পা ঘামা দূর করার উপায় | পা ঘামা নিয়ন্ত্রণ করবেন যেভাবে
অধিকাংশ মানুষই বিভিন্ন কারণে ঘেমে যায় তবে শরীর ঘামার চাইতে আরো বিব্রতকর এবং বিরক্তিকর অবস্থা হলো হাত এবং পা ঘেমে যাওয়া। বিশেষ করে পা ঘেমে গেলে আমরা পুরাই নাজেহাল হয়ে যাই। বুঝে উঠতে পারিনা পা ঘামার মত যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাব কিভাবে।
ক্যালিফোর্নিয়ার শিশু বিশেষজ্ঞ ক্যাথেরিন শেয়াং তার লেখা একটি নিবন্ধে পা ঘামা থেকে মুক্তির কিছু উপায় বর্ণনা করেছেন। "জীবনযাপন" এর আজকের এই পর্বে আমরা সে উপায়গুলো জানার চেষ্টা করব। আশা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
পা কেন ঘামে
অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়াকে বলা হয় হাইপার হাইড্রোসিস। এএমজেড হাসপাতাল এর কনসালটেন্ট জয়নুল আবেদীন বলেন, আমাদের শরীরে যে স্নায়ুতন্ত্র গুলো রয়েছে তার মধ্যে কিছু স্নায়ুতন্ত্র বিভিন্ন কারণে বেশি পরিমাণে সংবেদনশীল হয়ে ঘর্মগ্রন্থি গুলোকে উত্তেজিত করে বিধায় আমাদের শরীরে, হাতে এবং পায়ে ঘামের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া আরো বেশ কিছু কারণ এর মধ্যে রয়েছে
- হাইপার থাইরয়েডিজম এর সমস্যা থাকলে
- হৃদ যন্ত্রের সমস্যা থাকলে
- বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে
- সুগার লেভেল লো হয়ে গেলে
- উচ্চমাত্রায় ডায়াবেটিস থাকলে
- বিভিন্ন কারণে দুশ্চিন্তা করলে
- সিল্ক এবং পলিস্টারের জামা কাপড় পরলে
- অনেকক্ষণ যাবত ব্যায়াম বা দৌড়াদৌড়ি করলে ইত্যাদি।
পা ঘামলে কি কি সমস্যা হয়
- পা ঘামলে সাধারণত মানসিকভাবে একটি অস্বস্তি বোধ হয়।
- পা অতিরিক্ত ঘামলে জুতা পরা অথবা স্যান্ডেল পরা উভয় অবস্থাতে হাঁটতে ভীষণ সমস্যা হয়। কারণ পা পিছলে পিছলে যায়।
- নিয়মিত যদি পা ঘামে এবং পা ঘামা রোধে কোন ব্যবস্থা না নেয়া হয় তবে আরো বেশি সেখানে ফাঙ্গাস এবং ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর ফলে ঘামের পরিমাণ বাড়তে থাকে।
- দীর্ঘক্ষণ পা যদি এরকম ঘাম অবস্থায় থাকে তবে পা থেকে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।
- পা দুর্গন্ধ হলে স্যাঁতসেতে অবস্থায় থাকার ফলে জুতো এবং মোজাও দুর্গন্ধ হতে শুরু করে।
- ফলে কারো সামনে বা কোথাও গিয়ে সহজেই জুতা বা মোজা খোলা যায় না। একটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।
- কাজে-কর্মে মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটে।
- অনেক সময় হীনমন্যতায় ভুগতে হয়।
অতিরিক্ত ঘামা থেকে পা কে রক্ষা করতে চাইলে নিচের কাজগুলো করতে পারেন।
প্রতিদিন পা ধৌত করুন
পা অর্থাৎ পায়ের পাতা ঘামা থেকে রেহাই পেতে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল প্রতিদিন পা ধোয়া। আপনি প্রতিদিন গোসল না করলেও পা প্রত্যেক দিন ধুতে হবে। দীর্ঘক্ষণ মজা করে থাকলে মজার ভেতরে এবং বাইরে সাথে সাথে বায়ুবদ্ধ এলাকায় বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং পাঙ্গায় এর জন্ম হয়। এরা ঘামের প্রবণতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দুর্গন্ধেরও সৃষ্টি করে। নিয়মিত পা ধোয়ার ক্ষেত্রে গরম পানি দিয়ে আন্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করতে পারেন।
পা শুকনা রাখুন
