যেসব জায়গায় ফোনে কথা বলা যাবে না
আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে পরিচিত জন বন্ধুবান্ধব এবং অফিসের সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগের একটি অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে স্মার্টফোন। তবে প্রয়োজনের সাথে সাথে আমরা আমাদের এই মুঠোফোনকে অপ্রয়োজনেও কিছুটা ব্যবহার করে ফেলি। এই মোবাইল ফোন দিয়ে কোথায় আমাদের কথা বলা উচিত এবং কোন পরিপ্রেক্ষিতে কথা বলা উচিত নয় সেটা আমরা অনেকেই বুঝে উঠতে পারি না।
আজকে এই লেখায় আমরা জানবো কোন কোন পরিস্থিতিতে মোবাইল ফোনে কথা বলা উচিত নয় অর্থাৎ যেসব জায়গায় কথা বলা অশোভনীয়। তো চলুন জেনে নেয়া যাক, আশা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
গাড়ি চালনা করার সময়
গাড়ি চালানো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। ঝুঁকিপূর্ণ এ কারণে যে যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা করতে পারে এবং দুর্ঘটনা ঘটলে সেটি শুধু চালকের ক্ষতি হবে তাই নয় আশেপাশে অন্যান্য চালকদের বা অন্যান্য পথচারীদেরও জীবনের জন্য হুমকি হতে পারে। গাড়ি চালানোর সময় কখনই হাতে ফোন নিয়ে কথা বলবেন না। কথা বলা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়লে ফোনের স্পিকার অন করে সামনে রেখে দিন।
তবে অবশ্যই কানে হেডফোন বা ইয়ার বাড দিবেন না এতে করে আপনার গাড়ির দুই পাশে এবং পেছনে শব্দ সম্পর্কে আপনি ওয়াকিবহাল থাকবেন না। আমাদের দেশে এ ধরনের আইন না থাকলেও ইউরোপের প্রায় সব দেশেই গাড়ির চালানোর সময় কথা বলা অথবা কানে হেডফোন দেয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
ইন্টারভিউতে
চাকরির ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন ধরনের সাক্ষাৎকার দিয়ে থাকি আবার ব্যবসা ক্ষেত্রেও দেশি অথবা বিদেশী ক্লায়েন্টদের সাথে সাক্ষাৎকার দিয়ে থাকি। সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় মোবাইলে রিং বেজে ওঠা অত্যন্ত অশোভনীয় আচরণ যা শিষ্টাচার বহির্ভূত। শিষ্টাচার বিশেষজ্ঞ জুলিয়াস মার্টিনেজ হার্সট মনে করেন, “যেকোনো সাক্ষাৎকারের সময় আপনার ফোনটিতে কোন ধরনের শব্দ হওয়া উচিত নয় সেটি সরাসরি বা জুমে অথবা ব্যক্তিগত বা অফিশিয়ালি সাক্ষাৎকার হোক না কেন।”
সাক্ষাৎকারের সময় আপনার সম্পূর্ণরূপে মনোযোগ দেওয়া উচিত সাক্ষাৎকারের দিকে এবং প্রশ্নকর্তার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়ার দিকে। তাই শিষ্টাচারের সাথে নিজের ব্যক্তিত্ব প্রকাশের জন্য সাক্ষাৎকারে যাওয়ার পূর্বে আপনার মোবাইলটি শুধু ভাইব্রেশন নয় সাইলেন্ট করে রাখুন।
