কাজের চাপ কমানোর উপায় | অফিসে কাজের চাপ সামলাতে যা করবেন
মানুষ সামাজিক জীব। সামাজিকভাবে মানুষকে বসবাস করতে হয় বিধায় বিভিন্ন চাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় পারিবারিক চাপ, সামাজিক চাপ, অর্থনৈতিক চাপ, মানসিক চাপ ইত্যাদি। তবে কর্ম ক্ষেত্রে মানসিক চাপের কারণেই কাজের চাপের সৃষ্টি হয়। আর কাজের চাপ সামলাতে না পারলে আমাদের জীবনটা দুর্বিসহ হয়ে ওঠে। কারণ জীবিকার তাগিদে আমাদেরকে কাজ করতে হয়।
আজকের এই লেখায় আমরা জানবো কাজের চাপ সামলানোর কিছু সহজ সমাধান। এই বিষয়গুলো খেয়াল করলেই যে আমাদের কর্ম ক্ষেত্রে কাজের চাপ হবে না এমনটি নয়, এর বাইরেও বেশ কিছু বিষয় থাকবে যেটা আমাদের নিজেদেরকে খুঁজে বের করে সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে।
কাজের গুরুত্ব বুঝে প্রাধান্য দেওয়া
কাজের চাপ কমাতে হলে আপনাকে আগে কাজের গুরুত্ব বুঝতে হবে। কোন কাজের গুরুত্ব বেশি সেটি নিরূপণ করতে পারলে কাজের চাপ কমে যায়। ছোট কাজে সাধারণত সময় কম লাগে আর বড় কাজে সময় বেশি লাগে।
আরও পড়ুন
আপনি যদি মনে করেন ছোট কাজগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু সময় কম লাগবে বিধায় আগে করবেন তাহলে অনেকগুলো ছোট কাজ একসাথে করতে গিয়ে আপনি হয়তো ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। এরপরে বড় কাজটি করতে গিয়ে আপনি কাজের চাপ অনুভব করবেন। তাই কোন কাজটি আগে করলে আপনি মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকবেন সেটা আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে।
অস্থিরতা কমান
কাজের চাপের অন্যতম কারণ হলো মানসিক চাপ আর মানসিক চাপের অন্যতম উপাদান হচ্ছে অস্থিরতা। তাই অস্থিরতা কমান কাজের চাপ কমে যাবে। “ইস এত কাজের চাপ আর পারছি না” এই ধরনের মানসিকতা আপনাকে আরো কাজের চাপের অনুভূতি দেবে।
মনকে প্রফুল্ল রাখতে প্রয়োজনে আপনি দশ মিনিট বিরতি নিতে পারেন, ক্যান্টিনে গিয়ে হয়তো এক কাপ চা খেলেন। কাজের চাপ সবসময় থাকবে এটা মানসিকভাবে মেনে নিয়ে শান্ত থেকেই কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
সুশৃংখল জীবন যাপন করুন
অনেকেই আছেন বিশৃংখল জীবন যাপন করেন। যেমন সকালের, দুপুরের এবং রাতের খাবারের ঠিক নেই, ঘুমাতে যাচ্ছেন গভীর রাতে সকালে ঘুম থেকে উঠছেন সকাল আটটায়। এরকম বিশৃঙ্খল জীবন যাপনে আপনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে থাকবেন এবং অফিসের কাজকে আপনার অতিরিক্ত কাজের চাপ মনে হবে। তাই এ ধরনের বদ অভ্যাস ত্যাগ করে রুটিন মেনে সময় মত সব কাজ করুন, মানসিকভাবে সুস্থ থাকলে কাজে চাপ অনুভূত হবে না।
মানসিক চাপের কারণ খুঁজুন
অফিসে মানসিক চাপের অন্যতম কারণ হচ্ছে কাজের চাপ। কাজের চাপ বেড়ে গেলে সবার প্রথমে আপনার খোঁজা উচিত এর পেছনে কারণ কি কি? আপনি অলসতা করছেন কিনা অথবা আপনার কাজের বাইরে আরও কোন কাজ করতে হচ্ছে কিনা, আপনার কোন কলিগের অসহযোগিতায় কাজের চাপ বাড়ছে কিনা ইত্যাদি বিষয়গুলো আপনাকে নজর দিতে হবে।
চাকরি যেহেতু আপনি করবেন এবং মাস শেষে বেতনটাও আপনি নিবেন তাই এসব সমস্যার সমাধান আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে। এসব সমস্যার সমাধানে বিশ্বস্ত সহকর্মী ছাড়া কারো সাহায্য না নেয়াই ভালো।
নিজেকে সময় দিন
