প্রতিদিন বই পড়ার উপকারিতা | যা জানলে বইয়ের প্রতি আগ্রহী হবেন

সভ্যতার শুরু থেকে জ্ঞান অর্জন এবং বিনোদনের অন্যতম সেরা মাধ্যম ছিল বই। তবে প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বইয়ের সাথে আমাদের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। কিন্তু এমন এক সময় ছিল যখন এই বইয়ের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করে মানুষ গোটা বিশ্ব জয় করেছে। আজ আমরা ভুলে যেতে বসেছি প্রতিদিন বই পড়ার উপকারিতা।
প্রতিদিন বই পড়ার উপকারিতা যা জানলে বইয়ের প্রতি আগ্রহী হবেন

আজকের এই লেখায় আমরা আলোচনা করব প্রতিদিন বই পড়ার উপকারিতা বিষয়ে এবং বিষয়গুলো জানলে আপনিও হয়ত বই পড়ার প্রতি আকৃষ্ট হবেন। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই প্রতিদিন বই পড়ার উপকারিতা গুলো।

প্রতিদিন বই পড়ার উপকারিতা

পৃথিবীর সব জিনিসেরই ভালো এবং খারাপ দিক রয়েছে। কিন্তু বই এমন এক জিনিস যার কোন খারাপ দিক নেই শুধুই ভালো দিক রয়েছে। খুব সাধারণভাবে বলতে পারি বই পড়ে মানুষ যেমন জ্ঞান অর্জন করে ঠিক তেমনি মানসিক প্রশান্তি লাভ করে। তাছাড়া বই কিনে কেউ কখনো দেউলিয়া হয় না। তাই এই নিরীহ বন্ধুটি আমাদের কত উপকার করে থাকে তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। প্রিয় পাঠক আপনাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলে প্রতিদিন বই পড়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। তো চলুন জেনে নেয়া যাক।  

মানসিক অবসাদ দূর করার হাতিয়ার

কর্মব্যস্তময় এই যান্ত্রিক সমাজে আমাদের নানা কারণেই মাঝে মধ্যেই মানসিক অবসাদের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। মানসিক চাপ কমানোর জন্য কেউ ব্যায়াম করেন, কেউ মুভি দেখেন কেউবা বাইরে ঘুরতে যান। তবে সবচাইতে আরামদায়ক এবং সহজলভ্য কাজ হল বই পড়া। বই পড়ার মাধ্যমে আপনি আপনার বিষন্ন মনকে নিমিষেই আনন্দে রূপান্তরিত করতে পারেন। 
বই পড়ার মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন কল্পরাজ্যে বিচরণ করতে পারেন, পৃথিবীর যেকোনো দেশে ভ্রমণ করতে পারেন, অনেক জ্ঞান অর্জন করতে পারেন, নতুন কিছু আবিষ্কার করতে পারেন। আর এজন্যই শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন “বই পড়াকে যথেষ্ট হিসেবে যে সঙ্গী করে নিতে পারে তার জীবনের সকল দুঃখ কষ্টের বোঝা অনেক কমে যায়।”

স্মরণশক্তি বৃদ্ধি

যেকোনো বই স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। ব্যাপারটি বুঝিয়ে বলি। মনে করেন আপনি একটি গল্পের বই পড়ছেন। সে গল্পে প্রায় ১০ থেকে ১২ টি চরিত্র রয়েছে তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা কর্মকান্ড রয়েছে তাদের বিভিন্ন ইতিহাস এবং পটভূমি রয়েছে। এত কিছু আপনাকে কিন্তু পড়ে মনে রাখতে হচ্ছে। 
না হলে আপনি একটি ঘটনার সাথে আরেকটি ঘটনার যোগসূত্র মিলাতে পারবেন না। ফলে আপনার মস্তিষ্কে অনবরত নতুন নতুন তথ্য আসছে এবং আপনি সেই তথ্যগুলোকে সংরক্ষণ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এর ফলে আপনার মস্তিষ্কে আপনার স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চিন্তা শক্তি বৃদ্ধি

