স্মার্টফোনের আয়ু কমে যে কারনে | স্থায়িত্ব কমার কিছু কারন জানুন

বর্তমানে ডিজিটাল পৃথিবীতে বাস করি আমরা তাই সব কাজে আমাদের প্রযুক্তির ছাড়া চলে না আর প্রযুক্তির অন্যতম বড় হাতিয়ার হল মোবাইল ফোন বা মুঠোফোন যেটিকে সেলুলার ফোন ও বলা হয়ে থাকে। কিন্তু না জানার কারণে অথবা অসচেতনতার কারণে আমরা অনেক সময় নিজেদের অজান্তেই আমাদের ফোনের কর্মক্ষমতা নষ্ট করে ফেলি।
স্মার্টফোনের আয়ু কমে যে কারনে স্থায়িত্ব কমার কিছু কারন জানুন

আজকের এই পর্বে আমরা জানবো প্রকাশক এবং লেখক এমিলি ডিনুজ্জোর আবিষ্কার করা কিছু কারণ যেগুলোর কারণে আমরা মোবাইলের ক্ষতি করে থাকছি এবং এগুলো থেকে পরিত্রাণেরও উপায় যতটা সম্ভব আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।

নোটিফিকেশনের জন্য ভাইব্রেশন ইউজ করা

অন্যান্য যে কোন ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর মতো মোবাইল ফোনও আপনি যত ব্যবহার করবেন ততই এর স্থায়িত্ব এবং কর্মক্ষমতা কমতে থাকে। তাই আমাদের খেয়াল রাখা উচিত সে যন্ত্রটির ব্যবহার যতটা সীমিত করা যায়। আমরা তো অনেকে মনে করি ভাইব্রেশন চালু থাকলে মোবাইলের কি ক্ষতি হতে পারে? একটি ভাইব্রেশন চালু করতেও তার শক্তির প্রয়োজন। তাই ভাইব্রেটিং নোটিফিকেশন বন্ধ রাখলে ব্যাটারির কর্মক্ষমতা কিছুটা হলেও বাড়বে।

অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ব্যবহার করা

বিশেষ কোন প্রয়োজনে কোন অ্যাপ ইন্সটল করার পর পরবর্তীতে সেই অ্যাপ আর ব্যবহার করা না হলে সেটি একদিকে যেমন ব্যাটারি খরচ করে অন্যদিকে আপনার মেমোরি থেকে জায়গা নিয়ে থাকে। উল্লেখ্য, ফোন মেমোরি যত বেশি থাকবে মোবাইল তত স্মুথলি চলবে। 

আরও জানতে পারেন

টিং মোবাইলের কনটেন্ট ডিরেক্টর এন্ড্রু মোর বলেছেন, অপ্রয়োজনীয় app আনইন্সটল করার ফলে যেমন ব্যাটারি লাইফ বৃদ্ধি পাবে, ব্যাটারির কর্মক্ষমতা বেড়ে যাবে ঠিক তেমনি মোবাইলের মেমোরির জায়গা বৃদ্ধির ফলে মোবাইল ভালোভাবে চলবে।

অপ্রয়োজনীয় permission দিয়ে রাখা

আমরা অনেক সময় প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে থাকি এবং এই অ্যাপ গুলো তাদের কার্যাবলী কে সঠিক ভাবে পরিচালনা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পারমিশন বা অনুমতি চেয়ে থাকে। আমরা বুঝে হোক বা না বুঝে হোক সবগুলো পারমিশন অনেক সময় দিয়ে দেই। 

এতে করে অ্যাপগুলো গোপনীয় ভাবে মোবাইলে বিভিন্ন কাজ করতে থাকে ফলে মোবাইলের সফটওয়্যার এর চাপ বাড়ে এবং কর্ম ক্ষমতা কমতে থাকে। শুধু তাই নয় এসব অপ্রয়োজনীয় অনুমতির ফলে আমাদের ফোনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঝুঁকিতে পড়ে এবং বিভিন্ন হ্যাকাররা ক্ষতিকর কিছু অ্যাপের মাধ্যমে আমাদের মোবাইলে প্রবেশ করিয়ে দিতে পারে।

