তীব্র গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার ১০ উপায়
তীব্র গরমে জনজীবন একদম অতিষ্ঠ। একদিকে গরম বাড়ছে আর একদিকে লোডশেডিং। লোডশেডিং এর সময় ঘরের ভেতর বা বাসায় থাকা যেন আরো কষ্টকর। আবার যাদের বাসায় এসি বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই তাদের বাসা যেন এক টুকরো কয়লার খনি। তারা হয়তো হন্যে হয়ে খোঁজেন তীব্র গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার উপায় কি আছে?
একদম সাধারন কিছু পদ্ধতি আছে যেগুলো কাজে লাগালে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের ঘর ঠান্ডা হতে পারে। আজকের পর্বে আমরা বিদ্যুৎ থাকাকালীন সময়ে অথবা লোডশেডিং এর সময় ঘর ঠান্ডা রাখার কিছু পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি আপনারা উপকৃত হবেন। মনোযোগ দিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।
মোটা সুতি কাপড়ের পর্দা ব্যবহার
সূর্যালোক বা রোদ ঘরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য প্রধান ভাবে দায়ী। দিনের বেলায় জানালা অবশ্যই বন্ধ রাখতে হবে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে জানালা যদি থাই কিংবা গ্লাসের তৈরি হয় সে ক্ষেত্রে জানালা লাগিয়ে দেওয়ার পরেও গ্লাসের ভেতর দিয়ে সূর্যালোক বা রোদ ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে। এ ক্ষেত্রে সুতি মোটা এবং ভারী পর্দা ব্যবহার করলে বাইরে থেকে কোন রোদ ঘরে প্রবেশ করবে না ফলে ঘর ঠান্ডা থাকবে। দিনের বেলায় ঘর যতটা অন্ধকার রাখা যাবে তাপমাত্রা তত কম থাকবে।
সকাল সন্ধ্যায় জানালা খোলা রাখা
সকালে সূর্য ওঠার আগে এবং সন্ধ্যায় সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে তাপমাত্রা অনেক কমে যায় কারণ এই সময়ে রোদ থাকে না। তাই এই সময়ে ঘরের সব জানালা খুলে দিলে ঘরের ভেতরের গরম তাপমাত্রা বাইরে বের হয়ে যাবে, একই সাথে বাইরের ঠান্ডা বাতাস ঘরে প্রবেশ করে ঘরের তাপমাত্রা কমিয়ে দেবে।
তাপ উৎপন্ন করে এরকম যন্ত্র যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করা
বাসা বাড়িতে থাকে এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কিন্তু সমান ভাবে প্রচন্ড তাপ উৎপন্ন করে এরকম যন্ত্রের তালিকায় প্রথমেই থাকবে চুলা। গ্যাসের চুলা হোক বা ইন্ডাকশন কুকার হোক অথবা রাইস কুকার যেকোনো ধরনের চুলাই হোক না কেন প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে শুধু রান্নাঘরকে গরম করে তা নয় পুরো বাড়িটাতেই সেই তাপ ছড়িয়ে দেয় এবং পুরো বাড়ির তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তাই রান্না শেষ হয় মাত্রই দ্রুত চুলো বন্ধ করে রাখুন। আরেকটি উপায় হচ্ছে খুব সকালে রান্না সেরে ফেলতে পারলে ঘর গরম হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তাছাড়াও আরো বেশ কিছু যন্ত্র যেমন washing machine, hair ড্রায়ার, ডিস ওয়াসার, মোবাইল চার্জার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, আয়রন (ইস্ত্রি), কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ইত্যাদিও তাপ উৎপন্ন করে ঘরকে গরম করে দেয়। তাই নিতান্তই প্রয়োজন না হলে গরমের দিনে এসব যন্ত্রের ব্যবহার এড়িয়ে চলাই উত্তম।
ছায়াতে জীবিত থাকে এরকম গাছ ঘরে রাখা
বেশ কিছু গাছ রয়েছে যেগুলো রোদ ছাড়া ছায়াতে জন্মে এবং সুস্থভাবে বেড়ে ওঠে। এসব গাছ আপনি টবে লাগিয়ে ঘরের এক কোণায় রেখে দিতে পারেন এতে করে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ঘরে জমে থাকা কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস গাছ শুষে নেয় ফলে তাপমাত্রা কমে যায় এবং ঘর থাকে ঠান্ডা। ঘরের এক কোনায় টবে লাগানোর মত কিছু গাছ যেমন স্নেক প্লান্ট, মানিপ্লান্ট, এরিকা, লিলি, অ্যালোভেরা, পাম জাতীয় গাছ।
টেবিল ফ্যান বা স্ট্যান্ড ফ্যানের সামনে বরফ রাখা