বই পড়ার সময় একজন পাঠক চোখ দিয়ে বইয়ের লেখাগুলো পড়ে কিন্তু মানসিকভাবে মস্তিষ্কের মাধ্যমে সে কল্পনার রাজ্যে বিরাজ করে। সে যত বেশি পড়তে থাকবে সে তত বেশি কল্পনার রাজ্যে চিন্তাশীল হয়ে পড়বে। লেখক এর অভিজ্ঞ লব্ধ জ্ঞানের সাথে পাঠকের আবিষ্কৃত নতুন নতুন কল্পনা একীভূত হয়ে এক নতুন সমাধান দেয়ার চেষ্টা করে বই। 

বই পড়ার মাধ্যমে মানুষ চিন্তা করতে শিখে, মানুষ ভাবতে শিখে, মানুষ বুঝতে পারে কল্পনার রাজ্যে সবকিছুই সম্ভব, নতুন নতুন আবিষ্কারের নেশায় পেয়ে বসে। এভাবে পাঠকের কল্পনা শক্তি এবং চিন্তাশক্তি বাড়িয়ে তোলে বই।

শব্দের উপর প্রভাব বিস্তার

যেকোনো উপস্থিত বক্তৃতা অথবা লেখালেখির জন্য আপনি যদি আপনার শব্দভাণ্ডারকে সমৃদ্ধশালী করতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই প্রচুর বই পড়তে হবে। আপনি শব্দ চয়ন, শব্দের সঠিক প্রয়োগ, সঠিকভাবে সেই শব্দগুলোকে বাক্যে প্রয়োগ সহ বিভিন্ন দক্ষতা অর্জন করতে পারেন বই পড়ার মাধ্যমে। নিয়মিত বিভিন্ন ক্যাটাগরির বই পড়বেন তাহলে আপনার শব্দ ভাণ্ডারে বিভিন্ন ক্যাটাগরির নতুন নতুন শব্দ যুক্ত হবে।

লেখনি শক্তি বৃদ্ধি

আপনি আপনার একাডেমিক পড়াশোনার ক্ষেত্রে কিছু লিখেন অথবা কোন বই লেখার ক্ষেত্রে লিখেন অথবা যে কোন আর্টিকেল লেখার ক্ষেত্রে লেখেন না কেন লেখা একটি আর্ট। আর এমনি এমনি এ আর্ট কারো রপ্ত হয় না। আপনি যত বেশি বই পড়বেন তত বেশি আপনি ভাষা সম্পর্কে সমৃদ্ধ হবেন, আপনার জ্ঞান বাড়বে আর তখনই আপনি সুন্দরভাবে আপনার মনের ভাবটি লিখার মাধ্যমে উপস্থাপন করতে পারবেন। বেঞ্জামিন ডিজরেইলি বলেছেন, “কোন বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত হতে চাইলে তা নিয়ে বই লেখা শুরু করাই ভালো।”

বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান বৃদ্ধি

একজন লেখক তার বইয়ে নিজের অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞান থেকে লিখে থাকেন অথবা তার জানা কোন তথ্য-উপাত্তর সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বই লিখে থাকেন। আর সেই বইটি পড়ে পাঠক সে জ্ঞানগুলো অর্জন করেন। আমরা অনেকেই হয়তো বলি বর্তমানে ডিজিটাল যুগে গুগোল রয়েছে আমাদের জ্ঞানের ভান্ডার। তা ঠিক আছে এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। 
তবে নির্দিষ্ট জ্ঞান অর্জনের জন্য আমাদের গুগলের কাছে যেতে হবে কিন্তু বই পড়তে পড়তে এমন কোন তথ্য আমরা পেয়ে যেতে পারি যেটা আমাদের জানার প্রয়োজন নাই তবে ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে। 

যেমন ধরেন বাসার ভেতরে গোলমরিচের গুঁড়ো ছিটিয়ে রাখলে ইঁদুর আসে না এই তথ্যটি আপনাকে জানতে হলে গুগলে ইচ্ছাকৃতভাবে সার্চ করতে হবে কিন্তু বইয়ের মধ্যে পরিস্থিতি অনুযায়ী এই তথ্যটি দেয়া থাকলে আপনি কিন্তু এমনিতেই জেনে গেলেন। জেমস রাসেল এর মতে, “বই হল এমন এক মৌমাছি যা অন্যদের সুন্দর মন থেকে মধু সংগ্রহ করে পাঠকের জন্য নিয়ে আসে।”
প্রতিদিন বই পড়ার উপকারিতা যা জানলে বইয়ের প্রতি আগ্রহী হবেন

