বাত রোগ কেন হয়- লক্ষন এবং ঘরোয়া চিকিৎসা
মোবাইল ফোনে কথা বলার বিশেষ কিছু আদব কায়দা রয়েছে। সেগুলো কি জানেন?
অনেক সময় হঠাৎ করে বা মাঝে মাঝে আমাদের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা হয়। আমরা হয়তো একটা প্যারাসিটামল খেয়ে নেই কিন্তু জানিনা যে কি কারনে ব্যাথা হচ্ছে। অনেক সময় আমরা ধারণা করে নেই এটা হয়তো বাতের ব্যথা। কিন্তু বাত রোগ কেন হয় এটা আমাদের একদমই জানা নেই।
যারা প্রতিনিয়ত বাতের ব্যথা নিয়ে অসহ্য জীবন পার করছেন অথবা বাত ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় খুঁজছেন তাদের জন্য আমাদের আজকের এই আর্টিকেল। "সচেতনতা" এর আজকের এই লেখায় বাত রোগ কেন হয়, বাত রোগের লক্ষন এবং বাত রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সহ আরো কিছু বিষয়ে বিস্তারিত লিখার চেষ্টা করেছি। আশা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ে দেখবেন।
ভূমিকা
বর্তমানে ডায়াবেটিস উচ্চ রক্তচাপের মতোই একটি আলোচিত শারীরিক সমস্যার নাম বাত রোগ বা বাত ব্যথা। সাধারণত বয়স্ক মানুষদের মুখে শুনে থাকি যে উনি বাতে ভুগছেন। তবে আমাদের অজানার কারণে আমরা হয়তো জানি না যে এই রোগটি আসলেও বয়স্ক ব্যক্তি ছাড়া অন্য কোন কম বয়সী কারো হয় কিনা।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে বাত রোগ যে কোন বয়সেই হতে পারে। বাত ব্যথা মানুষের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বাত একটি সিস্টেমেটিক ডিজিজ অর্থাৎ এক জায়গায় শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
বাত রোগ বা বাত ব্যাথা কি?
বাত রোগের ইংরেজি হল Arthritis। Arthritis শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ Arthro অর্থ সন্ধি বা যোগস্থল এবং Itis অর্থ প্রদাহ থেকে। অর্থাৎ আমাদের হাড়ের সংযোগস্থলে যে ব্যথা বা প্রদাহ হয় তাকে আর্থ্রাইটিস বা বাত রোগ বলে।
বাত রোগ আসলে কোন নির্দিষ্ট একটি রোগ নয় এটি অনেকগুলো রোগের সমন্বয় একটি রূপ মাত্র। শরীরের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ব্যথা হলে এর নামটাও কিছুটা চেঞ্জ হয়ে যায়। যেমন হাঁটুর পেশীতে ব্যাথা হলে সেটাকে বলা হয় রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস।
বাত রোগ কেন হয়
বাত রোগ কেন হয় এই প্রশ্নের নির্দিষ্ট কোন উত্তর নেই তবে গবেষণা এবং চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী বেশ কিছু ধারণা নেয়া যেতে পারে। যেমন-
- রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা বাত রোগ হয় সাধারণত ইউরিক এসিডের অধিক্য থেকে। সাধারণ পর্যায়ে আমাদের মূত্রের সাথে অপ্রয়োজনীয় ইউরিক এসিড বের হয়ে যায়। কিন্তু শরীরে যদি অতিমাত্রায় ইউরিক এসিড উৎপন্ন হয় তবে তা মূত্রের সাথে বের হয়ে যায় না। সেই জমে থাকা ইউরিক অ্যাসিড অস্থির সন্ধি বা পেশির আশেপাশে দিনের পর দিন ক্রিস্টালরূপে জমতে থাকে এবং অস্থিমজ্জা বা পেশীতে ব্যথার সৃষ্টি করে, অনেক সময় ফুলে যায়।
- আবার স্থুলতাকেও চিকিৎসকগণ বাত রোগের জন্য দায়ী করে থাকেন। শরীরের ওজন অতিমাত্রায় বেড়ে গেলে হাঁটুর উপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয় যার ফলে হাঁটুর সংযোগ পেশিতে ব্যথার সৃষ্টি হয়।
- জিনগত কারণ তো আছেই। আপনার বাবা-মা বা দাদা-দাদীর যদি কারো বাত রোগ বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস থেকে থাকে তবে আপনারও বাত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে।
- অলস ব্যক্তিদের বা আমরা যারা শহরে থাকি তাদের বাত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে কারণ আমরা কায়িক পরিশ্রম খুবই কম করে থাকই খুবি।
