অফিসে কাজের চাপের কারণ সমূহ | যারা সর্বদা কাজের চাপে থাকেন

সময়ের সাথে সাথে পৃথিবী আধুনিক হচ্ছে আর সেই সাথে তাল মিলিয়ে আমাদেরকেও আধুনিকতার সাথে উন্নতি করতে হয়। আর এ জন্য অবশ্যই আমাদেরকে চাকরি বা ব্যবসা অর্থাৎ কাজ করতে হয়। তবে কাজ করতে গিয়ে আমরা বিভিন্ন সমস্যায় পড়ি বিশেষ করে মাঝে মাঝে কাজের চাপ এত বেড়ে যায় যে আমরা বুঝতে পারি না কি করব। কাজের চাপের কারণ গুলোই আমরা অনেক সময় খুঁজতে ভুলে যাই।
অফিসে কাজের চাপের কারণ সমূহ যারা সর্বদা কাজের চাপে থাকেন

আবার কিছু কিছু ব্যক্তি থাকে যারা নিজ দোষে কর্মক্ষেত্রে তাদের কাজের চাপ বাড়িয়ে তোলে। আজকের এই লেখায় আমরা কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপের কারণ এবং তারা কাজের চাপে সর্বদা থাকে সে বিষয়ে আলোচনা করব। আশা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন।

অফিসে কাজের চাপের বিভিন্ন কারন

নির্দেশনা
প্রতিটা অফিসের প্রতিটা কাজ করার কিছু কৌশল বা স্ট্রাটেজি থাকে। বস আপনাকে কিছু কাজ দিল কিন্তু সেটা কিভাবে করতে হবে সেটা যদি না বুঝিয়ে দেয় অথবা আপনি নিজে থেকে না জেনে নেন তবে কাজগুলো করতে গিয়ে আপনি কাজের চাপ অনুভব করবেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার বসের থেকে কোন নির্দেশনা বা আপনার সিনিয়র কোন সহকর্মীর কাছ থেকে পরামর্শ নিবেন।

অবহেলা
বস আপনাকে যে কাজ দিল সেটা আপনি অবহেলা করে রেখে দিলেন আগামী কাল করবেন ভেবে। আগামীকাল বস আপনাকে আরো নতুন দুটি কাজ দিলেন। আবারও যদি অবহেলা করেন তাহলে এইভাবে আপনার প্রতিদিন কাজ জমতেই আছে। একটা নির্দিষ্ট সময়ে বস আপনার কাছ থেকে কাজের রিপোর্ট চাইবে তখন বসকে কাজ বুঝিয়ে দেয়ার সময় আপনার কাজের চাপ বাড়বে।

শারীরিক ও মানসিক অবস্থা
অফিসে কাজের চাপের সৃষ্টির জন্য শারীরিক এবং মানসিক অবস্থাও অনেক অংশে দায়ী। আপনি যদি বেশি কাজের চাপ নিতে অভ্যস্ত না হন, যদি বেশি টেনশন করতে না পারেন অর্থাৎ মানসিকভাবে দুর্বল হন সে ক্ষেত্রে আপনার অফিসে হর হামেশাই কাজের চাপে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার শারীরিকভাবে দুর্বল হলেও মানসিকভাবে অস্থির থাকবেন এবং কোন কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন না ফলে কাজ জমতে থাকবে এবং আপনি কাজের চাপে পড়বেন।

শ্রম বিমুখতা
কাজের পরিমাণ খুব বেশি নয়, কাজ শেষ করার জন্য যথেষ্ট সময় আছে, কাজের পরিবেশ ভালো, অফিসের বস যথেষ্ট সাহায্যকারী কিন্তু এত সুযোগ-সুবিধা থাকার পরেও যদি অলসতা করা হয় তখন শেষ মুহূর্তে গিয়ে কাজগুলো শেষ করার জন্য তাড়াহুড়া করতে হয় এবং কাজের চাপের সৃষ্টি হয়।

পরিকল্পনা
কর্মক্ষেত্রে আপনার কাজের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী। আপনি কাজগুলো কখন করবেন, কিভাবে করবেন, গুরুত্ব অনুযায়ী কোনটি আগে করবেন কোন কাজটি পরে করবেন এই ধরনের কোন পরিকল্পনা যদি না থাকে এবং অগোছালোভাবে কাজ করতে থাকেন তাহলে দিনশেষে আপনি কাজের চাপের মধ্যে পড়বেন নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