বিনোদন

একটা সময় ছিল বিশেষ করে আমাদের দাদা নানাদের আমলে বিদ্যুৎ ছিল না বিধায় এখনকার মত কোন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশ ছিল না বিনোদনের জন্য। ফলে সেই সময়ে বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিল বই পড়া। বই পড়ার মাধ্যমে যে বিনোদন যে আনন্দ পেত তারা তা ছিল ১০০ ভাগ বিশুদ্ধ বিনোদন।
বর্তমান সময়েও যারা বই পড়ার আনন্দ একবার পেয়েছেন তারা এই ডিজিটাল যুগে শত সস্তা বিনোদনের ভিড়েও নিয়মিত বই পড়েন। আপনি বিনোদনের জন্য একটি মুভি দেখলে তাতে ভালোর পাশাপাশি অনেক খারাপ কিছু দেখতে পাবেন এবং তাতে শিক্ষনীয় কিছু নাও থাকতে পারে। 

কিন্তু আপনি জেনে শুনে একটা ভালো বই যদি পড়েন তা থেকে খারাপের কিছুই নাই বরং অনেক কিছু শিখতে পারবেন। ভিনসেন্ট স্টারেট বলেছেন, “আমরা যখন বই সংগ্রহ করি, তখন আমরা আনন্দকেই সংগ্রহ করি।”

সাহিত্য জ্ঞান বাড়ে

যারা নিয়মিত বই পড়ে তাদের সাহিত্য সংস্কৃতিতে অন্যদের তুলনায় জ্ঞান বেশি থাকে। সাহিত্য সংস্কৃতি পড়তে গিয়ে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, বিভিন্ন শিল্পী সম্পর্কে জেনে থাকি। বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব থেকে তাদের ভালো গুণগুলোকে নিয়ে আমরা আমাদের জীবনটা সেই ভাবে পরিচালিত করতে পারি। 

এর ফলে আমাদের ব্যক্তিত্ব যেমন উন্নত হয় তেমনি পরিবার এবং সমাজেরও উন্নতি সাধন হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, “বই হচ্ছে অতীত আর বর্তমানের মধ্যে বেঁধে দেয়া সাঁকো।”

ভাষা জ্ঞান বাড়ে

ভাষার দক্ষতা অর্জনেও বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম। ধরুন ইংরেজি ভাষার কথাই বলি। আমরা ইংরেজি গ্রামার মোটামুটি শিখি। কিন্তু আমরা যদি নিয়মিত ইংরেজিতে লিখা বিভিন্ন বই পড়ি তবে ইংরেজি ভাষাটা আমাদের কাছে আরও সহজ হয়ে যাবে। 
প্রত্যেকটি ভাষার নিজস্ব কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকে যা সেই ভাষার ব্যাকরণ বা গ্রামার পড়েও পরিপূর্ণ ভাবে সেই বৈশিষ্ট্য গুলোকে আয়ত্ত করা যায় না। এর জন্য প্রয়োজন সেই ভাষায় লিখিত বই বেশি বেশি করে পড়া। তাই যে কোন ভাষা আয়ত্ত করতে এবং সেই ভাষার জ্ঞান বাড়াতে বই পড়ার বিকল্প নেই।

মানসিক শান্তি

আমাদের মনের শান্তির অন্যতম খোরাক হচ্ছে বই যারা কখনোই বই হাতে নেয়নি তারা এই কথার যথার্থতা খুঁজে পাবে না। মানুষ বই পড়ে মনের আনন্দের জন্য ভেতরে চাহিদা থেকে। ধন-সম্পদ গাড়ি বাড়ি করার জন্য কেউ বই পড়ে না। 

কোন কারনে আপনার মন বিষন্ন হয়ে থাকলে একটি মনোরম পরিবেশে আপনার প্রিয় একটি বই হাতে নিয়ে মৃদু বাতাসে পড়তে শুরু করুন দেখবেন আপনি এক অজানা আনন্দের ভুবনে চলে গেছেন এবং আপনার মনের অশান্তি দূর হয়ে শান্তি কখন চলে এসেছে আপনি টের পাবেন না। এজন্যই বিখ্যাত সাহিত্যিক ফ্রান্স কাফকা বলেছেন “আমাদের আত্মার মাঝে যে বিশাল জমাট বাধা সমুদ্র রয়েছে সেই সমুদ্রের বরফ ভাঙ্গার একমাত্র অস্ত্র হল বই।”

