কোরবানির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও তাৎপর্য

কোরবানির সূচনা হয় মূলত মানব সভ্যতার শুরু থেকেই। পৃথিবীর প্রথম মানব হযরত আদম (আ:) এর সময় থেকেই কোরবানি শুরু হয়। তবে কোরবানির প্রসঙ্গ আসলে হযরত ইব্রাহিম (আ:) এর ঘটনাটি সামনে চলে আসে বিধায় আমাদের অনেকেরই ধারণা হযরত ইব্রাহিম (আ:) এর সময় থেকে কোরবানির শুরু হয়েছে। কোরবানির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও তাৎপর্য এর ব্যাপারে আমাদের ধারণা পরিস্কার থাকা উচিত।
কোরবানির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও তাৎপর্য

ইসলামিক তথ্য এর আজকের এই পর্বে আমরা জানবো কোরবানির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও তাৎপর্য। আশা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।

কোরবানির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও তাৎপর্য

হযরত আদম (আ:) থেকে শুরু করে হযরত মুহাম্মদ (সা:) পর্যন্ত যত নবী-রাসূল পৃথিবীতে এসেছেন প্রত্যেকে এবং তাদের উম্মতেরা কোরবানি করেছেন। মহান আল্লাহ তা'আলা মানব সৃষ্টির শুরু থেকেই প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির বিধান করে দিয়েছেন যাতে করে মানবজাতির জন্য আল্লাহ যে চতুষ্পদ পশু দিয়েছেন সেগুলোর উপরে আল্লাহর নাম নেয়া যায়। তাই ইসলামের ইতিহাসে কোরবানির একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য রয়েছে। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই কোরবানির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও তাৎপর্য সম্পর্কে। 

কোরবানির সুত্রপাত

কোরবানির সূচনা হয় হযরত আদম (আ:) এর দুই পুত্র হাবিল এবং কাবিলের মধ্যকার দ্বন্দ্ব কে কেন্দ্র করে। এই ঘটনাটি আমরা জানতে পারি পবিত্র কুরআনুল কারীম থেকে। শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) কে আল্লাহতালা বলেন- রাসুল, আপনি আপনার উম্মতদের আদম এর দু পুত্রের ঘটনাটি সত্যতার সঙ্গে শুনিয়ে দিন। 

দু পুত্রই কোরবানি করলো কিন্তু একজনের কোরবানি কবুল করা হলো এবং অন্যজনের করা হলো না। একজন আরেকজনকে বলল হত্যা করব, তখন অপরজন বলল কেবল মুত্তাকিদের কোরবানি আল্লাহ কবুল করে থাকেন। তাফসীর ইবনে কাসীর থেকে এই ঘটনার ব্যাখ্যা আমরা পেয়ে থাকি। হযরত আদম (আ:) এবং হাওয়া (আ:) যখন পৃথিবীতে আসেন তখন শুধুমাত্র তারা দুজন ব্যতীত আর কোন মানুষের অস্তিত্ব ছিলনা। 

কিন্তু আল্লাহ পৃথিবীতে মানবজাতি সৃষ্টি করতে চেয়েছেন। তাই আরো মানব সন্তানের প্রয়োজন ফলে তাদের যখন বংশবিস্তারের প্রক্রিয়া শুরু হল তখন প্রথম গর্ভ থেকে একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে এইভাবে জমজ সন্তান জন্মগ্রহণ করত। আল্লাহর নির্দেশে প্রত্যেকবার সন্তান প্রসবের সময় জমজ সন্তান প্রসব করা হতো। 
এখন বংশবিস্তারের জন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু প্রত্যেকটা জমজ সন্তান ভাই- বোন সুতরাং তাদের মধ্যে বিয়ে সম্ভব নয় অর্থাৎ হারাম। তখন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বাস্তবতার প্রয়োজনে হযরত আদম (আ:) কে নির্দেশ দিলেন এইভাবে যে, প্রতি গর্ভ থেকে জন্ম নেয়া জমজ ভাই বোনের মধ্যে বিয়ে বৈধ হবে না তবে পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্ম নেয়া ভাই বোনের সাথে প্রথম গর্ভ থেকে জন্ম নেয়া ভাই বোনের বিয়ে দেওয়া বৈধ হবে। 

