মোজার দুর্গন্ধ থেকে চির মুক্তি

মোজা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন নি এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আমাদের প্রয়োজনে মোজা পরতে হয় আবার বেশিক্ষণ পরে থাকলেও দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় বিভিন্ন কারণে।
মোজার দুর্গন্ধ থেকে চির মুক্তি

মোজায় কেন দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় এবং মোজার দুর্গন্ধ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি কি সে বিষয়ে আজকের এই আর্টিকেলে বিস্তারিত লেখা হয়েছে। আশা করি আপনারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।

ভুমিকা

মোজা আমাদের একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পোশাক। বিভিন্ন দরকারে আমাদের মোজা ব্যবহার করতে হয়। শীতকালে আমাদের ঠান্ডা নিবারণের জন্য মোজা পরতে হয়। এছাড়াও আমরা অফিস আদালতে স্কুল কলেজে যাই তখন অবশ্যই আমাদের জুতার সাথে মোজা পরতে হয়।
কিন্তু এই মোজা নিয়ে আমাদেরকে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। মোজা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন এরকম মানুষের সংখ্যা বর্তমানে অনেক। বিড়ম্বনা টা কি? মোজা অনেকক্ষণ পরে থাকলে একটা দুর্গন্ধ তৈরি হয়।

জুতা বা মোজায় দুর্গন্ধ হয় কেন?

  • চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে জুতা এবং মোজা পরার পরে পা একটি আবদ্ধ অবস্থায় পড়ে যায় যেখানে বাইরে থেকে আলো বাতাস লাগেনা। এর ফলে পায়ের গ্রন্থিগুলো থেকে অতিরিক্ত ঘাম নিঃসরণ হতে থাকে এবং এই ঘামের সাথে তখন ব্যাকটেরিয়া অথবা ছত্রাক একীভূত হয়ে একটা দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়।
  • যাদের পা ঘেমে যাওয়ার সমস্যা আছে তাদের হর হামেশাই এই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।
  • মোজার দুর্গন্ধের কারণে আমাদের জুতা বা স্যান্ডেলও দুর্গন্ধ হয়ে যায়।
  • এছাড়াও অন্য কারণের মধ্যে রয়েছে অপরিষ্কার থাকা অর্থাৎ পা ভালো করে পরিষ্কার না করা অথবা একই মোজা বা জুতা পরপর কয়েক দিন পরা।
  • বিভিন্ন ফাংগাল ইনফেকশন
  • ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন ইত্যাদি।

