ভালো শিক্ষার্থী হওয়ার কৌশল | কিভাবে সবচেয়ে ভালো ছাত্র হওয়া যায়
ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছাত্র-ছাত্রীদের সবাই প্রশংসা করে। ভালো ছাত্রছাত্রী হতে কে না চায়! তবে আমাদের ধারণা শুধুমাত্র ভালো করে পড়াশুনা করলে এবং ভালো রেজাল্ট করলেই ভালো ছাত্র বা ছাত্রী হওয়া যায়। তবে বিষয়টা পুরোপুরি সেরকম নয়। পড়াশুনা, মেধা, ভালো নাম্বার এর পাশাপাশি আচার-আচরণেও হতে হবে অন্যদের চাইতে অতুলনীয়। তাহলে সবচেয়ে ভালো ছাত্র হওয়া যাবে।
“পড়ালেখা” এর আজকের এ পর্বে আমরা জানার চেষ্টা করব ক্যালিফোর্নিয়ার এডুকেশনাল কনসালটেন্ট আলেকজান্ডার রুইজ এর লেখা আর্টিকেল থেকে কিছু বিষয় যেখানে তিনি আলোচনা করেছেন কিভাবে একজন ভালো ছাত্র হওয়া যায় অর্থাৎ একজন ভালো শিক্ষার্থীর কিছু গুণাবলী। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক আশা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
শ্রেণীকক্ষের মনোযোগী হন
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক যখন পড়াবেন তখন সম্পূর্ণ মনোযোগ থাকবে তার কথা বলার প্রতি। শিক্ষকের কথা যদি মনোযোগ দিয়ে না শোনেন তবে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ছুটে যেতে পারে যেটি পরবর্তীতে আপনার বুঝতে সমস্যা হতে পারে এবং পরবর্তীতে যখন পড়বেন তখন আপনি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
মাঝের সারিতে বা পেছনের দিকে বসলে শিক্ষকের কথায় মনোযোগ দিতে যদি সমস্যা হয় তবে চেষ্টা করুন একদম সামনের দিকে বেঞ্চে বা ডেস্কে বসতে। হয়তো মনে করবেন পরবর্তীতে কোন সহপাঠীর কাছ থেকে জেনে নিবেন কিন্তু এক্ষেত্রে শিক্ষকের মত আপনাকে বোঝাতে পারবে না এবং দ্বিতীয়ত আপনার সময়ের অপচয় হবে।
নোট করুন
ক্লাসের শিক্ষক যখন লেকচার দিবেন তখন তার কথার প্রতি মনোযোগ দেওয়ার পাশাপাশি নোট করতে পারেন। এতে করে আপনার নোট করার দক্ষতা যেমন বাড়বে তেমনি হাতের লেখার গতি বাড়বে কারণ নোট করার সময় অত্যন্ত কম সময় পাবেন।
নোট করার জন্য শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক যা যা বলবেন সব কিছুই লেখার প্রয়োজন নেই, শুধুমাত্র কি পয়েন্টগুলো লিখবেন যে পয়েন্টগুলোর দিকে পরবর্তীতে চোখ বুলালে আপনার মনে পড়ে যাবে এই পয়েন্টগুলোকে আপনার শিক্ষক কিভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তাছাড়া ক্লাস রুমে নোট করলে বাসায় গিয়ে খুব কম সময় এবং অল্প পরিশ্রমে আপনার পড়া কমপ্লিট হয়ে যাবে। ক্লাসের সর্বোচ্চ নাম্বার পাওয়া ছাত্রছাত্রীরা এভাবে নোট করে পড়াশোনা করে বলে তাদের স্কোর সবচেয়ে বেশি হয়।
নিয়মিত হোমওয়ার্ক করুন
ভালো ছাত্রদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো নিয়মিত এবং সময় মত বাড়ির কাজ সম্পন্ন করা। হোমওয়ার্ক গুলোকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে কারণ নিয়মিত হোমওয়ার্ক করলে পড়াগুলো রিভিশন দেয়া হয়ে যায়। বাড়ির কাজ করতে গিয়ে কোন সমস্যা হলে সেটি সেই খাতাতেই নোট করে রাখতে হবে এবং পরবর্তী দিন শিক্ষকের কাছে বুঝিয়ে নিতে হবে।