প্রতিটি গর্ভ থেকে জন্ম থেকে জন্ম নেয়া পুত্র এবং কন্যা একে অপরের সাথে ভাই বোন হিসেবে গণ্য হবে এবং তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক বৈধ হবে না। এবং পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্ম নেয়া পুত্র এবং কন্যা পূর্ববর্তী গর্ভে জন্ম নেয়া পুত্র কন্যার সাথে ভাইবোন হিসেবে গণ্য হবে না অর্থাৎ তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক বৈধ হবে। বিষয়টি আরো পরিষ্কার করার চেষ্টা করছি। 

মনে করি প্রথম গর্ভ থেকে জন্ম নেয়া পুত্র এবং কন্যাকে পুত্র১ এবং কন্যা১ হিসেবে উল্লেখ করছি। একইভাবে দ্বিতীয় গর্ভ থেকে জন্ম নেয়া পুত্র এবং কন্যাকে পুত্র২ এবং কন্যা২ হিসেবে ধরে নিচ্ছি। তাহলে পুত্র১ এর সাথে কন্যা২ এর বিয়ে হতো একই ভাবে পুত্র দুই এর সাথে কন্যা১ এর বিয়ে হতো। যদিও পরবর্তীতে অন্যান্য নবীদের ক্ষেত্রে এই বিধান আল্লাহর নির্দেশেই নিষিদ্ধ করা হয়। 

যাইহোক আদম আ এর সময়ের বিবাহের বিধান অনুযায়ী আদম আ এর প্রথম সন্তান কাবিলের সাথে বিয়ে ধার্য করা হয় দ্বিতীয় জোড়া থেকে অর্থাৎ হাবিলের জমজ বোনের সাথে। কিন্তু হাবিলের জমজ বোন দেখতে অসুন্দর ছিল। কাবিল তাঁর জমজ বোন সুন্দরী হওয়ায় তাকেই বিয়ে করার ইচ্ছা প্রকাশ করে কিন্তু সেই সময়ে আল্লাহর বিধান মতে একই জমজ ভাই বোনের মধ্যে বিয়ে হারাম ছিল। 

তাই কাবিল তার স্বভাব সুলভ আচরণ অর্থাৎ মুমিন না হওয়ায় সে উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং হাবিলের জমজ বোনকে বিয়ে করতে প্রত্যাখ্যান করে। একই সাথে সে হাবিলের শত্রু হয়ে ওঠে এবং হাবিলকে হত্যা করার হুমকি দেয়। হযরত আদম (আ:) কাবিলের এই প্রস্তাব আমলে না নিয়ে আল্লাহর বিধানকে বজায় রাখার জন্য এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরাজমান দ্বন্দ্ব নিরসন এর জন্য তাদের দুজনকেই বলে আল্লাহর উদ্দেশ্যে তাদের প্রিয় কোন কিছু কোরবানি দিতে।

মানব হত্যার সূত্রপাত

হযরত আদম (আঃ) নিশ্চিত ছিলেন যে মুমিন হাওয়ায় তার দ্বিতীয় সন্তান হাবিলের কোরবানি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এদিকে হাবিল একটি পশু আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করেছিল এবং তার ভাই কাবিল আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন গাছ এবং শাকসবজি কুরবানী করেছিল। আল্লাহ হাবিলের কোরবানি কবুল করেছিলেন কিন্তু কাবিলের কোরবানি কবুল করেননি। 
এতে কাবিল আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং হাবিলকে হত্যা করে। এভাবে হাবিল এবং কাবিলের এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোরবানি এবং একই সাথে মানুষ হত্যার ঘটনার সূত্রপাত ঘটে।

হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর মাধ্যমে কোরবানির প্রচলন শুরু হয়

পরবর্তীতে হযরত নূহ (আ:), হযরত মুসা (আ:), হযরত ইয়াকুব (আ:) সহ যত নবী রাসুল এসেছিলেন তাদের প্রত্যেকের উম্মতের উপর কোরবানি করার বিধান ছিল। আর হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর নিয়ম অনুসারে কোরবানি করা আমাদের জন্য সুন্নাহ। হাবিল-কাবিল এর ঘটনার পরে আরও একটি বিস্ময়কর ঘটনার সৃষ্টি করেন হযরত ইব্রাহিম (আ:) এবং তার পুত্র হযরত ইসমাইল (আ:)। চলুন এই শিক্ষণীয় গল্পটিও সংক্ষেপে জেনে নেই।

