স্মার্টফোন অতিরিক্ত গরম হলে যা করবেন | দ্রুত গরম হলে ১৩ করণীয়
স্মার্টফোন আমাদের প্রতিদিনের নিত্য সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিটি কাজেই যেন আমাদের স্মার্টফোনের উপর নির্ভর করতে হয়। তাই দিনে দিনে স্মার্টফোনের কাজের পরিধিও বাড়ছে। আর সেইসাথে বেড়ে চলেছে ফোনের গরম হয়ে যাওয়া। ফোনের দীর্ঘায়ু এবং কার্যকারিতা বাড়াতে ফোন অতিরিক্ত গরম হওয়া থেকে রক্ষা করার বিশেষ কিছু উপায় রয়েছে যেগুলো আমাদের জানা প্রয়োজন।
স্মার্টফোনের এই পর্বে আজকে আমরা জানবো কিভাবে আমাদের স্মার্ট ফোন এর তাপমাত্রা কমিয়ে ঠান্ডা রাখা যায়। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেও কিছুটা আলোচনা করেছি কিছুটা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ থেকে আলোচনা করেছি। আশা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
সঠিক চার্জার ব্যবহার করুন
টেক্সেস এর টেক এক্সপার্ট জেসিকা নাজিরি সঠিক চার্জার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে “১০০০ ডলার খরচ করে একটি দামি মোবাইল কেনা হলে অবশ্যই ২০ ডলার খরচ করে একটি নামি দামি ব্র্যান্ডের চার্জার ব্যবহার করা যাবে।” তিনি আরো বলেছেন, “সস্তা চার্জার সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় না এবং সেগুলো বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সূত্রপাত করে।” অবশ্য এন্ট্রি লেভেল এবং মিড রেঞ্জের ফোনগুলোতে কোম্পানির চার্জার দেয়া থাকে। ফোনকে সুস্থ রাখতে অবশ্যই আমাদের কোম্পানি প্রদত্ত চার্জার ব্যবহার করতে হবে।
সঠিকভাবে ফোন চার্জ করুন
স্মার্টফোনের তাপমাত্রা কমানোর আরেকটি সঠিক এবং কার্যকরী উপায় হচ্ছে সঠিকভাবে ফোন চার্জ দেয়া। মোটামুটি তাপমাত্রা কম এমন এলাকায় এবং বায়ু চলাচলের যথেষ্ট ব্যবস্থা আছে এরকম কক্ষে স্মার্টফোন চার্জ দেয়া আপনার ফোনের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করার পাশাপাশি ফোনের ব্যাটারি এবং অভ্যন্তরীণ যন্ত্রাংশের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। যে কোন ধরনের ব্যাকগ্রাউন্ড এপ্লিকেশন বন্ধ করে, মোবাইলের স্ক্রিন অফ করে চার্জ করতে দিন, এতে ফোনের তাপমাত্রা কম হবে।
সফটওয়্যার আপডেট রাখুন
ডেভস জার্নাল এর কনজিউমার টেক এক্সপার্ট আজিন কিয়া মিস্রা বলেছেন “স্মার্টফোনের হার্ডওয়ার এবং সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট করলে স্মার্ট ফোনকে স্মুথলি চালনা করার জন্য প্রয়োজন সর্বনিম্ন প্রয়োজনীয় শক্তির।” তবে সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট না করলে পুরনো হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার গুলি নতুন সফটওয়্যার এর প্রয়োজনীয়তা মেটাতে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে গিয়ে মোবাইল ফোনে তাপমাত্রা উৎপন্ন করে। আমাদের উচিত নিয়মিত অপারেটিং সিস্টেম সহ গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ্লিকেশন গুলো আপডেট রাখা।
অতিরিক্ত গরম আবহাওয়ায় কাজ করা থেকে বিরত থাকুন
সেলসেল এর সিওও সারাহ ম্যাক-কোনমি এর মতে, ফোনকে অতিরিক্ত গরম হাওয়া থেকে রক্ষা করার সবচেয়ে বাস্তব এবং সহজ উপায় হচ্ছে অতিরিক্ত গরম তাপমাত্রায় কাজ না করা অথবা গরম তাপমাত্রা থেকে সরিয়ে কিছুটা ঠান্ডা আবহাওয়ায় মোবাইলে কাজ করা।
