চাকরি কেন ছাড়ে মানুষ? | কখন বুঝবেন নতুন চাকরি খুঁজতে হবে?
আমরা অনেকে চাকরি করি তবে অনেক চাকরিজীবীকে বলতে শোনা যায় তারা চাকরিটি খুব শীঘ্রই হতো ছেড়ে দিবেন। তাদের এই চাকরি ছাড়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। শুধুমাত্র কম বেতনের কারণে যে সবাই চাকরি ছেড়ে দেন বিষয়টি সেরকম নয়। ভালো সম্মানজনক বেতন থাকার পরেও বা একটি খ্যাতি সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার পরেও কর্মক্ষেত্রের পরিবেশের বিরূপ পরিস্থিতির কারণেও অনেকে চাকরির ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।
আবার অনেকে আছেন ইচ্ছার বিরুদ্ধে চাকরি করে যান। বুঝতে পারেন না নতুন চাকরি খুঁজবেন না এই চাকরিতেই সবকিছু সহ্য করে চাকরি করে যাবেন। নতুন চাকরি কখন খুঁজবেন সেই বিষয়ের উপরে আজকে কিছু লিখার চেষ্টা করেছি আশা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে দেখবেন।
অফিসের পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারলে
আপনি সব রকম ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন অফিসের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে যেমন ধরুন আপনার সাথে কেউ খারাপ আচরণ করলে আপনি হাসিমুখে কথা বলছেন, আপনি কারো আগে-পিছে নাই, আপনার সহযোগিতার মনোভাব আছে কিন্তু তারপরও পরিবেশটা আপনার জন্য দিনে দিনে দম বন্ধকর অবস্থায় পরিণত হচ্ছে।
এমতাবস্থায় আসলে এখানে আপনার চাকরিটা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তো বিভিন্ন কারণেই কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ আপনার প্রতিকূলে যেতে পারে সে কারণগুলো চলুন জেনে নেই।
সহকর্মীদের অসহযোগিতার মনোভাব
পৃথিবীতে কেউ কারো ভালো দেখতে বা শুনতে পছন্দ করে না। আপনি খুব কর্মঠ, দক্ষ, সৎ, কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান অর্থাৎ সকল গুন আপনার মাঝে রয়েছে। তাহলে বুঝবেন আপনার চারপাশে শত্রুর অভাব নেই। কারনে অকারণে আপনাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করবে এবং আপনি বিপদে পড়লে দূরে দাঁড়িয়ে সবাই মজা নেবে।
নিজেকে হাইলাইট করতে না পারা
অনেক নিরীহ, শান্ত কিন্তু দক্ষ এবং কর্মঠ চাকরিজীবী রয়েছেন যারা নীরবে নিজের দায়িত্বটুকু নিষ্ঠা সহকারে পালন করেন কিন্তু তিনি কখনোই চান না তার এ কাজ ঢাক ঢোল পিটিয়ে সবাইকে জানাতে। আপনার অফিসের পরিবেশ যদি এমন হয়ে থাকে যে, আপনি বানালেন চা কিন্তু সবাইকে বললেন বিরানি রান্না করার কথা তবে আপনাকে সেই স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে চলা উচিত। একটু চালাক তো হতেই হবে! যদিও এটি কোন ভালো গুণের মধ্যে পড়ে না অর্থাৎ এই ধরনের কাজের মধ্যে আসলে কারো ব্যক্তিত্ব বলে কিছু থাকে না।
নিজের উন্নতিতে সহকর্মীদের ষড়যন্ত্র
আপনি অত্যন্ত দক্ষ এবং যোগ্য একজন কর্মী হওয়ার কারণে বস আপনাকে অত্যন্ত পছন্দ করে। সাথে সাথে আপনার উন্নতিতে ঈর্ষান্নিত হয়ে আপনার কোন কোন সহকর্মী আপনার বিরুদ্ধে চলে গেছে। কর্ম ক্ষেত্রে সহকর্মীদের সহযোগিতা অবশ্যই প্রয়োজন কিন্তু যেহেতু আপনি হাইলাইটেড একজন কর্মকর্তা তাই আপনাকে সহযোগিতা করতে কেউ রাজি নয়।
এর ফলে আপনি অফিসে কাজ করতে গেলে একাকীত্ব বোধ করবেন এবং মানসিক চাপের সৃষ্টি হবে। তাছাড়া দিনের পর দিন এইভাবে মানসিক যুদ্ধ করে একটা জায়গায় বেশি দিন স্থায়ী হওয়া যায় না।
বস গুরুত্ব না দিলে
আপনি বসের একান্ত অনুগত সহকর্মী, আপনার কাজ নিয়ে কোন অভিযোগ করার সুযোগ নেই, আপনি কাজ দিয়ে অবশ্যই অফিসের সবাইকে এবং বসকে খুশি করার চেষ্টা করছেন কিন্তু তারপরও যে কোন ব্যক্তিগত কারণে হোক বা অন্য কোন কারণে হোক বস আপনার উপর সন্তুষ্ট হচ্ছেন না।
আপনি কঠোর পরিশ্রম এবং সততার সাথে কাজ করার পরেও আপনাকে বাহবা বা প্রশংসা দেওয়ার পরিবর্তে এটা আপনার দায়িত্ব তাই আপনি করেছেন এরকম একটা ভাব প্রকাশ করলে- এমন পরিস্থিতিতে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
প্রতিষ্ঠান প্রধান পক্ষপাতিত্ব করলে
