ওআইসি (OIC) কেন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল

মুসলিম বিশ্বের একমাত্র সংস্থা হল ইসলামী সহযোগী সংস্থা। তবে অনেকেরই হয়তো জানা নেই ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি কেন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
ওআইসি (OIC) কেন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল

এছাড়াও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য, মহাসচিব এবং বিভিন্ন সম্মেলন সম্পর্কে এই লেখায় জানা যাবে। আশা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।

ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা

ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা হল সমগ্র মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। ইংরেজিতে এ সংস্থার নাম Organisation of Islamic Cooperation বা সংক্ষেপে OIC। ২৪ টি রাষ্ট্র নিয়ে ১৯৬৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সংস্থাটি দাবি করে, তারা “মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের কণ্ঠস্বর” হিসেবে কাজ করে।

শুধু তাই নয় তারা আন্তর্জাতিক পরি মন্ডলে সৌহার্দ্য সম্প্রীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষা ও সুরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। ফরাসি ভাষায় এ সংস্থার নাম- Organisation de la Coopération Islamique এবং আরবি ভাষায় এটি منظمة التعاون الإسلامي । ওআইসি’র সদর দপ্তর সৌদি আরবের জেদ্দায় অবস্থিত। ওআইসি’র অফিসিয়াল ভাষা তিনটি - ইংরেজি, আরবি এবং ফরাসি। 
জনসংখ্যার দিক দিয়ে জাতিসংঘের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা। ২০১৮ সাল অনুযায়ী এই সংস্থার জনসংখ্যা প্রায় ১.৮১ বিলিয়ন।

ওআইসি’র স্লোগান

প্রতিটা আন্তর্জাতিক সংস্থার একটি নীতিবাক্য বা স্লোগান থাকে যেটিকে সামনে রেখে তারা কাজ করে। ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা নীতিবাক্যটি নিম্নরূপ - “বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষা এবং অগ্রগতি নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি বাইরের কোন পরাশক্তি কর্তৃক যে কোন হামলা একযোগে মোকাবেলা করা।”

ওআইসি কেন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল

ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা প্রতিষ্ঠার পেছনে অন্যতম কারণ হলো ইসরাইল ফিলিস্তিনের প্রথম যুদ্ধ। ১৯৬৭ সালে ৬ দিনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এরপর ১৯৬৯ সালের ২১ আগস্ট পবিত্র ভূমি জেরুজালেমের মসজিদুল আকসায় অগ্নি সংযোগ করে হানাদার ইসরাইল বাহিনী। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে অন্যান্য সম্প্রদায়ের সাথে পুরো মুসলিম বিশ্ব প্রতিবাদে গর্জে ওঠে। 

এর ফলশ্রুতিতে একই বছরের ২৫ আগস্ট মিশরের রাজধানী কায়রোতে ১৪ টি আরব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ এক জরুরী বৈঠকের আহ্বান করে। যেহেতু মসজিদুল আকসায় হামলার ঘটনাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষার জন্য জরুরি বিধায় সকল মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে একটি শীর্ষ সম্মেলন করতে চায় বলে সেই বৈঠকে মত প্রকাশ করে সৌদি আরব। 

এ লক্ষ্যে পরবর্তীতে সৌদি আরব, ইরান, নাইজার, মালয়েশিয়া, মরক্কো, সোমালিয়া এবং পাকিস্তানকে নিয়ে একটি প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর একই বছর অর্থাৎ ১৯৬৯ সালের ২২-২৫ সেপ্টেম্বর ২৪টি মুসলিম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে মরক্কোর রাবাতে এক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে সকল রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্মতিক্রমে “ইসলামী সম্মেলন সংস্থা” নামে এই প্রতিষ্ঠানটির জন্ম হয়। 
অর্থাৎ ১৯৬৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ওআইসি অফিসিয়ালি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে অবশ্য ২০১১ সালের ২৮ জুন এই সংস্থার নাম “ইসলামী সম্মেলন সংস্থা” থেকে “ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা”য় পরিবর্তন করা হয়।