- আবার ওর অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণেও রেমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের সমস্যা হতে পারে যেমন শ্রমিকরা অতিরিক্ত পরিশ্রম করায় তাদের সব সময় হাতের এবং পায়ের সংযোগ বা গিটের উপর চাপ পড়ে।
- বয়স্ক ব্যক্তিদের বাত ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি থাকে কারণ ইতোমধ্যে তাদের হাড়ের অনেকটাই ক্ষয় হয়ে যায়। এছাড়া মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজের পরে হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ায় তাদের বাত ব্যথার উপদ্রব বেড়ে যায়।
- শরীরের অভ্যন্তরীণ একটি কারণ হতে পারে অটো ইমিউন ডিজিজ। অর্থাৎ যেটি বাইরের বিভিন্ন ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া থেকে শরীরকে রক্ষা করে থাকে। তবে অজানা কারণে কখনো যদি এই ইমিউন সিস্টেম আমাদের শরীরের বিরুদ্ধে কাজ করে অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা না করে তখন বাত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়ে যায়।
বাত রোগ কত প্রকার
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল রিউমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাক্তার মিনহাজ রহিম চৌধুরীর মতে রিউমাটলজিতে প্রায় ১২০ ধরনের রোগ নিয়ে গবেষণা করা হয় ।রিউমাটোলজি বলতে যে বিভাগে বাত ব্যথার গবেষণা ও চিকিৎসা বিষয়ে বিস্তর গবেষণা চালানো হয়। তবে সংক্ষেপে বলা যেতে পারে নিম্নের উল্লেখিত সম্মিলিত রোগ গুলোই সাধারণত বাত রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
- Spondylitis বা মেরুদন্ড প্রদাহ
- Rheumatoid arthritis বা হাঁটুর অস্থিতে ব্যথা
- Lumbago বা কোমর প্রদাহ
- Gout বা গেটে বাদ
- Urticaria বা আমবাত বা এলার্জি
- Rheumatic fever বা বাতজ্বর
- Septic arthritis বা সংক্রামক বাত
- Osteoarthritis বা অস্থিসংযোগ গ্রন্থি প্রদাহ
- Sciatica বা কোটি স্নায়ু শূল
বাত রোগে আক্রান্ত হওয়ার বয়স
বেশ কয়েক বছর আগে ধারণা করা হতো সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদেরই বাত ব্যথার সমস্যা হয়ে থাকে। ৬০ থেকে ৭০ বছর বা তার বেশি বয়সের ব্যক্তিরা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এ আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে বিভিন্ন বয়সের ব্যক্তিদেরই আক্রান্ত হতে দেখা যায় এমনকি শিশুরা পর্যন্ত বাদ যাচ্ছে না।
এর অন্যতম কারণ আমাদের দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থা। পরিশ্রম কম করা এবং পুষ্টিকর খাবার কম খাওয়ার কারণে তিন চার বছরের শিশু থেকে শুরু করে তরুণ সকলেই যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের বাত ব্যাথায় আক্রান্ত হতে পারে।
কি খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে
বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা এড়ানোর জন্য অনেকে পরিমাণে অনেক কম খাবার খেয়ে থাকেন। তারপরও দেখা যায় বাতের ব্যথা অহরহ হয়। খাবারের কারণেও যে বাতের ব্যথা বেড়ে যেতে পারে এটা আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই। জার্নাল অফ নিউট্রিশন ও মেটাবলিজম স্টেট সহ বেশ কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে বিশেষ কিছু খাবার আছে যেগুলো বাতের ব্যথা বাড়িয়ে দিতে সক্ষম। জেনে নিন কি কি খাবার বাত ব্যথা বাড়িয়ে দেয়।