কেনাকাটার সময়
যেকোনো ধরনের কেনাকাটার সময় ফোনে কথা বলা শুধু শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণই নয় বরং নিজের বিপদ ডেকে আনারও সামিল। কেনাকাটার সময় যদি ফোনে অপ্রয়োজনীয় কথা বলতে থাকেন তাহলে কি কি ধরনের বিপদে পড়তে পারেন? ধরুন আপনি কোন শপিংমলে কেনাকাটা করতে গিয়েছেন সেখানে আপনার এক বন্ধু ফোন দিল আর আপনি খোশ গল্প শুরু করে দিয়েছেন।
এতে সেই শপকিপারের কাছে আপনার গুরুত্ব যেমন কমবে ঠিক তেমনি তারা বিরক্তও হবে। আবার বিভিন্ন শপিংমলে ছিনতাইকারীদের বা কিডন্যাপারদের আনাগোনা থাকে। আপনি ফোনে কথা বলতে এতই মশগুল যে ছিনতাইকারীরা আপনাকে টার্গেট করতে পারে অথবা আপনার সন্তানকে কিডন্যাপ করতে পারে। তারা কিন্তু অত্যন্ত কৌশলী থাকে। আবার ধরুন আপনি গ্রোসারী শপে অথবা মুদিখানার দোকানে গিয়েছেন।
আরও পড়তে পারেনঃ
- কিভাবে ভালো ম্যানেজার হওয়া যায়? দক্ষ ম্যানেজারের ১০ গুণ জানুন।
- ভিটামিন সি কেন দরকার এবং এর অভাবজনিত রোগ সম্পর্কে জানুন।
- বাহ্যিকভাবে নিজেকে স্মার্ট দেখানোর কৌশল জানুন।
সেখানে যদি ফোনে কথা বলতে শুরু করেন সেক্ষেত্রে আপনি যে পণ্যটি নিতে চাচ্ছেন তার গুণগত মান নিশ্চিত হতে পারবেন না। সব দোকানেই ভালো এবং খারাপ মানের পণ্য থাকে। আপনি হয়তো একদম খাঁটি পোলাওয়ের চাল চেয়েছেন কিন্তু দোকানদার আপনার ফোনে কথা বলার সুযোগ নিয়ে নকল পোলাওয়ের চাল বেশি দামে বিক্রি করতে পারে।
বাসায় এসে তা দেখে আবার দোকানে ফেরত বা পরিবর্তন করার সুযোগ থাকলেও বিড়ম্বনা তো পোহাতেই হলো আপনাকে। তাই কেনাকাটার সময় জরুরি ফোন ছাড়া কল রিসিভ এর জন্য ওয়েট করুন অথবা এড়িয়ে চলুন। আর যদি জরুরী ভিত্তিতে কোন কল রিসিভ করতেই হয় তবে কোন একটি কর্নারে গিয়ে কথা বলুন যেখান থেকে আপনার সামনের সবকিছু পরিষ্কার দেখতে পাবেন।
লাইনে দাঁড়ানো থাকা অবস্থায়
পাসপোর্ট বা ভিসার জন্য কিংবা এয়ারপোর্টে বোর্ডিং পাসের জন্য বা অন্য যেকোনো কারণে আমাদের মাঝেমধ্যে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এই সময়টাতে এই বিরক্তিকর সময়কে কাজে লাগানোর উপায় হিসেবে আমরা অনেকেই মোবাইলে বন্ধুদের সাথে অযথাই কথা বলতে শুরু করি। এমনটা না করে বিরক্তি লাগা সত্ত্বেও আমাদের সচেতন থাকা উচিত যে আমাদের কখন কোন ফাইল বা ডকুমেন্টের প্রয়োজন হতে পারে।
লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় আপনার সামনের এবং পেছনের ব্যক্তিকে আপনার ফোনে কথা বলার মাধ্যমে বিরক্ত না করে সজাগ সচেতন থেকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। আপনি কথার দিকে মনোযোগী থাকলেন এবং এগোতে এগোতে কাউন্টারের সামনে গিয়ে আপনার কাছে কাগজপত্র চাইলে আপনি একদমই প্রস্তুত নন। ব্যাপারটি যেমন আপনার জন্য বিব্রতকর তেমনি কাউন্টারে সেবা প্রদানকারী ব্যক্তিদের জন্য বিরক্তিকর।