বিভিন্ন ক্ষতিকর অ্যাপ ইন্সটল করে রাখা

আমরা অনেক সময় শখের বসে এবং কৌতুহলবশত বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় app ইন্সটল করে থাকি। Adweek এর মতে বেশ কিছু ভয়ংকর অ্যাপ রয়েছে যেগুলো মোবাইলের জন্য বেশ ক্ষতিকর যেমন Netflix, Amazon, Google maps, Snapchat এবং উল্লেখযোগ্য ভাবে Facebook, Facebook Messenger । 
স্মার্টফোনের আয়ু কমে যে কারনে  স্থায়িত্ব কমার কিছু কারন জানুন
আমরা অনেক সময় প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে থাকি

আবার গার্ডিয়ান পত্রিকার মতে ফেসবুক এবং ফেসবুক মেসেঞ্জার অ্যাপ দুটি আনইন্সটল করা হলে একটি এন্ড্রয়েড ফোনের ব্যাটারির প্রায় ২০ শতাংশ সঞ্চয় করা সম্ভব। এর অন্যতম কারণ হলো অন্যান্য অ্যাপের মত ফেসবুক এবং ফেসবুক মেসেঞ্জার ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতেই থাকে।

মোবাইল স্ক্রিনের ব্রাইটনেস বেশি করে রাখা

একদিকে যেমন এখনকার স্মার্টফোনগুলোর স্ক্রিন অনেক বড় অন্যদিকে স্মার্টফোনগুলোতে আমাদের কাজের পরিধি ও বেড়েছে অনেক। তাই এত কাজে এত বড় স্কিনে ট্রেনের ব্রাইটনেস যদি বাড়িয়ে রাখা হয় তবে খুব সহজেই ব্যাটারি কনজিউম হয় এবং ব্যাটারির স্থায়িত্ব ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। এক্ষেত্রে সেটিংস থেকে Adaptive Brightness সেটআপ করে রাখা যেতে পারে তাহলে আলোর সংস্পর্শে আসলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাইরের আলো এবং মোবাইলের স্কিনের আলো সমন্বয় করে নিবে।

অতিরিক্ত গরম বা প্রচন্ড ঠান্ডায় ক্ষতি হয়

মানুষের শরীরের জন্য যেমন অতিরিক্ত গরম এবং প্রচন্ড ঠান্ডা ক্ষতিকর মোবাইলের জন্য ঠিক তেমনটাই। অতিরিক্ত গরম এবং অতিরিক্ত ঠান্ডা উভয় ক্ষেত্রেই অনেক সময় মোবাইলের স্ক্রিন ফেটে যেতে পারে। তাছাড়া মাদারবোর্ডের উপর যেমন চাপ পড়ে তেমনি ব্যাটারিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই সরাসরি সূর্যের নিচে মোবাইল রেখে কাজ করা উচিত নয়। আবার প্রচন্ড ঠান্ডার সময় বাইরে মোবাইলে কাজ করা উচিত নয়, এক্ষেত্রে ঘরের ভেতরে ঠান্ডার পরিমাণ কিছুটা কম থাকে।

বালিশের নিচে রাখা

রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় মোবাইল ব্যবহার না করলে যেন আমাদের ঘুমই আসেনা। ঘুমানোর পর যদি বালিশের নিচে মোবাইল থাকে তবে ব্যাকগ্রাউন্ড এ বিভিন্ন অ্যাপ চালুর কারণে মোবাইলে অনেক হিটিং ইস্যু তৈরি হয়। এর ফলে মোবাইলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ যেমন ক্ষতির সম্মুখীন হয় তেমনি ব্যাটারির ড্রেনেজ হয় এবং মোবাইলের স্থায়িত্ব ও কর্ম ক্ষমতা কমতে থাকে।

