কাঁচা গাজর খাওয়ার উপকারিতা এবং ক্ষতিকর দিক
মোবাইল ফোনে অফিসিয়ালি কথা বলার শিষ্টাচার | জেনে নিন ১৩টি আদব
গাজরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই কোন ধারণা নেই। তাদের সহযোগ্য অথবা খেতে ভালো লাগে এই ধারণা নিয়ে আমরা অনেকেই বাজার থেকে কিনি এবং খাই। কিন্তু কাঁচা গাজর খাওয়ার উপকারিতা যে কত সেটা আমাদের ধারণার বাইরে। শুধুমাত্র শরীরের পুষ্টিগুণ পূরণের জন্য নয় আরো অনেক কাজেই গাজর আমাদের প্রয়োজন হয়। যেমন ত্বকের উজ্জ্বলতা এবং সৌন্দর্য বাড়াতে গাজর বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
আবার গাজর খেলে বেশ কিছু সমস্যা ও হয়। যারা গাজর নিয়ে বিস্তারিত সবকিছু জানতে চান তাদের জন্য আমাদের আজকের এই আয়োজন। আজকের এই লেখায় আমরা আলোচনা করব কাঁচা গাজর খাওয়ার উপকারিতা, গাজর বেশি খাওয়ার ক্ষতিকর দিক, আমরা গাজর কি কি উপায়ে খেতে পারি ইত্যাদি এইসব বিষয়ে। আশা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে আজকের এই লেখাটি পড়বেন।
ভূমিকা
গাজর বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য সবজি এবং ফল। গাজর চেনেনা বা গাজর খেতে পছন্দ করে না এরকম ব্যক্তি বিরল। শুধু রংয়ের জন্যই যে গাজর অনেকে পছন্দ করে তাই নয় একটি স্বাদেও অনন্য। এটি দেখতে যেমন সুন্দর এটি পুষ্টিগুণেও ভরপুর। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার খাদ্য তালিকায় পছন্দের একটি নাম গাজর। গাজর জনপ্রিয় হওয়ার কারণ যে শুধু সহজলভ্য তাই নয় এটির জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ হচ্ছে এটি কাঁচা এবং রান্না দুইভাবে খাওয়া যায়।
২০ হাজার টাকার ভিতরে পছন্দ করার মত কিছু স্মার্টফোনের আকর্ষণীয় ফিচার দেখে নিনগাজর এর পরিচিতি
গাজরের বৈজ্ঞানিক নাম Daucus Carota। এই ফলের উৎপত্তি মূলত ইউরোপ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া। তবে বর্তমানে সারা পৃথিবীতেই গাজরের চাষ হয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ গোটা পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক গাজর উৎপন্ন হয় একমাত্র চীন দেশে। গাজন মূলত একটি শীতকালীন ফল হলেও বর্তমানে সারা বছরই গাজর চাষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। চীনে সাদা লাল কমলা বিভিন্ন রঙের গাজর হয়ে থাকলেও বাংলাদেশের সাধারণত কমলা রঙের গাজরই উৎপাদন হয়।
গাজরে কি কি থাকে
বিটা ক্যারাটির নামক একটি উপাদানের কারণে গাজরের এত সুন্দর কমলা রঙের হয়। যেকোনো রঙিন ফলে সাধারণত ভিটামিন এ থাকে। গাজর একটি রঙিন ফল হওয়ায় গাজরে ভিটামিন এ এর পাশাপাশি ভিটামিন কে১, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি৫, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি৯, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই আছে।
গাজরে বিভিন্ন খনিজ পদার্থের মধ্যে রয়েছে জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, লৌহ, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি। তাছাড়া গাজরে ফাইবার, শর্করা, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্যাট, পানি, প্রোটিন, চিনি সহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান।
গাজর খাওয়ার নিয়ম