রেস্টুরেন্টে বসে থাকার সময়
অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলার শিষ্টাচারের কি আছে? উত্তর হল, অবশ্যই আছে। লন্ডনের শিষ্টাচার ও প্রটোকল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা লরা উইন্ডসর এর মতে, “আমরা রেস্টুরেন্টে যাই কেবলমাত্র খেতে নয়, আমাদের পরিচিতজনদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্যও যাই এবং সেখানে যারা উপস্থিত থাকে না তাদের সাথে যোগাযোগ বা টেক্সট করা অনুচিত।”
এর অর্থ হল রেস্টুরেন্ট এর সেই টেবিলে আমরা যাদের সাথে উপস্থিত থাকি তাদেরকে সম্মান জানানো এবং তাদের সাথে আমি বসে যে আনন্দিত সেটিও তাদেরকে বোঝাতে হবে। একইভাবে তারাও যেন আমার সাথে থেকে সম্মানিত বোধ করতে পারে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তাদের সাথে বসে আমি যদি অন্য কারো সাথে ফোনে কথা বলি বা চ্যাট করি সে ক্ষেত্রে তাদেরকে তাদের প্রাপ্য গুরুত্ব দেয়া হবে না। ভাবছেন তাহলে কি করবেন? রেস্টুরেন্টে কথা বলা যাবে না? অবশ্যই কথা বলা যাবে।
জরুরী কল আসলে অবশ্যই টেবিল ছেড়ে উঠে কোন ফাঁকা জায়গাতে গিয়ে খুব দ্রুত কথা শেষ করে আবার টেবিলে প্রিয়জনদের সাথে বসুন। আর হ্যাঁ, টেবিলে কখনো মোবাইল সেট বের করে রাখবেন না, প্রয়োজনে মোবাইলে ভাইব্রেশন মোড সেট করে রাখুন এতে করে আপনাকে কেউ কল দিলে পরবর্তীতে জানতে পারবেন। যাদের জন্য রেস্টুরেন্টে গিয়েছেন তাদেরকে সময় দিন, নিজেকে উপভোগ করুন।
বিবাহ অনুষ্ঠানে অথবা মৃতের অন্তিষ্টিক্রিয়ায়
বিবাহ অনুষ্ঠানে বা কোন মৃতের অন্তিষ্টিক্রিয়ার সময় কথা বলার শিষ্টাচার লঙ্ঘন করতে আমরা হর হামেশাই দেখে থাকি। বিয়ে বাড়িতে একটি আনন্দ উৎসবের সময় তাই ছবি তোলার জন্যই হোক অথবা কথা বলার জন্যই হোক স্মার্টফোন আমাদের হাতে সব সময় থাকে। তারপরও একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে অযথা ফোনে কথা বলা উচিত নয় এই কারণে যে সেখানে অনেক বয়স্ক আত্মীয়-স্বজন বা অতিথি থাকে যাদের সাথে সচরাচর দেখা হয় না।
কাজেই সেই মুহূর্তে তাদের সাথে কথা না বলে ফোনে কথা বলাটা সমীচীন নয়। আবার অনেক ব্যক্তি আছেন যারা কোন মৃতের বাড়িতে গিয়ে যদি দেখেন যে অন্তেষ্টিক্রিয়ার এখনো বেশ কিছুটা সময় বাকি তবে সেই সময়ে তিনি তার ব্যবসায়ের আলাপ সেরে ফেলতে চান। এ ধরনের আচরণ একদমই কাম্য নয়। আপনি মৃতের বাড়িতে গিয়েছেন পরিবারের লোকদের সাথে কথা বলুন, সমবেদনা জানান, তাদের দুঃখে সমব্যথী হন। এক্ষেত্রে একই সমাধান, জরুরী কল ছাড়া ফোন রিসিভ করা থেকে বিরত থাকুন।