অফিসের কাজের চাপে যদি খুব স্ট্রেস ফিল করেন তাহলে অফিস থেকে ২-৩ দিনের ছুটি নিয়ে একা অথবা বন্ধু-বান্ধবের সাথে ভাল কোন জায়গায় ঘুরে আসতে পারেন। অবশ্যই সেটা নিজের শহরে নয়, আপনার শহর থেকে দূরে কোন পর্যটন স্থানে ঘুরে আসতে পারেন। এতে মনটা যেমন সতেজ হবে ফিরে এসে অফিসের কাজেও মনোনিবেশ করতে পারবেন।
“না” বলতে শিখুন
উদ্যমে এবং কর্মঠ ব্যক্তিদের না বলতে পারাটা একটা কঠিন কাজ কিন্তু কর্মক্ষেত্রে আপনাকে কাজের চাপমুক্ত থাকতে হলে “না” বলা শিখতে হবে। যে কাজটি আপনার নয় সে কাজটি আপনি করবেন কেন? অনেকেই আপনার সরলতার সুযোগ নিয়ে আপনাকে বিভিন্নভাবে অনুনয় বিনয় করে কাজটি করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করবে। আপনি যদি তখন “না” বলতে না পারেন তবে আপনার নিজের কাজের চাপের সাথে বাড়তি একটা চাপ যুক্ত হবে।
সবকিছু গুছিয়ে রাখতে চেষ্টা করুন
সাজানো গোছানো পরিপাটি যেকোনো জিনিসই যেকোন মানুষকে আকৃষ্ট করে, মনকে ভালো করে দেয়। আপনার নিজের বাসার মতো আপনার কর্মক্ষেত্রের জায়গাটি ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে গুছিয়ে রাখতে চেষ্টা করুন। আপনার টেবিলের উপরে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন ফাইল, কলম, কম্পিউটার, মাউস, কিবোর্ড সহ অন্যান্য সরঞ্জাম গুছিয়ে রাখুন। প্রয়োজনের সময় দরকারি জিনিসপত্র হাতের কাছে না পেলে সেটা ক্ষণিকের জন্য হলেও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে।
সময়ের কাজ সময়ে করুন
আপনার হাতে যখন যে প্রজেক্ট আসবে তখন সেটি সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করুন। হয়তো সহজ কাজ দেখে ভাবছেন পরে করবেন কিন্তু কোন কারণে যদি করা না হয় সেটা আপনার প্রতিদিনের কাজের তালিকায় যোগ হবে। ফলে কাজের চাপ বাড়বে।
মন ভালো রাখতে শখের কাজগুলো করুন
মন ভালো রাখতে এটা অত্যন্ত একটি কার্যকরী পদক্ষেপ কাজের চাপ যখন বাড়বে নিজের মনকে শান্ত করতে আপনার শখের যে কোন কাজ করতে পারেন। অফিসে রাখা টবে গাছগুলির পরিচর্যা করতে পারেন, আপনার প্রিয় কোন বই পড়তে পারেন, বেলকনিতে দাঁড়িয়ে মোবাইল দিয়ে ফটোগ্রাফি করতে পারেন।
বাজে কাজে ব্যস্ত না থাকা
কাজের চাপ বাড়লে অনেকে আছেন বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন। কি করবেন বুঝে পান না, অস্থিরতা কাজ করে। এর ফলে বিভিন্ন বাজে কাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন যেমন ধূমপান শুরু করেন, অফিস ছুটি হলে বন্ধুদের সাথে তাস খেলেন, জুয়া খেলা পর্যন্ত শুরু হয় এবং শেষ পর্যায়ে চাকরি ছেড়ে দেয়ার মত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
আসলে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অফিসে কাজের চাপ কমানোর কোন সমাধান হতে পারে না। সরকারি বেসরকারি যে কোন চাকরিতে কাজে চাপ থাকবে সেটা মেনে নিয়েই চাকরি করতে হবে।
পরিবারকে সময় দিন
নিয়মিত পরিবারকে সময় দিন। স্বামী/স্ত্রী এবং ছেলে মেয়েদের সাথে সময় কাটালে আপনার শরীর এবং মন দুটোই ফুরফুরে থাকবে। মানসিক চাপ কমে গেলে অফিসে কাজের চাপ অনেক কমে আসবে এবং কাজের চাপ সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। আর পরিবারের সাথে সময় কাটানোর সময় কখনই অফিসের চিন্তা অথবা অফিসের কাজ মাথায় রাখবেন না। প্রয়োজনে মাসে একবার পরিবারকে নিয়ে বাইরে কোথাও থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
কাজের রুটিন তৈরি করুন
