রাগ নিয়ন্ত্রন করবেন কেন? নিয়ন্ত্রণের ১২টি কার্যকরী উপায় জানুন
রাগ শব্দটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। আমরা যখন তখন যেখানে সেখানে যে কারো উপর যে কারো কথায় বা আচরণে হুটহাট করেই রেগে যায়। তবে রাগের পরে আমরা কখনো চিন্তা করে দেখি না যে আমরা রাগলাম কেন। আপনি কখনো কি নিজেকে প্রশ্ন করে দেখেছেন যে আপনি রাগ নিয়ন্ত্রণ করবেন কেন?
রাগের কারণ নিয়ে গবেষণা না করলেও রাগ করাটা যে ভালো না এটুকু আমরা সবাই জানি। আজকের এই লেখায় আমরা আলোচনা করব রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়, রাগের ফলে কি কি ক্ষতি হয় আমাদের। আশা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে লেখাটি পড়বেন।
রাগ বা ক্রোধ
বাংলায় রাগ বা ক্রোধ আর ইংরেজিতে Anger. রাগ একটি অত্যন্ত সাধারণ অনুভূতি। রাগে না এরকম মানুষ পৃথিবীতে বিরল। রাগ বা ক্রোধ মানুষের এমন একটি মানসিক অবস্থা যখন প্রাকৃতিকভাবে মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভোগে অথবা কারো কথায় বা আচরণে তার তীব্র বিরোধিতা প্রকাশ করে। মানুষ তখনই রাগ করে যখন কোন কিছু তার মনের অনুকূলে ঘটে না।
মানসিক সমস্যা হলেও শরীরের উপরেও রাগের রয়েছে বিরুপ প্রভাব। ক্রোধ বা রাগ থেকে দুই পক্ষের ব্যক্তির মধ্যে একটি অস্বস্তিকর অবস্থায় সৃষ্টি হয়। রাগ প্রকাশিত হয় উচ্চস্বরে কথা বলার মাধ্যমে, হাতাহাতির মাধ্যমে, অকথ্য গালাগালির মাধ্যমে, এমনকি হত্যার মাধ্যমে। যদিও রাগ কমে যাওয়ার পর শান্ত ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি রাগের বিপরীতে অনেক যুক্তি দেখান তারপরেও রেগে যাওয়াটা কোন সমাধান হতে পারে না।
রাগের সময় রাগান্বিত ব্যক্তি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এতে করে সেই ব্যক্তির মানসিকতার পাশাপাশি সামাজিকভাবেও একটি বিরূপ বা নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। মানসিক এবং সামাজিক সুস্থতার জন্য রাগের নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি।
রাগ নিয়ন্ত্রন করবেন কেন
পৃথিবীতে সব জিনিসেরই ভালো দিক এবং মন্দ দিক থাকে। তবে রাগ এমন একটি বিষয় যার আসলে কোন ভালো দিক নেই। রাগের শুধুই অপকারিতা এবং খারাপ দিক বিদ্যমান। রাগের ফলে কি কি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এবং রাগ নিয়ন্ত্রন করবেন কেন সংক্ষেপে জেনে নিন।
- একটি অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়
- সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়
- হার্ট অ্যাটাক হতে পারে
- মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণও হতে পারে
- স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যেতে পারে
- রক্তে সুগারের তারতম্য দেখাতে পারে
- জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পেতে থাকে
- হিতাহিত জ্ঞান বুদ্ধি লোপ পায়
- রাগ কমে গেলে অনুশোচনা করতে হয়
- হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায়
- অ্যাড্রিনালিন এবং নোর অ্যাড্রেনালিন এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়
- সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়
- বড়দের রেগে যেতে দেখলে ছোটরাও রাগের মতো খারাপ অভ্যাস রপ্ত করে ফেলে
- পারিবারিক পরিবেশের অবনতি ঘটে
রাগ নিয়ন্ত্রণ করার ১২ টি কার্যকরী উপায়
প্রিয় পাঠক রাগ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী কেন আশা করি উপরের পয়েন্ট গুলো দেখে বুঝতে পেরেছেন। তাই এবারে আসুন রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায় গুলো জেনে নেই।