ধরুন আপনার এক সহকর্মী তার এক আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য তিন দিনের ছুটি চাইলে আপনার বস ছুটি অনুমোদন করলো। এদিকে আপনার মামা ভীষণ রকম অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তাকে দেখার জন্য এক দিনের ছুটি চাইলেন কিন্তু আপনাকে ছুটি মঞ্জুর করা হলো না।
আবার আপনি কাজে যথেষ্ট ভাল, আপনার বেশ কয়েক বছর চাকরি করার ফলে ভালো একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে সবকিছু বিবেচনা করে আপনার প্রমোশন হওয়ার কথা। কিন্তু না হয়ে আপনার থেকে জুনিয়র কোন সহকর্মীকে প্রমোশন দেয়া হলো। এ ধরনের পক্ষপাতিত্ব হলে চাকরির পরিবেশ নষ্ট হয়।
বেতন বৃদ্ধিতে বৈষম্যের শিকার হলে
আপনার উপর অর্পিত দায়িত্ব এবং কাজ আপনি যথাযথভাবে পালন করলেন সারা বছর। কিন্তু বছর শেষে বেতন বৃদ্ধির সময় দেখলেন আপনার চেয়ে যারা কম কাজ করেছে বা অদক্ষ তাদের বেতন আপনার চেয়ে বেশি বাড়ানো হয়েছে। এই ধরনের বৈষম্য হলে চাকরি করার মন-মানসিকতা ভেঙ্গে যায়।
কাজের পরিবেশ না থাকলে
একটি অফিসে চাকরি করার পুরো শর্ত হলো সেখানে উপযুক্ত কাজের পরিবেশ থাকতে হবে। কিন্তু আপনার কাজের পরিবেশ অর্থাৎ আপনার সহকর্মীরা যদি এমন হয় যে, সব সময় একে অন্যের বিরুদ্ধে লেগে থাকে, একে অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টা করে, কে কাকে নামিয়ে উপরে উঠবে এরকম প্রতিযোগিতা থাকে, তাদের দায়িত্ব কৌশলে আপনার ঘাড়ে চাপাতে চায় তবে এই ধরনের পরিবেশে আসলে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে নেওয়া সম্ভব নয়।
চাটুকারিতা করতে না পারলে
বর্তমানে সরকারি এবং বেসরকারি যেকোনো চাকরিতে চাটুকারিতা একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে পদোন্নতির জন্য। সহকর্মীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয় কে কতখানি এবং কিভাবে বসের সামনে নিজেকে ভালো হিসেবে প্রমাণ করতে পারে।
আরও কিছু জানতে চাইলে পড়তে পারেন
তবে বসের সামনে এই নিজেকে ভালো বা যোগ্য প্রমাণ করার প্রতিযোগিতাটা হয় কাজের মাধ্যমে নয় চাটুকারিতার মাধ্যমে। আপনি যদি এই গ্রুপের সদস্য হয়ে না থাকেন তবে আপনার জন্য চাকরিটি করা অনেক কষ্টের হয়ে উঠবে দিনে দিনে।
অন্যদের তুলনায় কাজের চাপ বাড়লে
আপনি শান্ত সৃষ্ট নরম স্বভাবের মানুষ। বস আপনাকে যা কাজ দেয় আপনি কখনো আপত্তি করেন না। আবার আপনার অনেক সহকর্মী আছেন যারা বসের সাথে চালু করে তো করে তাদেরও কাজের কিছুটা দায়িত্ব আপনার ঘাড়ে ফেলে দেয়। আর দুনিয়াটাই এরকম যে যার কাছ থেকে যত আদায় করে নিতে পারে সেই সফল।
সে ক্ষেত্রে আপনি করুন বলদের মতো শুধু কেটে যাবেন আর বিনিময় অন্যদের চেয়ে কম বেতন ছাড়া আর কোন সুযোগ সুবিধা পাবেন না। আপনার বস আপনাকে কোন দায়িত্ব দিলে যেহেতু আপনি আপত্তি করেন না তাই আপনার কাজ দিনে দিনে বাড়তেই থাকবে। আপনার কাজের চাপের বিষয়টি আপনার বসকে বিনয়ের সাথে বুঝিয়ে বলুন। কোন কাজ না হলে বুঝতে হবে এই চাকরিটি আপনার জন্য নয়।
নিজস্ব মতামত
কর্মক্ষেত্রে কি কি ধরনের সমস্যা হতে পারে সেই বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করলাম। উপরের সমস্যাগুলো যে সবার ক্ষেত্রেই হয় এমনটি নয়। তবে এই ধরনের সমস্যা যদি কেউ পড়ে থাকেন এবং কোনভাবেই যদি মানিয়ে চাকরি করতে না পারেন সেই ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধান বা সহকর্মীদের সাথে কোন রকম তর্ক বা মনোমালিন্য না জড়িয়ে ভদ্রভাবে সেখান থেকে সরে আসাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
আপনি যদি সত্যি দক্ষ হয়ে থাকেন, যোগ্য হয়ে থাকেন তবে আপনি অন্য কোন চাকরির জন্য আবেদন করতে পারেন। সম্পূর্ণ নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে আপনাদের কিছু ধারনা দেয়ার চেষ্টা করলাম। আপনাদের কোন উপকার হলেও হতে পারে। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আর কিছু জানার আগ্রহ থাকলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন।
মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url