হযরত ইসমাইল (আঃ) এর জন্ম

জালিম এবং অত্যাচারী নমরুদ এবং তার দলের লোকেদের আচরণে সেই সময়ের মুমিন বান্দাগণ শান্তিতে বসবাস তো দূরের কথা জীবন নিয়ে সবসময় হুমকির মুখে থাকতেন। হযরত ইব্রাহিম আঃ এবং তার স্ত্রী হযরত সারার ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি বিদ্যমান ছিল। নমরুদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মহান আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইব্রাহিম (আ:) তার স্ত্রীকে সাথে করে পার্শ্ববর্তী শাম দেশে গমন করলেন। 

তবে সেই দেশের শাসক প্রধান ছিলেন দুশ্চরিত্রের অধিকারী। সেই দেশের শাসক প্রধান অর্থাৎ বাদশাহ হযরত ইব্রাহিম (আ:) কে বন্দী করে হযরত সারা কে কুপ্রস্তাব দিলেন। বাদশার এমন কু প্রস্তাবে রাজি না হয়ে হযরত সারা দু'রাকাত নামাজ পড়ার অনুমতি চাইলেন এবং নামাজে বসে উনি আল্লাহর দরবারে তার চরিত্র হেফাজতের জন্য দোয়া করলেন। 
কোরবানির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও তাৎপর্য

আল্লাহর রহমতে বাদশা বেশ কয়েকবার অসুস্থ হলেন এবং প্রত্যেকবারই হযরত সারা আল্লাহর কাছে বাদশার সুস্থতার জন্য দোয়া করলেন। যাইহোক আল্লাহর হেদায়েতের কারণেই হোক বা অন্য কারণে হোক বাদশা তার ভুল বুঝতে পেরে হযরত সারার কাছে ক্ষমা চাইলেন এবং তার সাথে একজন দাসী হযরত হাজেরাকে নিযুক্ত করে তাদেরকে বাদশার দরবার থেকে বিদায় করে সেই দেশে বসবাস করার অনুমতি দিলেন। 
হযরত ইব্রাহিম (আ:) এর বয়স তখন ছিল ১০০ বছর এবং তার স্ত্রী হযরত সারার বয়স ছিল ৯০ বছর কিন্তু তখন পর্যন্ত তারা বাবা-মা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেননি। তাই হযরত সারা তাদের দাসী হযরত হাজেরার সাথে হযরত ইব্রাহিম (আ:) এর বিয়ে দেন যাতে হযরত ইব্রাহিম (আ:) বাবা হতে পারেন। অবশেষে আল্লাহর অশেষ রহমতে হযরত হাজেরার গর্ভেই হযরত ইসমাইল (আ:) এর জন্ম হয়।

আল্লাহর রহমতের জমজমের বরকতময় পানি

এরপর আল্লাহ হযরত ইব্রাহিম (আ:) এবং তার স্ত্রী হযরত হাজেরার ঈমানী পরীক্ষা নিতে চাইলেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশে হযরত ইব্রাহিম (আ:) আর তার স্ত্রী হযরত হাজেরা এবং শিশু পুত্র হযরত ইসমাইল (আ:) কে মক্কার পাশে একটি নির্জন স্থান সাফা মারওয়ার পাদদেশে কিছু পানি এবং অল্প কিছু পরিমাণ খেজুর সহ রেখে আসলেন। 

হযরত হাজেরা হযরত ইব্রাহিম (আ:) কে জিজ্ঞেস করলেন “এটা কি আল্লাহর নির্দেশে করলেন?” জবাবে খুব ক্ষীণ স্বরে ইব্রাহিম (আ:) বললেন “হ্যাঁ”। এরপর খুব দ্রুতই পানি এবং খেজুর শেষ হয়ে যাওয়ায় হযরত হাজেরা ব্যাকুল হয়ে উঠলেন তার শিশু পুত্রের খাবারের সন্ধানে। তিনি সাফা এবং মারওয়া পাহাড়ের মাঝে প্রায় ৭ বার ছোটাছুটি করেছিলেন পানির খোঁজে। 
কোথাও কাউকে দেখতে পান নি, পানি খাবার পান নি। কান্নারত অবস্থায় শিশু পুত্র ইসমাইল (আ:) এর গোড়ালির আঘাতে মরুভূমির বুকে বালুর ভেতর থেকে পানির ফোয়ারা বের হতে শুরু করল, বর্তমানে যেটি জমজম কূপ বা জমজমের পানি হিসেবে গোটা বিশ্বে পরিচিত। এই জমজমের পানি অত্যন্ত সুস্বাদু এবং বরকত ময়।