আসলে গাজর খাওয়ার সে রকম বিশেষ কোন নিয়ম নেই। এটি অন্য ফলের মতোই সহজ ভাবেই খেতে হয়। তবে গাজর যেহেতু কাঁচা এবং রান্না করে উভয় ভাবে খাওয়া যায় সেই ক্ষেত্রে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। সে নিয়মগুলা আমরা এখন জেনে নেই।
- যে কোন ফলের মতো গাজরও সব সময় পরিষ্কার পানি দিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে ধুয়ে খেতে হয়
- গাজর রান্না করতে চাইলে বেশিক্ষণ রান্না করা উচিত নয়। এতে এর গুনাগুন নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- কাঁচা গাজর খাওয়ার সময় ছুড়ি বা চাকু দিয়ে গাজরের উপরে পাতলা আবরণ ছিলে খেতে পারেন।
- কাঁচা গাজর কুচি কুচি করে কেটে ব্লেন্ডার ব্লেন্ড করে রস অর্থাৎ গাজরের জুস খেতে পারেন।
- গাজরের হালুয়া খুবই মজাদার একটি খাবার।
- আমাদের দেশে ভাত বা পোলাও এর সাথে সালাদ হিসেবে গাজর ভীষণ জনপ্রিয়।
প্রতিদিন কতটুকু গাজর খাওয়া উচিত
নিঃসন্দেহে গাজর একটি রুচিসম্মত খাবার। আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রতিটি খাবারই স্বাভাবিকভাবে খেতে হবে। পুষ্টিবিদ দের মতে একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন ১০০ গ্রাম গাজর অর্থাৎ মাঝারি আকারের একটি গাজর খেলে শরীরের জন্য উপকারী হবে।
কাঁচা গাজর খাওয়ার উপকারিতা
আমরা হয়তো কখনো গাজর খাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করে দেখিনি। গাজর অত্যন্ত একটি সহজলভ্য এবং রুচিশীল ফল এবং সবজি হওয়ায় আমরা অনেকেই অনেক সময় প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে শখ করে খেয়ে থাকি। কিন্তু গাজরের অনেক গুণাবলী রয়েছে সেটি আমাদের জানা নেই। আসুন আজকে জেনে নেই কাঁচা গাজর খাওয়ার উপকারিতা।
- গাজরের প্রধান উপাদান হচ্ছে পানি এবং কার্বোহাইড্রেট যেটি স্টার্ট এবং শর্করা যেমন সুক্রোজ এবং গ্লুকোজ দিয়ে গঠিত। আমাদের শরীরের জন্য এই উপাদান গুলি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
- খাবার খাওয়ার পর চিনি এবং স্টার্চ এর হজমকে ধীরগতি সম্পন্ন করে রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজন পেকটিন যেটি গাজরের দ্রবণীয় ফাইবারের প্রধান উপাদান।
- গাজরের প্রায় ১০% কার্বোহাইড্রেট থাকে যেটি আমাদের শরীরের ফ্যাট কমাতে খুবই সাহায্য করে।
- গাজরের প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ বা বিটা ক্যারোটিন, লুটেইন রয়েছে যেটি আমাদের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে, চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- বায়োটিন নামের এই ভিটামিন টি আমাদের খাবারের মধ্যে থাকা চর্বি এবং প্রোটিনের বিপাকের প্রক্রিয়াকে সহজ করে।
- আমাদের শরীরে কোন অংশ কেটে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে দরকার ভিটামিন কে১ বা ফাইলোকুইনন দরকার যেটি গাজরে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে।
- পটাসিয়ামের ভালো উৎস গাজর। গাজরে বিদ্যমান পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
- খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরের মত জটিল কাজটি সহজে করে থাকে গাজরে থাকা ভিটামিন বি ৬।
- কম ক্যালরিযুক্ত খাবার হিসেবে গাজর ব্যাপক পরিচিত। এটি অন্য খাবারের ক্যালরি কমাতেও সাহায্য করে। নিয়মিত এবং পরিমাণমতো গাজর খেলে আমাদের ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আমরা গাজরের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে পারি।