সেলুন অথবা স্পাতে
সেলুন, স্পা, বিউটি পার্লার এই জায়গাগুলোতে যখন আপনি সেবা নিতে যান তখন আপনি ফ্রি ভাবে থাকতে পারেন না। সেবা গুলো নেয়ার আগে মুহূর্তে যতক্ষণ আপনাকে অপেক্ষা করতে হয় সেই সময়টা হয়তো আপনি ফ্রি ভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।
সেবা নেওয়ার সময় আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে তাদের কাছে তাদের কাজটা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ আর তাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজের মাঝে যখন আপনি অপ্রয়োজনীয় ফোন রিসিভ করে কথা বলতে থাকবেন তখন এটা তাদের জন্য একটা বিরক্তিকর একই সাথে কিছুটা ক্ষতিকরও বটে।
কারণ আপনার কথা বলাতে হয়তো তারা কাজটি করতে পারবেনা এবং বিলম্ব হলে পরবর্তী গ্রাহকদেরও বিলম্ব হবে। তাহলে করবেন টা কি? লরা উইন্ডসর এর পরামর্শ মতে “আপনি এ ধরনের সেবা নিতে আসার সময় আপনার পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে আসবেন আগামী ১ ঘন্টা বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া যেন ফোন না দেয়।”
অফিসের জরুরী ফোন আসলে অবশ্যই পরিষেবা দাতাদের অনুমতি নিয়ে খুব দ্রুত কথা বলা শেষ করতে হবে। আর পরিচিত এবং বন্ধুদের ফোন আসলে রিসিভ না করে অপেক্ষা করুন।
পাবলিক টয়লেট
নিজের বাসার ওয়াশরুম অথবা কোন পাবলিক ওয়াশরুমে গিয়ে ফোনে কথা বললে অপর প্রান্তের ব্যক্তি অবশ্যই আপনার ফ্ল্যাশের শব্দ শুনতে পছন্দ করবে না। তাছাড়া ওয়াশরুমে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু থাকে যেটিতে মোবাইলের মাধ্যমে আপনিও আক্রান্ত হতে পারেন। এক গবেষণায় দেখা গেছে টয়লেটে ফ্লাশ করলে বাতাসে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। তাই নিজে সুস্থ থাকতে চাইলে অবশ্যই ওয়াশমে গিয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের না করে ইকোলায়, সালমনেলা, নরভাইরাস এর মত জীবাণু থেকে মুক্ত থাকুন।
পাবলিক ট্রান্সপোর্টে
পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বা গণপরিবহন ভ্রমণের জন্য অথবা কথা বলার জন্য কোন ক্ষেত্রেই স্বস্তিদায়ক ব্যাপার নয়। তারপরেও কিছু লোককে দেখা যায় বিরক্তিকর সময়টিকে কাজে লাগানোর জন্য তারা অহেতুক কারো সাথে ফোনে লম্বা সময় ধরে কথা বলতে থাকে। এটা অবশ্যই একটি শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ। অনেকে মনে করতে পারেন এখানে কথা বলার আবার শিষ্টাচারের কি থাকতে পারে?
