ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা এবং অপকারিতা - খাওয়ার সঠিক নিয়ম

কেউ কখনো কোনদিন কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগে থাকেন নি এরকম ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া বিরল। মল বা পায়খানা শক্ত হয়ে গেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয়। আর এই মলকে নরম করার গুরু দায়িত্ব পালন করে থাকে ইসবগুলের ভুষি। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করা ছাড়াও ইসবগুলের ভুষির উপকারিতা এবং অপকারিতা আছে অনেক।
ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা এবং অপকারিতা - খাওয়ার সঠিক নিয়ম

তাছাড়া অনেক সময় ভুল ভাবে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার কারণে আমরা কাঙ্খিত উপকারিতা থেকে বঞ্চিত হই। এই লেখায় আমরা ইসবগুলের খাওয়ার সঠিক নিয়ম সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানার চেষ্টা করব। আশা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।

ইসবগুলের ভুসি

গুল্ম জাতীয় ইসবগুল গাছের পাপড়িযুক্ত ফুলের আকার ছোট হয়, বীজের খোসা আছে। বীজের খোসা পানির সংস্পর্শে আসলে পিচ্ছিল হয়ে যায়। ইসবগুলের বীজ এক ধরনের রবিশস্য। আমাদের দেশে বা উপমহাদেশে এটি ইসবগুল নামে পরিচিত হলেও বিদেশে এটি সিলিয়াম হাস্ক (Psyllium Husk) নামে পরিচিত। সপুষ্পক উদ্ভিদ ইসবগুলের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Plantago Ovata (প্ল্যানটাগো ওভাটা)।
 ইসবগুলের ভুষি এক ধরণের দ্রবণীয় ফাইবার বা আঁশ যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। আমাদের দেশে বাজারে ইসবগুলের ভুষি খুবই সহজলভ্য। এটি প্যাকেটজাত কিংবা খোলা দুইভাবে পাওয়া যায়। অগ্নাশয়, হৃৎপিণ্ড, ডায়াবেটিসের সমস্যার সমাধান করলেও কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য একটি কার্যকরী ঔষধ হিসেবে বেশি পরিচিত।

ইসবগুলে বিদ্যমান বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান

বিভিন্ন গবেষণায় ইসবগুলের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের প্রমাণ পাওয়া যায়। এক চামচ এসব খুলে নিম্নলিখিত উপাদান গুলো বিদ্যমান ক্যালরি ৫৩ শতাংশ, ফ্যাট জিরো শতাংশ, সোডিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, শর্করা ১৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩০ মিলিগ্রাম, আইরন ০.৯ মিলিগ্রাম।
ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা এবং অপকারিতা - খাওয়ার সঠিক নিয়ম

ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার সঠিক নিয়ম

যেহেতু ইসবগুলের ভুষি আমরা বিভিন্ন প্রয়োজনে খেয়ে থাকি তাই এ ভুসি খাওয়ার অবশ্যই সঠিক একটি নিয়ম রয়েছে। অবশ্য অনেকেই নিয়ম-কানুন না মেনে যখন তখন যেন তেন ভাবে ইসুবগুলের ভুষি খেয়ে থাকেন ফলে তারা সেভাবে আসলে কোন উপকার পেয়ে থাকেন না। অনেকে খাবার আগে বা পরে, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে, বিকালে বা সন্ধ্যায় বিভিন্ন সময় খেয়ে থাকেন। 

অজ্ঞতার কারণে সেই প্রাচীনকাল থেকেই ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার একটি ভুল পদ্ধতি প্রচলিত আছে। সেটি হলো রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা ইসুবগুলের ভুষি পানিতে ভিজিয়ে তারপর চিনি অথবা গুড় দিয়ে সেটি খাওয়া। 