ভুট্টা তেলঃ ভুট্টার তেলের বিষয়ে প্রায় ৯৯% মানুষই জানে না। আর বাংলাদেশের কাছে এটি একদমই অপরিচিত একটি বিষয়। যাইহোক শরীর সুস্থ রাখার জন্য ওমেগা ৬ ফ্যাটি এসিড খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। তবে বিপত্তিটা বাধে তখনই যখন অতিমাত্রায় এই উপাদানটি শরীরে গ্রহণ করা হয়। প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৬ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায় ভুট্টার তেলে। মাত্রাতিরিক্ত ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে বিভিন্ন প্রদাহের সৃষ্টি করে।গরুর মাংসঃ বাংলাদেশের গরুর মাংস সাধারণত লাল মাংস হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে গরুর মাংসে থাকে বিভিন্ন কেমিক্যাল যেমন পিউরিন নাইট্ট্রাইট যেটি বিভিন্ন ইনফ্লামেশন বাড়ানোর জন্য দায়ী। এছাড়াও গরুর মাংসে অবস্থিত টক্সিন গ্লাইকেশন ব্যথা তৈরি করতে সহায়তা করে। শরীরের কোন অংশে যখন ব্যথা হয় তখন লিভারে সি রিয়াক্টিভ প্রোটিন নামে এক প্রকারের প্রোটিন জমা হতে থাকে। গরুর মাংস এই প্রোটিনের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরে ব্যথাও বেড়ে যায়।দুধ জাতীয় খাবারঃ দুধ এবং দুধ জাতীয় খাবারে এক প্রকারের প্রোটিন বিদ্যমান। আমাদের বিভিন্ন অস্থিসন্ধির আশেপাশে যে সকল টিস্যু রয়েছে তাদেরকে এই প্রোটিন অতিমাত্রায় ইরিটেট করে। ফলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন পেশীতে ব্যথা অনুভূত হয়। তাই যাদের বাত ব্যথা বিশেষ করে কোমর ব্যথা বা হাটুতে ব্যথা থাকে তাদের দুধ জাতীয় খাবার গ্রহণের পর ব্যথা বেড়ে যায়।ডিমঃ আমাদের দেশে ডিম একটি অতি পরিচিত পুষ্টিকর এবং সহজলভ্য খাবার। অবাক হবার বিষয় যে ডিম বাদ রোগের জন্য উল্লেখযোগ্য ভাবে দায়ী। গবেষণা থেকে জানা যায় ডিমের কুসুমে বিদ্যমান এরা কিডনিক এসিড নামক ফ্যাটি অ্যাসিড ব্যথা তৈরি করতে সাহায্য করে। তাই যাদের বাতের ব্যথার সমস্যা রয়েছে তারা ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে ডিমের সাদা অংশটি খেতে পারেন।
ইরাকের সাবেক প্রতাপশালী প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসাইন নিন্দিত নাকি নন্দিত ছিলেন?
মিষ্টি খাবারঃ মিষ্টি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার বলতে সেখানে চিনি অথবা সুগার অবশ্যই থাকে। চিনি যুক্ত যে কোনো খাবারে বিদ্যমান সাইটোকাইনস অস্থিসন্ধি এবং মাংসপেশীর ব্যথা বাড়িয়ে দিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে নারীদের বাত রোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকা চিনি জাতীয় খাদ্য বা বিভিন্ন কোমল পানীয়।মদ্যপানঃ মদ্যপান বাতের ব্যথা বাড়িয়ে দেয়। মদ অস্টিও আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।লবণঃ বাতের ব্যথার অন্যতম ভিলেন হলো লবণ। পাতে লবণ খাওয়া বা তরকারিতে বা যেকোনো খাবারে লবণ বেশি করে খেলে লবণের সোডিয়াম বাতের ব্যথা বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
বাতের ব্যথা কমাতে যা খাবেন
প্রাকৃতিক বা ঘরোয়া ভাবে বাতের ব্যথা কমানোর জন্য চিকিৎসক কিছু খাবারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন যেগুলো ব্যথা কমাতে সহায়ক। যেমন-
- ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড বাতের ব্যথা প্রশমনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায় আখরোট, জলপাইয়ের তেলে ইত্যাদিতে।
- রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ব্যথা যদি বেশি হয়ে থাকে তবে আপনি খাবার তালিকায় মাঝেমধ্যে বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ রাখতে পারেন যেমন ম্যাকরেল সার্ডিন, স্যামন ইত্যাদি। এসব মাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ডি বিদ্যমান যা অস্থি সন্ধির স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
- বিভিন্ন সবজির মধ্যে প্রদান নাশক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি আছে ব্রকলির। এতে বিদ্যমান সালফোরাফেন প্রদাহ প্রশমন করতে সাহায্য করে । এছাড়া মটরশুঁটি, পালংশাকে বিদ্যমান এন্টিঅক্সিডেন্ট বাতের ব্যথা কমাতে খুবই উপকারী।
