চিনির পরিবর্তে গুড় খাবেন কেন?
চাকরির ইন্টারভিউতে জীবন বৃত্তান্ত সুবিন্যস্ত ভাবে উপস্থাপন করার কৌশল
মিষ্টি প্রিয় বাঙ্গালীদের মিষ্টি খাবার ছাড়া চলে না। মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরীর প্রধান উপকরণ চিনি অথবা গুড়। স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না চিনি খাবেন নাকি গুড় খাবেন? যদি বলা হয় গুড় খেতে তবে দ্বিধায় পড়ে যান চিনির পরিবর্তে গুড় খাবেন কেন?
আবার অনেকেই আছেন যাদের কাছে গুড়ের স্বাদ ভালো লাগে না বা দেখতে ভালো লাগে না। লাভ ক্ষতির হিসাব না করে তাদের চিনি অথবা চিনি দিয়ে তৈরি খাবার খেতে হবে। চিনি নাকি গুড়- এই সংশয় দূর করার জন্যই আজকের এই লেখা। "সচেতনতা" এর আজকের এ পর্বে আমরা জানার চেষ্টা করব চিনির পরিবর্তে গুড় খাবেন কেন? আশা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
ভূমিকা
যেকোনো মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরি করতে চিনি অথবা গুড়ের প্রয়োজন এটা আমাদের সবারই জানা তবে চিনি অথবা গুড় তৈরির প্রক্রিয়াটি আমাদের অনেকেই অজানা। আর এই তৈরি করার প্রক্রিয়ার উপরেই নির্ভর করে চিনি বা গুড়ের পুষ্টিগুণ অথবা ক্ষতিকর দিক।
চিনির পরিবর্তে গুড় খাবেন কেন?
আসলে চিনি এবং গুড়ের উৎস একই, ব্যাবহারের উদ্দেশ্য একই, স্বাদ প্রায় একই। তবে চিনি এবং গুড়ের উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং পুষ্টিগুণ ভিন্ন। যেমন গুড় তৈরি হয় আখের বা খেজুরের রস জাল দেয়ার মাধ্যমে একদম প্রাকৃতিক উপায়ে। আবার চিনি তৈরি হয় আখের রস জাল দিয়ে বিভিন্ন কেমিক্যাল যুক্ত করে ঝরঝরে সাদা দানাদার করার উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকবার পরিশোধন করার মাধ্যমে। যার ফলে চিনিতে আর তেমন কোন পুষ্টিগুণ থাকে না।
গুড় তৈরি করা হয় খোলা আকাশের নিচে আগুনের চুল্লির উপর চওড়া বেশ বড় একটি পাত্রের উপর জাল দিতে দিতে। খাঁটি গুড় তৈরি করতে কোন কেমিক্যাল মেশানো হয় না। অন্যদিকে আখের রস জাল দিয়ে প্রথমে লালচে বা বাদামি চিনি তৈরি হয় যেটাকে লাল চিনি বলা হয় এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশিয়ে ঝরঝরে ধবধবে সাদা চিনি তৈরি করা হয়।
লাল চিনি স্বাস্থ্যের জন্য মোটামুটি ভালো। তবে সাদা চিনি এবং গুড়ের মধ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন উপাদান এবং পুষ্টিগুণ এর বিশেষ কিছু পার্থক্য রয়েছে যেগুলো জানলে সহজেই বুঝতে পারবেন চিনির পরিবর্তে গুড় খাবেন কেন।
- প্রথমেই চিনি এবং গুড়ের এক জায়গায় মিল দিয়ে শুরু করি। দুটোতে আছে উচ্চমাত্রার ক্যালরি। ১০০ গ্রাম চিনি এবং গুড়ে প্রায় ৩৬০ থেকে ৩৮০ মিলিগ্রাম ক্যালরি থাকে যা আমাদের ওজন বৃদ্ধি করতে উদ্বুদ্ধ করে।
- চিনিতে রয়েছে শুক্রোজ যেটি খুব দ্রুত রক্তের সাথে মিশে গিয়ে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। গুড়ে কোন শুক্রোজ থাকে না ফলে এটি খুব ধীরে ধীরে হজম হয় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- শরীরে খনিজের ঘাটতি পূরণ করতে গুড় একটি ভালো উৎস হতে পারে। কারণ গুড়ে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন এর মত গুরুত্বপূর্ণ কিছু খনিজ উপাদান। চিনিতে যেগুলো অনুপস্থিত।
- চিনিতে উচ্চমাত্রার ক্যালোরি থাকে তাই নিয়মিত চিনি খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু গুড় খেলে ক্যালরির সাথে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপাদানও পাওয়া যায়।
- চিনির ক্যালরি এবং সুক্রোজ ওজন বাড়ানোর সাথে সাথে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। তবে এখন পর্যন্ত গবেষণায় গুড়ের বিরুদ্ধে এ ধরনের কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
- গুড়ে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি সহ আরো বেশ কিছু ভিটামিন রয়েছে। ফলে ভিটামিনের ঘাটতিও পূরণ করতে সক্ষম গুড়। সাদা চিনিতে এ ধরনের কোন ভিটামিনের উপস্থিতি নেই।
- গুড়ে বিদ্যমান বিভিন্ন খনিজ উপাদান ফুসফুস ভালো রাখে, শরীরের এনার্জি ঠিক রাখে। চিনিতে এ ধরনের কোন গুণ নেই।
