চিন্তা করেন।
আরও পড়তে পারেন
আপনার বস বা সুপারভাইজার যদি আপনার কাজের মূল্যায়ন করে এবং আপনার কাজের গুরুত্ব সঠিকভাবে প্রদান করে তবে তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য আপনি আপনার কাজের বাইরেও অতিরিক্ত পরিশ্রম করুন, আপনার দক্ষতা তাদের সামনে উপস্থাপন করুন যাতে তারা বুঝতে পারে আপনি একজন ভালো কর্মচারী।
প্রশিক্ষণের সুযোগ নিন
দক্ষতা অর্জনে প্রশিক্ষণের বিকল্প কিছু হতে পারে না। আর তারাই দক্ষ হয় যারা প্রশিক্ষণের সুযোগকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে প্রশিক্ষণ শেষে অর্জিত জ্ঞান সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে। প্রতিষ্ঠান থেকে যদি আপনাকে অনলাইন বা অফলাইন প্রশিক্ষণের সুযোগ দেয় অবশ্যই গ্রহণ করুন।
যদি এরকম কোন সুযোগ না থাকে এবং আপনি যদি বুঝতে পারেন প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে আপনার দক্ষতা উন্নয়নের বিশেষ প্রয়োজন তাহলে আপনার বস বা সুপারভাইজারকে বিষয়টি অবগত করুন। এতে করে তারা আপনার সম্বন্ধে একটি ভালো ধারণা পাবে যে, আপনি আপনার কর্মদক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে মূলত প্রতিষ্ঠানের উন্নতিই চাইছেন। এই ধরনের আচরণ আপনাকে একজন ভালো কর্মচারী হতে সাহায্য করবে।
সমালোচনাকে কাজে লাগান
যারা কাজ জানে এবং যারা কাজ করে সমালোচনা তাদেরই হয়, যারা অলস এবং অকর্মণ্য তাদের কখনো সমালোচনা হয় না, হয় নিন্দা। তাই অফিসে কাজ করতে গেলে আপনার ভুল হবে এটাই স্বাভাবিক। এই সমালোচনা আপনার অফিসের বস অথবা সুপারভাইজার সহকর্মী আপনার অদস্তন সহকর্মী অথবা কোন ক্লায়েন্ট যে কেউ করতে পারে।
সমালোচনা করলে সেখানে উত্তেজিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক কোন আচরণ না করে বরং এটিকে আপনি পজিটিভলি গ্রহণ করুন এবং আপনার দক্ষতা বৃদ্ধিতে এটিকে একটি টিপস মনে করুন। যারা সমালোচনাকে জয় করতে পারে সফলতা তাদের দ্বারপ্রান্তে এসে পড়ে।
ধরুন আপনি একটি প্রজেক্ট পেপার রেডি করেছেন যেটিতে অসংখ্য ব্যাকরণগত ভুল রয়েছে। আপনার বস অথবা কোন ক্লায়েন্ট এসে যদি বিরক্ত হয়ে আপনার ভুলগুলোর কথা উল্লেখ করে তবে এখানে আপনি আপনার লিখার দক্ষতাকে উন্নত করার মাধ্যম হিসেবে সমালোচনাটিকে গ্রহণ করুন।
সরাসরি কথা বলুন
সাধারণত চাকরিতে নিয়োগ দেয়ার সময় সাক্ষাৎকারে বলে দেওয়া হয় একজন কর্মচারীকে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কি কি ধরনের কাজ করতে হবে। তবে পরবর্তীতে কর্মচারীর কাজের অগ্রগতি এবং আচরণে সন্তুষ্ট হয়ে কর্তৃপক্ষ যদি তার বাইরেও কোন কাজ দিয়ে থাকে এবং সেই ক্ষেত্রে কাজটি কিভাবে সম্পাদন করতে হবে সেটা যদি কর্মচারী বুঝতে না পারে তবে অন্য সহকর্মীর কাছে না গিয়ে সরাসরি কর্তৃপক্ষের কাছে জিজ্ঞেস করা উচিত বিষয়টির ব্যাপারে।