কিছু ঘরোয়া পদ্ধতির মাধ্যমে মোজার দুর্গন্ধ দূর করার উপায়

  • মোজার দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পেতে সবার প্রথমে আমাদের যেটা করতে হবে সেটা হল জুতো বা স্যান্ডেল পরার আগে অর্থাৎ মোজা পরার আগে আমাদের পা খুব ভালো মতো পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। এরপরে পা ভালো করে শুকিয়ে যাওয়ার পর তারপরে আমরা জুতা বা স্যান্ডেল পরব।
  • আপনার যদি পা ঘেমে যাওয়ার সমস্যা থেকে থাকে তবে অবশ্যই আপনাকে মোজা পরিবর্তন করতে হবে অর্থাৎ আজকে যে মোজা পরলেন আগামী কালকে সেই মোজা পরবেন না। একেকদিন একেক মোজা পরতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাদের পাচ থেকে ছয় জোড়া মোজা রাখা উচিত অর্থাৎ প্রত্যেকদিন একেক জোড়া মোজা পরবেন।
  • প্রতিদিন বাইরে থেকে এসে যে মোজাটা খুলবেন সেটা অবশ্যই ভালো করে পরিষ্কার করবেন এবং সেটা সম্পূর্ণভাবে ভাবে শুকাতে হবে যদি মোজা ভেজা ভেজা অবস্থায় থেকে যায় তবে সেখানে কিন্তু মোজার সহজেই দুর্গন্ধ হয়ে যাবার একটা সম্ভাবনা থাকবে।
  • মোজা পরিবর্তনের মত আপনার জুতা বা স্যান্ডেলও পরিবর্তন করতে হবে অর্থাৎ আজকে যে স্যান্ডেল বা জুতা পরলেন সেটাই আগামী কালকে পরা থেকে বিরত থাকুন। আপনার পা যদি বেশি ঘেমে থাকে তাহলে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন রোদে আপনার জুতা বা স্যান্ডেল শুকিয়ে নিন।
  • মোজার দুর্গন্ধ এড়াতে আরেকটি সহজ পদ্ধতি হলো আপনি যখন মোজা পরবেন মোজার উপরে আপনার যেকোনো ধরনের টেলকম পাউডার বা বোরিক অ্যাসিড ছিটিয়ে দিতে পারেন। একইভাবে আপনি যে জুতা পরতে যাচ্ছেন সেই জুতার ভেতরেও সামান্য একটু পাউডার ছিটিয়ে দিলে আপনি দুর্গন্ধ থেকে রেহাই পাবেন।
  • প্রত্যেকবার পা ধোয়ার পরে পা ভালো করে শুকাতে হবে কারণ পা যদি ভেজা থাকে তবে সেখান থেকে অনেক ধরনের ইনফেকশন হতে পারে।
  • প্লাস্টিকের জুতা বা স্যান্ডেল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন কারণ প্লাস্টিক তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের ফসিল ফুয়েল বা বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে যা ঘাম উৎপন্ন করতে সহায়তা করে।
  • দিনে একবার হলেও খোলা বাতাসে খালি পায়ে হাঁটার চেষ্টা করুন। এতে বাইরের প্রাকৃতিক যে বাতাস সেটা আপনার পায়ের যদি কোন ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস থেকে থাকে তবে সেটাকে ধ্বংস করে।
  • চেষ্টা করুন সব সময় চিকন উল বা সিনথেটিক কাপড়ের মোজা পরার। বিরত থাকুন সুতি কাপড়ের তৈরি মোজা পরা থেকে কারণ সুতি কাপড়ের তৈরি মোজা আদ্রতা বেশি শোষণ করে ফলে পা বেশি করে ঘামিয়ে ফেলে। একদমই পড একদমই পরবেন না নাইলন বা পলেস্টারের তৈরি মোজা।
  • অ্যালকোহল যুক্ত জীবাণুনাশক (Disinfectant) ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে তাই জুতা পরার আগে জীবাণুনাশক স্প্রে করে নিতে পারেন।
  • জুতার ভেতরে অল্প পরিমাণ বেকিং সোডা ব্যবহার করেও আপনি দুর্গন্ধ থেকে রেহাই পেতে পারেন। এছাড়াও বেকিং সোডার সাথে লেবুর কিছু রস মিশিয়ে কিছুক্ষণ পায়ে মালিশ করে রেখে দিতে পারেন তারপর পা ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিতে হবে।
  • কুসুম গরম পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে তাতে যদি কিছুক্ষণ পা ডুবিয়ে রাখেন তবে পায়ের দুর্গন্ধ থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে কেননা লবণ ছত্রাকের সংক্রমণ রোধ করে।
মোজার দুর্গন্ধ থেকে চির মুক্তি

মন্তব্য

অন্যান্য পোষাকের মত মোজা বা জুতাও এক ধরনের পোষাক। অন্যান্য পোষাকের মত জুতা বা মোজাও সব সময় পরিষ্কার রাখা উচিত। উপরের পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করার পরেও যদি আপনাদের কেউ কোন উপকার পেয়ে না থাকেন অর্থাৎ পা বা মোজার দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি না পেয়ে থাকেন তবে অবশ্যই আপনাদের একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
লেখাটি পড়ে সামান্য উপকারও যদি হয়ে থাকে তবে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url