কাজের পরিমাণ
অফিসে কাজের চাপের অন্যতম কারণ হচ্ছে কাজের পরিমাণ বেশি হওয়া। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যদি অতিরিক্ত কাজ দেয়া হয় তখন কাজের চাপ বেড়ে যায়। আর অল্প সময়ের মধ্যে কাজের পরিমাণ বাড়লে কাজের মান খারাপ হয়ে যায়। আবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি আপনি কাজটি সম্পূর্ণ করতে না পারেন তাহলেও কাজের চাপ বেড়ে যাবে।

বসের অসদাচরণ
বস যদি আপনার কাজের অনুকূলে না হয় সে ক্ষেত্রে কাজের চাপে পড়বেন। ধরুন বস আপনাকে একটি প্রজেক্ট দিল সেটি শেষ না হতেই আরেকটি কাজের নির্দেশ দিল এবং দুটি প্রজেক্টই আপনাকে একদিনের মধ্যেই বসকে জমা দিতে হবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কাজের মান যেমন খারাপ হয় তেমনি মানসিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়।

কাজের পরিবেশ
কাজের পরিবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অফিসে আপনার সহকর্মীরা সকলেই খুবই উদ্যমী, কর্মঠ। তাদের কাজের গতি দেখে আপনিও আপনার কাজে উৎসাহ পাবেন ফলে কাজে যাবে পরিবর্তে আনন্দের সাথে কাজগুলো সেরে ফেলতে পারবেন। 

কিন্তু আপনার সহকর্মীরা বেশিরভাগই যদি হয় ফাঁকিবাজ ধরণের যারা নিজেদের কাজ ফেলে রেখে গল্পগুজবে মেতে থাকে সে ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে থেকে আপনার মনোযোগের সহিত কাজ সম্পূর্ণ করা বেশ কঠিন হবে। ফলে সহজেই মানসিক এবং কাজের চাপ বাড়বে।

যারা সর্বদা কাজের চাপে থাকেন

উশৃংখল
জীবন এবং সংসারের মতো আপনার কাজের জায়গাটিতেও শৃংখলের বিশেষ প্রয়োজন। যাদের কাজের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা নেই, কাজের গুরুত্বের প্রতি মনোযোগী নয়, প্রতিষ্ঠানের প্রতি উদাসীন এই ধরনের উশৃংখল ব্যক্তিরা কখনো চাপমুক্তভাবে কাজ করতে পারে না।
অফিসে কাজের চাপের কারণ সমূহ যারা সর্বদা কাজের চাপে থাকেন


প্রতিযোগী
ধরুন আপনাকে এবং আপনার এক সহকর্মীকে দুটি করে প্রজেক্ট দেওয়া হয়েছে। আপনি মনে করলেন আপনার সহকর্মীর আগেই আপনি দুটি প্রোজেক্ট তৈরি করে বসকে জমা দিবেন। খুব দ্রুত কাজ করতে গিয়ে অনেক ভুল ধরা পরল আপনার প্রজেক্টে এবং পরবর্তীতে আপনাকে পুনরায় প্রজেক্টটি আবার করতে হলো। এই ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় যারা নিজেকে লিপ্ত করে তারা সর্বদাই মানসিক চাপের মধ্যে থাকে।

অতি আত্মবিশ্বাসী
আত্মবিশ্বাসী হওয়া জরুরী তবে অতি আত্মবিশ্বাসী হলে বিপদ। আমি কাজটি অবশ্যই পারব এবং আমি সময়ের মধ্যে কাজটি করতে পারব - এটি আপনার আত্মবিশ্বাস। আবার এটা কোন কাজ হল? এই কাজ তো আমি এক নিমেষেই করে ফেলব। এই কাজ যখন তখনই করা যায় - এটি আপনার অতি আত্মবিশ্বাস। এই অতি আত্মবিশ্বাসের কারণে শেষ পর্যন্ত হয়তো কাজটি আপনি শেষ করতে পারবেন না।