যানবাহনের শব্দ, বাইরের উচ্চ আওয়াজ, পরিবহনের ভেতরে অনেক মানুষজনের কোলাহল। শিষ্টাচার বিশেষজ্ঞ নিক লেইটন যুক্তি দেন এইভাবে- “মনে করি আমরা এমন একটি বিশ্বে থাকি যেখানে একটি পাতাল রেল গাড়িতে প্রায় ১০০ জন যাত্রী রয়েছে যাদের সকলেই একসাথে ফোনে কথা বলছে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে কি আমরা থাকতে চাই? প্রত্যেকের উত্তর আসবে ‘না’।
আমাদের সকলেরই উচিত আমাদের সহ যাত্রীদের মানসিক অবস্থা উপলব্ধি করার।” এ ধারণার মাধ্যমে লেইটন বোঝাতে চেয়েছেন ফোনে কথা বলা অন্যদের জন্য বিরক্তির বা অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সবার কথা যদি নাও ধরেন অন্তত আপনার পাশের সিটে আপনার সহযাত্রীর কথা একবার চিন্তা করে দেখুন।
আপনি অনবরত কথা বলেই যাচ্ছেন আপনার সহযাত্রীর বিরক্ত লাগতেই পারে। এমতাবস্থায় ফোনে কথা বলাটা অসভনীয় হলেও লিটন এর মতে আমরা অন্যদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য টেক্সট করতে পারি। আরেকজন বিশেষজ্ঞ ওটার বলেছেন, “এই ধরনের শিষ্টাচার সম্পর্কিত ইস্যুতে ফোনে কথা বলার চেয়ে মোবাইলে টেক্সট করা উত্তম।”
হাসপাতালে
হাসপাতালে অসুস্থ রোগীরাই থাকে। তারা নিজেরা যেমন কথা বলতে আগ্রহী থাকে না ঠিক তেমনি অন্যের কথা শুনতেও ততটা স্বস্তি বোধ করেনা। তাই তাদের সামনে অযথা কথা বলা কতটা সমিচীন একটু ভেবে দেখুন। তাছাড়া যে নার্স এবং ডাক্তারেরা সেবা দেওয়ার জন্য থাকে তারাও আপনার কথায় বিভ্রান্ত হতে পারে।
তাই সকলের কথা চিন্তা করে হাসপাতালে অযথা কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। আবার অতি জরুরী ফোন রিসিভ করতে হলে অবশ্যই নিচু স্বরে কথা বলুন যেন আপনার পাশে থাকা অন্য রোগীর কোন ধরনের অসুবিধা না হয়। অথবা এর চেয়েও ভালো যে কাজটি হয় সেটি হল আপনি হাসপাতালের কক্ষ থেকে বের হয়ে একদম বাইরে চলে গিয়ে কথা সেরে আবার ভেতরে প্রবেশ করুন।
হাঁটার সময়
আমাদের অনেকেরই সকালে অথবা বিকেলে হাঁটার অভ্যাস রয়েছে আবার অনেকে কাজের খাতিরে অর্থাৎ স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালতে যাওয়ার জন্য হেটে থাকেন। এই হাঁটতে থাকা মানুষদের মধ্যে অনেককে দেখা যায় ফোনে কথা বলতে বলতে হেঁটে যাচ্ছেন। স্মার্টফোনের প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে অনেক সহজতর করলেও কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের জীবনকে ফেলেছে হুমকির মুখে।
রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় আপনি যদি ফোনে কথা বলতে থাকেন তবে কি কি বিপদ হতে পারে? ধরুন আপনি ফোনে কথা বলতে বলতে হেঁটে যাচ্ছেন। ফুটপাত দিয়ে হাটার রাস্তা অত্যন্ত শুরু আপনার পেছনে একজন লোক রয়েছে যার অত্যন্ত তাড়া রয়েছে হসপিটালে বা অফিসে যাওয়ার। সেই ব্যক্তি আপনাকে একটু সাইড দেওয়ার জন্য বলছে কিন্তু আপনি ফোনে কথা বলার কারণে তার কথা শুনতে পারছেন না অর্থাৎ এখানে আপনি আরেকজনের অসুবিধা করে নিজের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