পা সর্বদা শুকনা রাখার চেষ্টা করুন। মোজা এবং জুতা পরার আগে অবশ্যই পা শুকিয়ে নিন। বাইরে থেকে এসে মোজা জুতা খোলার পরে পুনরায় যদি আবার মোজা পরতে হয় তার আগেও ভালো করে যাচাই করে নিন আপনার পা শুকনা আছে কিনা। কারণ ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে ব্যাকটেরিয়া বেশি জন্মায় ফলে ঘাম উৎপন্ন বেশি হয় এবং দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। পা শুকানোর জন্য শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিতে পারেন অথবা ফ্যান চালিয়ে কিছুক্ষণ থাকলেই পা শুকিয়ে যায়। আবার পা শুকানোর জন্য হেয়ার ড্রায়ারও ব্যবহার করতে পারেন।
ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করুন
আমরা মনে করি ডিওডোরেন্ট সাধারণত বগলে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু পা অতিরিক্ত ঘামলে এটি পায়ের পাতাতেও ব্যবহার করা হয় জুতা মোজা পরার আগে। তবে খেয়াল রাখতে হবে এন্টিপারস্পিরেন্ট অর্থাৎ ঘামনিরোধক ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করতে হবে। ডিওডোরেন্ট কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে এর উপাদান গুলোর মধ্যে যেন অ্যালুমিনিয়াম জিরকনিয়াম অথবা অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড থাকে।
বাতাস চলাচল করে এমন জুতা পরুন
অনেকক্ষণ জুতা মোজা পরে থাকার কারণে বদ্ধ অবস্থায় পা ঘামতে শুরু করে ওরে। তাই চেষ্টা করবেন কাপড়ের তৈরি জুতা পরার অথবা যে ধরনের জুতায় বাতাস চলাচল করার ব্যবস্থা রয়েছে সেগুলো পরার। আবহাওয়া যদি খুবই গরম থাকে তবে জুতার পরিবর্তে স্যান্ডেল ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। তবে এখানেও সতর্ক থাকতে হবে স্যান্ডেলের ক্ষেত্রে চামড়া জুতা পরাই উত্তম এবং কখনোই রাবারের স্যান্ডেল পরবেন না। এতে হিতে বিপরীত অর্থাৎ আরো বেশি পা ঘামার সম্ভাবনা থাকে।
প্রতিদিন জুতা মোজা পরিবর্তন করুন
পায়ের ঘাম কমাতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে প্রত্যেকদিন মোজা পরিবর্তন করতে হবে অর্থাৎ আজকে যে মোজা পরেছেন আগামীকাল সেই মেজা পরা থেকে বিরত থাকুন। সম্ভব হলে দিনে দুই জোড়া মোজা ব্যবহারের চেষ্টা করুন।
আপনার পা যদি সত্যিই অতিরিক্ত ঘেমে থাকে তবে মোজা সে সকল ঘাম এবং জুতো ও পায়ের ময়লা শুষে নেই ফলে সে পরিবেশটি ব্যাকটেরিয়া উৎপাদনের অনুকূল হয়ে যায় এবং আরো ঘাম নির্গত হতে থাকে। একইভাবে পর্যায়ক্রমে জুতা পরুন অর্থাৎ একই জুতা প্রত্যেকদিন পরবেন না। আজকে যে জুতা পরলেন সেটি ভালো করে রোদে শুকিয়ে দুই থেকে তিন দিন পরে আবার পরুন।
প্রতিদিন জুতা মোজা ধৌত করুন
বাইরে থেকে এসে প্রত্যেকদিন জুতা এবং মোজা ধৌত করুন। প্রতিদিন জুতা এবং মোজা ধৌত করলে সেগুলোতে ঘাম লেগে না থাকায় নতুন করে ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হতে পারে না ফলে ঘামার পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়। প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একবার জুতা ধুবেন এবং অবশ্যই প্রতিদিন মোজা ধুবেন। সাবান পানি অথবা ডিটারজেন্ট দিয়ে জুতা ধুতে পারেন। তবে অবশ্যই নিশ্চিত হবেন ধোয়ার পর জুতা এবং মোজা যেন সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে যায় পরবর্তী ব্যবহারের জন্য।