- রিউমাটয়েড আর্থাইটিসের ব্যথা কমাতে বিভিন্ন মসলা হতে পারে আপনার বন্ধু যেমন আদা, রসুন, পেঁয়াজ ,দারুচিনি ইত্যাদিতে রয়েছে প্রদান নাশক বিশেষ কিছু গুণ। পেনিসিলিনের মত কার্যকরী রসুন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া বিরোধী।
- প্রচুর পরিমাণে ছোট মাছ খেতে পারেন। এতে একদিকে যেমন আপনার ক্যালসিয়াম ঘাটতি পূরণ হবে অন্যদিকে আপনার চোখ ভালো থাকবে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হলে আপনার বেশি বা অস্থির ব্যথা কমতে শুরু করবে।
- দুধকে বলা হয় আদর্শ খাবার কারণ এতে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব রকমের খনিজ পদার্থ ভিটামিন ভিটামিন বিদ্যমান। তবে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি যা আমাদের হাড় ক্ষয় রোধ হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই বাত ব্যথা রোধে পরিমিত পরিমাণে প্রত্যেকদিন দুধ খেতে পারেন ।
- আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় প্রাকৃতিক ব্যথা নাশক হিসেবে হলুদের পরিচিতি প্রাচীনকাল থেকেই বিদ্যমান। হলুদে বিদ্যমান কার কিউমিন উপাদান এন্টিবায়োটিকের মত কাজ করে অস্থিসন্ধি বা পেশির বিভিন্ন ব্যথা উপশম করে।
বাত রোগের লক্ষণ
বাত রোগের প্রধান লক্ষণই হলো শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা অনুভূত হওয়া। শরীরের বিভিন্ন অংশ বলতে যে অংশে হাড় রয়েছে বা হাড়ের সংযোগস্থল বা অস্থি পেশির বেশি ব্যবহার হয় সেসব স্থলের ব্যথা বোঝায়। যেমন
- গিট ফুলে যাওয়া,
- হাতের কনুইতে ব্যথা হওয়া,
- উঠতে বসতে হাঁটুতে ব্যথা হওয়া,
- গিটে ব্যথা সমস্যা,
- অনেকক্ষণ বসে থাকার পর দাঁড়াতে ব্যথা হওয়া,
- হাত-পা ঝিমঝিম করা,
- চোখ লাল হয়ে যাওয়া,
- সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে বা নামতে কষ্ট হওয়া,
- পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া,
- শরীরের যে কোন অংশ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি
এসবই মূলত বাত রোগের লক্ষণ। উপরের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলেই বুঝবেন আপনি এই রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই আপনাকে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বাত রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
উপরের আলোচনা থেকে আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি বেশ কিছু সমস্যা বা রোগের সমন্বয়কে একসাথে বাত রোগ বলা হয়।যেহেতু বাত ব্যথায় বিভিন্ন রকম সমস্যা বা উপসর্গ দেখা দেয় তাই এর সুনির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা বা ওষুধ নেই। একমাত্র চিকিৎসকই নির্ধারণ করতে পারেন একজন বাত রোগীর জন্য চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে সাথে কি ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।
তাই সেদিকে আমরা আলোচনা না করে বরং চলুন আজকে জেনে নেই ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিছু ব্যায়াম বা চিকিৎসা যার মাধ্যমে আমরা প্রাথমিক অবস্থায় কিছুটা উপকৃত হতে পারি।
- বাতের ব্যথা শুরু হলে আপনাকে বিশ্রাম স্বাভাবিকের চাইতে একটু বেশি নিতে হবে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিয়ে যদি দেখেন যে আপনি সুস্থ থাকছেন তবে আপনাকে নিজের টাইমটেবল সেট করে নিতে হবে কখন কিভাবে পরিশ্রম করবেন আর কখন কতটা বিশ্রাম করবেন।
- আপনার ওজন যদি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তবে অবশ্যই আপনাকে নিয়মিত ব্যায়াম করে বা স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেয়ে ওজন কমাতে হবে। স্থুলতা শুধু বাথরোগের সৃষ্টি করে তাই নয় আরো নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি করে শরীরের।