সারারাত ধরে চার্জে দেয়া

আমরা অনেকেই আছি যারা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মোবাইল চার্জে দিয়ে ঘুমাই। এতে আড়াই এতে প্রায় তিন ঘন্টা পর মোবাইলের চার্জ সম্পন্ন হওয়ার পরেও মোবাইল চার্জ হতে থাকে ফলে ব্যাটারির স্থায়িত্ব কমতে থাকে। যদিও এখন বেশকিছু উন্নত প্রযুক্তির মোবাইলে চার্জ সম্পূর্ণ হওয়ার পরে মোবাইলের সাথে কেবল এর কানেকশন থাকার পরেও চার্জ ডিসকানেক্ট হয়ে যায়। তবুও যেসব মোবাইলে এই ধরনের সুযোগ নাই অথবা সব মোবাইলের জন্য আমাদের সচেতন থাকা উচিত।

সফটওয়্যার আপডেট না করা

প্রতিনিয়ত আমাদের উচিত সফটওয়্যার হালনাগাদ করা। মোবাইলের সিস্টেম সফটওয়্যার হোক অথবা বিভিন্ন অ্যাপ হোক না কেন আমাদের সেগুলো আপডেট করা উচিত। কেননা বিশেষ কিছু সুযোগ-সুবিধা থাকে বলে কোম্পানিগুলো তাদের অ্যাপের এবং সফটওয়্যার এর আপডেট নিয়ে আসে। তাছাড়া পুরনো অ্যাপ চালালে মোবাইল অনেক সময় অনেক ধীর গতিতে কাজ করে। 

 তাই বিভিন্ন অ্যাপ এবং মোবাইলের সফটওয়্যার আপডেট করলে আমাদের মোবাইল আরও স্মুথলি রান করতে পারে। নিয়মিত সফটওয়্যার হালনাগাদ না করলে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস প্রটেকশন থেকেও বঞ্চিত হন ব্যবহারকারীরা।

ফোন চার্জে দিয়ে কথা বলা

এই ভুল কাজটি আমরা মাঝেমধ্যে প্রায় সকলেই করে থাকি। ফোনে চার্জ দেয়া অবস্থায় ফোন আসলে কথা বলি অথবা কথা বলতে বলতে চার্জ শেষ হয়ে গেলে চার্জারের সাথে সংযুক্ত করে কথা চালিয়ে যেতে থাকি। এতে মোবাইলের মাদারবোর্ড এবং সার্কিটের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পেপার পত্রিকায় মাঝে মধ্যেই মোবাইল বিস্ফোরণের খবর শোনা যায় যার কারণ মূলত এটিই। 

আরও পড়তে পারেন

ভীষণ জরুরী ফোন হলে এক মিনিটের মধ্যে কথা শেষ করে রেখে দিতে পারেন অথবা অপর প্রান্তের ব্যক্তিটিকে জানিয়ে দিতে পারেন আপনার মোবাইলে চার্জ না থাকার কথা। মোবাইল যেহেতু আপনার তাই মোবাইলের সুরক্ষা নিতে হবে আপনাকেই।

চার্জ থাকতেই পুনরায় চার্জে দেয়া

মোবাইলের ব্যাটারির কর্মক্ষমতা ধীরে ধীরে নষ্ট হওয়ার পেছনে অন্যতম আরেকটি কারণ হলো এটি। সকালে ঘুম থেকে উঠে হয়তো দেখলেন আপনার মোবাইলে ৪০% চার্জ আছে তো আপনি আবার মোবাইলটিকে চার্জে বসিয়ে দিলেন কারণ আপনাকে অফিসে যেতে হবে। 

এই যে চার্জ থাকতে আবার চার্জ দেওয়া হল এটাতেই মোবাইলের ব্যাটারির কার্যকারিতা নষ্ট হয়। এক্ষেত্রে আপনি যেটা করতে পারেন মোবাইলের চার্জারটি আপনার সাথে নিয়ে অফিসে যাবেন প্রয়োজনে চার্জ দিয়ে নিবেন।