তবে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সঠিক নিয়ম হল ২৫০ গ্রাম পানি অথবা এক গ্লাস পানিতে দুই চা চামচ ভুসি মেশানোর সাথে সাথেই খেয়ে ফেলা। পানিতে ভুসি কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে ভুষি গুলো যথেষ্ট পরিমাণ পানি শোষণ করে ফলে খাওয়ার পরে পেটের ভেতরে পানির শোষণ করতে পারে না, তাই আমরা যে উপকারের কথা চিন্তা করে খাই সেটি আর পাওয়া যায় না।
চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাবেন? প্রস্তুতি নিয়েছেন তো? জেনে নিন বিস্তারিত
অনেকে আবার স্বাদ বৃদ্ধির জন্য ইসবগুলের ভুষির সাথে চিনি মিশিয়ে খেয়ে থাকেন। তবে চিনি মেশানো উচিত নয় কারণ নিয়মিতভাবে ইসবগুলের ভুষির সাথে চিনি খেলে চিনির ভেতরে থাকা সুক্রোজ আমাদের স্থূলতা বাড়িয়ে ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।

ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার উপকারিতা

প্রাকৃতিক উপায়ে কোষ্ঠকাঠি ও দূর করতে চাইলে সবার পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকে ইসবগুলের ভুষির নাম। শুধু কোষ্ঠকাঠিন্য নয় আরো বিভিন্ন গুণে গুণান্বিত ইসবগুলের ভুসি। চলুন জেনে নেওয়া যাক ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা গুলো।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
ইসব গুলে বিদ্যমান অ্যামাইনো এসিড থাকায় এবং ইসবগুল আজ জাতীয় বা ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় সহজেই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এসব ভুল পাকস্থলীতে গিয়ে পানি শোষণ করে ফুলে যায় এবং মলে পানির পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে বিধায় মল নরম হয় এবং পায়খানা পরিষ্কার হয়।
পেট ব্যাথা কমায়
ইসবগুলের বিদ্যমান বিভিন্ন উপাদান আলসার জনিত বিভিন্ন পেট ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
মাঝে মাঝে খাবার আধা ঘন্টা আগে ইসব গুলের ভুসি খেলে পেট অনেকটা ভরা থাকে ফলে খাবার আগ্রহ কমে যায়। এতে করে কম খাওয়ার ফলে ওজন কমে যায়।
ডায়াবেটিসের মাত্রা কমায়
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের একটি অন্যতম উপায় হচ্ছে রক্তে সুগারের পরিমাণ কমানো। আর রক্তে সুগারের পরিমাণ কমাতে ইসবগুলে বিদ্যমান জিলাটিন বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এই জিলাটিন গ্লুকোজের শোষণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে সুগারের ভারসাম্য বজায় রাখে।

মোবাইল ফোনে কথা বলারও বেশ কিছু আদব কায়দা রয়েছে। সেগুলো কি জানেন? 

প্রস্রাবের ইনফেকশন দূর করে
প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারণে অনেকেরই মাঝেমধ্যে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হয়। এই সমস্যার সমাধানে নিয়মিত খেতে পারেন ইসবগুলের ভুষি।
এসিডিটি দূর করে
বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার কিংবা ভাজাপোড়া খাওয়ার ফলে অনেক সময় এসিডিটি হয়। এই এসিডিটি দূর করার অন্যতম প্রাকৃতিক উপায় হল ইসবগুলের ভুষি।
হার্ট সুস্থ রাখে
ইসবগুল ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং বিভিন্ন খাবার থেকে কোলেস্টেরল শোষণ করতেও হৃদপিণ্ডকে বাধা প্রদান করে, ফলে হার্ট সুস্থ থাকে।
ডায়রিয়া ভালো করে
পাকস্থলীর বিভিন্ন ইনফেকশন দূর করতে দই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কারণ দইয়ে থাকে প্রোবায়োটিক উপাদান। তাই দইয়ের সঙ্গে ইসুবগুলের ভুষি মিশিয়ে খেলে ডায়রিয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাছাড়া ইসবগুলের ভুষি শুধু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে তাই নয়, ডায়রিয়া হলে অতিরিক্ত পাতলা মলকে শক্ত করে পায়খানা স্বাভাবিক করতেও সাহায্য করে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
চিকিৎসক উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে প্রায়ই ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
খাবার হজমে সাহায্য করে
ইসবগুলের ভুষি আশ জাতীয় হাওয়ায় খাবারের সঙ্গে পাকস্থলীতে সহজে মিশে গিয়ে পানি শোষণ করে বিধায় খাবার সহজে হজম হয়ে যায়।
আমাশয় থেকে উপশম
বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় ইসবগুলের ভুষি আমাশয়ের জীবাণুকে পেট থেকে মলের সাথে বের করে দিতে সাহায্য করে।