- বিভিন্ন হৃদরোগের জন্য উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টেরল দায়ী। গবেষণায় দেখা গেছে যে কোলেস্টেরল কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে গাজর।
- গাজর ক্যারোটিনয়েড সমৃদ্ধ খাবার। এই ক্যারোটিনয়েড বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার যেমন কোলন, পাকস্থলী ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যন্সার, মহিলাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকির হ্রাস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গাজর খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
উপরের আলোচনা থেকে আমরা গাজরের অনেক উপকার জানতে পেরেছি তবে গাজরের ক্ষতিকর দিক আমরা তখনই পাবো যখন আমরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত এটিকে খাব সেটা রান্না করে হোক অথবা কাঁচা। আসুন অতিরিক্ত গাজর খাওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো একটু জেনে নেই।
- গ্রীষ্মকালে আমাদের সালাদ খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় আমরা শসা এবং গাজর দিয়ে সালাদ খেতে পছন্দ করি তবে গরমের দিনে এই গাজর বেশি খেলে অনিদ্রা বা রক্তচাপের সমস্যা হতে পারে।
- অতিরিক্ত গাজর খেলে বাচ্চাদের দাঁত ক্ষয় রোগের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- গাজর বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে এটা যেমন সঠিক ঠিক তেমনি অতিরিক্ত গাজর খেলে অন্ত্রে বিটা ক্যারোটিন অতিমাত্রায় জমে যায় যার ফলে বিভিন্ন ক্যান্সারের সূত্রপাত হতে পারে।
- অতিরিক্ত গাজর আপনার পেটের বিভিন্ন রকম অসুখ যেমন ডায়রিয়া বমি বা বদহজমের মত সমস্যার সৃষ্টি করার জন্য দায়ী থাকে।
- মুখের ত্বককে আরো উজ্জ্বল এবং মসৃণ করার জন্য অতিমাত্রায় গাজর খেলে অনেক সময় হিতে বিপরীত হয় ত্বকের রং ঠ্যাকাসে বা হলদেভাব হয়ে যায়।
- বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করালে অবশ্যই অতিরিক্ত গাজর এড়িয়ে চলতে হবে কারণ গাজরে থাকা বিভিন্ন উপাদান অনেক সময় দুধের স্বাদ নষ্ট করে দেয় ফলে বাচ্চা দুধ খেতে চায় না।
- অনেকের ত্বক খুব সেনসিটিভ থাকে। অতিরিক্ত গাজর অনেকের জন্য এলার্জির কারণ হতে পারে।
লেখকের মন্তব্য
গাজর একটি অত্যন্ত ও পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং সুস্বাদু ফল। অন্যান্য অনেক দামী ফলের ভিড়ে গাজরের মত ফলকে অবহেলা করা একদমই উচিত নয়। প্রতিদিনই আমাদের উচিত গাজর খাওয়া সেটা যে কোন ভাবেই হোক তবে সেটা অবশ্যই যেন পরিমিত পরিমাণে হয়। কোন গর্ভবতী মহিলার অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গাজর খাওয়া উচিত। এছাড়াও আপনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গাজর খেতে হবে।
জনপ্রিয় এবং দক্ষ বস হতে চান? তাহলে মেনে চলুন এই টিপসগুলোকাঁচা গাজর খাওয়ার উপকারিতা, ক্ষতি, খাওয়ার পরিমান সম্পর্কে উপরের বিস্তারিত আলোচনা পড়ে যদি কোন অজানা তথ্য জেনে থাকেন বা কোন উপকার হয় তবে অবশ্যই আপনার প্রিয় জন, বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করতে পারেন আর যদি কোন বিষয়ে আপনার কোন জিজ্ঞাসা থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে মন্তব্য লিখতে পারেন।
মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url