যদিও সর্বোচ্চ একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পৌঁছার পর স্মার্টফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায় বড় কোনো ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য, তবুও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে এই সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় আমাদের মোবাইল ফোন যেন না পৌঁছায়। বড় ভারী কোন এপ্লিকেশন ব্যবহার করার সময় অথবা গেম খেলার সময় যতটা সম্ভব চেষ্টা করুন ঠান্ডা পরিবেশে থাকার।
ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখুন
প্রযুক্তিবিদ হোয়াইট পরামর্শ দিয়েছেন মোবাইল স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখতে। তার মতে, “স্ক্রিনের উচ্চ ব্রাইটনেস ব্যাটারির উপর আরো বেশি কাজ করতে এবং তাপ উৎপন্ন করতে জোর করে।” ব্রাইটনেস কমিয়ে অর্থাৎ যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু রেখে “স্ক্রিন টাইম আউট” কমিয়ে রাখা উচিত।
বাইরে অর্থাৎ সূর্যের আলোতে মোবাইলের স্ক্রিন দেখতে অসুবিধা হয় আমাদের ফুল ব্রাইটনেস সেট করতে হয় এতেও ব্যাটারি যেমন খরচ হয় বেশি তেমনি ফোন গরম হয়ে ওঠে। তাই চেষ্টা করুন মোবাইলে কাজ করতে বাসার ভেতরে বা অফিসে, বাইরে মোবাইলে কাজ করা এড়িয়ে চলে।
ভেন্টিলেশন যুক্ত কাভার ব্যবহার করুন
আমাদের প্রিয় ফোনটিকে হাত থেকে পড়ে গিয়ে ভেঙে যাওয়া বা যেকোনো ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে আমরা সব সময় একটি ফোনকেস বা ফোন কাভার ব্যবহার করি। তবে প্রযুক্তিবিদদের মতে ফোনে ফোনকাভার ব্যবহার করা উচিত নয় কারণ ফোন কাভার তাপমাত্রাকে ধরে রাখে এবং ফোনের ভেতরে তাপমাত্রা বাড়াতেও সাহায্য করে।
তাই ফোন কেইস যদি ব্যবহার করতেই হয় তবে খেয়াল রাখতে হবে সেটিতে যেন যথেষ্ট ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা থাকে অর্থাৎ বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকে। তবে খেয়াল রাখতে হবে কাভার এর কারণে কাভারের ভেতরে জলীয় বাষ্প জমেছে কিনা অর্থাৎ ঘেমে গেছে কিনা সেটা কিছুদিন পরপর ফোন কাভার খুলে পরিষ্কার করতে হবে।
ব্যাটারি সেভিং মোড ইউজ করুন
বেশ কিছু স্মার্টফোন রয়েছে যেগুলোতে ব্যাটারি সেভিং মোড থাকে। এটি মূলত ব্যাকগ্রাউন্ড কার্যকলাপ এবং স্ক্রিন ব্রাইটনেসকে নিয়ন্ত্রণ রাখে ফলে অতিরিক্ত কাজের সময়ও এটি মোবাইলকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। তাই মোবাইলের তাপমাত্রা কমিয়ে মোবাইলকে ঠান্ডা রাখতে ব্যাটারি সেভিং মোড ইউজ করা হতে পারে আপনার একটি কার্যকরী পদক্ষেপ।
কানেকশন বন্ধ রাখুন
অতিরিক্ত তাপমাত্রা উৎপন্ন হওয়া থেকে মোবাইলকে বাঁচাতে চাইলে প্রয়োজন না হলে ব্লুটুথ কানেকশন বন্ধ রাখুন। প্রয়োজন নেই অথচ ব্লুটুথ কানেকশন অন থাকলে সেটি অনবরত সার্চ করতে থাকে আশেপাশের কোন ডিভাইসের সাথে কানেকটেড হওয়ার জন্য। এতে করে ফোনকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয় এবং হিট জেনারেট করে।
আরও পড়তে পারেন
একই কথা প্রযোজ্য মোবাইল ডেটা এবং ওয়াইফাই কানেকশনের জন্য। অপ্রয়োজনের সময় মোবাইল ডেটা চালু থাকলে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের অপ্রয়োজনীয় update অথবা নোটিফিকেশনের জন্য নেট কানেকশন কাজ করে বিধায় তাপমাত্রা বাড়াতে ভূমিকা রাখে।
নির্দিষ্ট সময় পর পর ফোন রিস্টার্ট করুন
বিশেষ কোনো সমস্যা যেমন ফোন হ্যাং হয়ে যাওয়া এ ধরনের সমস্যা না হলে আমরা সাধারণত ফোন রিস্টার্ট করি না। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে প্রয়োজন না হলেও কিছুদিন পরপর ফোন রিস্টার্ট করা ভালো। এতে করে অনেক রিসোর্স বা সিস্টেমের যেমন আপডেট হয় ঠিক তেমনি ব্যাকগ্রাউন্ডে কোন অ্যাপ চলতে থাকলে সেটা অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায় ব্যাটারি কনজাম্প্শন ঠিকমতো চলতে থাকে এবং ফোনের কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার হয়। আর সবকিছু ঠিক থাকলে ফোনের তাপমাত্রা বাড়ার সুযোগ থাকবে না।
অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ডিলিট করুন
ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকা বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় এপ্লিকেশন সিপিইউ এবং জিপিইউ এর উপরে চাপ সৃষ্টি করে এবং হিট জেনারেট করে। এসব অ্যাপ্লিকেশন বন্ধ করা হলে বা কোন কোন ক্ষেত্রে জোর করে বন্ধ করা হলে প্রসেসরের উপর যেমন কাজের চাপ কমে তেমনি মোবাইল ফোনের তাপমাত্রা থাকে সহনীয় পর্যায়ে। প্লে স্টোর থেকে অপ্রয়োজনীয় এবং যখন তখন এপ্লিকেশন ইন্সটল করার অভ্যাস পরিহার করা উচিত।
এয়ার প্লেন মোড চালু রাখুন
মলি হোয়াইট এর মতে মোবাইল ঠান্ডা রাখার আরেকটি উপায় হচ্ছে মাঝে মধ্যেই এয়ার প্লেন মোড ব্যবহার করা। অনেক সময় এমন এরিয়াতে আমরা যায় যেখানে নেটওয়ার্ক কভারেজ ঠিকমতো থাকেনা ফলে একটি ভালো নেটওয়ার্ক সিগন্যালের জন্য মোবাইল অনবরত সার্চ করতে থাকে বিধায় মোবাইলের অভ্যন্তরীণভাবে কার্যকারিতা চলতে থাকে এবং মোবাইলে তাপ উৎপন্ন হতে থাকে। তাই মলি হোয়াইট এর মতে যতক্ষণ না ভালো কাভারেজ এরিয়ায় আসা যায় তার আগে পর্যন্ত মোবাইল ঠান্ডা রাখতে এয়ারটেল মোড চালু রাখুন।
অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ থেকে ফোন দূরে রাখুন
ইউব্রেকআইফিক্স এর মলি হোয়াইট বলেছেন, “আপনার বিভিন্ন ডিভাইস যেমন কম্পিউটার ট্যাবলেট মোবাইল একসাথে একটি ব্যাগের মধ্যে রাখলে প্রত্যেকটির তাপমাত্রা উৎপাদনের জন্য এটি একটি যথেষ্ট সংবেদনশীল পদ্ধতি।” এর কারণ হলো চলমান থাকা অবস্থায় প্রত্যেকটি ডিভাইস আভ্যন্তরীণভাবে হিট জেনারেট করে। তাই মোবাইলে তাপমাত্রা কমাতে অন্যান্য ডিভাইসের পাশাপাশি বিভিন্ন যন্ত্রাংশ যেমন মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইস্ত্রী ইত্যাদি থেকে মোবাইলকে দূরে রাখুন।
ফোন বন্ধ রাখুন
মোবাইলকে ঠান্ডা রাখতে মাঝে মধ্যে মোবাইল বন্ধ রাখতে পারেন। অবসর সময়ে যখন আপনার মোবাইলে কোন প্রয়োজন নেই সে সময়ে পাঁচ মিনিটের জন্য মোবাইলটা বন্ধ রেখে আবার চালু করতে পারেন। এতে করে তাপমাত্রা কমে যেমন মোবাইল ঠান্ডা হবে ঠিক তেমনভাবে ram ফাকা হওয়ার কারণে আপনার মোবাইলের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়া প্রতিটি স্মার্টফোনে “সিডিউলড পাওয়ার অন/অফ” নামে একটা অপশন থাকে যেটিতে আপনি ইচ্ছামত ফোন বন্ধ হওয়ার এবং পুনরায় চালু হওয়ার সময় নির্ধারণ করে দিতে পারবেন।
শেষ কথা
ফোনের তাপমাত্রা কমানোর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ফোনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি অর্থাৎ লংজিভিটি বাড়ানো। তাই আমাদের কষ্টের টাকায় কেনা স্মার্টফোনটি যেন বেশি দিন টেকসই হয় সেটা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের ফোনের তাপমাত্রার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
অনেক ধৈর্য নিয়ে এতক্ষণ ধরে পড়ার জন্য বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এবং ভুল ত্রুটি হলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে লিখে জানাবেন। ভালো লেগে থাকলে পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করতে পারেন ধন্যবাদ।
মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url