- গুড় কিছুটা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে যেটা সামান্য হলেও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম। চিনিতে কোন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নেই।
- গুড়ে বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম আমাদের শরীরের বিভিন্ন স্নায়ুকে শিথিল করে রক্ত চলাচলের পথকে সহজতর করে।
- আমাদের দাদা নানাদের আমলে দেখতাম তারা সব সময় গুড় খেতেন। ফলে সর্দি লাগা, ঠান্ডা লাগা, গলা ব্যথা এ ধরনের সমস্যা গুলো তাদের খুব একটা হতো না। তাই ঋতু পরিবর্তনের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় গুড় হতে পারে সমাধান।
- আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থকে বের করে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গুড়ে থাকা বিভিন্ন ফাইবার।
- চিনির হজম শক্তি বাড়ানোর কোন ক্ষমতা না থাকলেও গুড় আমাদের পাকস্থলির গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসরণ করে হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
গুড় কি সবাই খেতে পারবে
গুড় খাওয়ার কোন বয়সের কোন বাধা ধরা হিসেব নেই। যে কোন বয়সের যে কেউ যেকোনো সময় পরিমাণ মতো গুড় খেতে পারে। প্রতিদিন অল্প পরিমাণ গুড় খেলে কোন ক্ষতি নেই। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হবে যদি তারা গুড় বা চিনিকে এড়িয়ে যেতে পারেন।
ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে এমনিতেই সাধারণ পরিমানের চাইতে বেশি শর্করা থাকে। গুড় খেলে রক্তে এই শর্করার পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গুড় বা চিনি কোনোটিই প্রযোজ্য নয়। তবে ডায়াবেটিসের মাত্রা যদি স্বাভাবিক থাকে তবে চিকিৎসকের পরমর্শ অনুযায়ী গুড় খেতে পারবেন।
দিনে কতটুকু গুড় খাওয়া যায়
গুড়ের অনেক উপকারের কথা আপনারা ইতিমধ্যে জেনেছেন। আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য গুড় অত্যন্ত উপকারী। তবে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলেই যে ইচ্ছামত খেতে পারবেন বিষয়টি সেরকম নয়। একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির দিনে ৫০ থেকে ৬০ গ্রামের বেশি গুড় খাওয়া উচিত নয়। এর বেশি খেলে উপকারের চাইতে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে।
ভালো এবং খাঁটি গুড় খান
বিশেষজ্ঞদের মধ্যে গুড় তৈরি করার সাথে সাথে খাওয়া উচিত নয় অর্থাৎ টাটকা গুড় স্বাস্থ্যের জন্য খুব একটা ভালো নয়। গুড় তৈরির কিছুদিন পর খাওয়া উচিত। উপকার পেতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে স্বাস্থ্যকর খাঁটি গুড় খেতে হবে। বর্তমানে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী গুড়ের রং বা উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশিয়ে থাকে। কেনার সময় যাচাই-বাছাই করে খাঁটি গুড় কিনতে হবে।
খাটি গুড় চেনার উপায়
খাঁটি গুড় চেনার পরীক্ষাগারে গবেষণালব্ধ কোন উপায় এখন পর্যন্ত জানা নেই। তবে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছ থেকে যেটা জানা যায় সেটা হল কেনার সময় গুড়ের এক কোনা অথবা ছোট্ট একটি অংশ ভেঙে হাতের তালুতে রেখে অপর হাতের তর্জনি আঙ্গুল দিয়ে চেপে দেখতে হবে যদি গুড় একদম পাউডারের মতো মসৃণ হয় তাহলে বুঝতে হবে সেটি খাঁটি গুড়। কিন্তু যদি দানা দানা মত হয়ে থাকে তবে সেটিতে চিনি বা অন্য কিছু মেশানো থাকতে পারে। সেটি পুরোপুরি খাঁটি হবে না।
লেখকের মন্তব্য
মিষ্টি জাতীয় খাবার খুবই পছন্দ তবে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে যেমন ওজন বেড়ে যাওয়া বা ডায়াবেটিসের কারণে মিষ্টি খেতে পারছেন না। তাদের জন্য চিনির বিকল্প হিসেবে অবশ্যই আপনারা গুড়কে পছন্দ করতে পারেন। আশা করি উপরে আলোচনা থেকে বুঝতে পেরেছেন চিনির পরিবর্তে গুড় খাবেন কেন।
আরও পড়ুনঃ হলুদ দাঁত সাদা করার ঘরোয়া উপায়
লেখাটি যদি একটুও ভালো লেগে থাকে তবে আপনার পরিচিত জনের সাথে শেয়ার করতে পারেন আর কোন প্রশ্ন থেকে থাকলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন।
মুবিন পিডিয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url