পাউডার ব্যবহার করতে পারেন
পাউডার বিশেষ করে টেলকম পাউডার ব্যবহার করতে পারেন পা ঘামা রোধ করার জন্য। মোজা পরার আগে কিছুটা টেলকম পাউডার পায়ের পাতাতে ছিটিয়ে মোজা পরে নিন। পাউডার ঘাম শুষে নিয়ে পা কে শুষ্ক রাখতে কিছুটা হলেও সাহায্য করে। এছাড়াও বেশ কিছু অ্যান্টিফাঙ্গাল পাউডার রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করলে পা ঘামার রোধে বেশ উপকার পাওয়া যায়। তবে এসব পাউডার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত।
কর্নস্টার্চ ব্যবহার করতে পারেন
পায়ের ঘাম শোষণের জন্য যদি কোন এন্টিফাঙ্গাল পাউডার না পান তবে কর্নস্টার্চ ব্যবহার করতে পারেন। সামান্য একটু কর্নস্টার্চ নিয়ে পায়ের পাতায় সুন্দর করে মালিশ করে মোজা পরুন। এটি ঘেমে যাওয়া পা কে শুষ্ক রাখতে সাহায্য করে দীর্ঘক্ষন। মোজা পরার পরে জুতার ভেতরেও এক চিমটি কর্নস্টার্চ ছিটিয়ে দিলে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
একের অধিক জোড়া মোজা সঙ্গে রাখুন
আপনি যখন কাজের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হবেন তখন এক থেকে দুই জোড়া অতিরিক্ত মোজা সাথে রাখতে পারেন। পরবর্তীতে সময় পেলে সুযোগ অনুযায়ী মোজা পরিবর্তন করে নিতে পারেন। এতে পা অতিরিক্ত ঘামার সুযোগ পাবে না এবং অল্প যে পরিমাণ ঘামবে সেটি মোজা পরিবর্তনের ফলে নতুন করে কোন ব্যাকটেরিয়া বা দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারবে না।
উপযুক্ত মোজা পরুন
পা ঘামা প্রতিরোধ করতে চাইলে জুতার মতো মোজাতেও যেন বাতাস চলাচল করে সেদিকে নজর দিতে হবে। এর জন্য সবচেয়ে ভালো হয় সিনথেটিক মোজা কারণ সিন্থেটিক মোজা অতিরিক্ত ঘাম শোষণ করতে পারে এবং বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে পারে। সিন্থেটিক মোজা পায়ের আর্দ্রতা দূর করতেও সাহায্য করে। এছাড়াও সুতি কাপড়ের মোজা পরতে পারেন তবে অবশ্যই এড়িয়ে চলবেন মোটা উলের মোজা।
চিকিৎসা সহায়তা নিন
উপরের পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে যদি আপনি কোন ফলাফল না পান অথবা সামান্য ফলাফল পান যেটাতে আসলে আপনার দিনটি ভালোভাবে যাবে না তাহলে অবশ্যই একজন চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
শেষ কথা
আমাদের শারীরিক গুরুতর সমস্যা গুলোর মধ্যে হাত-পা ঘেমে যাওয়া একটি। বাহ্যিকভাবে দেখে মনে হতে পারে এটি তেমন কোন সমস্যা করে না। কিন্তু মানসিক এবং শারীরিকভাবে এটি প্রচণ্ড যন্ত্রণাদায়ক। যাদের পা ঘেমে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে কেবলমাত্র তারাই জানে এই সমস্যার যন্ত্রণা কতটা মারাত্মক হতে পারে। যাইহোক পা যেন না ঘামে অথবা পা ঘামা রোধ করার জন্য উপরে কিছু উপায় ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলাম সহজ ভাষায়। আশা করি আপনাদের কিছুটা হলেও উপকার হবে।
এতক্ষণ যাবত ধৈর্য নিয়ে লেখাটি পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। নতুন কোন বিষয়ে জানতে চাইলে এই ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার পাশাপাশি কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন। ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ।
মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url