হাতের তালু ঘামে কেন | হাত ঘামা প্রতিরোধে যা করবেন

যেকোনো কাজের সময় হাত অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া সত্যি একটি বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করে। জরুরী ফোন করতে হবে কিন্তু হাত এত পরিমাণ ঘেমে আছে যে মোবাইলের স্ক্রিনে কাজ করছে না। এ ধরনের আরো অনেক বিব্রতকর এবং বিরক্তিকর পরিস্থিতির জন্য আমরা অনেকেই দুশ্চিন্তায় ভুগি হাতের তালু ঘামা রোধ করা যায় কিভাবে!
হাতের তালু ঘামে কেন | হাত ঘামা প্রতিরোধে যা করবেন

ফিজিশিয়ান জেনিস লিটজা বেশ কিছু উপায় ব্যাখ্যা করেছেন হাত ঘামা প্রতিরোধ করতে তার লেখা এক নিবন্ধে। আজ আমরা সে বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করব। তবে চলুন প্রথমে জেনে নেয়া যাক হাত কেন ঘামে এবং এরপর জানব হাত ঘামা প্রতিরোধে করণীয়।

হাতের তালু ঘামার কারণ

এ এম জেড হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড এর ডায়াবেটিক ও মেটাবলিক ডিজিজ কনসালটেন্ট জয়নুল আবেদীন দিপু বলেন আমাদের শরীরের যতগুলো স্নায়ুতন্ত্র রয়েছে তার মধ্যে একটি অংশ অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে ঘাম গ্রন্থিকে সক্রিয় করার ফলে আমাদের শরীরে অতিমাত্রায় ঘাম সৃষ্টি হয়। তিনি আরো বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন।
  • অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে
  • অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে
  • পারকিনসন ডিজিজ থাকলে
  • থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা অর্থাৎ হাইপার থাইরয়েডিজম হলে
  • হৃদযন্ত্রের সমস্যা হলে
  • ঝাল এবং অতিরিক্ত মৎস্যযুক্ত খাবার খেলে
  • সিন্থেটিক, সিল্ক, পলিস্টারের পোশাক পরলে
  • ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে
  • সুগার লো হলে
  • এছাড়াও আরও বেশ কিছু অদা কারণে হাতের তালু অতিমাত্রায় ঘামতে পারে
হাত ঘামা প্রতিরোধে যা করবেন

হাত ধুয়ে নিন

আপনার হাত যখন ঘেমে যায় তখন হাত নিজে থেকেই শুকায় না। তাই ঘন ঘন হাত ধুয়ে তোয়ালে বা টিস্যু দিয়ে হাত মুছে নিন। খাবার পরে হাত ধোওয়ার সময় সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ধুতে পারেন তবে অন্যান্য সময় হ্যান্ডওয়াশ বা সাবান এড়িয়ে চলুন কারণ অতিরিক্ত ব্যবহারে আপনার হাতের ত্বকের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

রুমাল বা টিস্যু পেপার সাথে রাখুন

কাজের জন্য ঘরের বাইরে বের হলে সব সময় সব জায়গাতে হাত দেওয়ার সুযোগ থাকে না। এজন্য সাথে ছোট তোয়ালে বা রুমাল অথবা টিস্যু পেপার রাখতে পারেন। হাত প্রচন্ড ঘেমে থাকা অবস্থায় কারো সাথে করমর্দন করাটা সত্যিই অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তাই করমর্দন এর মত কাজগুলো করার আগে টিস্যু পেপার বা রুমাল দিয়ে হাত মুছে নিন।

সাথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে পারেন

যদি এমন কোন পরিস্থিতিতে থাকে যেখানে হাত ধোয়ার সুযোগ নেই কিন্তু আপনার হাত প্রচুর পরিমাণে ঘেমে যাচ্ছে অথবা আপনার সাথে রাখার টিস্যু পেপারও শেষ হয়ে গেছে তাহলে এমন অবস্থায় হ্যান্ড স্যানিটাইজার আপনার বিপদের বন্ধু হতে পারে। অ্যালকোহল যুক্ত যে কোন হ্যান্ড স্যানিটাইজার হাতকে দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে। দুই হাতে অল্প করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে করে ভালো করে ঘষে নিলেই দেখবেন হাত শুকিয়ে গেছে।