সহজ-সরল
সহজ সরল মানুষকে সকলে পছন্দ করে কিন্তু কর্মক্ষেত্রে সহজ সরল মানুষের বিপদের সীমা থাকে না। তারা নিজেদের মতো পৃথিবীর সবাইকেই সহজ সরল মনে করে। তাই কোন সহকর্মী এসে যদি অনুরোধ করে তার কাজটি করে দিতে বলে এ ধরনের সরল ব্যক্তিরা কখনো “না” বলতে পারে না। বিশেষ অনুরোধে ঢেঁকি গিলে একদম ফেঁসে যায়। তখন না পারে কাজ ছেড়ে দিতে, না পারে সময়ের মধ্যে কাজটি করতে। কাজের চাপ তার পিছু পিছু ঘুরে বেড়ায়।

অতি পরিপাটি
এই দলের সদস্যরা অলস এবং উশৃংখল ব্যক্তিদের ঠিক বিপরীত। অলস এবং উশৃংখল ব্যক্তিরা যেমন কাজের প্রতি একদমই উদাসীন ঠিক তার বিপরীতে অতি পরিপাটি কিছু ব্যক্তি রয়েছেন যারা তাদের কাজের ব্যাপারে অতিমাত্রায় খুঁতখুঁতে। এই ধরনের ব্যক্তিরা নিজেদের কাজের প্রতি এতটাই সদয় যে নিজেদের কাছেই নিজেদের কাজ মাঝেমধ্যে পছন্দ হয় না। 
 

আরও পড়তে পারেন


এদের সবসময় লক্ষ্য থাকে এই কাজটি আরো কিভাবে ভালো করা যায়। ফলে সবসময় যে নিজেই কাজের চাপের মধ্যে থাকেন শুধু তাই নয় এ ধরনের ব্যক্তির অধীনে যে সহকর্মীরা কাজ করেন তারাও সর্বদাই কাজের চাপের মধ্যেই থাকে।

সুযোগ সন্ধানী
অলস এবং উৎশৃংখল ব্যক্তিদের সাথে সুযোগ সন্ধানী ব্যক্তিদের বিশেষ মিল রয়েছে। এ ধরনের ব্যক্তিরাও সব সময় নিজের কাজে ফাঁকি দেয় এবং চেষ্টা করে অন্যদের দিয়ে নিজের কাজটা করিয়ে নেয়ার। এরা নিজের কাজটা অন্যকে দিয়ে করিয়ে নেবার জন্য যে শ্রম এবং চেষ্টা করে সেটা নিজের কাজে লাগালে তারা বেশি সফল হতে পারত। দিনশেষে কোন সুযোগ না পেয়ে যখন নিজেকে কাজটি করতে হয় তখন তারা চাপের মধ্যেই পড়ে।

অলস
অলস ব্যক্তিদের বিশেষ সমস্যা হল তারা তাদের কৃত কর্মফল থেকে কখনো শিক্ষা গ্রহণ করেন না। তারা কাজের সময় বরাবরই অলসতা করে, কাজ ফেলে রেখে পরে করব এই বলে কাজের প্রতি উদাসীনতা দেখায় এবং শেষ মুহূর্তে কাজটি শেষ করার জন্য তাড়াহুড়া করার ফলে অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ প্রতিষ্ঠান প্রধান এর কাছে সাবমিট করেন। এ ধরনের ব্যক্তিদের কাজের চাপে না পড়ে কি কোন উপায় আছে?

শেষ কথা

আমরা বেশিরভাগ মানুষই জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে আমাদের চাকরি করতে হয়। অফিসে বা কর্মক্ষেত্রে পরিবেশ নষ্ট করা আমাদের কারোরই কাম্য নয়। কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপ কে মোকাবেলা করে কাজ করার মানসিকতা আমাদের প্রত্যেকেরই থাকা উচিত। দেশের এমন কোন সরকারি বেসরকারি চাকরি ব্যবস্থা নেই যেখানে কাজের চাপ নেই। উপরে বেশ কয়েকটি কাজে চাপের কারণ উল্লেখ করা হলো আশা করি আমরা এই পরিস্থিতি গুলো সামলাতে সক্ষম হব। 

আর যাদের কারণে কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপের সৃষ্টি হয় শুধু তারা যে বিপদে পড়ে তাই নয় তাদের সহকর্মীরাও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই আমরা নিজেরা সচেতন থাকবো নিজেদের কাজের চাপ কমাবো এবং অন্যদেরও কাজের পরিবেশ ভালো রাখবো।
এতক্ষণ ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আর ভালো লেগে থাকলে পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করবেন। কোন কিছু জানার আগ্রহ থাকলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url