চাকরির ইন্টারভিউতে আপনার আচরণ যেমন হওয়া উচিত

চাকরির একটি ইন্টারভিউ বা সাক্ষাৎকার প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং চাকরি প্রত্যাশীদের মাঝে একটি সুযোগ সৃষ্টি করে যার মাধ্যমে চাকরিপ্রার্থী তার যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারেন এবং প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে পারেন। তাই একটি সাক্ষাৎকারে আপনার নিজের জ্ঞানের পরিধি জানানোর পাশাপাশি আচরণগত দিক থেকে আপনি কতটা যোগ্য সেটি ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যদের সামনে উপস্থাপন করা জরুরী।
চাকরির ইন্টারভিউতে আপনার আচরণ যেমন হওয়া উচিত

“ক্যারিয়ার” এর আজকের এ পর্বে আমরা জানবো চাকরির ইন্টারভিউতে আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত। তো চলুন জেনে নেই আশা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।

সুগন্ধি এড়িয়ে চলুন

যেকোনো ধরনের পারফিউম, সেন্ট, ডিডিওডোরেন্ট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ আপনি জানেন না ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে এসব ব্যাবহারে সমস্যা থাকতে পারে কিনা। অনেকে আছেন এলার্জি এবং স্নায়বিক কারণেই এসব গন্ধ সহ্য করতে পারেন না। নিজেকে সতেজ দেখাতে এবং রাখতে এসব সুগন্ধি ব্যবহারের পরিবর্তে পরিষ্কার জামা কাপড় পরুন। চুল পরিপাটি রাখুন, পায়ের জুতো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। প্রশ্নকর্তাদের এমন একটি খারাপ অভিজ্ঞতা প্রদান করলে আপনার সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতাটাও নিশ্চয়ই ভালো হবে না।

আই কন্টাক্ট বজায় রাখুন

আত্মবিশ্বাসী লোকজন সর্বদাই অন্যের সাথে কথা বলার সময় চোখে চোখ রেখে কথা বলে। প্রশ্ন কর্তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় অবশ্যই তাদের দিকে তাকাবেন এবং তাদের চোখে চোখ রেখে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন। উত্তর দেওয়ার সময় উপরে নিচে ডানে বামে অর্থাৎ সদস্যদের দিকে না তাকিয়ে অন্য কোন দিকে তাকানো আপনার দুর্বলতা এবং হীনমন্যতা প্রকাশ করে। 
এদিক সেদিক তাকানোর অর্থ হলো আপনি এই ইন্টারভিউতে বিরক্ত বোধ করছেন। উত্তর যদি বড় হয় তবে একটানা অনেকক্ষণ তাকাতে সমস্যা হলে আপনি আপনার সামনে রাখা জীবন বৃত্তান্তের দিকে মাঝেমধ্যে তাকাতে পারেন। আবার যিনি প্রশ্ন করেছেন আপনাকে যে শুধু তার দিকেই একটানা তাকিয়ে থাকতে হবে বিষয়টি সেরকম নয়, অন্যান্য সদস্যদের দিকেও তাকিয়ে উত্তর দিন।

একদম সোজা হয়ে বসুন

চেয়ারে মেরুদন্ড সোজা রেখে বসলে একজন প্রার্থীকে সাধারণভাবেই কর্মঠ, সতেজ, আত্মবিশ্বাসী, প্রাণবন্ত দেখায়। প্রশ্ন কর্তাদের সামনে যখন বসবেন তখন চেয়ারে হেলান দিয়ে নয় মেরুদণ্ড সোজা অর্থাৎ পিঠ সোজা রেখে বসবেন, আপনার মুখমণ্ডল প্রশ্নকর্তাদের বরাবর সোজা থাকবে। আপনার যদি পিঠ সোজা রেখে বসার অভ্যাস না থাকে তবে এখন থেকেই বাসায়, কর্মক্ষেত্রে বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার সময়ও মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসার চর্চা চালিয়ে যান। খেয়াল রাখবেন ইন্টারভিউ বোর্ডে আরাম করে হেলান দিয়ে বসার জন্য কেউ যায় না।

সময় নিয়ে উত্তর দিন

ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রত্যেকটা প্রশ্নই আপনার কমন পড়বে এটার কোন গ্যারান্টি নাই। কিছু অজানা প্রশ্ন আসতেই পারে তবে সেটার উত্তর দেওয়ার আগে কয়েক সেকেন্ড থামুন, মনকে শান্ত করুন এবং উত্তরটি প্রস্তুত করার চেষ্টা করুন। আপনার চুপ থাকা দেখে প্রশ্নকারী যদি পুনরায় উত্তর জানার জন্য আপনাকে নক করে তাহলে বিনয়ের সাথে বলুন- “স্যার আমি উত্তর দিচ্ছি”। 