এক্ষেত্রে সহপাঠীদের সাহায্যেও নেয়া যেতে পারে। প্রয়োজন হলে নির্দিষ্ট সময়ের একটা রুটিন করতে হবে যে সময় হোম ওয়ার্ক করা যেতে পারে। চেষ্টা করতে হবে নিরিবিলি পরিবেশে মনোযোগের সাথে বাড়ির কাজ সম্পন্ন করতে।
প্রশ্ন করুন
ভালো স্টুডেন্ট এর যতগুলো গুণ আছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রশ্ন করা। যত বেশি প্রশ্ন করা যায় তত বেশি শেখা যায়। একজন ছাত্র/ছাত্রী তিন পরিস্থিতিতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষককে প্রশ্ন করতে পারেন- যে বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে সে বিষয়ে পরিষ্কারভাবে বুঝতে না পারলে, সেই বিষয় সম্পর্কে তার যে ধারণা সেটি সঠিক কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য এবং সেই বিষয় সম্পর্কে আরেকটু বেশি জানার জন্য।
প্রশ্ন করা হলে শিক্ষক ও খুশি হন তিনি বুঝতে পারেন যে তার ছাত্র-ছাত্রী শ্রেণিকক্ষে পড়ার প্রতি মনোযোগী। তবে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে একজন ভালো ছাত্র কখনো অবান্তর প্রশ্ন করবে না। যেমন কোন বিষয়ে নাম্বার এত কম পাওয়ার কারণ, শিক্ষকের পছন্দের ব্যান্ড দল কোনটি, শিক্ষকের পরিবার সম্পর্কে ইত্যাদি অযৌক্তিক প্রশ্ন করলে সেই ছাত্র-ছাত্রী সম্পর্কে শিক্ষকের মনে একটি বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হয়।
যখন প্রয়োজন সাহায্য নিন
কারো না কারো সাহায্যের প্রয়োজন, সাহায্য ছাড়া কেউ কখনো এগোতে পারে না। এই সাহায্য হতে পারে সহপাঠীদের কাছ থেকে, পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে অথবা শিক্ষকের কাছ থেকে। ক্লাসের শিক্ষক পড়ানো অবস্থায় প্রশ্ন করা কখনোই নির্বুদ্ধিতার পরিচয় নয়। ধরুন ফিজিক্সের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা আপনি বুঝতে পারেননি এক্ষেত্রে আপনার সহপাঠীর সাহায্য নিতেই পারেন।
আপনার সহপাঠী যদি আপনাকে সঠিকভাবে বোঝাতে সক্ষম না হয় তাহলে পরদিন স্কুলে গিয়ে শিক্ষককে বিনয়ের সাথে বিষয়টি অন্যভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করতে পারেন। পড়াশোনার ব্যাপারে কারো কাছে সাহায্য চাইতে, কাউকে কোন প্রশ্ন করতে দ্বিধা বা লজ্জাবোধ করলে আপনি ভালো ছাত্র হতে পারবেন না এবং বেশি জ্ঞান অর্জন করতেও পারবেন না।
কঠোর পরিশ্রম করুন
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সব সময় ভালো স্কোর করবেন মেধা তালিকায় প্রথম হবেন তাহলেই যে আপনি ভালো ছাত্র ব্যাপারটা কিন্তু সেরকম নয়। এরকম ভালো স্কোর পাওয়া অনেক ছাত্রছাত্রী রয়েছে যাদেরকে শিক্ষক পছন্দ করেন না কারণ তাদের আচরণগত অনেক সমস্যা থাকে।
আপনি চালাক চতুর নন সহজ সরল, পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেননি, বিভিন্ন ছোটখাটো টেস্ট পরীক্ষাগুলোতেও ভালো স্কোর করতে পারেন না কিন্তু আপনার কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যাবসায় যদি শিক্ষকদের নজরে আসে তবে অবশ্যই আপনি শিক্ষকদের একজন প্রিয় ছাত্র/ছাত্রী হয়ে উঠবেন।