ওআইসি সদস্য দেশ

ওআইসির প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে ২৪ টি সদস্য রাষ্ট্র থাকলেও বর্তমানে মোট ৫৭ টি সদস্য রাষ্ট্র রয়েছে যার মধ্যে ৪৯ টি রাষ্ট্র মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ। ওআইসি’র পাঁচটি পর্যবেক্ষক সদস্য রাষ্ট্র রয়েছে যার মধ্যে রাশিয়া এবং থাইল্যান্ড অন্যতম।

এশিয়া মহাদেশ

ইয়েমেন

তুরস্ক

ফিলিস্তিন

উজবেকিস্তান

বাহারাইন

জর্ডান

পাকিস্তান

সংযুক্ত আরব আমিরাত

আজারবাইজান

কুয়েত

সৌদি আরব

আফগানিস্তান

বাংলাদেশ

কিরগিজস্তান

কাতার

কাজাখাস্তান

ইন্দোনেশিয়া

লেবানন

ইরান

মালয়েশিয়া

ব্রুনাই

মালদ্বীপ

সিরিয়া

তাজিকিস্তান

ইরাক

ওমান

তুর্কমেনিস্তান

আফ্রিকা মহাদেশ

উগান্ডা

চাদ

কোত দিভোয়ার

কোমোরোস

তিউনিসিয়া

নাইজার

গিনি

নাইজেরিয়া

টগো

বেনিন

গিনি বিশাউ

ক্যামেরুন

সুদান

মরক্কো

গাম্বিয়া

বুরকিনা ফাসো

সোমালিয়া

মৌরি তানিয়া

গ্যাবন 

মোজ্জাম্বিক

সিয়েরা লিওন

মালি

মিশর

আলজেরিয়া

সেনেগাল

লিবিয়া

জিবুতি

দক্ষিন আমেরিকা মহাদেশ

ইউরোপ মহাদেশ

গায়ানা

সুরিনাম

আলবেনিয়া

ওআইসি’র মহাসচিববৃন্দ

ক্র: নং

নাম

দেশ

স্থায়িত্বকাল

০১

টিংকু আব্দুর রহমান

মালয়েশিয়া

১৯৭০ - ১৯৭৪

০২

হাসান আল তৌহামী

মিশর

১৯৭৪ - ১৯৭৫

০৩

আমাদো করিম গায়

সেনেগাল

১৯৭৫ - ১৯৭৯

০৪

হাবিব চাটটি

তিউনিসিয়া

১৯৭৯ -  ১৯৮৪

০৫

সৈয়দ শরিফ উদ্দিন পীরজাদা

পাকিস্তান

১৯৮৪ - ১৯৮৮

০৬

হামিদ আল গাবিদ

নাইজার

১৯৮৮ - ১৯৯৬

০৭

আজেদ্দিন লারাকি

মরক্কো

১৯৯৬ - ২০০০

০৮

আবদেলাহেদ বেলকেজিজ 

মরক্কো

২০০০ - ২০০৪

০৯

একমেলেদ্দিন ইহসানলু

তুরস্ক

২০০৪ - ২০১৪

১০

আইয়াদ বিন আমিন মাদানী

সৌদি আরব

২০১৪ - ২০১৬

১১

ইউসেফ আল ওথাইমিন 

সৌদি আরব

২০১৬ - ২০২০

১২

হোসাইন ইব্রাহিম তাহা

চাদ

২০২০ - বর্তমান

ওআইসি’র সম্মেলন

প্রতি তিন বছর অন্তর ওআইসির শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও ক্ষেত্রবিশেষে এবং প্রয়োজনে এই সময় কম বা বেশি হয়েছে।

