তরমুজের ১০ উপকারিতা সহ কিছু অপকারিতা


এখন গ্রীষ্মকাল হওয়ায় বাজারে তরমুজ দেখা যায়। দাম বেশি হলেও আমরা অনেকেই কিনে খাই। তৃষ্ণা নিবারণের জন্যও আমরা তরমুজ খাই। অনেকের শুধু খেতে ভালো লাগে বলে খায়। কিন্তু তরমুজের ১০ উপকারিতার কথা আমরা অনেকেই জানিনা।
তরমুজের ১০ উপকারিতা সহ কিছু অপকারিতা

আবার বেশি খাওয়ার ফলে কিছু সমস্যা হতে পারে সেটাও আমাদের অনেকের জানা নেই। তরমুজের ১০ উপকারিতা সহ কিছু অপকারিতা, তরমুজের বীজ খাওয়ার গুনাগুন, পুষ্টিগুণ ইত্যাদি নিয়ে আজকের এই লেখা। আশা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন। 

ভূমিকা

তরমুজ একটি গ্রীষ্মকালীন, রঙিন, লোভনীয়, পুষ্টি সমৃদ্ধ, রসালো, মজাদার, সুস্বাদু ফল। তরমুজ খেতে পছন্দ করেন না এরকম ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। গ্রীষ্মকালে সখ করে হোক অথবা আমাদের তৃষ্ণা নিবারণের কারণেই হোক আমাদের খুব পরিচিত পছন্দের একটি ফল তরমুজ। আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরমুজের চাষ হয়। বেশ কিছু জাত থাকলেও মূলত তেমন কোন পার্থক্য থাকে না। সাধারণত বড় তরমুজ হলে ভেতরটা বেশ লাল হয় এবং রসালো হয়। বাইরের সবুজ এবং ভেতরে লাল এর কম্বিনেশন যে কারো নজর কাড়ে।

তরমুজের পুষ্টি উপাদান

একটি তরমুজে বেশিরভাগই পানি থাকে অর্থাৎ প্রায় ৯০% এবং প্রায় ৯-১০% এর মত কার্বোহাইড্রেট থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম তরমুজে নিচের উপাদান গুলো থাকে

উপাদান

পরিমান

পানি

৯০%

ক্যালসিয়াম

১০ মিলিগ্রাম

চিনি 

৬.২ গ্রাম

চর্বি

০.২ গ্রাম

ফাইবার 

০.৪ গ্রাম

ম্যাগনেসিয়াম

১৫ মিলিগ্রাম

প্রোটিন

০.৬ গ্রাম

ক্যালরি

৩০ গ্রাম

সোডিয়াম 

১ মিলিগ্রাম

কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা 

১০ গ্রাম


এছাড়া তরমুজে বিভিন্ন ভিটামিন যেমন ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ৫, ভিটামিন সি এবং বিভিন্ন খনিজের মধ্যে তামা, পটাশিয়াম রয়েছে।
তরমুজের ১০ উপকারিতা সহ কিছু অপকারিতা

তরমুজ খাওয়ার নিয়ম

আসলে তরমুজ কোন ঔষধি ফল নয় যেটা খাওয়ার কোন নির্দিষ্ট নিয়ম থাকবে। তবে বিভিন্নভাবে আমরা তরমুজ খেয়ে থাকতে পারি। যেমন- সরাসরি আমরা তরমুজ খেতে পারি। আবার তরমুজ টুকরো টুকরো করে কেটে তার সাথে চিনি এবং এক চিমটি লবণ দিয়ে জুস করেও খেতে পারি। আবার অনেকে দুধের সাথে তরমুজ মিশিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে ফলের রস হিসেবেও খেয়ে থাকেন।

তরমুজের ১০ উপকারিতা

তরমুজ দেখতে যেমন সুন্দর, খেতে যেমন লোভনীয় তেমনি এর গুনাগুনের শেষ নেই। এগুলোর মধ্যে থেকেই তরমুজের ১০ উপকারিতা সম্পর্কে আজকে আমরা জানব। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই।

বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান
তরমুজে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম সহ আরো বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। ফলে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার জন্য এটা খুব পুষ্টিকর একটি ফল হতে পারে।
হার্ট ভালো রাখে
গবেষণা থেকে জানা যায়, কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তরমুজে বিদ্যমান লাইকোপেন নামক উপাদান।
শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করে
তরমুজের প্রায় ৯০% পানি হওয়ায় বোঝা যাচ্ছে এটি আমাদের শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। মনে একটি প্রশ্ন জাগতে পারে পানির চাহিদা পূরণ করতে আমরা পানি খেতে পারি তরমুজ কেন? আসলে পানি খেলে খুব দ্রুত হজম হয়ে যায় কিন্তু তরমুজ খুব দ্রুত হজম হয় না বিধায় শরীরে বেশ কিছুক্ষন এটি থাকে এবং আমাদের শরীরে পানির চাহিদা পূরণ করে।
ব্যথা নাশক
শরীরে বিভিন্ন রোগের কারণে আমাদের অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদী ব্যথায় ভুগতে হয়। তরমুজে বিদ্যমান ভিটামিন সি, লাইকোপেন উপাদান ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। তাছাড়া তরমুজ একটি ভালো এন্টিঅক্সিডেন্ট হওয়ায় এটি ছোটখাটো অনেক রোগ থেকে আমাদেরকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।  
মরণব্যাধি ক্যান্সার রুখে দেয়
চূড়ান্ত ফল পাওয়া না গেলেও গবেষণার প্রাথমিক পর্যায় থেকে জানা যায়, বিভিন্ন ক্যান্সার বিশেষ করে প্রোস্টেট এবং মলদ্বারে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে তরমুজে বিদ্যমান লাইকোপেন ও কিউ কারবিটাসিন ই নামক উপাদান কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পারে।

জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থাগুলোর কার্যাবলী সম্পর্কে জেনে নিন 

পেশির স্বাস্থ্য ভালো রাখে
ব্যায়ামের সময় পেশি সংবেদনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি পেশির বিভিন্ন ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে তরমুজে বিদ্যমান অ্যামাইনো এসিড।
হজম প্রক্রিয়ার ত্বরান্বিত করে
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পানির গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান মলত্যাগকে সহজতর করে। তরমুজে ৯০ শতাংশ পানি হওয়ায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে মালত্যাগে সাহায্য করে।
ত্বকের যত্ন নেয়
ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি বিভিন্নভাবে ত্বকের যত্ন নিয়ে থাকে। যেমন ভিটামিন সি ত্বকের মৃত কোষ গুলোকে ফেলে দিয়ে ত্বককে মসৃণ করে, ত্বক থেকে ব্রণ দূর করে, কালো ছাপ দূর করতে সাহায্য করে। তরমুজে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি রয়েছে।
গর্ভবতী মায়েদের উপাদেয় ফল
গর্ভবতী মায়েদের তরমুজ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসক। কারণ তরমুজের ভেতরে বিদ্যমান পানি গর্ভবতী মায়েদের শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি শরীর ফোলা অবস্থা দূর করতেও সাহায্য করে।
দৃষ্টিশক্তি লোপ হওয়া এড়ায়
বয়স্কদের দৃষ্টিশক্তি লোপ পেয়ে যাওয়া অন্যতম একটি কমন সমস্যা। এই সমস্যা দূর করতে সাহায্য করতে পারে তরমুজে বিদ্যমান লাইকোপেন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তবে এ বিষয়ে আরো বিশদ গবেষণা প্রয়োজন।

তরমুজের অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

সাধারণত তরমুজ খেলে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না। তবে শরীরে বিশেষ কিছু সমস্যা থাকলে তখন কিছু অপকারিতা দেখা দেয়। যেমন-
  • ১০০ গ্রাম তরমুজে প্রায় ১০ গ্রামের মত কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের শর্করা অর্থাৎ গ্লুকোজের মাত্রা এমনিতেই অনেক বেশি থাকে। উচ্চমাত্রার ডায়াবেটিস সম্পন্ন কোন ব্যক্তি যদি তরমুজ খায় তবে তার বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেবে।
  • তরমুজে বিদ্যমান টাইরামাইন এমাইনো এসিড মাইগ্রেনের সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • কারো কারো ক্ষেত্রে তরমুজ ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) বা হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এতে পেটের ফোলাভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া হতে পারে।