“উমম”, “আআ”, “আচ্ছা” এসব অহেতুক শব্দ বলে উত্তর শুরু করতে যাবেন না এতে প্রশ্ন কর্তারা বিরক্ত বোধ করবেন। আর যদি মনে করেন উত্তরটি আপনার পক্ষে দেয়া সম্ভব নয় তবে সরাসরি স্পষ্টভাবে বলুন- “দুঃখিত স্যার উত্তরটি আমার জানা নেই।”

স্পষ্ট উত্তর দিন

প্রশ্নকারী যেভাবে প্রশ্ন করবে উত্তর ঠিক সেভাবে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। উত্তর হিসেবে আপনি অনেক ব্যাখ্যা জানলেও মূল যে অংশটুকু তারা জানতে চায় বা যে অংশটুকু শুনলে তারা সন্তুষ্ট হবে চেষ্টা করবেন শুধু সেটুকুই বলার। আবার প্রশ্নের উত্তর হয়তো আপনার জানা নেই তখন আপনি এদিক সেদিক দিয়ে কোন রকমে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন এমনটি একদমই করা যাবে না। 

মনে রাখবেন আপনার চাইতে দশ গুণ বেশি অভিজ্ঞতা আছে ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যদের। কোনটি আপনার জানা উত্তর আর কোনটি আপনি গোজামিল দিতে চাইছেন তারা খুব সহজে সেটা ধরে ফেলবেন। আপনার ব্যক্তিগত ইচ্ছা, বিশ্বাস, ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কোন কথা বলবেন না, যদি না তারা নির্দিষ্ট ভাবে এসব বিষয়ে কিছু জানতে চায়।

সর্বদা ইতিবাচক থাকুন

পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে থাকলে প্রশ্নকর্তা অবশ্যই আপনাকে পূর্ববর্তী চাকরির বিষয়ে সহকর্মীদের বিষয়ে জিজ্ঞেস করবে। খেয়াল রাখবেন পূর্ববর্তী চাকরির বিষয়ে কোন ধরনের নেতিবাচক কথা বলা যাবে না। এতে প্রশ্নকর্তা আপনার সম্পর্কে এই ধারণাটি পাবে যে, আপনি যে কোন পরিস্থিতিতে মানিয়ে কাজ করতে পারেন না এবং একজন ভালো সমালোচনা কারী। 
যদি সত্যিই কোনো খারাপ অভিজ্ঞতার মধ্যে আপনাকে পূর্ববর্তী চাকরিটি ছেড়ে আসতে হয় তবে সে অভিজ্ঞতা থেকে কি শিক্ষা নিয়েছেন এবং সেই অভিজ্ঞতাকে ভবিষ্যতে আপনি কিভাবে ইতিবাচক দিকে কাজে লাগিয়ে আরো ভালো কর্মচারী হয়ে উঠতে চান সেটি উল্লেখ করুন।

মোবাইল বন্ধ রাখুন

এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। সাধারণত অফিসিয়াল পরিবেশে মোবাইলের রিংটোন বেজে ওঠা কেউ পছন্দ করেন না। ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রবেশ করার কিছুক্ষণ আগেই মোবাইল বন্ধ করা সম্ভব না হলে অন্তত সাইলেন্ট করে রাখুন যেন মোবাইল থেকে কোন ধরনের সাউন্ড শোনা না যায়। 

হাত ঘড়ি ব্যবহার করুন যাতে সময় দেখার জন্য বারবার পকেট থেকে মোবাইল বের করতে না হয়। এছাড়া ইন্টারভিউ বোর্ডে মোবাইল বেজে ওঠা অথবা মোবাইলের দিকে তাকানো প্রশ্নকর্তাদের আপনার সম্পর্কে ধারণা দেয় যে আপনি পুরোপুরি আপনার কাজের প্রতি মনোযোগী এবং সচেতন নন।