ইসবগুলের ভুসি যখন খাওয়া উচিত নয়

ইসবগুলের বেশ কিছু উপকারিতার কথা চিন্তা করে আমরা এই ভুসি খেয়ে থাকি। তবে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অবস্থা বা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা না করেই অসুবিধা হলেও যে খেতে হবে, ব্যাপারটি সেরকম নয়। বেশ কয়েকটি অবস্থার কথা বিবেচনা করে ইসবগুলের ভুষি না খাওয়ায় উত্তম। যেমন-
  • প্রচন্ড এসিডিটির কারণে পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া এ ধরনের অবস্থা হলে অবশ্যই আপনাকে ইসবগুলের ভুষি এড়িয়ে চলতে হবে।
  • দীর্ঘদিন যাবত কোষ্ঠকাঠিনের সমস্যার সমাধান না হলে অথবা পায়ুপথে মল আটকে থাকলে ইসবগুলের ভুষি না খাওয়ায় উত্তম।
  • অনেকে ভেবে থাকেন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ইসবগুলের ভুসি খেয়ে থাকলে সারা রাতে সেটা খুব ভালো মতো কাজ করে। কিন্তু ব্যাপারটা একদমই সেরকম নয়। রাতে ইসবগুলের ভুষি খেয়ে ঘুমালে অনেক সময় বৃহদান্ত্রের মুখে ভুসি জমে আটকে যায় ফলে পায়খানা হতে আরও জটিলতার সৃষ্টি হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই ধরনের জটিলতাকে বলা হয় “অবস্ট্রাকশন”।
  • আগে কখনো কোনদিন ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার ফলে কোন জটিলতা সৃষ্টি হলে পরবর্তীতে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত এই ভুসি খাবেন না।
  • পাইলস, ফিস্টুলার মত সমস্যা থাকলে অথবা কোন কারনে পায়ুপথে রক্ত গেলে ইসবগুলের ভুষি খাওয়া সমীচীন হবে না।

ইসবগুলের অপকারিতা

পৃথিবীতে সব জিনিসেরই ভালো দিক এবং মন্দ দিক রয়েছে। সে হিসেবে ইসবগুলের ভুষিরও ভালো এবং মন্দ দিক আছে। তবে ইসবগুলের উপকারিতার চাইতে অপকারিতা নিতান্তই নগণ্য। চলুন জেনে নেই ইসবগুলের অপকারিতা।
  • প্রয়োজনের অতিরিক্ত অথবা সেরকম কোন সমস্যা না হলেও প্রতিদিন ইসবগুল খেলে ডায়রিয়া, ক্ষুধামান্দা, অরুচি, বমি বমি ভাব সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • পানিতে অনেকক্ষণ ইসবগুল ভিজিয়ে রাখলে যথেষ্ট পরিমাণ পানি শোষণ করে সেগুলো ফুলে যায়। ফলে এগুলোর কার্যকারিতা হ্রাস পায়। এ অবস্থায় ইসবগুলের ভুসি খেলে তেমন কোনো উপকার পাওয়া যায় না।
  • অন্যান্য ওষুধের গুনাগুন যেন বাধাগ্রস্ত না হয় তাই চিকিৎসকগণ ওষুধ সেবনের এক ঘন্টা আগে অথবা পরে ইসবগুল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অন্যথায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে শরীরে।
ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা এবং অপকারিতা - খাওয়ার সঠিক নিয়ম

শেষ কথা

দীর্ঘ সময় ধরে ইসবগুলের ভুষি একটানা খাওয়া উচিত নয়। এতে উপকারের পাশাপাশি অপকারই বেশি হয়। টানা সপ্তাহ খানেক ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার পরে যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের কোন উন্নতি না হয়ে থাকে তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এছাড়াও অন্য যে কোন সমস্যায় ইসবগুলের ভুষি খেতে চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে খাওয়া উচিত।
আশা করি আজকের লেখাটি পড়ে ইসবগুলের ভুষির উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানতে পারলেন। লেখাটি ভাল লেগে থাকলে পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করতে পারেন আর কোন জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url