ধরুন আপনি একজন ক্রীড়া সাংবাদিক, খেলা নিয়ে রিপোর্ট করাই আপনার কাজ। এখন আপনাকে যদি একজন সেলিব্রেটির খবর কাভার করতে দেয়া হয় তবে সেক্ষেত্রে কি কি বিষয় আপনার জানা প্রয়োজন সেলিব্রেটির কাছ থেকে সে তথ্যগুলো আপনি আপনার বসের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন। একজন ভালো কর্মচারী হতে হলে নির্ভুলভাবে কাজ করা জরুরী।
সহযোগিতা করুন
আপনি যদি কোন টিম ওয়ার্ক এ কাজ করেন তবে অন্যান্য সহকর্মীদের সহযোগিতা করুন। সহযোগিতার এই মনোভাব বসকে এটাই বোঝাতে সাহায্য করবে যে, আপনি নিজের এবং আপনার সহকর্মীদের কাজের প্রতি যত্নশীল।
দিনের শেষ সময়টুকু কাজে লাগান
অফিস আওয়ারের শেষ ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরবর্তী দিনের কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য ব্যয় করুন, অন্যরা যেখানে কিছুক্ষণ আগেই অফিস থেকে বের হয়ে যেতে চায় অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটায়।
প্রয়োজনের ফাইল গুছিয়ে রাখুন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো প্রস্তুত রাখুন, টেবিল গুছিয়ে রাখুন, আপনি যদি আলাদা কেবিনে বসেন পুরো রুমটা গুছিয়ে রাখুন, দরকার হলে আগামীকাল এসে সবার প্রথমে কোন কাজটি করলে আপনার সুবিধা হয় সেটি নোট করে রাখতে পারেন। এরকম গোছানো আচরণ আপনার কাজের মধ্যেও প্রতিফলিত হবে এবং আপনার বস বুঝতে পারবে আপনি কঠোর পরিশ্রমী ভালো একজন কর্মচারী।
সহকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন
একজন ভালো কর্মচারীর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অফিসের অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। সুসম্পর্ক বজায় না রাখার অর্থ হচ্ছে আপনি সেই প্রতিষ্ঠানে এবং সহকর্মীদের সাথে কাজ করতে আগ্রহী নন। সহকর্মীদের সুখে, দুঃখে বিপদ-আপদে পাশে থাকার চেষ্টা করুন। অফিসে ওয়ার্কিং আওয়ারে হাসিমুখে কথা বলুন। নিয়মিতভাবে সহকর্মীদের শারীরিক সুস্থতার খোঁজখবর রাখুন।
পিএনপিসি থেকে দূরে থাকুন
পরনিন্দা পরচর্চা করলে শুধুমাত্র ব্যক্তিগতভাবেই হেয় হয় না, তার সাথে ক্যারিয়ারের ক্ষতি অনিবার্য। সহকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে গিয়ে অন্যদের নামে দুর্নাম বা গীবত করা একদম অনুচিত। মনে রাখবেন আপনার নিয়োগকর্তা আপনাকে পরনিন্দা বা গসিপ করার জন্য বেতন দিয়ে কাজে নিয়োগ দেয়নি। তাই অফিস সময়ের পুরোটাই আপনার কাজের প্রতি মনোনিবেশ করুন।
প্রয়োজনে সহকর্মীদের সাথে সময় কাটাবেন, বাইরে হতে চা কফি খেতে যাবেন কিন্তু সেটাও প্রফেশনালি এবং আপনাদের গল্প আড্ডার বিষয়বস্তু অফিস এবং অফিসের কাজকে ঘিরেই হতে হবে। অফিসের ভেতরে চলা যে কোন ধরনের পলিটিক্স বা কুটকাচালি থেকে নিজেকে এড়িয়ে চলুন।
পরামর্শ দিন
জুনিয়র কর্মচারীদের পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। এতে আপনার প্রতি তাদের যেমন একটা ভালো ধারণা জন্মাবে ঠিক তেমনি আপনার দক্ষতা অর্জনেরও একটি ভালো উপায় এটি। তবে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরী। কর্মচারীদের জন্য কাজ করবেন না বরং তাদেরকে কাজটি কিভাবে করতে হয় সেটা শিখিয়ে দিন এবং কি বলছেন সেটা সব সময় খেয়াল রাখবেন। বস বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ বা হতাশার কোন কথা জুনিয়রদের সামনে বলা থেকে বিরত থাকুন।
