স্মার্টফোন দীর্ঘদিন ভালো রাখতে চাইলে যা করবেন
স্মার্টফোনের এলার্মের মাধ্যমে সকালে ঘুম ভাঙার পর থেকে পুনরায় রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সারাদিনের বিভিন্ন কাজে স্মার্টফোন আমাদের নিত্য সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে স্মার্টফোন সারাদিন আমাদের বিভিন্ন কাজে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে তারও যত্নের প্রয়োজন। আমাদের মোবাইলের স্থায়িত্ব বাড়াতে যা করতে পারি আমরা সে বিষয়ে অনেকেরই হয়ত ধারণা নেই।
অনলাইন টেক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এবং সম্পাদক সুজান কানত্রা কি কি কাজ করলে বা কি উপায়ে আমরা আমাদের স্মার্টফোনের স্থায়িত্ব এবং কার্যকারিতা সর্বোচ্চ পেতে পারি সেই বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আমরা সেই আলোচনাটি বোঝার চেষ্টা করব। আশা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
ব্যাটারি পরিবর্তন করুন
মোবাইল ফোনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ব্যাটারি। পুরো মোবাইলকে সচল রাখতে পারে কেবলমাত্র ব্যাটারি। তাই ব্যাটারিকে সুরক্ষা করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটারি যত ভালো থাকবে আমাদের মোবাইল সার্ভিস দিবে তত ভালো। তবে মোবাইল ফোনের ব্যাটারির একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে যে পর্যন্ত ভালো সার্ভিস দিয়ে থাকে।
তার নির্দিষ্ট সে চক্র শেষ হয়ে যাওয়ার পর ব্যাটারির কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং সেটা আস্তে আস্তে ডাউন হতে থাকে। তাই মোবাইলকে ভালো রাখতে চাইলে আমাদের ব্যাটারির সচেতন থাকতে হবে এবং দুই বছর অন্তর ব্যাটারি পরিবর্তন করা ভালো।
স্ক্রিন সংরক্ষণ করুন
ব্যাটারির পরেই একটি মোবাইলের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে তার স্ক্রিন। আগের তুলনায় এখনকার স্মার্টফোনের স্ক্রিন গুলো অনেক বড় হলে এটি হাত থেকে পড়ে গেলে ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে তাই স্ক্রিনশ রাখার জন্য আমাদের উচিত স্ক্রিন প্রটেক্টর ব্যবহার করা। খেয়াল রাখতে হবে বাজারে নিম্নমানের এবং ভালো মানের বিভিন্ন রকমের স্ক্রিন প্রটেক্টর পাওয়া যায়।
আরও পড়ে দেখুন
দাম বেশি হলেও অবশ্যই ভালো স্ক্রিন প্রটেক্টর ব্যবহার করা উচিত এবং এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মোবাইলের স্ক্রিন ভেঙে যাওয়া রোধে। এছাড়াও স্ক্রিন ভেঙে যাওয়া রোধ করতে চাইলে মোবাইল কেস ব্যবহার করা জরুরী। বাজারে ট্রান্সপারেন্ট মোবাইল কাভার সহ বিভিন্ন রকমের কেস বা কাভার পাওয়া যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে কাভারগুলো মোবাইলকে সুরক্ষা দিবে বেশি সেগুলোই ব্যবহার করা উচিত দেখতে খারাপ হলেও।
যেকোনো ক্ষতি বা দুর্বলতা সারিয়ে তুলুন
মোবাইলের যেকোনো ধরনের সমস্যা বা ক্ষতি হলে যত দ্রুত সম্ভব করার ব্যবস্থা করতে হবে। হাত থেকে পড়ে বা অন্য যেকোনো কারণে আপনার মোবাইলের স্ক্রিন যদি ফেটে যায় তবে তার দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করবেন। না হলে স্ক্রিন এর সেই সূক্ষ ফাটল দিয়ে ময়লা, জলীয় বাষ্প প্রবেশ করে মোবাইলের অন্যান্য যন্ত্রাংশকে ক্ষতি করার সম্ভাবনা থাকে।