ক্র: নং

দেশ

স্থান

তারিখ

১ম 

মরক্কো

রাবাত

২২-২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৬৯

২য় 

পাকিস্তান

লাহোর

২২-২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪

৩য় 

সৌদি আরব

মক্কা ও তায়েফ

২৫-২৯ জানুয়ারি ১৯৮১

৪র্থ

মরক্কো

কাসাব্লাঙ্কা

১৬-১৯ জানুয়ারি ১৯৮৪

৫ম 

কুয়েত 

কুয়েত সিটি

২৬-২৯ জানুয়ারি ১৯৮৭

৬ষ্ঠ

সেনেগাল

ডাকার

৯-১১ ডিসেম্বর ১৯৯১

৭ম 

মরক্কো

কাসাব্লাঙ্কা

১৩-১৫ ডিসেম্বর ১৯৯৪

৮ম 

ইরান

তেহরান

৯-১১ ডিসেম্বর ১৯৯৭

৯ম 

কাতার

দোহা

১২-১৩ নভেম্বর ২০০০

১০ম 

মালয়েশিয়া

পুত্রজায়া

১৬-১৭ অক্টোবর ২০০৩

১১ম 

সেনেগাল

ডাকার

১৩-১৪ মার্চ ২০০৮

১২তম 

মিশর

কায়রো

৬-৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩

১৩তম

তুরস্ক

ইস্তাম্বুল

১৪-১৫ এপ্রিল ২০১৬

১৪তম

সৌদি আরব

জেদ্দা

১ জুন ২০১৯

১ম বিশেষ

পাকিস্তান

ইসলামাবাদ

২৩-২৪ মার্চ ১৯৯৭

২য় বিশেষ

কাতার

দোহা

৪-৫  মার্চ ২০০৩

৩য় বিশেষ

সৌদি আরব

মক্কা

৭-৮ ডিসেম্বর ২০০৫

৪র্থ বিশেষ

সৌদি আরব

মক্কা

১৪-১৫ আগস্ট ২০১২

৫ম বিশেষ

ইন্দোনেশিয়া

জাকার্তা

৬-৭ মার্চ ২০১৬

৬ষ্ঠ বিশেষ

তুর্কি

ইস্তাম্বুল

১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

৭ম বিশেষ

তুর্কি

ইস্তাম্বুল

১৮ মে ২০১৮

৮ম বিশেষ

পাকিস্তান

ইসলামাবাদ

১৯ ডিসেম্বর ২০২১

৯ম বিশেষ

সৌদি আরব

জেদ্দা

১৮ অক্টোবর ২০২৩

মুসলিম প্রধান না হয়েও ওআইসির সদস্য দেশ

মুসলিম প্রধান না হয়েও ওআইসির সদস্য পদ লাভ করেছে উগান্ডা, মোজাম্বিক, সুরিনাম, গায়ানা এবং ক্যামেরুন। মুসলিম প্রধান দেশ এর অর্থ একটি দেশের জনসংখ্যার বেশির ভাগই মুসলিম হবে। পশ্চিম আফ্রিকার বেশ কিছু দেশে বেশ কিছু মুসলিম জনসংখ্যা থাকলেও এগুলোকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে গণ্য করা হয় না।

গাজায় যুদ্ধ বিরোধীতে ওআইসির ভূমিকা

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইল ফিলিস্তিনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে ওআইসি গাজায় অবরুদ্ধ সাধারণ জনগণের উপর হানাদার ইসরাইল এর নৃশংস হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার ব্যাপারে বিশ্ব নেতাদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। ওআইসির সেক্রেটারি জেনারেল হোসেন ইব্রাহিম তোহা গাজায় অবরুদ্ধ সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষার স্বার্থে, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং ইজরাইলের বর্বর হামলা বন্ধের পক্ষে বিশ্ব নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। 

বিশ্ব নেতাদের মধ্যে রয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনীয় গুতেরেস, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল, রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটির প্রধান, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইত্যাদি। তাছাড়া ওআইসি গাজার মানুষদের জন্য জরুরী ত্রান পাঠাতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগের প্রতি আহ্বান জানান।

শেষ কথা

সূচনা লগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে ওআইসি’র সফলতা থাকলেও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বরাবরই ওআইসি বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। আর তাই হয়তো ফিলিস্তিনের উপর ইসরাইলের হামলার প্রতিবাদে ওআইসি তৎকালীন সময় প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমানে ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধ নিরসনে তেমন কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না ওআইসি কে।

ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি সম্পর্কে তথ্যগুলো পড়ে যদি ভালো লাগে তবে শেয়ার করতে পারেন। আর কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url