অফিসের নিয়ম কানুন মেনে চলুন
একজন ভালো কর্মচারী কঠোর নিয়মানুবর্তী এবং নিয়ম-কানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়। সঠিক সময়ে অফিসে প্রবেশ করা এবং নির্ধারিত সময়ের পরে অফিস ত্যাগ করা, লাঞ্চের সঠিক সময়ে লাঞ্চ গ্রহণ করা এবং লাঞ্চে অতিরিক্ত সময় ব্যয় না করা, মনকে সতেজ করার নামে অযথা চা কফি নিয়ে আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট না করা ইত্যাদি বিষয়গুলো একজন ভালো কর্মচারী সব সময় খেয়াল রাখে।
একজন ভালো কর্মচারী হতে হলে আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে এইচআর রেকর্ডস এ যেন কোন শাস্তি মূলক চিহ্ন না থাকে। সহকর্মী বা বসের সাথে কোন মনোমালিন্য হলে সেটা সরাসরি তাদের সাথে কথা বলে মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন। কারণ কাজের পরিবেশ না থাকলে সুষ্ঠুভাবে কাজের অগ্রগতি হয় না।
রুচিসম্মত পোশাক পরুন
আমাদের দেশে সরকারি অথবা বেসরকারি যে কোন চাকরিতেই সেই ভাবে তেমন কোন ড্রেস কোড থাকে না অর্থাৎ পুরুষরা শার্ট প্যান্ট অথবা সুট টাই পরে এবং মহিলারা শাড়ি অথবা সালোয়ার কামিজ পরে। তারপরেও চাকরিতে নিয়োগ হওয়ার পরে আপনার জেনে নেওয়া উচিত অফিসের পরিবেশ অনুযায়ী পোশাক কেমন পরা উচিত।
অবশ্যই কখনোই আনঅফিসিয়াল পোশাক পরবেন না অর্থাৎ টি-শার্ট, জিন্স, স্যান্ডেল পরে অফিসে যাবেন না। উপযুক্ত পোশাক পরিধান প্রকাশ করে যে আপনি আপনার কাজের প্রতি নিবেদিত প্রাণ এবং কাজের প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব রাখেন। তাছাড়া যথাযথভাবে পোশাক পরিধান আপনার আত্মবিশ্বাসের সাথে সাথে কর্মক্ষমতাও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
মন্তব্য
শুধু একজন জনপ্রিয় এবং ভালো কর্মচারী হলেই হয় না, বছর শেষে প্রমোশন, ইনসেনটিভ, বেতন বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়গুলোও মাথায় রাখতে হয়। আর এই সুবিধা গুলো আপনাকে দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠান দেখে যে আপনি আপনার কাজের প্রতি কতটা নিবেদিত প্রাণ, আপনার দায়িত্ব পালনে আপনি কতটা বদ্ধপরিকর, প্রতিষ্ঠানের এবং কাজের প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কতটা পজিটিভ। অর্পিত দায়িত্ব এবং কাজ যথাযথভাবে সুসম্পন্ন করার পাশাপাশি এ বিষয়গুলোকেও নজরে রাখতে হবে। সব মিলিয়ে তবেই একজন ভালো কর্মচারী হওয়া যাবে।
উপরে যে বিষয়গুলো আলোচনা করা হলো একজন ভালো কর্মচারী হওয়ার জন্য এর বাইরেও আরো অনেক বিষয় থাকতে পারে, আপনাদের জানা থাকলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন। ধৈর্য নিয়ে এতক্ষণ ধরে পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। পরবর্তী লেখায় আপনাদের সাথে আবার যোগাযোগ হবে। ধন্যবাদ।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url