আবার ধরুন আপনার ফোন পানি প্রতিরোধী নয়, এ অবস্থায় যদি পানিতে পড়ে যায় তবে “চালের মধ্যে মোবাইল রেখে দিলে পানি শোষণ করে নেয়” এই তত্ত্ব ধরে বসে থাকলে চলবে না। কারন চাল পানি শোষণ করলেও জলীয় চাল পানি শোষণ করলেও জলীয় বাষ্প সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হয় না তাই এখানে দেরি না করে দ্রুত কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করা উচিত।
বিভিন্ন পোর্ট পরিষ্কার করুন
কিছুটা পুরনো হয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনকে নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করলে আপনাকে নতুন ফোনের একটি অনুভূতি দেবে। হাতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মোবাইলটি আপনারও ইচ্ছা হবে খুব যত্ন করে ব্যবহার করতে। ছোট যন্ত্রটির অনেকগুলো পোর্টস আছে যেগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ময়লা জমে। যেমন চার্জ দেওয়ার পোর্ট এ প্রচুর ময়লা জমতে পারে সেক্ষেত্রে আপনি টুথপিক ব্যবহার করতে পারেন। টুথপিক দিয়ে মাইক্রোফোনের ছোট্ট ছিদ্রটি পরিষ্কার করতে পারেন।
এরপর স্পিকারের গ্রিলগুলিকে পরিষ্কার করার জন্য একটি ব্রাশ নিতে পারেন। মোবাইলের কাভার বা কেসটি নিয়মিত কিছুদিন পরপর খুলে পরিষ্কার করা উচিত। এর ভেতরে প্রচুর ময়লা জমে থাকে আমরা যেহেতু ব্যাগে অথবা প্যান্টের পকেটে মোবাইল রাখি। এটি পরিষ্কার করার জন্য জল এবং ভিনেগারের মিশ্রণ এর সাথে মাইক্রো ফাইবার কাপড় ব্যবহার করতে পারেন।
স্টোরেজের দিকে খেয়াল রাখুন
আপনি যদি চান আপনার স্মার্টফোন মসৃণ ভাবে চলুক তাহলে আপনাকে নিয়মিত স্টোরেজের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অপ্রয়োজনীয় কোনো ফাইল ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করবেন না, শেয়ার-ইট এর মাধ্যমে প্রয়োজন নেই এমন কোন ডাটা বা মিডিয়া ফোনে স্টোর করবেন না।
প্রযুক্তিবিদদের মতে মোবাইলের মোট ফোন মেমোরির প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ফাঁকা রাখা জরুরী মোবাইলকে মসৃণ ভাবে পরিচালনা করার জন্য। মেমোরির পর্যাপ্ত পরিমাণ থাকা জায়গা না থাকলে স্মার্টফোন স্মুথভাবে চলবে না এবং মাঝেমধ্যে হ্যাং করবে।
বৃষ্টি সহ যে কোন পানি থেকে রক্ষা করুন
অনেক ব্যক্তি আছেন যারা তার স্মার্টফোনের ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন। বাইরে বৃষ্টি হলে তিনি নিজে ভিজে যাবেন কিন্তু তার মোবাইল ফোন যেন একটুও না ভিজে। আবার ঠিক এর বিপরীত বৈশিষ্ট্যের মানুষও রয়েছে। বৃষ্টির সময় মোবাইল ভিজলো কিনা খেয়াল করেনা, অসাবধানতা বশত পানিতে মোবাইল ফেলে দেয়।
এখনকার সব স্মার্টফোন কিন্তু পানি প্রতিরোধী নয়। পানি প্রতিরোধী ফোনের সুরক্ষার ব্যাপার আলাদা কিন্তু যেগুলো পানির প্রতিরোধী নয় সেগুলোর ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন না করলে আপনার ফোনটি হয়ে যেতে পারে পঙ্গু, এজন্য খরচ করতে হতে পারে অনেক টাকা। পানিতে ভিজে গেলে স্মার্টফোনকে সুরক্ষার একটি সহজ উপায় হলো রান্না করা হয়নি এমন চালের ভেতর কয়েক ঘন্টা মোবাইলটা রেখে দিতে হবে।
স্মার্ট ফোন থেকে সর্বোচ্চ কার্যকারিতা পেতে যত্নের বিকল্প নেই