- আপনি যদি কর্ম বিমুখ হন এবং অকারণে যদি আপনার শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা হয় তবে আজ থেকে অলসতা পরিহার করুন। পর্যাপ্ত পরিমান ঘুমানোর পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে পরিশ্রম করতে হবে।
- বাজারে ব্রেসলেট এর মত কিছু ডিভাইস পাওয়া যায় যেগুলো আপনার হাতের জয়েন্টে বা হাঁটুর উপরে পরে থাকলে ব্যথা কিছুটা কম হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে একটানা অনেকক্ষণ এসব ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে না।
- গোসল করার সময় বা গরম পানিতে সুতি কাপড় চুবিয়ে ব্যথার স্থানে কিছুক্ষণ পরপর সেক দিলে উপশম পাওয়া যেতে পারে। একইভাবে আইস ব্যাগ দিয়ে ব্যথার স্থানে যদি ঠান্ডা চাপ দেয়া হয় সে ক্ষেত্রেও প্যাঁশির ব্যথা কিছুটা কমে। তবে আপনার জন্য গরম সেক বা ঠান্ডা চাপ কোনটা দিলে ভালো হবে সেটা অবশ্যই একজন ফিজিওথেরাপিস্ট এর কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন।
- বাতের ব্যথা যদি আপনার স্বাভাবিক হাঁটাচলা কে ব্যাহত করে তবে আপনি অবশ্যই সহায়ক কিছু যন্ত্রপাতি যেমন লাঠি বা ক্রাচ ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ব্যথার জায়গার উপর চাপ কম পড়ে বিধায় ব্যথা কিছুটা কম অনুভূত হবে।
- সহজ কিছু ঘরোয়া ব্যায়ামের মাধ্যমে বাত ব্যথার কিছুটা উপশম পেতে পারেন। ব্যায়াম করলে আপনার বেশি সচল হবে এবং শক্তিশালী হবে যার ফলে আপনার শরীরের ওজন বেশি বহন করবে এবং আপনার গিরার উপর চাপ কমাবে। নিচে কিছু ব্যায়ামের নমুনা দেওয়া হলো।
- কাঠের চেয়ারে সোজা হয়ে বসে আপনার পায়ের গোড়ালিতে ২/৩ কেজি ওজনের মাটি বা বালু রেখে পা সোজা করে উপরের দিকে তুলে ধরে রাখুন, ১০ সেকেন্ড পরে পা নামিয়ে ফেলুন।
- সুতি কাপড় বা দোয়ালে ভাঁজ করে হাঁটুর নিচে রেখে চাপ দিয়ে পাঁচ থেকে ১০ সেকেন্ড রাখুন তারপরে ছেড়ে দিন। এভাবে দিনে চার থেকে পাঁচবার করুন।
- বিছানে বা চেয়ারে সোজা হয়ে বসে একটা কাপড় বা গামছা আপনার পায়ের পাতায় বেঁধে আপনার দিকে কাপড়টা ধরে টানুন। এভাবে পাঁচ থেকে দশ সেকেন্ড রেখে ছেড়ে দিন।
- বিছানার উপর একদম চিত হয়ে শুয়ে প্রথমে ডান পা সোজা করে উপরে তোলার চেষ্টা করুন। পাঁচ সেকেন্ড রাখার পর ডান পা নামিয়ে ফেলুন। এরপর একইভাবে বাম পা উপরে তুলুন এবং নামান। এইভাবে দুই থেকে তিন মিনিট করতে থাকুন।
লেখক এর মন্তব্য
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের মত বাত রোগ কেও সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব নয় বরং এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় মাত্র। আমাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, পরিশ্রম করা, পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নেওয়া, সময় মত সময়ের কাজ করা, মানসিকভাবে সুস্থ থাকা সবকিছু মিলিয়েই আমরা বাত রোগ থেকে দূরে থাকতে পারি।
যাইহোক, বাত রোগ কেন হয়, বাত রোগের লক্ষন এবং বাত রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করলাম। আজকের এই লেখার উদ্দেশ্য হল সবাইকে সাবধান করা যাতে করে ভবিষ্যতে আমরা বাত রোগে আক্রান্ত না হই এবং তাদেরকে সচেতন করা যারা বাত ব্যথায় আক্রান্ত হয়েছেন আর যেন পরবর্তীতে কোন ক্ষতি না হয় বাতের কারণে। লেখাটি যদি ভালো লেগে থাকে বা আপনাদের বিন্দুমাত্র কোন উপকার হয়ে থাকে লেখাটির মাধ্যমে তবে লেখাটি শেয়ার করতে পারেন আপনার বন্ধুবান্ধব, প্রিয়জন, আত্মীয় স্বজনের সাথে।
মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url