পড়ার কৌশল খুঁজে নিন
সব ছাত্রছাত্রীর মেধা যেমন সমান নয় সব ছাত্র ছাত্রীর পড়াশোনার ধরনও একরকম হয় না। একটি পড়া কারো দুই তিন মিনিটে হয়ে যায় আবার কারো সময় লাগে আধা ঘন্টার বেশি। শিক্ষকের বক্তব্য শুনে কারো পড়া হয়ে যায় কাউকে আবার বাসায় এসে মুখস্ত করতে হয়। কারো কারো ভিজুয়াল ম্যাটেরিয়ালস যেমন ছবি, ভিডিও, প্রজেক্টর ইত্যাদি প্রয়োজন পড়ে।
কারো কারো আবার অডিও নোটস অর্থাৎ রেকর্ডিং কোন কিছু শুনলে পড়াটা তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। ভালো ছাত্র হতে হলে আপনার নিজেকে খুঁজে নিতে হবে কোন পদ্ধতিতে পড়াশোনা করলে আপনার কম সময়ে কম পরিশ্রমে বেশি পড়া হবে এবং পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারবেন।
বিভিন্ন উপায়ে শিখুন
একটা বিষয়ে পড়ার সময় শিক্ষকের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনার পরও যদি আপনার বুঝতে সমস্যা হয় সে ক্ষেত্রে আপনি বিভিন্ন উৎস বেছে নিতে পারেন। ধরুন বাংলাদেশের ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে যদি আপনি জ্ঞান অর্জন করতে চান তবে পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও আপনি আরো অনেক সোর্স পেতে পারেন তথ্যের জন্য।
যেমন বিভিন্ন লাইব্রেরীতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রচুর বই রয়েছে, ইউটিউবে প্রচুর ভিডিও রয়েছে, এছাড়া ইন্টারনেটে উইকিপিডিয়া রয়েছে এগুলো রিসার্চ করলেও আপনি অনেক তথ্য খুব সহজেই পেয়ে যাবেন এবং এগুলো আপনাকে মুখস্ত নাও করতে হতে পারে।
সময় মত পড়াশোনা করুন
আর কয়েকটা দিন পর আপনার পরীক্ষা কিন্তু পারিবারিক অথবা ব্যক্তিগত যেকোনো কারণেই হোক দুই দিন যাবত আপনার ভালোমতো পড়াশোনা হয়নি। কাল থেকে শুরু করবেন পড়াশোনা- এমন চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে এই মুহূর্ত থেকে শুরু করুন। অল্প সময়ে পড়া সম্পন্ন করতে চাইলে আপনাকে নিরিবিলি পরিবেশ খুঁজে বের করতে হবে যে জায়গায় কোন কোলাহল থাকবে না, বাইরের আশেপাশের কোন বিরক্তিকর শব্দ থাকবে না।
নিজের যত্ন নিন
ভালোর ছাত্রছাত্রীদের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল তারা নিজেদের শরীরের যত্ন নেয়। শরীর যদি সুস্থ না থাকে তবে চাইলেও ভালো পড়াশোনা করা যাবে না এবং ভালো ফলাফল করা যাবে না। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে বেশি করে শাকসবজি ফলমূল মাছ-মাংস খেতে হবে এবং বাইরের খাবার একদম পরিহার করতে হবে।
রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে এবং একটানা ছয় থেকে সাত ঘন্টা ঘুমাতে হবে। সারাদিনে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে যেন পানি শূন্যতা না হয়। শরীর যত সুস্থ থাকবে ব্রেইন বা মস্তিষ্ক তত কার্যকরী হবে।
সহপাঠীদের সাথে ভালো আচরণ করুন