সাফা মারওয়ার গুরুত্ব

সাফা এবং মারওয়া এই দুই পাহাড়ের মাঝে পানি এবং খাবারের সন্ধানে হযরত হাজেরার ছোটাছুটির দৃশ্যটি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এতই পছন্দ হয়েছে যে হযরত হাজেরার এই ব্যাকুলতার দৃষ্টান্তটি প্রত্যেক মানুষকে স্মরণ করার জন্য হজ্জ এবং ওমরায় সাফা মারওয়া পাহাড়ে তাওয়াফ অথবা দৌড়াদৌড়ি করা বাধ্যতামূলক করে দেন।

আল্লাহর দ্বিতীয় পরীক্ষা এবং কোরবানির প্রচলন শুরু

এরপর দিন যেতে থাকলো। হযরত ইসমাইল (আ:) একটু বড় হলেন, তিনি খেলাধুলা করতেন, সংসারের টুকটাক কাজ করতেন। এমন সময় একদিন মহান আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহিম (আ:) কে স্বপ্নে আদেশ দিলেন তার প্রিয় বস্তু কোরবানি করতে। সাথে সাথেই হযরত ইব্রাহিম (আ:) তার প্রিয় দশটি উট কোরবানি করলেন। 

কিন্তু আল্লাহ সন্তুষ্ট হতে পারলেন না, তিনি আবার স্বপ্নে দেখা দিলেন তার প্রিয় বস্তু কোরবানি করতে। এরপর হযরত ইব্রাহিম (আ:) আরও ১০০টি উট কোরবানি করলেন। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হলো না। তিনি আবারও স্বপ্ন দেখলেন মহান আল্লাহ তাকে তার প্রিয় বস্তু কোরবানি করার নির্দেশ দিচ্ছেন। এরপর তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারলেন এই মুহূর্তে তার প্রিয় বস্তু বলতে তার কলিজার টুকরা তার পুত্র সন্তান ইসমাইল (আ:)। 

তৎক্ষণাৎ তিনি মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিলেন এবং তার পুত্র তার কলিজার টুকরো ইসমাইল (আ:) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আমার পুত্র সন্তান, আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন তোমাকে কুরবানী দিতে তুমি কি রাজি? উত্তরে ইসমাইল (আ:) বললেন আপনি মহান আল্লাহ তায়ালার যা নির্দেশ পেয়েছেন তা পালন করুন অবশ্যই আপনি আমাকে ধৈর্যশীল হিসেবেই পাবেন। 


অবশ্যই পড়ুন

এরপর ইসমাইল (আ:) আরো বললেন গলায় ছুরি চালানোর সময় আমার দুই হাত দুই পা বেঁধে দিবেন যাতে মৃত্যুর সময় হাত পা ছড়াছড়ি করে আপনার সাথে বেয়াদবি করে না ফেলি। এরপর হযরত ইব্রাহিম (আ:) ইসমাইল (আ:) কে কাত করে শুইয়ে দিলেন কোরবানি দেওয়ার জন্য। 

তিনি হযরত ইসমাইল (আ:) এর গলায় ছুরি চালালেন কিন্তু স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে গেল। এরপর থেকেই মহান আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মানবজাতির জন্য পরিপূর্ণভাবে কোরবানির বিধান চালু করে দিলেন যেটি এখনো পর্যন্ত চলমান রয়েছে।