মস্তিষ্কের উর্বরতা বৃদ্ধি

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে মানুষের মস্তিষ্ক যত সচল এবং কার্যকরী থাকবে সে মস্তিষ্ক ততই উর্বর হবে। একমাত্র ঘুমের সময় মানুষের মস্তিষ্ক স্থির থাকে। আবার সারাদিন যতক্ষণ আমরা জেগে থাকি ততক্ষণ আমাদের মস্তিষ্ক সচল থাকে। তবে বই পড়ার সময় আমাদের মস্তিষ্ক খুব বেশি পরিমাণে সচল থাকে। কারণ বই পড়তে পড়তে আপনি কখনো আনন্দিত হচ্ছেন, কখনো বিরক্ত হচ্ছেন, আবার কখনো আতঙ্কিত হচ্ছেন। 
বিভিন্ন অনুভূতির সংমিশ্রণের কেন্দ্রস্থল হচ্ছে আমাদের মস্তিষ্ক। কাজেই আপনি যতটুকু সময় পড়ছেন একই সাথে আপনার মস্তিষ্ক সচল থাকছে। মস্তিষ্কের সমস্ত কোষগুলো উদ্দীপিত অবস্থায় থাকে এবং অনবরত উজ্জীবিত হতে থাকে। এভাবে মস্তিষ্কের উর্বরতা এবং কার্যক্ষমতা বাড়তে থাকে। জনাথন সুইফট এর মতে, “বই হল মস্তিষ্কের সন্তান।”

ঘুমাতে সাহায্য করে

আমরা যখন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ছিলাম তখন একটা জিনিস লক্ষ্য করে দেখতাম একাডেমিক পড়ার বই পড়তে বসলে আমাদের ঘুম চলে আসতো বিশেষ করে রাতের বেলায়। সেই সময়ে এমন হওয়ার কারণ হলো অলসতা অথবা পড়ায় ফাঁকিবাজি করা। কিন্তু আপনি প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় মনের খোরাক থেকে যখন বই পড়বেন তখন কিন্তু আপনার সেই কারণগুলো এসে দাঁড়াবে না। 

এই সময় যেটা হয় আপনি যখনই পড়া শুরু করবেন তখন আপনার মনটা শান্ত হয়ে যাবে। আপনি পড়ার প্রতি এত গভীরভাবে মনোনিবেশ করবেন যে শান্তিতে আপনার ঘুম চলে আসবে। স্পিনোজা বলেছেন, “ভাল খাদ্যবস্তু পেট ভরে কিন্তু ভালো বই মানুষের আত্মাকে পরিতৃপ্ত করে”

পড়ার দক্ষতা বৃদ্ধি হয়

সুন্দর করে গুছিয়ে লিখার মত সুন্দর করে সঠিক উচ্চারণে পড়তে পারাও একটি দক্ষতা, একটি শিল্প। এই শিল্পের উন্নয়নে পড়ার বিকল্প কিছুই নেই। আপনি অনেক জ্ঞানী, ভাষা সম্পর্কে আপনার অনেক জ্ঞান রয়েছে কিন্তু আপনি সুন্দর করে পড়তে পারেন না। তাহলে আপনি পুরোপুরি সফল হতে পারলেন না। তাই এই পঠন দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বেশি বেশি বই পড়ুন।

মনোযোগের চর্চা

যাদের নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস রয়েছে তারা যেকোনো কাজে খুব মনোযোগী হয় অন্যদের তুলনায়। বই পড়তে অনেক মনোযোগের প্রয়োজন হয়। আপনি মনোযোগের সহিত বই না পড়লে সারাদিন পড়ে গেলেও সে বইয়ের গল্পে কি লিখা আছে কিছুই বুঝে উঠতে পারবেন না। এভাবেই প্রতিদিন বই পড়ার অভ্যাস আপনার যে কোন কাজে মনোযোগী হওয়ার চর্চা অব্যাহত রাখে।
প্রতিদিন বই পড়ার উপকারিতা যা জানলে বইয়ের প্রতি আগ্রহী হবেন