সাক্ষাৎকারের সময় কিছু খাবেন না

সাক্ষাৎকারের সময় অথবা ঠিক আগের মুহূর্তে যেকোনো ধরনের কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অনেক সময় ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যরা প্রার্থীকে যাচাই করার জন্য বিভিন্ন খাবারের অফার দিয়ে থাকে। বুদ্ধিমানের মত সে অফার গুলোকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। তবে আপনার গলার সমস্যা হলে বা গলাটা পরিষ্কার রাখার জন্য টেবিলের উপর যদি গ্লাসে পানি থাকে তবে আপনি পানি খেতে পারেন অনুমতি সাপেক্ষে। তাই বলে ঘনঘন গ্লাসে চুমুক দিলে ব্যাপারটি অন্যরকম দেখাবে। 
প্রশ্নকর্তারা বুঝে যাবেন আপনি অত্যন্ত নার্ভাস হয়ে গিয়েছেন। যারা ধূমপায়ী আছেন তারা সাক্ষাৎকারের কমপক্ষে এক ঘন্টা আগে কোন ধূমপান করবেন না। সাক্ষাৎকার রুমে প্রবেশ করার পূর্বে অবশ্যই চকলেট বা মাউথ ফ্রেশ্নার দিয়ে আপনার মুখকে সতেজ করুন। সবচেয়ে ভালো হয় বাসা থেকে দাঁত ব্রাশ করে সাক্ষাৎকারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়া এবং এর মাঝে কোন কিছু না খাওয়া।

দৃষ্টি আকর্ষণ করুন

ইন্টারভিউ বোর্ডে সাক্ষাৎকারের জন্য প্রবেশ করার পরে এমন কিছু আচরণ বা কথা বলুন যা আপনাকে প্রশ্নকর্তাদের পরবর্তী সময়েও মনে রাখতে সাহায্য করবে তবে অবশ্যই সেটি ইতিবাচক হতে হবে। এর জন্য পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে সৃজনশীল চিন্তা ভাবনা করতে পারেন। ধরুন কথাবার্তা শুরুতে আপনি কোন বিখ্যাত সাহিত্যিকের উদাহরণ দিলেন এবং তার শিল্পকর্মের সাথে আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার যদি কোন মিল থেকে থাকে তাহলে সেই সাদৃশ্যতা উল্লেখ করুন।

হাত নাড়িয়ে কথা বলুন

সাক্ষাৎকারের সময় প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে খেয়াল করবেন প্রশ্নকর্তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ। সম্ভব হলে তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ অনুকরণ করার চেষ্টা করুন। এটা সম্ভব না হলে অন্তত হাত নাড়িয়ে কথা বলুন। বিষয়টি দেখতে যেন এমন মনে না হয় যে, আপনি অনেক বেশি বুঝে গেছেন। 

সহজভাবে এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলতে গিয়ে মানুষ সাধারণত যেভাবে হাত নেড়ে কথা বলে ঠিক সেই ভাবে বিনয়ের সাথে হাত নাড়িয়ে কথা বলুন প্রশ্নকর্তাদের সামনে। অনেকে আছেন ইন্টারভিউ বোর্ডে গিয়ে সোজা হয়ে বসলেন তো বসলেনই। কোন দিকে তাকানো বা নড়াচড়া নেই, একদম স্ট্যাচু হয়ে বসে থাকেন। এ ধরনের আচরণ নির্দেশ করে আপনি নার্ভাস হয়ে পড়েছেন।

কুশল বিনিময় করুন

অনুমতি নিয়ে সাক্ষাৎকার কক্ষে প্রবেশ করার পর প্রথমেই শুদ্ধভাবে সালাম জানিয়ে শুভ সকাল/শুভ দুপুর/শুভ বিকাল জানাবেন হাসিমুখে। এরপর অনুমতি পেলে চেয়ারে বসবেন। একইভাবে ইন্টারভিউ এর একদম শেষ পর্যায়ে আপনি যদি জেনেও থাকেন সাক্ষাৎকারটি আপনার জন্য ভালো হয়নি অথবা ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যরা আপনার সাক্ষাৎকার নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি তবুও যাওয়ার সময় হাসিমুখে শুদ্ধভাবে সালাম জানিয়ে কক্ষ ত্যাগ করবেন। এই আচরণটি আপনার আত্মসম্মানবোধ প্রকাশ করার পাশাপাশি আপনার ভদ্রতাও সামনে আনবে।

মন্তব্য

চাকরির ইন্টারভিউ আসলে খুবই স্পর্শকাতর একটি ঘটনা। আপনার বাহ্যিক আচরণ এবং তথ্য উপস্থাপনের কোন অংশটি নিয়োগ কারীদের আকৃষ্ট করবে সেটি বলা মুশকিল। তাই সব রকম ভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। সবার জীবনে উন্নতি হোক এই প্রত্যাশা রেখে আজকে এখানেই শেষ করছি।
পরবর্তী কোন লেখায় আবার হয়তো আপনাদের সাথে যোগাযোগ হবে। লেখায় ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আর ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। নতুন নতুন তথ্যবহুল এরকম লেখা পড়তে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। ভালো থাকবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url