যেকোনো চার্জার দিয়ে মোবাইলে চার্জ দেয়া

কারণে এবং অকারণে অনেকের সাথে এই সমস্যাটি হয়ে থাকে। ভ্রমনে গেছেন কোথাও অথবা আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গেছেন। আপনার ফোনের চার্জার নিয়ে যেতে ভুলে গেছেন সেখানে যার কাছে চার্জার পাবেন সেটা দিয়ে আপনার ফোনে চার্জ দিলেন। আপনার ব্যাটারি এবং সার্কিট এর সাথে সেই চার্জারের ওয়াটের কম্বিনেশন না থাকলে আপনার ব্যাটারি এবং মাদারবোর্ডের সমস্যা হবে। 
স্মার্টফোনের আয়ু কমে যে কারনে স্থায়িত্ব কমার কিছু কারন জানুন
প্রতিনিয়ত আমাদের উচিত সফটওয়্যার হালনাগাদ করা

তাছাড়া প্রতিটি মডেলের জন্য নির্দিষ্ট প্রযুক্তির কেবল বা চার্জার ফিক্সড করা হয় সেক্ষেত্রে অন্য মডেলের অন্য প্রযুক্তিতে তৈরি কেবল চার্জার দিয়ে চার্জ করলে ব্যাটারির ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি বিস্ফোরণের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।

দীর্ঘক্ষণ মোবাইলের স্ক্রিন অন থাকলে

মানুষের যেমন অনেকক্ষণ কাজ করার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন হয় মোবাইল একটি যন্ত্র হলেও তারও বিশ্রামের প্রয়োজন আছে। একটানা ৩-৪ ঘন্টা ধরে আপনি কোন কাজ করে যাচ্ছেন অথবা গেম খেলে যাচ্ছেন। এটা ঠিক নয়। 

সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই ঘন্টা পরে কাজ থেকে বিরতি নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য মোবাইলের স্ক্রিন অফ রাখুন। এরপর ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরে আবার কাজ করতে পারেন। এভাবে কাজ করলে মোবাইলের বিভিন্ন পার্টস এর স্থায়িত্ব বাড়বে।

নেটওয়ার্ক ভালো না থাকলে

সার্বক্ষণিক খারাপ নেটওয়ার্কের আওতায় থাকলে মোবাইলের কর্মক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এক্ষেত্রে মোবাইল সব সময় ভালো নেটওয়ার্ক সার্চ করে এবং ভালো নেটওয়ার্ক আনার চেষ্টা করে। নেটওয়ার্কের ভালো কাভারেজ না থাকায় মোবাইলের স্ক্রিন অফ থাকলেও মোবাইল ভেতরে সক্রিয় থেকে নেটওয়ার্ক সিগন্যাল সার্চ করতে থাকে। এক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে ব্যাটারি কনজিউম হয়।

শেষ কথা

মোবাইলের কর্মক্ষমতা বলতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বোঝায় ব্যাটারির কার্যকারীতাকে। তাই একটি মোবাইল কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলার অর্থ হচ্ছে ব্যাটারির সাথে সাথে র‍্যাম, মাদারবোর্ড, সার্কিট এগুলো কমজোরি হয়ে যাওয়া। 
এসব গুরুত্বপূর্ণ পার্টস গুলোর বিশেষ যত্ন নিলেই তবে আমাদের মোবাইল খুব ভালোভাবে আমাদেরকে সার্ভিস দেবে। উপরের যে বিষয় গুলো আলোচনা করা হলো আমরা সেগুলো খেয়াল রাখলে আমাদের মোবাইল অনেক ভালো থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

লেখাটি পড়ে সামান্যতম হলেও যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তবে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন তাছাড়া নতুন কোন বিষয়ে জানার আগ্রহ থাকলে সেটাও লিখে জানাতে পারেন এবং পরিচিতি জনদের সাথে লেখাটি শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url