ক্লাসের সবচেয়ে ভালো স্টুডেন্ট আপনি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেছেন কিন্তু সহপাঠীদের সাথে আপনার ভালো সম্পর্ক নেই। বিষয়টি অনেকটা মসলা ছাড়া মাংস রান্নার মত। পরীক্ষায় শুধু ভাল স্কোর করতে পারলে এবং মেধাবী হলেই ভালো ছাত্র হওয়া যায় না। সহপাঠীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক থাকতে হবে, বন্ধুদের বিপদ আপদে সাহায্যে এগিয়ে যেতে হবে, সহপাঠী পড়াশোনার ব্যাপারে কোন সাহায্য চাইলে সাধ্যমত সাহায্য করতে হবে। হিংসাত্মক মনোভাব রাখা যাবে না।
শিক্ষকদের সম্মান করুন
একজন ছাত্র-ছাত্রীর কাছে মা বাবার পরে শিক্ষকের স্থান। বাবা মা যেমন সন্তানের ভালো চান একজন শিক্ষকও তার ছাত্র-ছাত্রীদের সর্বদা মঙ্গল কামনা করেন। একজন ভালো ছাত্র সব সময় শিক্ষকদের সাথে ভদ্র এবং বিনয়ের সাথে কথা বলে। শিক্ষক যদি কোন কারণে কর্কশ ভাষায় কথা বলেও থাকেন তবুও একজন ভালো ছাত্র হিসেবে তার আচরণে বিরক্ত প্রকাশ করা উচিত নয়।
ভদ্র আচরণের মাধ্যমে যে কেউ একজন শিক্ষকের প্রিয়ভাজন হতে পারে। ক্লাসরুমে শিক্ষক যখন কথা বলে তখন ছাত্রদের মধ্যে কথা বলা, কাগজ ছুড়ে মারা, হাসাহাসি করা, জোক বলা, অমনোযোগী হওয়া- এসবগুলো কাজই কিন্তু শিক্ষককে অসম্মান করার শামিল।
শিক্ষক যদি ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে তার মানে এই নয় যে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষকের সাথে বন্ধুর মতো আচরণ করা উচিত। শিক্ষক যদি ভুলবশত কোন ভুল কথা বলে ফেলে সেটা নিয়ে হাসি তামাশা করা এক ধরনের বেয়াদবি। একজন ভালো ছাত্র ছাত্রী সর্বদাই শিক্ষককে সম্মান করে চলে।
পড়াশুনা নিয়ে চাপ নিবেন না
ভালো রেজাল্ট করা, ভালো স্কোর পাওয়া অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তাই বলে এগুলোই জীবনের সবকিছু নয়। জীবনে হাসি খুশি থেকে সুস্থ থাকাটা সবচেয়ে জরুরী। কোন কারনে এবারের পরীক্ষায় ভালো করতে পারেননি সমস্যা নেই মনোবল হারাবেন না কঠোর পরিশ্রম করুন পড়াশোনা করে যান শরীর সুস্থ রাখুন পরবর্তীতে ভালো রেজাল্ট হবে। পরীক্ষায় একবার খারাপ করার অর্থ এই নয় আপনি অযোগ্য, বরং আপনি যদি পরবর্তীতে ভালো করার চেষ্টা না করেন তাহলেই প্রমাণিত হবে আপনি অযোগ্য। তাই পড়াশোনা নিয়ে অতিরিক্ত চাপ নিবেন না।
উপসংহার
ভালো ছাত্র হলে শুধু নিজেদের ভালো লাগে ব্যাপারটি সেরকম নয় একজন ভালো ছাত্রের জন্য তার বাবা-মা, পরিবারের সদস্য এবং শিক্ষকগণ সকলে গর্বিত বোধ করেন। তাই একজন ভালো ছাত্রের উচিত সকলকে সম্মান করা সর্বোপরি একজন ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করা।
লেখায় কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আর লেখাটি ভালো লেগে থাকলে পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এরকম তথ্যবহুল আরো অনেক লেখা রয়েছে আমাদের এই ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।
মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url