ছোটবেলায় আমরা পড়াশোনার জন্য রুটিন করতাম অথবা আমাদের স্কুল কলেজে কবে কোন দিন কি ক্লাস হবে সেটার একটা রুটিন থাকতো। তেমনি কাজের জায়গাতেও আপনাকে রুটিন তৈরি করতে হবে। কোন কাজটা কখন করতে হবে সেই অনুযায়ী রুটিন করুন এবং সেই ভাবে কাজ শেষ করার চেষ্টা করুন। কাজের চাপ থেকে রেহাই দিতে পারে কাজের রুটিন।
সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগান
প্রত্যেক অফিসেই এমন কিছু ব্যক্তি থাকে যারা নিজেরা কাজে ফাঁকি দেয় এবং অন্যকেও ফাঁকি দিতে উৎসাহিত করে। এই ধরনের ব্যক্তি থেকে দূরে থাকুন। কারণ দিনশেষে কাজটা আপনাকেই বুঝিয়ে দিতে হবে। এছাড়াও হঠাৎ কোন বন্ধুর ফোন অথবা আপনার অফিসে কোন আত্মীয়স্বজনের আগমন- এই বিষয়গুলো কেও এড়িয়ে চলুন।
আপনার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়স্বজনকে জানিয়ে দিন অফিসে যখন তখন আসার অনুমতি নাই জরুরী প্রয়োজন ছাড়া এবং আপনিও এ নিয়মটি কে সমর্থন করেন।
অফিস ছুটির পর বিভিন্ন যোগাযোগ থেকে বিরত থাকুন
বর্তমানে আমরা বিভিন্ন প্রযুক্তির শেফলে আবদ্ধ হয়ে আছি। ঘরে বাইরে সময়ে অসময়ে এসব প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে বের হওয়া প্রায় অসম্ভব। তারপরেও মানসিক এবং কাজের চাপ কমানোর জন্য অফিস শেষে বিভিন্ন ধরনের মাধ্যম যেমন হোয়াটসঅ্যাপ, ইমেইল, ফেসবুক মেসেঞ্জারে অফিসের বার্তা, মিটিং এর মেসেজ ইত্যাদি থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করব।
অফিসের কাজ অফিসেই সেরে ফেলার চেষ্টা করতে হবে। বার্তাগুলোতে রিপ্লাই দেওয়ার যদি খুব প্রয়োজন হয় পরের দিন সকাল আটটার পরে রিপ্লাই দিবেন। অফিস শেষ করার পরে সেসব বার্তা দেখে সারারাত মানসিক চাপ নিয়ে ঘুমানোর কোন প্রয়োজন নেই।
পরিমিত ঘুমান
যেকোনো কাজের অন্যতম শক্তি হলো ভালো ঘুম। পরিমিত মাত্রায় ঘুমালে শরীর সতেজ থাকবে, যে কোন কাজের চাপ সামাল দিতে পারবেন। আপনি রাতে যদি পর্যাপ্ত না ঘুমান তবে সারাদিন আপনার শরীর খারাপ করবে এবং কোন কাজে আপনি মনোযোগ দিতে পারবেন না।
অবশ্যই পড়ুনঃ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে স্মার্টফোন
আবার বিপরীত হলেও সমস্যা। আপনি অতিরিক্ত যদি ঘুমান তাহলে আপনার শরীরে এক ধরনের দুর্বলতা চলে আসবে এবং আপনি ঠিকমতো কাজ করতে পারবেন না। তাই চেষ্টা করুন প্রত্যেকদিন রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে।
সঠিক খাবার গ্রহণ করুন
শরীরকে ফিট এবং সুস্থ রাখতে সুষম এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবারের কোন বিকল্প নেই একটি প্রবাদ আছে “sound mind lives in a sound body” অর্থাৎ সুস্থ শরীরের ভেতরে সুস্থ মন বসবাস করে। ঠিকমতো খাবার না খেলে শারীরিক দুর্বলতার পাশাপাশি অফিসের যে কোন কাজে চাপ অনুভব করবেন এবং সহজ কাজও কঠিন মনে হবে।
মন্তব্য
পূর্বে বলা হলো জীবিকার তাগিদেই আমরা চাকরি করি অর্থাৎ কাজ করি। যারা শখের বশে বিভিন্ন কাজ করেন তাদের কথা ভিন্ন কিন্তু যারা জীবিকার তাগিদে কাজ করেন তাদের জন্য কর্মক্ষেত্রে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজের উন্নতি করা অত্যন্ত জরুরী। আবার এটাও ঠিক কর্মক্ষেত্রে যদি কাজের কোন চাপ না থাকে তবে সে কাজের উন্নতি হয় না।
যাইহোক, উপরের বিষয়গুলো পড়ে যদি ভালো লেগে থাকে তবে পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর যদি কোন অভিযোগ থেকে থাকে বা ভুল ত্রুটি হয় তাহলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।
মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url