রাতে তরমুজ খেলে কি হয়

আসলে তরমুজ একটি সাধারণ উপকারী ফল। এটি খেলে তেমন কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নাই তবে কারো কারো ক্ষেত্রে রাতে বা সন্ধ্যার পর তরমুজ খেলে কিছু কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন-
  • যেহেতু সন্ধ্যার পরে আমাদের কাজকর্ম, হাঁটা চলা কমে যায় তাই তরমুজে বিদ্যমান সাধারন চিনি সহজে হজম হয় না। ফলে রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
  • রাতে তরমুজ খেয়ে ঘুমালে মাঝরাতে প্রস্রাবের কারণে ঘন ঘন উঠতে হতে পারে। এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
  • রাতে তরমুজ খেলে তরমুজে বিদ্যমান সামান্য পরিমাণ কিছু এসিড পেটের হজম ব্যবস্থা দুর্বল করে এসিডিটি বা পেটে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
তাহলে তরমুজ কখন খাবেন? দিনের যেকোনো সময় তরমুজ খেতে পারেন। তবে সকালে তরমুজ খাওয়া উত্তম। কারণ তরমুজ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন, এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় সকালে খেলে এটি সারাদিন আমাদের শরীরের শক্তি যোগাবে।

তরমুজের বীজের উপকারিতা

  1. যেকোনো উদ্ভিদের বীজে রয়েছে জিংক। তরমুজের বীজেও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই তরমুজের বীজও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  2. ম্যাগনেসিয়ামে ভরপুর তরমুজের বীজ রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রেখে হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং হৃদপিন্ডের গতি স্বাভাবিক রাখতেও সাহায্য করে।
  3. তরমুজের বীজে বিদ্যমান প্রোটিন ও ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বক এবং চুল সুস্থ রাখে। ত্বকের ব্রণ দূর করে ত্বককে মসৃণ করে।
  4. আমরা জানি আশ জাতীয় খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। তরমুজের বীজে পর্যাপ্ত পরিমাণে আশ থাকায় তা খাবার হজম করে এবং পেট পরিষ্কার রাখে।
  5. হাড়কে মজবুত রাখতে এবং পেশীর কার্যকারিতা বাড়ানোর পাশাপাশি স্নায়ু সচল করতে তরমুজে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  6. আপেলের বীজে বিদ্যমান সায়ানাইড এর মত ক্ষতিকর কোন উপাদান তরমুজের বীজে নেই। তরমুজের বীজ দাঁত ভালো রাখতেও সাহায্য করে।

কিভাবে খাবেন তরমুজের বীজ

তরমুজের বীজ খাওয়ার কথা শুনলে অনেকে দ্বিধায় পড়ে যান কিভাবে খাবেন? এটি আসলে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত রুচির উপর নির্ভর করে। তরমুজের বীজ বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। তরকারির সাথে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে। আবার রোদে বীজ ভালোভাবে শুকিয়ে ব্লেন্ড করে সালাদের সাথে বীজের গুঁড়া মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে পুষ্টিগুণের কথা বিবেচনা করে অনিচ্ছা সত্ত্বেও জোর করে বা অরুচি করে খাওয়া উচিত নয়, এতে উপকারের চাইতে অপকারীতাই পাওয়া যাবে।
তরমুজের ১০ উপকারিতা সহ কিছু অপকারিতা

শেষ কথা

তরমুজ একটি সুমিষ্ট এবং রসালো ফল হওয়ায় সকলেরই পছন্দ। তবে যে কোন খাবারের মতোই তরমুজ সঠিক পরিমাণে এবং সঠিকভাবে খাওয়া উচিত। একবারে অনেক পরিমাণে না খেয়ে অল্প অল্প করে বারে বারে তরমুজ খাওয়া উচিত।
তরমুজের ১০ উপকারিতা সহ কিছু অপকারিতা এবন বেশ কিছু তথ্য এই আর্টিকেলে জানানোর চেষ্টা করলাম। ভালো লেগে থাকলে শেয়ার করতে পারেন এবং কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url