হাত ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করুন

সমস্ত শরীরের মধ্যে শুধু হাত ঠান্ডা রাখা প্রায় অসম্ভব বলে চেষ্টা করুন ঠান্ডা শীতল পরিবেশে থাকতে যাতে পুরো শরীরটাই ঠান্ডা থাকে। যাদের হাত পা ঘামার সমস্যা রয়েছে তারা সামান্যতম গরম অনুভব করলে অথবা সামান্য উষ্ণতম পরিবেশে থাকলে তাদের হাত ঘামা শুরু হয়ে যায়। গরমকালে সব সময় সিলিং ফ্যানের নিচে অথবা এয়ারকন্ডিশন রুমে থাকার চেষ্টা করুন। সেটি যদি সম্ভব না হয় তবে ওয়াশ রুমে গিয়ে ঘন ঘন ঠান্ডা পানি দিয়ে হাত ধুয়ে মুছে নিন।

পাউডার ব্যবহার করতে পারেন

যাদের অনেক ভারী কাজ করতে হয় প্রতিদিন তাদের হাত ঘেমে গেলে ভারী জিনিস হাতে তুলতে অনেক সমস্যা হয়। এমন সমস্যা হলে হাতে কিছুটা পাউডার ছিটিয়ে নিতে পারেন এক্ষেত্রে পাউডার খুব দ্রুত হাতের ঘামগুলো শুষে নিয়ে হাতকে শুষ্ক রাখতে সাহায্য করে। পাউডারের মধ্যে টেলকম পাউডার, বেবি পাউডার, বেকিং সোডা ব্যবহার করতে পারেন।

হালকা পোশাক পরুন

হাত ঘামার সমস্যা থাকলে গ্রীষ্মকালে পোশাকের ব্যাপারে একটু বেশি সচেতন হোন। হাত ঘামা পাড়ি দিতে পারে এমন পোশাক পরা থেকে বিরত থাকুন। হালকা সুতি ঢিলেঢালা পোশাক পরুন যাতে বাইরের বাতাস কাপড়ের ভেতর দিয়ে শরীরে লাগে। গরমকালে সাধারণত সিল্ক বা সিন্থেটিক কাপড় এর পোশাক পরলে শরীরে গরম অনুভূত হয় ফলে হাত পা সহজেই ঘামতে শুরু করে। বিশেষ প্রয়োজন না হলে এমনি সময় অথবা রান্নার ক্ষেত্রে হাতে গ্লাভস পরা থেকে বিরত থাকুন। গ্লাভস বাইরের বাতাস থেকে আপনার হাতকে আড়াল করে এবং বদ্ধ একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে হাত ঘামা বাড়িয়ে দেয়।

প্রসাধনীর ক্ষেত্রে সাবধান হন

প্রসাধনী অর্থাৎ কসমেটিকস ব্যবহারের সময় পেট্রোলিয়াম জেলি যুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকুন। সাধারণত শীতকালে অর্থাৎ শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বককে আদ্র রাখতে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা হয়, গরমকালেও এ কথাই প্রযোজ্য। তাই গরমকালেও যদি আপনি পেট্রোলিয়াম জেলিযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করেন তাহলে হাত ঘামার পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।

Antiperspirant ব্যবহার করতে পারেন

যারা এ বিষয়ে অবগত তার একটু আশ্চর্য হবেন যে Antiperspirant কেন হাতে ব্যবহার করতে হবে! আসলে Antiperspirant বগলে ব্যবহার করা হয় ঘাম রোধ এবং দুর্গন্ধ দূর করার জন্য। তবে বগলে যদি এই রাসায়নিক উপাদান টি কাজ করে থাকে তবে হাতের জন্যও কাজ করতে পারে এমনটাই অনেকে মনে করেন। বিভিন্ন Antiperspirant এর মধ্যে রয়েছে অ্যালুমিনিয়াম জিরকনিয়াম অথবা অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড হেক্সা হাইড্রেট সমৃদ্ধ Antiperspirant। তবে সবচেয়ে ভালো হয় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এই উপাদানগুলো ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিন।

চিন্তা মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন

শরীর, হাত এবং পা ঘামার অন্যতম কারণ হচ্ছে টেনশন বা দুশ্চিন্তা। পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন, ইন্টারভিউ দিতে যাবেন, বাসা থেকে দেরি করে বের হয়েছেন ট্রেন ধরার জন্য এরকম বিভিন্ন পরিস্থিতিতে দেখবেন আপনার হাত-পা প্রচুর পরিমাণে ঘামা শুরু হয়ে গেছে। কেউ আপনাকে বিরক্ত করছে, কোন কারনে আপনি অতিমাত্রায় উত্তেজিত অথবা রেগে আছেন এমন পরিস্থিতিতেও আপনার হাত-পা ঘামা শুরু করবে। তাই চিন্তা মুক্ত থাকতে নিয়মিত ধ্যান বা যোগাসন করুন, উত্তেজিত হলে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিন। এসব প্রাকৃতিক নিয়মে যদি কোন উপকার না পান তবে একজন ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিন। তবে হাত-পা ঘামার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে সব সময় চেষ্টা করুন নিজেকে এবং নিজের মনকে সুস্থ ও শান্ত রাখতে।