আবার ধরুন রাস্তা তো এখন হর হামেশাই দুর্ঘটনা ঘটে। আপনি ফুটপাত দিয়ে নয় রাস্তা দিয়ে কথা বলতে বলতে হেঁটে যাচ্ছেন পেছন থেকে একটি যানবাহন আপনাকে ধাক্কা দিল। কোন কারনে হয়তো সেই যানবাহনের ব্রেক ফেল হয়েছে। আপনাকে ধাক্কা দেওয়ার আগে যানবাহন হর্ন বাজিয়েছে কিন্তু আপনি ফোনে কথা বলার জন্য সেই হর্ন খেয়াল করেননি।
পাশাপাশি দুই তিনজন হেটে যাওয়া এবং ফোনে কারো সাথে কথা বলার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। আপনি কারো সাথে কথা বলতে বলতে হেঁটে গেলেও আপনার আশেপাশের প্রতি একটা নজর থাকে কিন্তু আপনি যখন ফোনে কথা বলবেন তখন সেটা থাকে না কারণ অপর প্রান্তের মানুষকে আপনি দেখতে পাচ্ছেন না বিধায় একটু আলাদা মনোযোগ দিতে হয় কথা বলা ব্যক্তির প্রতি।
তাই নিজের জীবনকে বিপদে না ফেলে এবং অন্যের অসুবিধা না করে মোবাইল ফোন রাস্তায় ব্যবহার করা থেকে এড়িয়ে চলুন। অত্যন্ত জরুরী ফোন হলে একটু সাইড করে কোন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে হাঁটা বন্ধ করে কলটি রিসিভ করে খুব দ্রুততার সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি সেরে নিতে পারেন।
এয়ার প্লেনে
যারা বিমানে ভ্রমণ করেছেন তারা বিষয়টি ভালো করে জানেন। প্লেন ছাড়ার আগে মুহূর্তে পাইলট ঘোষণা দেন সকলের স্মার্টফোনকে “এয়ার প্লেন মোডে” সুইচ করতে। এ ব্যবস্থাটা করা হয় শুধুমাত্র যে যাত্রীদেরকে কথা বলা থেকে বিরত রাখার জন্য তাই নয় বিমানের নিরাপত্তার স্বার্থেও এটি করা হয়ে থাকে।
আমাদের মোবাইল ফোন গুলির সিগন্যাল প্লেনে ব্যবহৃত রেডিও সংকেত গুলিতে বিভিন্নভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে যা পাইলটকে এয়ারপোর্টের সাথে যোগাযোগ করতে, জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে বা অবতরণের জন্য সঠিক উচ্চতা সম্পর্কে ধারণা নিতে বাধা প্রদান করে।
তাই নিজে সুরক্ষিত থাকতে এবং আপনার সহযাত্রীদের সুরক্ষিত রাখতে মোবাইল এয়ারপ্লেন মোডে সুইচ করে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। তাছাড়া আপনি বিমান ভ্রমণের পূর্বে পরিবারের সদস্যদের, অফিসের লোকজনদের এবং যাদের জানানো প্রয়োজন বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে তাদেরকে জানিয়ে রাখতে পারলে ফোন আসার সম্ভাবনা থাকবে না।
মন্তব্য
উপরে মোবাইল ফোনে কথা বলার শিষ্টাচার বিষয়ে বেশ কিছু আলোচনা করা হলো। আমরা জানার চেষ্টা করলাম কোন কোন জায়গায় মোট ফোনে কথা বলা উচিত নয় এটি একটি ভদ্রতার মধ্যে পড়ে। এছাড়াও আরেকটি বিষয়ের লক্ষণীয় আমরা রাস্তাঘাটে যেখানে সেখানেই ফোনে কথা বলা ছাড়াও ফোনে গেম খেলা, সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগ করা ইত্যাদি কাজ থেকেও বিরত থাকবো।
বাড়ির বাইরে গেলে কেন হাতে আমাদের মোবাইল নিতে হবে? মোবাইল এবং মোবাইল এর ভেতরে যা কিছু আছে তার থেকেও অনেক বেশি সুন্দর আমাদের চারপাশের প্রকৃতিটা। আমরা দুচোখ ভরে সেই প্রকৃতির সৌন্দর্যকে অবলোকন করতে পারি।
এতক্ষণ ধরে ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ভুল ত্রুটি হলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url