তীব্র গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার জন্য একটি সস্তা এবং কার্যকরী উপাদান হচ্ছে বরফ। গরম বেশি হলে সিলিং ফ্যানের পাশাপাশি আমরা টেবিল ফ্যান বা স্ট্যান্ড ফ্যান ব্যবহার করে থাকি। এই স্ট্যান্ড ফ্যানের সামনে একটি বাটিতে কয়েক টুকরো বরফ রাখলে বাতাসে বরফ গলবে এবং ঠান্ডা বাতাস পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়বে। এতে করে ঘরের তাপমাত্রা অনেকাংশে কমে যাবে এবং ঘর থাকবে ঠান্ডা। যদিও এই পদ্ধতিতে ঘর কিছুক্ষণ ঠান্ডা থাকবে এরপর আবার গরম হয়ে গেলে পুনরায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে।
ঘরের ভেতরটা আদ্র রাখার চেষ্টা করা
ঘরের ভেতরটা ঠান্ডা রাখার অন্যতম একটি কার্যকরী উপায় হচ্ছে ঘরের ভেতরের আদ্রতা বজায় রাখা। এই আদ্রতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন ভেজা কাপড়। হতে পারে আপনি গোসল করে এসে আপনার কাপড়-চোপড় বাইরে বারান্দায় না মেলে ঘরে একটা দড়ি টাঙিয়ে সেখানে মেলে দিলেন অথবা সাধারণ কোন কাপড় ভিজিয়ে আপনি ঘরের মধ্যে কাপড়টা মেলে দেন। সে ক্ষেত্রে আপনার ঘরে আদ্রতা বেড়ে যাবে এবং তাপমাত্রা কমে ঘর ঠান্ডা থাকবে।
ঘরের দেয়ালে লাইট কালার ব্যবহার করা
অনেকে আছেন যাদের পছন্দ মত ঘরের দেয়ালে বিভিন্ন ডিপ বা গাড় রং করে থাকেন। এতে সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয় ঠিকই তবে তাপ শোষণ করায় ঘরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তাই তাপমাত্রা শোষণ কমাতে এবং ঘরের তাপমাত্রা কমিয়ে ঘরকে ঠান্ডা রাখতে ঘরের দেয়ালে ব্যবহার করুন যেকোনো ধরনের হালকা রং। যে কোনো হালকা রঙের মধ্যে সাদা রংটা সর্বোত্তম।
ঘরের মেঝে সাদা করা
ঘরের দেয়ালের মতো একইভাবে ঘরের মেঝেও হালকা রঙ বা সাদা হলে উত্তম। বর্তমানে আধুনিক যুগে টাইলস ব্যবহার করা হয় এবং অধিকাংশ টাইলসই হালকা কালারের মধ্যেই হয়ে থাকে। সেই ক্ষেত্রে তাপ শোষণ কম হবে মেঝেতে এবং ঘরের তাপমাত্রা কম থাকবে।
বারবার ঘর মুছতে পারেন
ঘরের বিশেষ করে মেঝের তাপমাত্রা কমাতে ঘন ঘন মুছতে পারেন। ভেজা কাপড় দিয়ে একটু পানি পানি করে মোছার পরে ফ্যান ছেড়ে দিলে মেঝেটি শুকাতে শুকাতে অনেকটাই ঠান্ডা হয়ে যায় ফলে মেঝের তাপমাত্রা কমে যায় এবং ঘর কিছুটা ঠান্ডা হয়। আবার বেশ কিছু কাপড় ভিজিয়ে মেঝেতে বিছিয়ে রাখলে উপরে ফ্যানের বাতাসে সেগুলো শুকাতে শুকাতে ঘর অনেকটা ঠান্ডা হয়ে যায়।
ঘরে ব্যবহার করতে পারেন এক্সস্ট ফ্যান
সাধারণত রান্নাঘর এবং ওয়াশরুমে এক্সস্ট ফ্যান ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাপমাত্রা কমানোর জন্য। রান্নাঘরে রান্না করার সময় ঘর অত্যধিক গরম হয়ে যায় ফলে এই তাপমাত্রা কমানোর জন্য এক্সস্ট ফ্যান ব্যবহার করা হয়। আবার ওয়াশরুম বা বাথরুম অত্যন্ত ছোট হওয়ায় গরমের দিনে অল্পতেই তাপমাত্রা বেড়ে যায় ফলে এখানেও এক্সস্ট ফ্যান ব্যবহার করা হয় ঠান্ডা করার জন্য। প্রতিটি ঘরে এই ফ্যান ব্যবহার করলে একটু পর পর একস্ট ফ্যান চালু করলে ঘরের তাপমাত্রা অনেক অংশে বাইরে বের হয়ে যায় ফলে ঘর কিছুটা ঠান্ডা থাকে।
বাড়ির চারপাশে বৃক্ষ রোপন করা
বাড়ির চারপাশ ঘিরে বৃক্ষ জাতীয় যেকোনো গাছ লাগাতে পারেন। এসব গাছের ছায়া বাড়ির ছাদে এবং ঘরের দেয়ালে পড়লে তাপমাত্রা কিছুটা কম হওয়ায় ঘরের ভেতরে কিছুটা হলেও ঠান্ডা থাকে। বিভিন্ন ফলের গাছ যেমন আম, কাঁঠাল ইত্যাদি গাছ যেগুলো বেশ ঝাকড়া এবং উঁচু হয় সেই ধরনের গাছ লাগাতে পারেন। তাছাড়াও ঘর ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য সারিস করে ডাব গাছ লাগাতে পারেন।
শেষ কথা
তীব্র গরমে এসি না থাকলে বা লোডশেডিং চলাকালে ঘরকে ঠান্ডা রাখার বেশ কিছু উপায় বর্ণনা করা হলো। তবে মনে রাখতে হবে এইসব পদ্ধতি এপ্লাই করার পরে ঘর কিন্তু কখনোই এসির মত ঠান্ডা হবে না। অতিরিক্ত তাপমাত্রা থাকলে সেখান থেকে কিছুটা তাপমাত্রা কমে সহনীয় পর্যায়ে আসবে এবং বেশ কিছুটা আরাম পাওয়া যাবে।
এই প্রচন্ড তাপদাহে আশা করি উপরের পদ্ধতি গুলো পরীক্ষা করে দেখবেন আপনাদের ঘর ঠান্ডা রাখার জন্য। ভালো লেগে থাকলে প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করবেন এবং কোন মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url