কাপড় দিয়ে মরার পরেও যে সামান্য কিছু পানি থেকে যায় অত্যন্ত সুখ পরিমাণে তা এই চালের মধ্যে রাখতে শোষিত হয়। তবে শতভাগ নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না যে স্মার্টফোন বিপদমুক্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রের দ্রুত কাস্টমার কেয়ারে যাওয়াই উত্তম।
ব্লুটুথ এবং নেট কানেকশন কাজ শেষে বন্ধ রাখুন
বর্তমানে ইন্টারনেট কানেকশন ছাড়া আমাদের দুনিয়া অচল। ফেসবুক থেকে শুরু করে অনলাইন ব্যাংকিং পর্যন্ত সবকিছুতেই ইন্টারনেট অপরিহার্য। এই কারণে আমরা অনেক সময় প্রয়োজন শেষ হলে ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ করি না সেটিকে অন রেখেই দেই। এর ফলে মোবাইলের স্ক্রিন বন্ধ করলেও ব্যাকগ্রাউন্ডে কিন্তু বিভিন্ন ফাংশন চলমান থাকে।
দীর্ঘদিন যাবত এরকম চলতে থাকলে নেটওয়ার্কের ফ্রিকোয়েন্সির উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে এবং নেটওয়ার্ক ঠিকমতো কাজ নাও করতে পারে। তাছাড়া অন্য মোবাইল থেকে কোন ডাটা নেয়ার সময় শেয়ার-ইট অ্যাপ চালু করতে হয়। শেয়ার-ইট অ্যাপ এর জন্য ব্লুটুথ প্রয়োজন।
কাজ শেষে যদি ব্লুটুথ অফ না করা হয় তবে এই ব্লুটুথ অনবরত আশেপাশের ডিভাইস সার্চ করতে থাকে বিধায় ব্যাটারি কনজিউম করে। এতে করে ইন্টার্নালি মোবাইল কিছুটা ড্যামেজ হতে থাকে।
স্মার্টফোনকে সাবধানে রাখুন
রাগ হলে জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলা এই বদভ্যাসটি অনেক মানুষেরই রয়েছে। কিন্তু এর ছুঁড়ে ফেলা জিনিসের মধ্যে যদি স্মার্টফোন হয় তাহলে তো বিপদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকেই। কারণ স্মার্টফোন অন্যান্য জিনিসের মত অভঙ্গুর নয়, এটি খুব স্পর্শকাতর একটি যন্ত্র। আমরা অনেক সময় বিরক্ত বাইরে থেকে এসে বিরক্ত হয়ে টেবিলের উপরে ছুড়ে মারার মত করে ফোন রাখি অথবা যে কোন কারনে বিরক্ত হলে বিছানার উপরে মোবাইল ছুড়ে ফেলি।
এই বদ অভ্যাস গুলির কারণে আমাদের মোবাইল তার কার্যকারিতা হারায়। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে কিছুই হয়নি কিন্তু এই ছোট্ট যন্ত্রটির ভেতরে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পার্টস এর সংমিশ্রনে একটি মোবাইল ফোন তৈরি হয়। যদিও সে পার্টস গুলো অত্যন্ত সতর্কতার সাথে যুক্ত থাকে এক অপরের সাথে তারপরেও জোরে নিক্ষেপ করলে যে ঝাঁকুনি হয় তাতে সে পার্টসগুলো অনেক সময় নড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মন্তব্য
আমরা প্রয়োজনের পাশাপাশি শখ করেও স্মার্টফোন কিনে থাকি। আমাদের এই স্মার্টফোন যেন বেশিদিন স্থায়ী এবং টেকসই হয় এই কারণে উপরের বিষয়গুলো আলোচনা করা হলো। বেশিদিন টেকসই হওয়ার পাশাপাশি স্মার্টফোন যেন আমাদের স্মার্ট ভাবে সার্ভিস দিয়ে যেতে পারে সেজন্যই আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে। স্মার্ট ফোন থেকে সর্বোচ্চ কার্যকারিতা পেতে যত্নের বিকল্প নেই।
এতক্ষণ ধৈর্য ধরে লেখাটি পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দেখার অনুরোধ রইলো। লেখাটি ভালো লেগে থাকলে শেয়ার করতে ভুলবেন না আর নতুন কোন কিছু জানার আগ্রহ থাকলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url