কোরবানির তাৎপর্য এবং শিক্ষা

  • যদিও বর্তমানে কোরবানি দেওয়াটা একটা উৎসবে পরিণত হয়েছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি আনন্দ উৎসবের বিষয় নয়। যারা মুমিন বান্দা তাদের সব সময় উদ্দেশ্য থাকে আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই কোরবানি দেওয়া। সঠিক নিয়তে যদি কোরবানি দেওয়া যায় এবং আল্লাহ যদি কবুল করে থাকেন তবে সেই পশুর প্রত্যেকটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি প্রদান করবেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন।
  • কোরবানি আমাদের দুনিয়ায় মুমিন মুত্তাকী হতে উদ্বুদ্ধ করে এবং পরকালের জন্য চিন্তা করতে শেখায়।
  • প্রিয় বস্তুকে কোরবানি দিলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন। দুনিয়াতে আমাদের প্রিয় বস্তু বলতে সন্তান-সন্ততি, ধনসম্পদ, ধন-সম্পদের প্রতি লোভ এসবকেই বুঝানো হয়। তাই আমরা এসব প্রিয় বস্তুর লোভ লালসা ত্যাগ করে আল্লাহর রাস্তায় যদি উৎসর্গ করতে পারি তবে এই কোরবানি থেকে আমাদের শিক্ষা অর্জন করা হবে এবং কোরবানিকে আমরা আমাদের জীবনে প্রতিফলিত করে সঠিক পথে চলতে পারব।
  • কোরবানি আমাদের আরেকটি মহৎ শিক্ষা দিয়ে থাকে। পশু কোরবানি দেওয়ার মতো করে আমরাও আমাদের মনের অন্তরের সব বদ ওয়াসওয়াসা এবং পাশবিক চিন্তা চেতনা যেমন হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণা, হানাহানি ইত্যাদিকে কোরবানি করে দিতে পারি যদি আমরা ইচ্ছা করি।
  • সঠিক এবং খাস নিয়তে যদি আমরা কোরবানি করে থাকি আর সেই কোরবানিটা যদি আল্লাহর দরবারে কবুল হয় তবে মৃত্যুর পর রোজ হাশরের দিন এই পশুগুলোই হবে আমাদের পুলসিরাত পার করে দেওয়ার একমাত্র বাহন। অর্থাৎ এ কোরবানীকৃত পশুগুলোই হচ্ছে আমাদের জান্নাতে যাওয়ার বাহন।
  • মহান আল্লাহর কাছে পশুর রক্ত মাংস এসব কিছুই পৌঁছায় না, পৌঁছায় শুধু কোরবানি কারীর তাকওয়া এবং আমল।
  • কোরবানি আমাদের শিক্ষা দেয় মহান আল্লাহর কাছে আমরা যেন নিজেদেরকে সমর্পণ করি কারণ আল্লাহ ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই।
  • ইসলাম শরীয়ত বিরোধী যে কোন কিছু পছন্দের কাজ আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য বিসর্জন দেওয়া হল কোরবানির শিক্ষা।
  • অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেদের মাঝে একটি বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্যও প্রতি বছর ইদ উল আযহা আমাদের মাঝে ফিরে আসে। বার্তাটি হল- শুধু মাংস খাওয়া নয়, মনের সকল হিংসা-বিদ্বেষ ঘৃণা দূর করে আল্লাহর কাছে নিজের পছন্দের জিনিস বিসর্জন দিয়ে, মাথা নত করে নিজেকে সমর্পণ করে দেওয়া হল কোরবানির মূল উদ্দেশ্য।

শেষ কথা

ইদ উল আযহা অর্থাৎ কোরবানির ইদ অবশ্যই মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি বড় আনন্দের দিন। কোরবানির দিন কোরবানি করার চাইতে উত্তম কাজ আল্লাহর কাছে আর কিছু নেই। কোরবানির গুরুত্ব এবং তাৎপর্য আমাদের উপলব্ধি করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আমরা যেন আমাদের জীবন পরিচালিত করতে পারি আল্লাহ সেই তৌফিক আমাদের সবাইকে দেন। 
যাইহোক, কোরবানির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও তাৎপর্য সম্পর্কে নিজের মত করে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করলাম। এতক্ষণ অত্যন্ত ধৈর্য নিয়ে কোরবানির ইতিহাস পড়লেন এবং জানলেন সেজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং নতুন কিছু জানতে চাইলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন। 

রেফারেন্স
  • সূরা আল-হজ আয়াত ৩৪
  • সূরা আল মায়িদা আয়াত ২৭
  • সূরা আল বাকারা আয়াত ১৫৮
  • সূরা আস সাফফাত আয়াত ১০১-১০৯
  • বায়হাকী
  • তাফসীর ইবনে কাসীর

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url