পর্যাপ্ত পানি পান করুন

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে শরীর সুস্থ রাখতে পানি খাওয়ার বিকল্প কিছু হতে পারে না। হাত ঘামা রোধ করতেও আপনাকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। প্রচুর পানি পান করলে আপনার শরীর হাইড্রেটেড থাকবে ফলে শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকবে। আর শরীরের তাপমাত্রা যত কম থাকবে আপনার শরীরের পাশাপাশি হাত ঘামার সম্ভাবনাও তত কমে আসবে।

চিনি থেকে দূরে থাকুন

যারা মিষ্টি জাতীয় খাবার পছন্দ করেন তাদের জন্য দুঃসংবাদ হলো চিনি অথবা চিনিযুক্ত খাবার শরীরের ঘামের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। চিনি যুক্ত খাবার রক্তের শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় যা মাথা ঘোরা, তন্দ্রা এবং ঘামের সৃষ্টি করে। শুধু চিনি যুক্ত খাবার নয় গমের রুটি, আলু দিয়ে যে কোন খাবার, আলু ভাজি ইত্যাদিতে চিনি না থাকলেও এগুলোও রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় ফলে এগুলোও ঘাম উৎপন্ন করার জন্য দায়ী।

মসলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন

অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার খেতে সুস্বাদু হলেও শরীরের জন্য বিভিন্ন ক্ষতির পাশাপাশি ঘাম উৎপাদনের জন্য দায়ী বলে বিবেচিত। বিভিন্ন মসলাদার খাবার এবং ক্যাফেন যুক্ত খাবার নিউরো ট্রান্সমিটার সক্রিয় করে যা আমাদের শরীরে ঘাম উৎপাদনের হার বাড়িয়ে দেয়। তাই মসলাযুক্ত খাবার এবং চা-কফি যতটা সম্ভব কম খান। প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল, আশযুক্ত খাবার, ভিটামিন ও খনিজযুক্ত খাবার খান। এগুলো রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে হাতের তালুর ঘাম প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

আয়োডিনযুক্ত খাবার কম খান

আয়োডিন বেশি মাত্রায় থাকে এমন খাবার এর তালিকা করুন এবং এগুলোকে খুবই অল্প পরিমাণে খান। Adin যুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে দুগ্ধ জাত পণ্য ব্রকলি পেঁয়াজ আলু গরুর মাংস। এসব গুলোই খাবার স্বাস্থ্যসম্মত এবং সুস্বাদু হওয়ার পরেও বেশি মাত্রায় খেলে হাইপার থাইরয়েডিজম এর সূত্রপাত ঘটায়। আর হাইপার থাইরয়েডিজমের একটি বিশেষ উপসর্গ হলো অতিরিক্ত ঘাম হওয়া। তাই শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন কারণ এই হাইপার থাইরয়েডিজম কেবল একজন চিকিৎসকই নির্ণয় করতে পারবেন।

ওজন কমান

সাধারণত যাদের ওজন বেশি এবং স্থলকায় তারা অন্যদের তুলনায় বেশি ঘেমে থাকেন। তাই ঘাম কিছুটা প্রতিরোধ করতে হলে আপনার ওজন বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক রাখুন। তবে ব্যায়াম করলে, অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলে, দৌড়ালে ঘাম হবে এটা স্বাভাবিক। আর ওজন স্বাভাবিক থাকার পরেও যদি অতিরিক্ত ঘামেন তবে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

মন্তব্য

বর্তমানে হাত ঘেমে যাওয়া খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। তবে দিনে দিনে এই সমস্যা বেড়ে চলেছে এবং এ সমস্যার রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। উপরের বিষয়গুলো প্রয়োগ করে দেখতে পারেন আশা করি উপকার পাবেন। আর যদি কোন উপকার না হয়ে থাকে তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

লেখাটি পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আর লেখাটি পড়ে ভালো লাগল নাকি কোন ভুল ত্রুটি আছে দয়া করে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাবেন। পরবর্তী লেখায় আবারো দেখা হবে সে পর্যন্ত সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url