দৃঢ় সংকল্প করুনঃ রাগ নিয়ন্ত্রণের সবগুলো উপায় এর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী হচ্ছে দৃঢ় সংকল্প করা অর্থাৎ স্থির করতে হবে যে আপনি কখনোই রাগবেন না পরিস্থিতি যেমনই হোক। রেগে যাওয়ার মুহূর্তে যদি আপনি স্মরণ করতে পারেন আপনার দৃঢ় সংকল্পের কথা তবে পরবর্তী ধাপগুলো যে কোনোটা সহজে কাজে লাগাতে পারবেন।হাসুনঃ সবসময় হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করবেন। কারো কথায় বা আচরণে যদি আপনি রেগে যেতে শুরু করেন তবে আপনি হাসতে শুরু করুন। হাসতে ইচ্ছা না করলেও জোর করে হাসুন, অকারনে হাসুন আপনার রাগকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।অন্যকে পাগল ভাবুনঃ কারো কথায় বা আচরণে আপনি প্রচন্ড বিরক্তি বোধ করলে আপনি সেই ব্যক্তিটিকে পাগল ভাবা শুরু করেন, কারণ আমরা সবাই জানি পাগলে কিনা করে এবং বলে।প্রস্থান করুনঃ আপনি যদি বুঝতে পারেন যে আপনি রেগে যাচ্ছেন তবে অপর প্রান্তের ব্যক্তির কথা শোনার জন্য এক সেকেন্ডও খরচ না করে সাথে সাথে সেই জায়গা থেকে প্রস্থান করুন। প্রয়োজনে রাগ কমে গেলে পুনরায় এসে তার সাথে বুঝিয়ে কথা বলুন।গণনা শুরু করুনঃ রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে রাগের মুহূর্তে ৫০ থেকে উল্টো করে গণনা শুরু করতে পারেন অর্থাৎ ৫০,৪৯,৪৮,৪৭…….. এভাবে কিছুক্ষণের করতে থাকলে দেখবেন আপনার মনোযোগ সরে গেছে এবং রাগ কমে গেছে।
ঘুমের সঠিক সময় এবং কম ঘুমানোর কুফল
কথা বলুনঃ রেগে যাচ্ছেন বুঝতে পারলে আপনার প্রিয়জনের সাথে সরাসরি অথবা ফোনে কথা বলতে পারেন। আর রাগটা যদি আপনার প্রিয়জনের সাথেই হয়ে থাকে তবে আপনার কোন প্রিয় বন্ধু বা বাবা-মায়ের সাথে কথা বলতে পারেন।পছন্দের কাজ করুনঃ রাগতে না চাইলে আপনার খুব পছন্দের কাজ করতে পারেন যেমন বই পড়া, বাইরে ঘুরতে যাওয়া, মুভি দেখা, মোবাইলে গেম খেলা ইত্যাদি।চোখে মুখে পানি দিনঃ রাগ নিয়ন্ত্রণের একটি মজার উপায় হচ্ছে রেগে যাওয়ার মুহূর্তে আপনি দ্রুত সেখান থেকে সরে গিয়ে আপনার চোখে মুখে পানির ছিটা দিবেন। এতে করে নিজেকে যেমন সতেজ অনুভব করবেন ঠিক তেমনি মনোযোগ সরে গিয়ে আপনার রাগ কমে যাবে।জোরে শ্বাস প্রশ্বাস নিনঃ রাগের শুরুতে আপনি জোরে জোরে শ্বাস এবং প্রশ্বাস নেয়া শুরু করবেন। এতে করে আপনার রাগ যেমন কমবে তেমনি যার কারণে রেগে যাচ্ছেন সেও আপনাকে দেখে থেমে যাবে।উদার হনঃ সামাজিকভাবে এবং ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে ক্ষমা করা একটি মহৎ এবং উদার কাজ। নিজেকে সুস্থ রাখতে এবং নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে মনের তিক্ততা ভুলে গিয়ে ক্ষমা করতে শুরু করুন। মানসিকভাবে যেমন আপনি প্রশান্তি লাভ করবেন তেমনি অনেক বড় গন্ডগোল নিমেষেই মীমাংসা হয়ে যাবে।ধৈর্য ধরুনঃ ধৈর্য আমাদের জীবনে একটি মহৎ গুণ প্রত্যেকটা মানুষের উচিত ধৈর্যকে ধারণ করার চেষ্টা করা। রেগে যাওয়ার মুহূর্তে ধৈর্য ম্যাজিক এর মত কাজ করে। কারো কথায় বা কাজে আপনি উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন কিন্তু সেই মুহূর্তে যদি আপনি চুপ থেকে ধৈর্য ধরে তার কথা শুনেন তাহলে পরিবেশটা শান্তই থাকবে। দরকার হলে পরবর্তীতে তাকে আপনি বুঝিয়ে বলতে পারেন।নোট করুনঃ উপরের পদ্ধতি গুলো একটি কাগজে নোট করে লিখে রাখুন। রেগে যাওয়ার সময় আপনি কারো কথার উত্তর না দিয়ে আপনার এই নোটটির দিকে চোখ বুলান। প্রথমেই আপনার মনোযোগ সরে যাবে রাগ থেকে দ্বিতীয়ত আপনি যে কোন একটি পদ্ধতি সেই মুহূর্তে অবলম্বন করতে পারেন।
লেখকের মন্তব্য
রাগ মানুষের সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য। আমাদের রাগ হবে এটা স্বাভাবিক। অন্যরা আমাদের উত্তেজিত করুক অথবা আমরা নিজে থেকে উত্তেজিত হয়ে যায় না কেন আমাদের উচিত সবসময় রাগ নিয়ন্ত্রণ করা। রাগের আসলে কোন সুফল নাই, শুধুই কুফল। আপনি যদি রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তবে অবশ্যই আপনি ভালো কিছু আশা করবেন।
আরো জানুনঃ তুলসী পাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা
যারা রাগী মানুষ আছেন অর্থাৎ অল্পতে যারা রেগে যান অথবা আপনার প্রিয়জনের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে চান তারা আশা করি আজকের এই লেখা পড়ে জানলেন রাগ নিয়ন্ত্রন করবেন কেন। উপকার যদি হয়ে থাকে তবে দয়া করে প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন। আর নতুন কোন বিষয়ে জানার থাকলে বা এই লেখার বিষয় কোন মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে মন্তব্য করতে পারেন।
মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url