বাচনভঙ্গি সমৃদ্ধ করে

বাচনভঙ্গি বলতে একজন মানুষ অন্যের সাথে কিভাবে কথা বলে সেটা বোঝায়। যারা নিয়মিত বই পড়েন তাদের বাচনভঙ্গি অন্যদের থেকে একটু আলাদা হয় শুধু তাই নয় তাদের শব্দ চয়ন পদ্ধতি, তাদের কথা বলার ধরন এবং প্রকাশ করার যে ধরন তা অন্যদের থেকে আলাদা সেটি সহজেই বোঝা যায়। 
এছাড়াও যারা নিয়মিত বই পড়ে তাদের অন্যদের সাথে যোগাযোগ দক্ষতা অনেক বেশি থাকে এবং সহজে অন্যদের সাথে মিশতে পারে। দেকার্ত বলেছেন “ভালো বই পড়া মানে গত শতাব্দীর মানুষদের সঙ্গে বর্তমানে কথা বলা।” যারা বই পড়ে না তারা পারিপার্শ্বিক অনেক বিষয়ে সচেতন থাকতে পারে না।

কোন পরিস্থিতিতে এবং কোন পরিবেশে কিভাবে কথা বলতে হয় এবং কি কথা বলতে হয় তারা অনেকেই সেটা জানতে পারে না। জ্ঞানের পরিধি বিস্তার করার সাথে সাথে বই আমাদের নিজেদেরকে জানতেও অনেক সাহায্য করে, নিজেদেরকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলে। নিয়মিত বই পড়া মানুষগুলো যে কোন সভা সেমিনারে সুন্দর বাচনভঙ্গির মাধ্যমে বক্তৃতা দিতে পারে যা দর্শকদের আকৃষ্ট করে।

অভিজ্ঞতা অর্জন

খুব সহজে আমরা বুঝতে পারি যে বই পড়ে আমরা বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি। একজন লেখক তার নিজের অভিজ্ঞতা অথবা তার জানা বিভিন্ন জ্ঞান থেকেই একটি বই লিখেন। সুতরাং সে বই এর অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান থেকে আমাদের অভিজ্ঞতা অর্জন হয়। 

আমরা এখান থেকে বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা শিখি বিভিন্ন প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়, বিভিন্ন সমস্যার মোকাবেলা করার উপায়, বিভিন্ন রহস্য উদঘাটন করার উপায়, নতুন কিছু আবিষ্কার করার অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকি। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এমন কিছু বই আছে যেগুলোতে লেখকের নিজের বা অন্য কারো জীবনী লেখা থাকে। 

এই বইগুলো থেকে আমরা ভালো মন্দের পার্থক্য বোঝার, জীবনের সফলতার উপায় এবং কি কি ভুল করলে জীবনে ব্যর্থতা বরণ করতে হয় সে অভিজ্ঞতা গুলো অর্জন করতে পারি।

শেষ কথা

ছোটবেলা থেকে একটা কথা শুনে আমরা বড় হয়েছি, “বই আমাদের পরম বন্ধু। আমাদের পরিবারের, সমাজের যে কেউ আমাদেরকে প্রতারণা করতে পারে কিন্তু একটি বই আমাদেরকে কখনো ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে না।” প্রযুক্তি ছাড়া আমাদের জীবন অসম্পূর্ণ এটা সত্য কিন্তু তাই বলে বইকে দূরে সরিয়ে আমাদের জীবন পরিচালনা করতে চাই না। 
আমরা সবাই যেন আমাদের এই পরম বন্ধুর সাথে পুনরায় বন্ধুত্ব স্থাপন করতে পারি। বই হোক আমাদের নিত্য সঙ্গী। টুপার বলেছেন, “একটি ভালো বই হল বর্তমান ও চিরকালের জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট বন্ধু।”

যাই হোক প্রতিদিন বই পড়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানলেন। লেখাটি পড়ে বই পড়ার প্রতি আগ্রহী হলে আমার এ লেখাটি সার্থক হবে। যাইহোক লেখায় ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আর কোন মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url